ছোট গল্প:- রূপ পরিবর্তন 🖋ইন্দ্রনীল কর তারিখ:- ২৭\০২\২১চুচুঁড়া
💚🧡💙💜❤ ৹রূপ পরিবর্তন৹ ❤💜💙🧡💚 ❣🍀❣🍀❣ইন্দ্রনীল❣🍀❣🍀❣
লিপি জানলার পাশে বসে সূর্যাস্ত দেখছে। এই মুহূর্তটা তার সবসময়ই প্রিয়। কিন্তু এখন তার মোটেই এ…
ছোট গল্প:- রূপ পরিবর্তন
🖋ইন্দ্রনীল কর
তারিখ:- ২৭\০২\২১
চুচুঁড়া
💚🧡💙💜❤ ৹রূপ পরিবর্তন৹ ❤💜💙🧡💚
❣🍀❣🍀❣ইন্দ্রনীল❣🍀❣🍀❣
লিপি জানলার পাশে বসে সূর্যাস্ত দেখছে। এই মুহূর্তটা তার সবসময়ই প্রিয়। কিন্তু এখন তার মোটেই এই মুহূর্তটা ভালো লাগছে না। ইন্দ্রকে বেশ কয়েকবার কল করেছে কিন্তু রিসিভ করেনি। যার ফলে তার মন মেজাজ বিগড়ে আছে। সূর্যটা একেবারে ডুবে যেতেই ইন্দ্রের কল এলো। রিসিভ করেই লিপি ঝাড়ি দিয়ে বলল,
-- “এই তুমি আমাকে নিতে আসবে নাকি আমি একাই রওনা দেব?”
-- আরে এত রাগ করছো কেন? তুমিই তো বলেছিলে এক সপ্তাহের আগে আসবে না। অথচ এখনো একটা দিনও হয়নি।
-- ওতো কিছু শুনতে চাই না। তুমি আমাকে নিতে এসো। এখানে আমার একদম ভালো লাগছে না।
-- তুমিও না বড্ড ঝামেলা করো।
-- ঠিক আছে তোমাকে আসতে হবে না।
-- আরে শোনো, আমি রাতেই রওনা দেবো। সকালের মধ্যে চলে আসবো। তুমি প্রস্তুত থেকো।
ইন্দ্র ফোনটা কেটে দিলো। এবার লিপির মনটা ভালো হয়ে গেল। সে তার মায়ের কাছে এসে বলল, -- “মা শোনো, সকালেই আমাকে চলে যেতে হবে। ইন্দ্র খুব জরুরী মিটিংয়ের জন্য বাইরে যাবে। তুমি তো জানোই, ঘরে শ্বাশুড়ী মা একা। তার পক্ষে একা ঘর সামলানো সম্ভব না।”
লিপির মা বেশ অনুযোগ করে বললেন,
-- “বিয়ের পর এই প্রথম এলি। আর কিছুদিন থেকে যা।”
-- কি করবো বলো? হঠাৎই রুটিন পরিবর্তন হয়ে গেল। এবার যাই। পরে আবার সময় করে আসবো।
লিপির মা মন খারাপ করলেও তার বাবা বোঝালেন যে, এবার হাসিমুখে বিদায় দাও। পরে তো আবার আসবেই।
পরেরদিন সকালেই ইন্দ্র চলে এলো। ব্যাগ নিয়ে লিপি প্রস্তুতই ছিল। ঘরে ঢুকতেই কিছুটা খিটখিটে মেজাজ নিয়ে ইন্দ্র বলল,
-- “বলেছিলাম পুজোর ছুটিতে দুজনে একসাথে আসবো। তখন তো খুব বলেছিলে একা থাকতে পারবে। অথচ একদিন যেতে না যেতেই আমাকে আবার আসতে হলো। এতো জার্নি করা যায়?”
ইন্দ্র একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেলল। লিপি কিছুই বলার সুযোগই পেল না। লিপির বাবা মা কিছুক্ষণ চুপচাপ মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর হেসে উঠলেন। বুঝলেন যে, তাদের মেয়েটা বর পাগল। বর ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। মিথ্যে ধরা পড়ে যাওয়ায় লিপি বেশ লজ্জা পেল। সামান্য জলখাবার খেয়ে ইন্দ্ররা দ্রুত বেরিয়ে পড়লো। লিপিরই বেশি তাড়াহুড়োয় ছিল। তার এমন অবস্থা দেখে তার মা মনে মনে বেশ হাসলেন। তবে খুশিও হলেন। লিপির বাবা বললেন‚
-- “জামাই বাবা, এবার একেবারে পুজোতেই এসো। না হলে আবার তোমাকে কষ্ট করতে হবে।”
ইন্দ্র মাথা নেড়ে চলে এলো। লিপি লজ্জায় কারও দিকে তাকায়নি।
বাসে উঠেছে তারা। লিপি মুখ কালো করে বসে রইলো। ইন্দ্র বলল,
-- “আরে মুখ কালো করে আছ কেন? আমি কি জানতাম নাকি যে তুমি বাবা মাকে মিথ্যে বলেছ?”
-- তবুও তোমার উচিত ছিল আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া। কিন্তু তুমি গলগল করে সব বলে গেছ। যেন কেউ টেপ রেকর্ডার চালিয়ে দিয়েছে। ইস! কি লজ্জাটাই না পেলাম।
-- যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। আচ্ছা ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবো। এবার তো একটু হাসো।
লিপি একটা ভেংচি কাটলো। তাদের এই খুনসুটি দেখে পাশের একজন লোক বলল‚
-- “ভাই নতুন বিয়ে নাকি?”
ইন্দ্র মাথা দুলিয়ে বলল,
-- “হ্যাঁ, মাস ছয়েক হয়েছে।”
-- তাহলে ঠিক আছে। নতুন নতুন একটু রোমান্স, ভালোবাসা, আহ্লাদ এসব থাকে। পরে সব উড়ে যায়।
এই কথা শুনে লোকটার পাশে থাকা তার স্ত্রী গর্জে উঠলো।
-- “কি বলতে চাও তুমি? আমাদের মধ্যে ভালোবাসা নেই? সব উড়ে গেছে? কোন আকাশে গেছে বলো। আজই তোমাকে সেখানে পাঠাবো। সব খুঁজে খুঁজে ফেরত নিয়ে আসবে।”
স্ত্রীর বজ্র কণ্ঠের এই হুংকার শুনে লোকটা চুপসে গেল। শুধু 'না মানে ইয়ে মানে' করতে লাগল। তা দেখে লিপি খুব হাসতে লাগল। তবে ইন্দ্র কিছুটা গম্ভীর। সত্যিই কি একটা সময় ভালোবাসা উড়ে যায়? বিলীন হয়ে যায় সব আহ্লাদ? পরক্ষণেই ইন্দ্রের মনে হলো, না ভালোবাসা উড়ে যায় না। শুধুমাত্র রূপ পরিবর্তিত হয়। আহ্লাদ এক সময় প্রয়োজনীয়তায় রূপান্তর হয়। রোমান্স দায়িত্ববোধে রূপান্তর হয়। এখন তার ও লিপির মধ্যে রোমান্স আছে, আহ্লাদ আছে। মাঝ রাতে লিপি এখন আইসক্রিমের বায়না ধরে। চাঁদ দেখার বায়না ধরে। সকাল সকাল বুকের মাঝে শুয়ে থাকার বায়না ধরে। একটা সময় এগুলো পরিবর্তন হবে। ব্রেকফাস্ট ও ইন্দ্রের জন্য লাঞ্চ বক্স তৈরিতে লিপির সকাল ব্যস্ততায় কেটে যাবে, ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার লিপির রাত পেরিয়ে যাবে। তবুও ভালোবাসা উড়ে যাবে না। যদি তাদের মধ্যে সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে।
🍁ইন্দ্রনীল🍁
💜💙🧡💚💛❤💜💙🧡💚💛❤💜💙🧡
♨️🌼♨️🌼♨️ইন্দ্রনীল♨️🌼♨️🌼♨️