Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন #বিভাগ_গল্প#শিরোনাম_কৃষ্ণচূড়ার_ফাগুন#কলমে_সমর্পিতা_হালদার
                              (১)
ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে থাকে অস্মিতা। সুপ্রতিমকে কী তাহলে দ্বিতীয়বার হারালো সে আবার? কিন্তু মন যে মানতে চায় না কিছুতে…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন 

#বিভাগ_গল্প

#শিরোনাম_কৃষ্ণচূড়ার_ফাগুন

#কলমে_সমর্পিতা_হালদার


                              (১)


ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে থাকে অস্মিতা। সুপ্রতিমকে কী তাহলে দ্বিতীয়বার হারালো সে আবার? কিন্তু মন যে মানতে চায় না কিছুতেই! ওরা দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকালেই তো একে অপরের মনটাকে পড়ে ফেলতে পারে নিমিষে। কই, সুপ্রতিমের চাহনিতে তো কোন পরিবর্তন চোখে পড়ল না তার! আজ সকালেও অস্মিতা যখন সুপ্রতিমের জন্য লাঞ্চ প্যাক করে রেখে এসে সোফায় বসে ম্যাগাজিনের পাতাগুলো ওল্টাচ্ছিল, কলেজ বেরোনোর তাড়াহুড়োর মধ্যেও সুপ্রতিম তো ঠিক লক্ষ করেছিল তাকে! বুঝেছিল কোথাও কোন একটা পরিবর্তন এসেছে তার মনের আবহাওয়ায়। অজানা কোন এক ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার সযত্নে গুছিয়ে রাখা মনটা। জিজ্ঞাসা করেছিল সুপ্রতিম -"তোমার কী হয়েছে বলো তো? কিছুদিন ধরেই লক্ষ করছি কী যেন একটা ভেবে চলেছ সারাক্ষণ। এক সপ্তাহ পরেই আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী! ক'দিন আগেও সেটা নিয়ে কত এক্সাইটেড ছিলাম আমরা দুজনেই! হঠাৎ কী হল তোমার? আমাকেও বলবে না?"


অস্মিতার চিবুক ধরে ওর মুখটাকে একটু তুলে চোখে চোখ রাখে সুপ্রতিম। না, সুপ্রতিমের চোখে ছিল না কোন অপরাধবোধ। না ছিল কোন আড়াল, না কোন লজ্জা। বরাবরের মতোই স্বচ্ছ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল সে অস্মিতার দিকে। তবে কেন অস্মিতার মনটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে সন্দেহের এই ঘূণপোকাটা? কিন্তু একথাও তো সত্যি, যে তার সব সন্দেহ যদি মিথ্যেই হয়, তাহলে সেদিন রাখীর ফোনে বলা কথাগুলোও কি মিথ্যে? কিন্তু রাখী তো বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছিল কথাগুলো। অস্মিতা ফোনটা ধরতেই রাখী বলে উঠেছিল -"কী রে, তোদের তো সবে একবছর হলো বিয়ে হয়েছে। এরমধ্যেই ভালোবাসার টান আলগা হয়ে গেল? সুপ্রতিমদাকে তো সেদিন দেখলাম নিজের গাড়িতে করে আনন্দিতাকে পাশে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও। তা ওদের এই মেলামেশার ব্যাপারটা তুই জানিস? দেখিস বাবা, পুরনো প্রেম আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তোদের সম্পর্কটাকে ভেঙে না দেয়!"


অস্মিতা যদি রাখীর কথাগুলোকে আমল নাও দেয়, তাহলেও সেদিন রাতে সুপ্রতিমের মোবাইলে আসা আনন্দিতার ফোনটা? ফোনটা আসতেই সুপ্রতিমের তড়িঘড়ি বারান্দায় চলে গিয়ে অস্মিতার আড়ালে আনন্দিতার সঙ্গে কথা বলাটা? এই ঘটনাগুলো তো নিজের চোখেই দেখেছে অস্মিতা! এগুলোকেও কী তাহলে অবিশ্বাস করবে সে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না অস্মিতা। নিজেকে বড়ই অসহায় লাগছে আজ।


সুপ্রতিম কলেজে চলে যাওয়ার পর ওদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনির সিলিং থেকে ঝোলানো শখের দোলনাটাতে এসে বসে অস্মিতা। সকাল থেকে মাথাটা ঝিমঝিম করছিল, আর ছুটিও জমে গেছে অনেক, তাই আজ আর অফিস যায়নি সে। হঠাৎ একটু দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে চোখ চলে যাওয়ায় মনের গভীরে ওঠা ঝড়টা ওর মনটাকে যেন আরোই তোলপাড় করতে শুরু করল। বসন্তের ছোঁয়ায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে গাছটা। অস্মিতার মনে পড়ে যায় সুপ্রতিমের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হওয়ার দিনটার কথা। এরকমই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই তো প্রথমবার দেখা হয়েছিল ওদের!


                               (২)


ছোট থেকে বরাবরই মেধাবী ছাত্রী ছিল অস্মিতা, অস্মিতা মুখার্জি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে পছন্দের বিষয় কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে নিজের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হয় সে। সেদিন ছিল কলেজে তার প্রথম দিন। তাই একটু তাড়াতাড়িই পৌঁছে গিয়েছিল অস্মিতা। গোলাপির ওপর সাদা চিকন কাজের কুর্তি, আর সাদা পাতিয়ালায় অপূর্ব লাবণ্যময়ী দেখাচ্ছিল তাকে। ফর্সা, ছিপছিপে চেহারার অস্মিতার ডিম্বাকৃতি মুখে টানা টানা চোখ, টিকালো নাক, পাতলা ঠোঁট সবকিছুই যেন তুলি দিয়ে আঁকা ছবির মতো মনে হয়। কিন্তু অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়া মেয়েটির একটু বেশি মাত্রাতেই রিজার্ভড স্বভাবের জন্য ছেলেরা দূর থেকেই তাকে দেখে সন্তুষ্ট থাকত; কাছে যেতে ভরসা পেত না কেউই। বান্ধবীদের মাধ্যমে প্রোপোজ করত অনেকেই। কিন্তু না দেখেশুনেই তাদেরকে রিজেক্ট করে দিত অস্মিতা। কারণ বাড়িতে যদি একবার জানাজানি হয় যে মেয়ে প্রেম করছে, রক্ষা থাকবে না তাহলে আর!


এহেন অস্মিতা কলেজ ক্যাম্পাসে পা রাখতেই প্রথমেই তার চোখ চলে যায় অগুনতি লাল ফুলের সমারোহে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে। নবাগতদের অভ্যর্থনা জানাতেই যেন নিজেকে এমন করে সাজিয়েছে সে আজ। কিছুটা আনমনাভাবেই পা চালিয়ে গাছটার দিকে এগিয়ে যায় অস্মিতা। ফুলগুলোকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে ওপর দিকে তাকিয়ে হাঁটার কারণেই হয়তো অতর্কিতে ধাক্কা লেগে যায় এক যুবকের সঙ্গে। অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে 'সরি' বলে অস্মিতা। উত্তরে কোন কথা না বলে যুবকটি মৃদু হেসে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে।


অদ্ভুত এক মায়া ছিল যুবকটির দু'চোখে। অস্মিতাও নিজের চোখদুটোকে সরিয়ে নিতে পারেনি তার চোখ থেকে। ঠিক তখনই গাছ থেকে কয়েকটা কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরে পড়েছিল অস্মিতার মাথার ওপর। যুবকটি অল্প হেসে ফুলগুলোকে ওর মাথা থেকে সরিয়ে নিয়ে হাতে দিয়ে বলেছিল -"কৃষ্ণচূড়া বুঝি খুব প্রিয়? আমারও।" যুবকটির হাতের স্পর্শে অদ্ভুত এক শিহরন ছড়িয়ে পড়েছিল অস্মিতার সমগ্র অন্তরে। আর একবার ভালো করে যুবকটির দিকে তাকিয়ে দেখেছিল অস্মিতা। ফর্সা, লম্বা, সুন্দর চেহারা, মাথাভর্তি ঘন কালো চুল আর চোখে রিমলেস চশমা, একঝলক দেখেই সুদর্শন বলা চলে তাকে। দুজন দুজনাতে মুগ্ধ যখন, হঠাৎ তারা সম্বিত ফিরে পায় মাঝবয়সী এক ভদ্রলোকের ডাকাডাকিতে। যুবকটির উদ্দেশে তিনি বলেন "কী সুপ্রতিম, ক্লাসে যাবে না? সময় হয়ে গেল তো! চলো!" ঈষৎ লজ্জিত মুখে ভদ্রলোকটির সঙ্গে ক্লাস অভিমুখে পা বাড়ায় সুপ্রতিম। অস্মিতা বুঝতে পারে ভদ্রলোকটি একজন সিনিয়র প্রফেসর। অস্মিতার চোখের সামনে থেকে একটু একটু করে মিলিয়ে যেতে থাকে সাদা শার্ট আর ব্লু জিন্স পরা তার স্বপ্নের রাজপুত্রটি।


অস্মিতা ভাবে 'ইশ্! আমারও তো কত দেরি হয়ে গেল ক্লাসে যেতে!' যুবকটির হাত থেকে নেওয়া কৃষ্ণচূড়াগুলোকে ফেলে দিতে কেমন যেন মায়া হয় তার। অগত্যা ব্যাগে ভরে নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে ক্লাসে পৌঁছোয় অস্মিতা। কিন্তু ক্লাসের সামনে এসে বিস্ময়ে চমকে ওঠে সে। এ কাকে দেখছে সে ডায়াসের ওপর! এ যে কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় দেখা তার স্বপ্নের রাজপুত্র! ইনিই তাহলে ওদের কেমিস্ট্রির প্রফেসর সুপ্রতিম পাল? সংক্ষেপে এস পি স্যার? ক্লাসরুমে আসার পথে এইমাত্র শুনেছে সে নামটা কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর মুখে। অস্মিতা লজ্জা পেয়ে ভাবে 'ইশ্! কার সম্পর্কে কী ভাবছিলাম এতক্ষণ!' তারপর বুকের মধ্যে একমুঠো সাহস জড়ো করে কোনমতে বলে "মে আই কাম ইন স্যার?" ডায়াসের ওপর থেকেই সুপ্রতিম ঘুরে তাকায় অস্মিতার দিকে। ওকে দেখে সেও বিস্ময়ে হতবাক! কিন্তু বেশ খুশিও হয় মনে মনে। হাসিমুখে তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দেয় সুপ্রতিম।


                              (৩)


মানুষের 'মন' নামক বস্তুটি বড়ই অবুঝ। মস্তিষ্কের শাসন না মানাটাই যেন তার চিরাচরিত ধর্ম। অস্মিতার ক্ষেত্রেও সে নিয়মের ব্যতিক্রম হলো না। যতবারই কঠিন শাসনে বাঁধতে চেয়েছে সে তার মনটাকে, মন ততোবারই হাত ফসকে পালিয়ে গেছে সুপ্রতিমের কাছে। ক্লাসে পড়ানোর সময় সুপ্রতিমের চোখদুটোও বারবার চলে যেত অস্মিতার দিকে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে খুঁটিনাটি দেখাতে গিয়ে তার হাত ছুঁয়ে যেত অস্মিতার হাতদুটোকে; হয়তো কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই। লাজুক মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলেও হৃদয়ে লেগে থাকত স্পর্শটুকু।


দিন চলে যাচ্ছিল এভাবেই। সুপ্রতিম আভাসে ইঙ্গিতে বেশ কয়েকবার অস্মিতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে তার মনের কথা। কিন্তু অস্মিতা মনে মনে ভেবেছে, তার বাড়ির লোকেরা যদি একবার একথা জানতে পারে যে মেয়ে কলেজে গিয়ে এক শিক্ষকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে, তারওপর ছেলেটি আবার ব্রাহ্মণ নয়, তাহলে আর রক্ষা থাকবে না। আজকের যুগেও ভীষণ রকমের গোঁড়া ও ভয়ানক রক্ষণশীল পরিবার তাদের। তার ওপর অস্মিতার ছোটপিসি এক ভিন্নধর্মী ছেলেকে ভালোবেসে তার হাত ধরে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর বাড়ির লোকেদের এই রক্ষণশীলতা বেড়ে গেছে আরও কয়েকগুণ। এইসব ভেবে নিজেকে সর্বদা একটা খোলসের মধ্যে গুটিয়ে রাখতে থাকে অস্মিতা, যা ভেদ করে তার কাছে পৌঁছতে পারে না সুপ্রতিম।


ইতিমধ্যে ওদেরই ক্লাসের অত্যন্ত স্মার্ট, স্টাইলিশ, প্রাণোচ্ছল মেয়ে আনন্দিতা তার নিরলস চেষ্টায় সুপ্রতিমের কাছে চলে আসতে থাকে ক্রমশঃ। প্রথম প্রথম সুপ্রতিম পাত্তা দিত না তাকে; কিন্তু দিনের পর দিন অস্মিতার অনিচ্ছাকৃত অবহেলায়, আর আনন্দিতার অতিরিক্ত যত্নে, তার প্রতি একটু একটু করে দুর্বল হতে থাকে সে। সারাক্ষণ সুপ্রতিমের কাছাকাছি থেকে তাকে যেন সবার চোখ থেকে আড়াল করে রাখতে চাইত আনন্দিতা। সর্বদা সচেষ্ট থাকত এটা প্রমাণ করতে যে সুপ্রতিমের প্রতি সে কতটা কেয়ারিং। আর অস্মিতা করত ঠিক এর উল্টো কাজগুলোই। মনে মনে ভালবাসলেও সে আপ্রাণ চেষ্টা করত নিজের ভালোবাসাকে সুপ্রতিমের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে। 


অবশেষে অস্মিতার চোখের সামনেই তার প্রথম ভালোবাসা অন্য কারোর হয়ে গেল। খুব কাছের দু'একজন বান্ধবী বলেছিল "সব বুঝেও এভাবে না বোঝার ভান করে এস পি স্যারের থেকে দূরে সরে রইলি কেন অস্মি? স্যার তো তোকেই পছন্দ করতেন প্রথম থেকে!" রাখী অবশ্য বলেছিল "হ্যাঁ মানছি তুই হয়তো আনন্দিতার থেকে একটু বেশি সুন্দরী। কিন্তু তুই হলি একটা শান্ত দিঘির মতো। আর আনন্দিতা চঞ্চল ঝর্ণা। দিঘির থেকে ঝর্ণার চার্মটা অবশ্যই বেশি! আর সেই কারণেই স্যারের মন অনায়াসে চলে গেছে ওর দিকে।"


রাখীর কথাগুলো অস্মিতার বুকে তীরের ফলার মতোই বিঁধেছিল সেদিন। মনে মনে ভেবেছিল সে -এভাবে নিক্তির বিচার করে কী সত্যিই বলা যায় কার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কতখানি? মন তো শুধু মনের মতোন একটা মনকেই খোঁজে, ভালোবাসা খোঁজে ভালোবাসায় ভরা একটা হৃদয়। সেখানে এসব যোগ্যতার হিসেব নিকেশ আদৌ কী চলতে পারে কখনও? তাছাড়া সে তো নিজেই বাঁধতে চায়নি সুপ্রতিমকে! অনেক কষ্টে চোখের জল আড়াল করেছিল অস্মিতা।


                ‌ (৪)


এরপর পেরিয়ে যায় বেশ কয়েকটা বছর।অস্মিতার মন থেকে আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসে তার প্রথম প্রেমের স্মৃতি। যদিও এরমধ্যে আর কেউ তার হৃদয়ের দরজায় আঘাত করেনি কোনদিন। নিজের পড়াশোনা, কেরিয়ার এইসব নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে সে সারাক্ষণ। চাকরিতে জয়েন করার পর একবছর পেরিয়েছে তখন। হঠাৎ একদিন এক কলিগের বাড়িতে তার মেয়ের এক বছরের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে অস্মিতা আবার মুখোমুখি হয় সুপ্রতিমের। এ যেন ভবিতব্য। কেউ যেন আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিল সবটা। অস্মিতার কলিগের হাজব্যান্ডের বন্ধু হিসাবে পার্টিতে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল সুপ্রতিম।


সুপ্রতিমকে দেখে মুহূর্তের জন্য নিজের অজান্তেই হৃদস্পন্দনের গতি দ্রুত হয়ে যায় অস্মিতার। নিজেকে সামলে নিয়ে সুপ্রতিমের আশেপাশে আনন্দিতাকে খুঁজতে থাকে সে। সুপ্রতিম বুঝতে পেরে হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে "যাকে খুঁজছো, তাকে আর এই জায়গায় পাবে না কোনদিন। কারণ সে এখন আর নেই আমার জীবনে। ঘর বেঁধেছে অন্য কারোর সঙ্গে।" অবাক চোখে সুপ্রতিমের দিকে তাকায় অস্মিতা। তাকে ভিড় থেকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নিজের জীবনে এই ক'বছরে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা জানায় সুপ্রতিম।


অস্মিতা জানতে পারে কলেজে সুপ্রতিমের প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠতে তার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করেছিল আনন্দিতা। তার কাছ থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিজের কেরিয়ার গুছিয়ে নিতে চেয়েছিল সে। পরীক্ষার আগেই পরীক্ষাতে কী কী প্রশ্ন আসবে জেনে যাওয়া, ভাইভাতে বেশি নম্বর তোলা, এগুলোই তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সুপ্রতিমের ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার পিছনে। সে চেয়েছিল অল্প পরিশ্রমে একটা ঝকঝকে মার্কশিট নিয়ে কলেজ থেকে বেরোতে। কিন্তু নীতিবিরুদ্ধ বলে এসব কোন কিছুতেই তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়নি সুপ্রতিম। শুধু ক্লাসের পরে কখনও কখনও পড়া বুঝিয়ে দিত সে আনন্দিতাকে। কিন্তু তারপরেও পরীক্ষার রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি আনন্দিতার।


কলেজ থেকে বেরোনোর পর কিছুদিন সুপ্রতিমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল সে; যদিও সম্পর্কটা সুপ্রতিম একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিল প্রায়। ইতিমধ্যে হঠাৎ আনন্দিতার মনে মডেলিংয়ের শখ জেগে ওঠে। আর ছোটখাটো বিজ্ঞাপনের ফটোশ্যুট করতে গিয়ে সেখানকারই এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। তারপর সুপ্রতিমের সঙ্গে সম্পর্কের শেষ সুতোটাও আলগা হতে হতে ছিঁড়ে যায় একসময়। সুপ্রতিম বলে, পরে এদিক ওদিক থেকে সে নাকি শুনেছে আনন্দিতা সেই ফটোগ্রাফারকেই বিয়ে করে সংসারী হয়েছে তার সাথেই।


কথাগুলো শেষ করে অস্মিতার চোখে চোখ রাখে সুপ্রতিম। অস্মিতার মনে পড়ে যায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে প্রথম দেখা সুপ্রতিমের সেই চোখদুটোকে। ঠিক যেন সেই একই চাহনি সুপ্রতিমের চোখে দেখতে পায় সে আজ আবার। হঠাৎ সুপ্রতিমের জন্য বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিন করে ওঠে তার। অনেক যন্ত্রণা যেন লুকিয়ে আছে আজ সুপ্রতিমের ঐ মায়াভরা চোখদুটোতে। অস্মিতার চোখের স্নিগ্ধ চাহনিতে কিছুটা আশ্বাস পেয়ে সুপ্রতিম সেদিন সাহস করে বলেই ফেলে নিজের মনের কথাগুলো -"একটা কথার উত্তর দেবে অস্মিতা? প্রথম দিন থেকেই তোমার প্রতি আমার যে অনুভূতিটা ছিল, সেটা কী কোনদিনই বুঝতে পারোনি তুমি? নাকি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করে গেছো সবসময়?" অস্মিতা নিরুত্তর। চোখদুটো নামিয়ে নেয় সুপ্রতিমের চোখ থেকে। সুপ্রতিম একটু থেমে বলে "জানি না এরমধ্যে তোমার জীবনে অন্য কেউ এসে গেছে কিনা! তা যদি না হয়ে থাকে, তাহলে আমরা দুজন কী আর একবার নতুন করে প্রথম থেকে শুরু করতে পারি না? মাঝের ঘটনাগুলো সব ভুলে গিয়ে মনে করো না অস্মিতা, যে আজই আমাদের প্রথম দেখা হলো! সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়?"


বড় গভীর প্রত্যয় নিয়ে কথাগুলো বলেছিল সুপ্রতিম। এবারে আর তাকে ফেরানোর ক্ষমতা হয়নি অস্মিতার। তাছাড়া ইতিমধ্যে সে পড়াশোনা শেষ করেছে, ভালো একটা চাকরিও করছে। নিজের জীবনে নিজের মতো করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছেছে সে ততদিনে। সুপ্রতিমের হাতের ওপর হাতটা রেখে বলেছিল "শুরু করাই যায়। কিন্তু তার আগে একটা প্রমিস করতে হবে তোমায়।" কৌতুহলী দৃষ্টিতে অস্মিতার মুখের দিকে তাকিয়েছিল সুপ্রতিম। তার চোখে নিজের ভালোবাসাকে হারানোর আশঙ্কাও স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল অস্মিতা। একটু হেসে বলেছিল -"প্রতিবছর ফাল্গুনে আমাকে কৃষ্ণচূড়া উপহার দিয়ে জানিয়ে যেতে হবে যে 'বসন্ত এসে গেছে'।" স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুপ্রতিম ওর হাতদুটো ধরে মৃদু হেসে বলেছিল "অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস ম্যাডাম!" হেসে উঠেছিল দুজনেই।


তারপর আর দেরি না করে বিয়ের ডিসিশনটা নিয়েই নিয়েছিল ওরা। প্রথমে অস্মিতার বাড়িতে সুপ্রতিম ব্রাহ্মণ নয় বলে সেই নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও, অস্মিতা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিল সবাইকে। সেই বসন্তেই ফাল্গুনের এক শুভদিনে গাঁটছড়া বেঁধেছিল তারা। আর ফুলশয্যার রাতে নববধূর বেশে সুসজ্জিতা অস্মিতা যখন ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে সুপ্রতিমের জন্য অপেক্ষা করছিল, সুপ্রতিম কোথা থেকে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া ফুল এনে অস্মিতার কোলে রেখে বলেছিল "প্রথমবারের প্রমিস রাখলাম ম্যাডাম। দেখে নাও পছন্দ হয়েছে কিনা।" সেই থেকে পরম যত্নে ফুলগুলোকে রেখে দিয়েছে অস্মিতা, দক্ষিণ ভারত থেকে আনা ওর খুব শখের একটা শৌখিন কারুকার্য করা কাঠের বাক্সের ভেতরে। তখন থেকে কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন হয়েই কাটছিল ওদের দিনগুলো। তবে আজ কেন হঠাৎ সবকিছু এমন বিবর্ণ লাগতে শুরু করেছে অস্মিতার? নিজের প্রাণের চেয়ে প্রিয় সুপ্রতিমের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছে সে! এও কি সম্ভব! চোখ দুটো জলে ভরে আসে অস্মিতার।


                             (৫)


দেখতে দেখতে কেটে যায় সপ্তাহটা। রবিবার সকালে ছোট্ট একটা কাজ সারতে দু'এক ঘণ্টার জন্য বাইরে যায় সুপ্রতিম। অস্মিতা রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিল তখন। হঠাৎ সুপ্রতিমের ফোনের রিংটোনটা কানে যেতেই বুঝতে পারে সুপ্রতিম ভুল করে বাড়িতেই ফেলে গেছে ফোনটা। অস্মিতা হাতের জল মুছতে মুছতে এসে দেখে ফোনের স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে আনন্দিতার নাম। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে অস্মিতার। ফোনটা ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতে প্রথমবার বন্ধ হয়ে যায় রিংটা; কিন্তু পরক্ষনেই আবার রিং হতে শুরু করে। অস্মিতা ভাবে আনন্দিতা বারবার যখন ফোন করে চলেছে, তখন নিশ্চয়ই ওর কোন জরুরী দরকার আছে সুপ্রতিমের সঙ্গে! ফোনটা ধরে একবার জানিয়ে দেওয়া উচিত যে সুপ্রতিম বাড়িতে নেই।


ইতস্তত করে ফোনটা রিসিভ করে অস্মিতা। ও "হ্যালো" বলতেই আনন্দিতা বলে ওঠে "অস্মিতা, একটা ভালো খবর আছে রে! আমার ছেলের অপারেশনের সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। নেক্সট উইক অপারেশন। সুপ্রতিমকে জানিয়ে দিস প্লিজ! আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সব ঠিক হয়ে যাবে এবার। তোদের দুজনকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাব!" অস্মিতা ওর কথার বিন্দুবিসর্গও বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে "তুই ঠিক কী বলছিস বল তো? আমি তো কিছুই... কী হয়েছে তোর ছেলের?"


আনন্দিতা একটু অবাক হয়ে বলে "সেকি! তুই কিছু জানিস না? আমার ছেলের তো জন্ম থেকেই হার্টের প্রবলেম! অ্যাওর্টিক ভালভের গঠনগত ত্রুটির জন্য ওকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় দিন কেটেছে আমাদের। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি; কিন্তু সবাই বলেছেন ওর যা কন্ডিশন, তাতে সার্জারিই একমাত্র উপায়। কিন্তু তার জন্য তো প্রচুর টাকার প্রয়োজন! এদিকে আমিও মডেলিংয়ের রুপোলি দুনিয়ার মোহে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা বছর নষ্ট করে ফেলেছি, অথচ কিছুই করতে পারিনি সেভাবে। আর আমার হাজব্যান্ডেরও তেমন কিছু রোজগার ছিল না তখন। চিন্তায় যখন আমরা দিশাহারা, তখনই হঠাৎ একদিন দেখা হয়ে যায় সুপ্রতিমের সঙ্গে। আমার সব কথা শুনে সুপ্রতিম ওর এক বন্ধুর অফিসে তৃণাঙ্কুরের কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। এছাড়া একটা এনজিওর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে ও। আর নিজেও সাহায্য করেছে কিছু। সেইজন্যই তো আমার ছেলের অপারেশনটা হতে পারছে আজ। সুপ্রতিম অবশ্য বারবার বলেছে, যে এসব কাজে তোর ফুল সাপোর্ট থাকে বলেই ও নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এইভাবে। আর সেইজন্যই থ্যাঙ্কস জানালাম তোকেও।"


কোনরকমে ফোনটা রেখে সোফার ওপর ধপ করে বসে পড়ে অস্মিতা। মনে মনে ভাবে সুপ্রতিম তাহলে এতদিন এই কারণেই আনন্দিতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল! কিন্তু ওকে জানাল না কেন সেকথা? ছি ছি! শুধু শুধু ভুল বুঝল ও সুপ্রতিমকে। নিজের ওপর লজ্জা হচ্ছে অস্মিতার। 


হঠাৎ বেজে ওঠে ডোরবেলটা। দরজা খুলে সুপ্রতিমকে দেখে অস্মিতা বলে "আনন্দিতা ফোন করেছিল তোমায়। তুমি ছিলে না বলে আমি রিসিভ করেছিলাম ফোনটা। আমাকে এভাবে কেন তোমার অপরাধী করে দিলে সুপ্রতিম? কেন জানালে না কিছু? আমি শুধু শুধু অবিশ্বাস করে ফেললাম তোমায়। এখন যে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না নিজের কাছেই!"


অস্মিতার হাতদুটো ধরে ওকে সোফায় বসিয়ে সুপ্রতিম ওর পাশে বসে বলে "মনে আছে অস্মি, আমি যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অ্যানিভার্সারিতে কী গিফট নেবে, তুমি বলেছিলে কোন একটা অনাথাশ্রমে কিছু টাকা ডোনেট করব দুজনে মিলে। ঐ নিষ্পাপ শিশুগুলোর করুণ মুখগুলোতে একটু হাসি ফুটলে সেটাই হবে আমাদের একে অপরকে দেওয়া অ্যানিভার্সারি গিফট।" তোমার উত্তরে মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি। তার ঠিক ক'দিন পরেই হঠাৎই একদিন রাস্তায় দেখা হয়ে যায় আনন্দিতার সঙ্গে। ওকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারিনি আমি। জীবনের প্রতিকূলতাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে খুব বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল ও, যার ছাপ স্পষ্ট ধরা পড়ছিল ওর চোখেমুখে। তারপর ও নিজে থেকেই আমার সঙ্গে কথা বলতে আসে। নিজের কৃতকর্মের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমাও চায়। আর তখনই জানতে পারি ওর ছেলের কথা, ওদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা। 


হঠাৎই আমার মাথায় একটা আইডিয়া খেলে যায়। আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে অনাথাশ্রমে যে টাকাটা ডোনেট করব ভেবেছিলাম, সেটা যদি ওর ছেলের হার্ট সার্জারির কাজে লাগাই! যদিও জানতাম তার জন্য আরও অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই আমার এক বন্ধুর অফিসে ওর হাজব্যান্ডের একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিই, আর একটা এনজিওর সঙ্গেও যোগাযোগ করিয়ে দিই ওদের। সবমিলিয়ে জোগাড় হয়ে যায় টাকাটা। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি যখন সব কথা জানবে, খুব খুশি হবে তুমিও। তবে আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা তোমার কাছে সারপ্রাইজ রাখব। জানাব অ্যানিভার্সারির দিনেই। কিন্তু সেদিন যখন আনন্দিতার ফোনটা এলো, আর আমি বারান্দায় গিয়ে তোমার আড়ালে কথা বললাম ওর সঙ্গে, তারপর থেকেই লক্ষ করছিলাম তুমি খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছো। তাছাড়া তোমার আরও কিছু আচরণে আমার মনে হয়েছিল তুমি হয়তো কিছুটা জেনে গেছো; কিন্তু পুরোটা নয়। আর সেটুকু জেনে তোমার মনে আমার প্রতি একটা অবিশ্বাস জন্মেছে হয়তো।"


অস্মিতা ধরা গলায় বলে "তবুও তুমি আমার ভুলটাকে ভাঙিয়ে দিলে না?" সুপ্রতিম মৃদু হেসে বলে "আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজেই তোমার ভুলটা বুঝতে পারো। আমি বললে তোমার মনে হতে পারত আমি নিজেকে নির্দোষ দেখানোর জন্য গল্প ফাঁদছি। তাই ভেবেছিলাম তুমি নিজে বুঝলে সেটাই হবে আসল বোঝা। আর আমার বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন তুমি বুঝবেই আমাকে।"


সুপ্রতিমের মুখে হাত চাপা দিয়ে তাকে থামিয়ে দেয় অস্মিতা। বলে "আর বোলো না। নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে এখন। মনে হচ্ছে ঠিকভাবে ভালোবাসতেই পারিনি তোমায়। ভালোবাসার মূল ভিত্তিটাই যে বিশ্বাস! কী করে আমি তোমায় অবিশ্বাস করলাম বলো তো সুপ্রতিম?"


অস্মিতাকে কাছে টেনে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সুপ্রতিম বলে "ভালবাসার মূল ভিত্তি যেমন বিশ্বাস, তেমনি একথাও তো সত্যি, যে কাছের মানুষটাকে হারানোর বিন্দুমাত্র আশঙ্কাতেও দুলে ওঠে মনটা? আর আমি তো জানি, আমাকে অবিশ্বাস করে তুমি নিজেই কষ্ট পেয়েছো সবথেকে বেশি। কিন্তু এখন থেকে আর কোন মনখারাপ নয়। পরশু আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। আর এবছর দোলও পড়েছে ঐ দিনেই। আমরা কিন্তু খুব আনন্দ করে দোল খেলব এবারে। তুমি না বললেও শুনব না কোন বারণ। আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেবো তোমায় সেদিন।"


অস্মিতার ঠোঁটে ফুটে ওঠে লাজুক হাসি। কী যেন একটু ভেবে বলে -"ঠিক আছে; কিন্তু তার আগে একটা প্রমিস করতে হবে তোমায়।" অস্মিতাকে প্রোপোজ করার দিনটার কথা মনে পড়ে যায় সুপ্রতিমের। সেদিনকার মতো আরও একবার দু'চোখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকায় সে অস্মিতার মুখের দিকে। মুচকি হেসে অস্মিতা বলে "লাল-গোলাপি আবিরের সঙ্গে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়াও ছুঁড়ে দেবে তুমি আমার গায়। তোমার দেওয়া সেই কৃষ্ণচূড়ার ফাগুনে আরও একবার বসন্ত ছেয়ে যাবে আমার জীবন জুড়ে।" স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সুপ্রতিম সেদিনকার মতোই মুচকি হেসে বলে "অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস ম্যাডাম!"


ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকে দুটো হৃদয়। সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটাও তার ফুলের সমারোহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে ওদের। দোলের রঙে নিজের রং মিশিয়ে ওদের ভালোবাসাকে আরও রঙিন করে তুলতে হবে যে তাকে!

©চুপকথা-কলমে সমর্পিতা হালদার