Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে ।_______________________________তরুন চট্টোপাধ্যায় । সাংবাদিকটোটে তে উঠেছি আজ সন্ধ্যায় শিবপুর থেকে।একটু দূরের গন্তব্যস্থল ।ভিতরে আসন ভর্তি থাকায় চালক আমাকে নিয়েছে ঠিক ওর পাশের ফাঁকা জায়গাটিতে।আমিও বসেছ…

 


ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে ।

_______________________________

তরুন চট্টোপাধ্যায় । সাংবাদিক

টোটে তে উঠেছি আজ সন্ধ্যায় শিবপুর থেকে।একটু দূরের গন্তব্যস্থল ।ভিতরে আসন ভর্তি থাকায় চালক আমাকে নিয়েছে ঠিক ওর পাশের ফাঁকা জায়গাটিতে।আমিও বসেছি।যাক ওর পেশা নিয়ে যদি কিছু জানা যায় ।আর টোটো ওলার থেকে কি পাব।সারাদিনে কত আয়।মালিক কে কত দিতে হয় এই আর কি।

পেশাগত স্বভাব ।ছাড়তে পারিনা।এদিন সন্ধ্যায় ও একই ভাবে শুরু করি কথোপকথন।কথা এগিয়ে চলেছে।আর কথায় কথায় উঠে আসছে নানা কাহিনী ।

ওর নাম মহেশ।হ্যাঁ মহেশ শর্মা ।ভাবলাম নিবাস বিহার বা উওর প্রদেশ হবে হয়তো।কিন্তু ও জানালো বনগাঁ ।

তবে শিবপুরে কেন?জানালো ছোট থেকেই আছি।বাবা চটকলের শ্রমিক ছিল।তারপর আর ছেড়ে যাই নি।তবে বিগত দশ বছর ধরে মুম্বাই এর কাপড় কলে কাজ করে আসছি।লক ডাউনে ফিরে এসে এই পেশাতে।তবে চলে যাব।ভোটের পরেই।মুম্বাই থেকে ডাক চলে এসেছে।

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল।ও আর পাঁচ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের মতোই ভিন রাজ্যে থাকতো।লকডাউনে দেশে ফেরা।

কিন্তু মহেশ অবাক করে জানালো মুম্বাই থেকে পায়ে হেঁটে ফেরার কথা।ও একা নয়।সঙ্গে ওর বৌ লছমী ও।পেটে তখন বাচ্ছা।

আমি ও গল্পের রসদ পেয়ে গেছি।নানা প্রশ্ন করছি।আর ও সেই সব দিনের বিবরন বলে যাচ্ছে আমাকে।

বললাম সব পথটাই পায়ে হেঁটে ।বললো সামান্য পথ ছোট হাতী তে।বাকিটা সব ই পায়ে পায়ে ।বৌ এর অসুস্থতার জন্য স্হানীয় মানুষ একবার এই ছোট হাতী গাড়ি তে তুলে দিয়ে ছিলেন।কিন্তু সে আর কতটুকু ।

রাতে কেউ বাড়ির দুয়ারেও জায়গা দেয় নি।করোনার ভয়ে।তাই পথেতেই সব।খাওয়া থেকে শোওয়া ।

ভোর থেকে হাঁটা শুরু।সারাদিন হাঁটা।মাঝে দুপুরে খাওয়ার বিশ্রাম।খাওয়া দাওয়া জুটে যেত রাস্তায় ।তবে কোন জায়গায় থাকতে কেউ দিতো না।কারন করোনা সংক্রমণ ।

 করোনা এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা না করেই চলে এসেছি।রুজিরোজগার তো করতে হবে।

এসে কষ্ট হয়েছিল।মেয়ে ও হয় করোনাকালেই।তাই নাম রেখেছি করোনা।

বললাম ভোট দেবে।মুচকি হাঁসলো।জানালো ভোটের পরেই তো মুম্বাই চলে যাব।

জিজ্ঞেস করলাম করোনা কালে কোন সাহায্য পেয়েছো।

মহেশ জানায় কে আর করবে দাদা।

বললাম যদি কিছু মনে না করো আমার থেকে মুম্বাই যাওয়ার দুটি টিকিট নিয়ে যেও।

মৃদু হাসি ওর মুখে।ফোন নম্বর টি অবশ্য রাখলো পকেটে যত্ন করেই।

জানি না পরিযায়ী শ্রমিকেরা কেমন আছে।

তবে মহেশের মুখে শুনলাম অনেকেই ফিরে গেছে যে যার কর্ম স্হলে।বাকিরা ও চলে যাবে।

সামনে ভোট।সব দল ই বলছে রাজ্যের বাইরে যেতে হবে না।এই রাজ্যের মধ্যেই কাজের ব্যাবস্থা হবে।

সত্যি কি হবে।জানি না।আর জানবোই বা কি করে।আমার ছেলেও তো ভিনরাজ্যে।

যদিও বড় চাকরিই করে।তবুও তো পরিযায়ী ।আমিও তো চাতক নয়নে মুঠো ফোনের ভরসায় পড়ে থাকি।

কিছু বলবেন এই রাজ্যের নেতা ও নেত্রী রা।প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল আমাকে মুম্বাই এর কাপড় মিলে কাজ করা মহেশ।

হেঁটে হেঁটে দেশে ফিরলেও আবার যে সেই পথে।রুটি কাপড় আর মকান।

আমি তো ঢেঁকি মাত্র ।ধান ভাঙার কাজটি করছি।