Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

💛🧡❤💜💙 কে অপরাধী ? 💙💜❤🧡💛      ❣🌿❣🌿❣ইন্দ্রনীল❣🌿❣🌿❣ 
      -- জানিস ভাস্কর ? আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমিও বেনারসি শাড়ি পরব। আমাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হবে। কত মজা হবে। তাইনা?আমি রুমির চোখে মুখে খুশির জোয়ার দেখে, আমার মলিন…

 


💛🧡❤💜💙 কে অপরাধী ? 💙💜❤🧡💛

      ❣🌿❣🌿❣ইন্দ্রনীল❣🌿❣🌿❣ 


      -- জানিস ভাস্কর ? আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমিও বেনারসি শাড়ি পরব। আমাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হবে। কত মজা হবে। তাইনা?

আমি রুমির চোখে মুখে খুশির জোয়ার দেখে, আমার মলিন চোখের কোণ কুঁচকে, ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা টেনে তার কথায় গলা মিলিয়ে বললাম, 

-- "হ্যাঁ, তোকে তখন খুব সুন্দর লাগবে।"

রুমি আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, 

-- "জানিস ভাস্কর ? মা আজ থেকে আমাকে রান্না শিখিয়ে দিচ্ছে। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে রাঁধতে হবে তো, সেজন্য। তুই না কৈ মাছের ঝোল খেতে পছন্দ করিস? আমি এটাও শিখে নেব। তারপর তুই যখন আমার শ্বশুর বাড়ি যাবি আমি নিজে হাতে তোকে রান্না করে খাওয়াব। খবরদার, খালি হাতে যাবি না। আমার জন্য মুড়ির মোয়া আর চকলেট কিনে নিয়ে যাবি।"

আমি আবার রুমির কথায় তাল মিলিয়ে বললাম,

-- "তুই যা যা খেতে পছন্দ করিস, সব নিয়ে যাব তোর জন্য।"

আকাশের কান্না শুরু হয়ে গেল। রুমিকে যেতে বলার পরও সে যাবে না। আজ নাকি আমার সাথে সে ভিজবে। শ্বশুর বাড়ি গেলে তো আর ভিজতে পারবে না। তাই তার এই আবদার।

সে বৃষ্টির জমে থাকা জলেতে লাফিয়ে জল ছেটাচ্ছে। কত আনন্দ তার চোখে মুখে। আমারই কেবল হাসির আড়ালে দুঃখ কষ্টগুলো জল হয়ে চোখ দিয়ে ঝরছে। আকাশ আমার হাসির আড়ালে দুঃখকে খুঁজে পেয়ে নিজেই বুক চাপড়ে কেঁদে জল ঝরাচ্ছে। এতে করে আমার চোখের জল আড়াল করতে পেরেছি। আমি যে রুমিকে ভালোবাসি এটাই সে এতদিন ধরে বুঝতে পারেনি। তাহলে কোনটা আমার চোখের জল আর কোনটা বৃষ্টির জল সে আলাদা করবে কী করে?


রুমি আমার ছোট বেলার খেলার সাথী। এখনও তো সে ছোট'ই আছে। সদ্য এইচ এস পাশ করা মেয়েটি আর কত বড় হয়েছে। তবুও কেন যে তার বাবা মা তাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে আমার জানা নেই। আমি ফাস্ট ইয়ারে পড়ি অথচ মা সেদিন দুষ্টুমি করেই বলেছিল, 

-- "ভাস্কর বড় হয়ে গেছে। আর পাঁচ ছয় বছর পরই তাকে বিয়ে দিয়ে ঘরে মিষ্টি একটা বউ নিয়ে আসব।"

বেণী দুলিয়ে স্কুলে যাওয়া মেয়েটি পনেরো দিন পর কারো বউ হয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবে। অথচ সে জানে না প্রেম কী? ভালোবাসা কী? রুমির ভেতরের ছোট রুমিটা বড় হয়নি এখনো।

আমি একদিন রুমিকে বলেছিলাম, 

-- "আমাকে বিয়ে করবি?"

উত্তরে বলেছিল, 

-- " তোকে বিয়ে করব কেন? আমার তো বিয়ে হবে অনেক দূরে। ছবির মতো আমিও পালকিতে করে শ্বশুর বাড়ি যাব।"

কত করে রুমিকে বোঝাতে চেয়েছি, আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। অথচ সে ভালোবাসা কী সেটাই বোঝেনা। সিক্স সেভেনের মেয়েরা প্রেম বোঝে আর রুমি বোঝেনা। এজন্যই তো বলি তার ভেতরের শিশু সূলভ স্বত্ত্বাটি এখনো ছোটই রয়ে গেছে। তবুও আমি অপেক্ষা করেছি দিনের পর দিন। ভেবেছি একসময় তো বুঝতে পারবে। কিন্তু এত ছোট বয়সে তাকে বিয়ে দিয়ে দেবে সেটা ভাবিনি।


পনেরো দিন পর রুমির বিয়ে। তাই বাইরে এতটা ঘোরাঘুরি তার উচিত নয়। তার মা তাকে এমনটাই বুঝিয়েছে। আর সেজন্যই আজ চারদিনেও রুমির দেখা মেলেনি। যে রুমিকে একটা দিন চোখের আড়াল করিনি। আজ বাধ্য হয়ে চারদিন না দেখেই থাকতে হচ্ছে। বুকের ভেতরের কোনো এক অংশে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি।

প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় যখন স্কুল থেকে ফেরার পথে আমি তেঁতুল গাছে উঠলাম। আমি ওপর থেকে তেঁতুল ফেললে রুমি নিচ থেকে কুড়োত। দু'জনে তেঁতুল খেতে খেতে বাড়ি ফিরতাম। বাড়ির পাশে ঘাটওয়ালা পুকুরের সিঁড়িতে বসে জলেতে পা দোলাতাম। আমি আর রুমি কেউ সাঁতার জানতাম না। একদিন রুমি বলল, 

-- "ভাস্কর আমি যদি জলেতে পড়ে যাই তুই ছবির মতো করে আমাকে বাঁচাতে জলেতে ঝাঁপ দিবিনা?"

আমি সেদিন বলেছিলাম, 

-- "তুইও সাঁতার জানিস না আমিও না। তোকে বাঁচাতে জলেতে ঝাঁপ দেব। হয়তো দু'জনই বেঁচে ফিরব, নয়তো দু'জনই জড়িয়ে ধরে মরে জলেতে ভেসে উঠব।"

রুমি রাগ দেখিয়ে চেঁচিয়ে উঠল। 

-- "তুই মরার কথা বললি কেন? আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না।"

সন্ধ্যা রাতে জোনাকি পোকা ধরে রুমির হাতে দিতাম। সে তালু বন্দী করে আমাকে দেখিয়ে বলত,

-- "দেখ দেখ আমার ছোট ঘরে জোনাক জ্বলে।"

তখন রুমিকে একদম ছোট মনে হতো না। পাকা পাকা কথা বলত।


রুমির বিয়ের দিন রুমি নাকি আমাকে খুঁজেছিল । তানিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে জানতে চেয়েছিল আমি কোথায়? তখন আমি বাড়ি ছিলাম না। যাকে ভালোবাসি তার বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার মতো সাহস নেই আমার। চোখের জল কারো বাঁধা মানে না কখনো কখনো মানুষের সামনেই ঝরঝর করে ঝরতে থাকে। আমি তখন নদীর পাড়ে আমার ভালোবাসা বিসর্জন দিচ্ছিলাম। ভালোবাসার মানুষটিকে বোঝাতেই পারলাম না ভালোবাসা কাকে বলে। এ কেমন ভালোবাসা আমার?


রুমি অষ্টমঙ্গলা তে এল বাবার বাড়ি। আমি আবারো নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম। এবার আর পারলাম না নিজেকে লুকোতে। রুমির মা এল আমাদের বাড়ি। আমার হাত ধরে বসে পড়ল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার বাবা মা জানতে চাইল কী হয়েছে। রুমির মায়ের সরল সীকারোক্তি,

-- "ভাস্কর আমার মেয়েটা পাগলামি করছে। রুমি আর শ্বশুর বাড়ি যাবেনা বলে দিয়েছে। রুমি নির্লজ্জের মতো ভাস্করের কথা বলছে। এখন ভাস্করই পারে আমার মেয়েটাকে বুঝিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে। "

বাবা মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করতে পারছে না কিছু। আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা। যে মেয়েটা প্রেম ভালোবাসা কী জানেনা। যে তার নিজের বিয়েতে এত খুশি। সে কেন আমার কথা বলে শ্বশুর বাড়ি যাবেনা? আমি রুমির মা'কে বলেছি, যে করেই হোক আমি রুমিকে বোঝাব।


পুকুর পাড়ে আমার সামনে মাথা নিচু করে রুমি দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে আবারো প্রশ্ন করলাম, -- "এসব কী?"

উত্তরে বলল,

-- "ভাস্কর তুই না আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিস? আমি তো তখন বুঝতাম না। এখন বিয়ে হবার পর বুঝতে পারছি তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না। তুই বিয়ের দিন আসিসনি। আমি মন খারাপ করে শ্বশুর বাড়ি গিয়েছি। এক খুড়তুতো ননদ আমাকে পরের দিন জিজ্ঞেস করল আমার কারো সাথে প্রেম ছিল নাকি? আমি বলেছি কোনটাকে প্রেম বলে? কী বুঝিয়েছে না বুঝিয়েছে সেটা বলার দরকার নেই। তবে এতটুকু বুঝতে পারি যে আমি তোকে হারানোর পর বুঝেছি প্রেম কী। আমি আর যাব না শ্বশুর বাড়ি। তুই আমাকে বিয়ে কর। "

আমি রুমির মাথায় হাত রাখলাম। ভেতরটা গলে যাচ্ছে। অথচ চোখে রাগ দেখিয়ে বললাম, 

-- " ছোটবেলা বিয়ের কথা বলেছি আর সেটা তুই এখনো ভেবে বসে আছিস ? আমি বিয়ে করব পাঁচ ছ বছর পরে। তোর বিয়ে হয়ে গেছে আর তুই বলছিস তোকে বিয়ে করতে। সারা এলাকার মানুষ ছিঃ ছিঃ করবে। কয়েকটা দিন গেলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। কাকু কাকিমার কথা একটু ভেবে দেখ। তাদের সম্মান নষ্ট করিস না। শ্বশুর বাড়ি যা।


রুমি চোখের জল মুছতে মুছতে বাড়ি যাচ্ছে। শেষে কিছু না বলেই চলে গেল। মনে হয় আমার বোঝানোতে কাজ হয়েছে। তবুও আমি রুমির মায়ের সাথে আবার দেখা করলাম। বললাম, আমি বাড়িতে থাকলে রুমি যেতে চাইবে না। আমি কিছুদিনের জন্য দাদুর বাড়ি যাই। আমাকে কয়েকদিন না দেখলে এমনিতেই রুমির মন ঘুরবে। রুমির মা আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। আমি বাড়িতে এসে তৈরী হয়ে দাদুর বাড়ি ছুটলাম।


বাবার ফোন পেয়ে বাড়ি এলাম। এলাকার সবাই আমাকে দেখে কেমন যেন ফিসফিস করছে। এক ছোট ভাই এসে বলল,

-- "রুমি দি জলেতে পরে মরে গেছে। সাঁতার জানেনা, মনে হয় পরে গেছিল।"

আমি বাকরুদ্ধ। আমার পা আর সামনে এগোচ্ছে না।

রুমির লাশের পাশে মানুষের জটলা। অনেকের চোখে জল। আমার চোখে জল নেই। রুমির বিয়ের কথা শুনে সেদিন বৃষ্টির মতো চোখ থেকে জল ঝরেছিল। আজ আমার চোখে জল নেই। কেমন যেন পাথর পাথর মনে হচ্ছে নিজেকে। আমি কী সত্যিই রুমিকে ভালোবাসা বোঝাতে পারিনি? নাকি আমি নিজেই ভালোবাসা বুঝলাম না? আসলে কে অপরাধী?


কয়েকটা দিন কেটে গেল। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে বারবার হেরে যাচ্ছি। যতবারই মনে প্রশ্ন আসছে ভালোবাসার অপরাধী কে? তখন আমার মন আমার দিকেই আঙ্গুল তুলছে বারবার।

ব্রীজে দাঁড়িয়ে আছি, নিচে নদী। জলেতে আমার খুব ভয়, আমি সাঁতার জানিনা। রুমিও সাঁতার জানত না। পুকুর ঘাটে বসে রুমি আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, আমি জলেতে পড়ে গেলে আমাকে বাঁচাতে ছবির মতো করে ঝাঁপ দিবি?

আমি বলেছিলাম ঝাঁপ দেব। বাঁচলে দু'জনেই বেঁচে ফিরব নয়তো দু'জনই মরব।

রুমি সেই জলেতেই মরল। আমি ঝাঁপ দিয়ে রুমিকে বাঁচাতে পারিনি। তবে আজ ঝাঁপ দিতে বাঁধা নেই। সাঁতার জানিনা তাতে কী? আমার রুমিকে জলের নিচে খুঁজে বেড়াব।


                                               🍁ইন্দ্রনীল🍁


💛🧡❤💜💙💚💛🧡❤💜💙💚💛🧡❤

       ♨️🍀♨️🍀♨️ইন্দ্রনীল♨️🍀♨️🍀♨️