Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন#ছোটোগল্প     #কাজরী               (১)ট্রেনটা যখন কুলটিতে এসে থামলো তখন সূর্য  মধ্য যৌবনে,কাজেই তার তেজকে সামলানো অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার। পিঠে একটা পেল্লায় মার্কা রুকস্যাক আর সাইড ব্যাগ নিয়ে শৈবাল স্টেশনে নামত…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

#ছোটোগল্প   

  #কাজরী

               (১)

ট্রেনটা যখন কুলটিতে এসে থামলো তখন সূর্য  মধ্য যৌবনে,কাজেই তার তেজকে সামলানো অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার। পিঠে একটা পেল্লায় মার্কা রুকস্যাক আর সাইড ব্যাগ নিয়ে শৈবাল স্টেশনে নামতেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল......

মনেমনে ভাবল আর ট্রান্সফার করার জায়গা পেল না!

ছোটো থেকেই শৈবাল ভীষন স্নব.... বড়োলোকের ছেলে হয়ে জন্মানোর উন্নাসিকতা তার মজ্জায় প্রচ্ছন্ন আস্কারা পায়....

সরকারি চাকরিটা পেয়েই  গেছিল শৈবাল,ডেসিগনেশনটাও লোভনীয়, ডিরেক্টর অফ ফিন্যান্স!


সে ইতিউতি চাইতেই দেখতে পেল একটি বেঁটেখাটো চেহারার লোক ওর দিকেই এগিয়ে আসছে , শৈবাল বুঝতে পারলো ওকে এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার আগমন।


স্টেশন থেকে দুকিলোমিটার ভেতরে বাংলোটার সামনে গাড়িটা যখন থামল;  শৈবালের মনের ভেতরের খিঁচটা হঠাৎ করেই কখন যেন  উধাও হয়ে গেল,সে শোনা কথার উপর ভিত্তি করে মনে মনে যে দৃশ্যপট এঁকেছিল তার থেকেও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে কেমন যেন একটা উদ্দামতা রয়েছে যেটা শহরের সেই সাজানো গোছানো বড্ড বেশী মেকী মোড়কে মোড়ানো শহরটাকে সরিয়ে দিয়ে একটা বন্য সৌন্দর্য নিয়ে যেন তাকে সাদরে আহ্বান করছে।


আজ শুক্রবার ,সব কাজ বুঝে নিয়ে সে সোমবার থেকে কাজে জয়েন করবে।

অতএব এই দুদিন সে মোটামুটি ফ্রী।

একের পর এক ফোন কলগুলো সারতে লাগলো; বাড়ি, বন্ধুবান্ধব,আত্মীয় সকলের সাথে।

বিশেষ করে যে সব বিশেষ শ্রেণীর বান্ধবী যাদের সাথে ফ্লার্ট করার মাত্রাটা অনেক সময়ই সীমা লঙ্ঘন করে দেয়! তাদের সাথে একটু বেশিই অন্তরঙ্গ হয়ে কথা বলার জন্য এই জায়গাটা বেশ অন‌ন্য!

শৈবাল ভীষণ খুঁতখুঁতে ,প্রেম সে অনেকের সাথেই করে, কিন্তু ভালোবাসার মতো মানুষ এখনো ধরা দেয়নি তাকে।

    

                        (২)


একরাশ মিষ্টি রোদের আলো কখন যেন ঘরে ঢুকে লুটোপুটি খাচ্ছিল আর তার ছোঁয়ায় শৈবালের যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখনই জানলা দিয়ে দেখতে পেল গেট খুলে মোরাম বিছানো রাস্তা দিয়ে একটি মেয়ে হেঁটে আসছে ,দূর থেকে হলেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মেয়েটির হাঁটা, শরীরের গঠন আর গায়ের রঙ সব মিলিয়ে কোথাও যেন এক বন্য সৌন্দর্য্য যা কিনা এই প্রকৃতির সাথেই ভীষণ ভাবে এক মেলবন্ধন ঘটিয়েছে!


"বাবু আমি কাজরী বটেক,তুর ঘরের কাজের জইন্য হামাকে বড়ো বাবু পাঠাইছে"-ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখতে গিয়ে সারা শরীরে তড়িৎ প্রবাহ খেলে গেল শৈবালের শরীরে!

মনে হলো যেন কোনো কালো কষ্টি পাথরে খোদাই করে তৈরী করা হয়েছে এক নারী মূর্তি ! তার শৈল্পিক চিন্তাধারার প্রতিটি সূক্ষ্ম কাজ সুনিপুণ হাতে নিটোল ভাবে গড়ে তুলেছে এক নারী শরীর!


                      (৩)


মানুষ নিজেই হয়তো কখনো কখনো তার মনের তল খুঁজে পায়না!

চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবগুলো যখন এলোমেলো ভাবে ভাবনার গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকে তখনই হয়তো মনেরকোণে বাসা বাঁধা আর একটি মন; অবচেতনে পরিসর বাড়াতে থাকে!

নাহলে আদিবাসী  এই গ্রাম্য মেয়েটির প্রতি আকর্ষণ কেন দুর্নিবার হয়ে উঠছে! 

কাজরীর নিটোল শরীরের নীরব হাতছানিতে দিনে দিনে সম্মোহিত হতে লাগলো শৈবাল!

তার রুচি,শিক্ষা, আভিজাত্যের অহং সবকিছু কে হারিয়ে দিচ্ছে এই অশিক্ষিত গ্রাম্য মেয়েটি! 

পূর্ণিমার মায়াবী চাঁদের আলো যেমন পৃথিবীর বুকে এসে লেপ্টে থাকে তেমনি দুই ভিন্ন রুচির মানুষ কিসের অমোঘ টানে মিশে যেতে লাগলো একের পর এক রাত!

শুধু শরীর নয় ভালোবেসেছিল সে কাজরীর গ্রাম্য সরলতাকে!

যদি মোহ-ই হবে তবে এই তিনবছরেও তার ভালোবাসায় এতোটুক মড়চে পড়েনি তো!

ফেরার দিন অফিসিয়াল কাজকর্ম গুছিয়ে যখন সে বাংলোতে ফেরার পথে ,দূর থেকে দেখতে পেল কাজরী পথের একধারে দাঁড়িয়ে আছে নুয়ে পড়া বেত গাছের মতো!

শৈবাল গাড়ি থেকে নেমে তার কাছে যেতেই , চোখের ভেতর এক দিঘী জল নিয়ে বলে উঠল,"এই কাজরীকে কখনো ভুলবি নি তো বাবু!" সুধু এইটুকু কথা দে তু.... সুধু এইটুকু!!

 

                     (৪)


না , সেদিন কোনো কথা দিতে পারেনি শৈবাল কাজরীকে!

কিন্তু আজ প্রায় ত্রিশ বছর পর ছেলে ,বৌমা,আর স্ত্রী মৃত্তিকাকে নিয়ে কোনো এককারণে যখন কুলটিতে আবার আসল , গাড়ির ভেতরের সকলের সাথে গল্পের জমাটি আড্ডা থেকে সরিয়ে সেই ঘোলাটে চোখ দুটো খুঁজে বেড়াচ্ছিল সেই তন্বী রামকিঙ্করের হাতের তৈরী সেই জীবন্ত যুবতীকে, যদি একবারও দেখতে পায় তবে বলবে ,"কাজরী এই  দীর্ঘ পঁচিশ বছর পরেও তোকে ভুলিনি রে....আর ভুলবও না বাকী দিনগুলো....!!


#🖋️#স্বরূপা