#আত্মজা#শম্পাশম্পি_চক্রবর্তী #ছোটগল্প #সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন@copyright protected অনিকের ভালোবাসায় শরীরটা যখন একটু একটু করে নুইয়ে পড়ছে ইন্দিরার। চোখে নেমে আসছে আবেশের বারিধারা, অনিকের ঠোঁটের স্পর্শ একের পর এক ইন্দিরার সর্ব শরীর ছু…
#আত্মজা
#শম্পাশম্পি_চক্রবর্তী
#ছোটগল্প
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
@copyright protected
অনিকের ভালোবাসায় শরীরটা যখন একটু একটু করে নুইয়ে পড়ছে ইন্দিরার। চোখে নেমে আসছে আবেশের বারিধারা, অনিকের ঠোঁটের স্পর্শ একের পর এক ইন্দিরার সর্ব শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে দশ এগারো বছরের বালিকা কন্ঠের ক্রন্দন ভেসে আসতেই নিজেকে অনিকের আলিঙ্গন থেকে এক প্রকার জোর করে মুক্ত করে নিয়ে কিছু সময় আগে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া লাল টুকটুকে নাইটিটাতে নগ্ন শরীরটা ঢাকা দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ইন্দিরা। দ্রুত এগিয়ে গেল বন্ধ দরজার দিকে। নীলাভ রাত বাতির আলোকে আশ্রয় করে দরজার ছিটকিনিটা খুলে ফেলল সহজেই। তারপর এক প্রকার দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । সবটুকু লক্ষ্য করলো অনিক। ক্ষণিকের জন্য রাগে শরীরটা জ্বলে উঠলো অনিকের। আজ দশ বছর ধরে প্রায় রাতেই এই একই সমস্যা তাঁর আর ইন্দিরার জীবনে । ইন্দিরাকে যে মুহূর্তে কাছে পেতে চায় অনিক ঠিক তখনই মেয়েটা কেঁদে ওঠে পাশের ঘর থেকে। একটা বিকলাঙ্গ অথর্ব মেয়ে যার মস্তিষ্কের কোনো বৃদ্ধিই ঘটেনি আজ দশ বছর বয়সে সে কেমন করে বোঝে এই সময় টুকু বাবা, মা তাঁদের নিজেদের পেতে চায় শারীরিক ভাবে? ওই মুহূর্তটা তার জন্য নয় । শুধু তার বাবা মায়ের একান্ত নিজের। হিংসা, হিংসা মেয়েটার মন জুড়ে হিংসা । ইন্দিরা অবশ্য প্রতিবাদ করে বলে ওঠে--" অনিক তুমি ভুল বুঝছো টিনাকে। রাতের অন্ধকার ও ভয় পায় সেই শিশু বয়স থেকে তা তো তুমি জানো । আমাকে পাশে না দেখতে পেয়ে ও ভয়ে চিৎকার করে ওঠে এ তো নতুন কথা নয়। ও আমাদের দৈহিক কামনা বাসনা এসব কিছুই বোঝেনা। বোঝেনা আমার তোমার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তটা কী? না বুঝে ও সেটা হিংসা করবে ? হাস্যকর । আর তা যদি সত্যিই করত তাহলে আজ দশ বছর হয়ে গেল ওর শারীরিক বৃদ্ধি হয়েছে অথচ মানসিক বৃদ্ধি হল না কেন?" "অনিক ব্যাপারটা মানতে পারেনা। সারা জীবনের বোঝা স্বরূপ মেয়েটাকে কেন জানে না নিজের অজান্তেই এখন ঘৃণা লাগে ওর । জড় বুদ্ধি সম্পন্ন মেয়েটার চোখের ভাবলেশহীন বোকাবোকা দৃষ্টি, না বলা কথা ,অদ্ভুত মুখভঙ্গি আজ দশ বছর ধরে সহ্য করতে করতে বিরক্তিতে শরীরটা ভরে যায় । মাঝে মাঝে মনে হয় ইন্দিরা কে লুকিয়ে খানিকটা বিষ ওর গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে চিরকালের মতো এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। তাতে তো কোনো ক্ষতি নেই একটা জড়বস্তুর ন্যায় শরীরের যদি ইতি ঘটে যায় তাতে কার কী যাবে আসবে? বরং সে আর ইন্দিরা মুক্তি পাবে ওই মেয়েটার মৃত্যুতে। আর ওই বোঝাকে বয়ে বেড়ানোর প্রয়োজন থাকবেনা। থাকবেনা দায়। পরম শান্তি। এমন হত্যাতে কোনো পাপ নেই। এক জড়বুদ্ধি সম্পন্ন মেয়ে কে এই পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখাই পাপ। তার চাইতে বরং আমার ঔরসজাত সন্তান আমিই এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো। চোখের সামনে ওর কোনো অস্তিত্ব আর রাখবোনা। তারপর আমি আর ইন্দিরা চলে যাবো অনেক অনেক দূরে । সেখানেই দুজনে দুজনকে চিনে নেবো নতুন করে। জন্ম দেবো সুস্থ সুন্দর এক নতুন প্রজন্মকে। যে আমাকে বলবে বাবা আর ইন্দিরা কে মা। যাঁর চোখে থাকবে না ভাবলেশহীন দৃষ্টি । যে বাঁচবে না বাবা মায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে । যাঁর জড়বুদ্ধি দাগ ফেলবে না ইন্দিরা আর তাঁর মনের গভীরে যাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ বুঝিয়ে দেবে অনেক না বলা কথা ।
সে ছেলেই হোক বা মেয়েই হোক তার ভাবনাতে থাকবে তাঁর বাবা অনিক আর মা ইন্দিরার নাম।,,,,,,,,
না না টিনার মতো এমন জড়বুদ্ধি সম্পন্ন সন্তানের তার দরকার নেই। আজ দশ বছরে অনেক অনেক সহ্য করেছে তারা। তার মৃত্যুই শ্রেয়। আর ইন্দিরামা হয়ে যেটা করতে পারবে না সেটা বাপ হয়ে সে ই না হয় করবে। চিরকালের জন্য মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। এবং তা কালকেই।,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
---" তুমি আজ অফিসে যাবে না অনিক?
শরীর টা কী খারাপ?"
----" হ্যাঁ শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না।"
পরের দিন সারা রাত একাকী ঘরে যে চিন্তা টা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে অনিকের তা বাস্তবায়িত করার জন্যই অফিস টা না গিয়ে ইন্দিরা তাঁর অফিসে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করাতে সরাসরি মিথ্যা কথাটা বলেই ফেলে অনিক ।
ইন্দিরা কপালে হাত ঠেকাল অনিকের।
চিন্তিত কন্ঠস্বরে বলে উঠলো---" না জ্বর তো মনে হচ্ছে না। এমনি শরীরটা অসুস্থ হয়েছে বোধকরি । যাইহোক বাড়িতে রেস্ট নাও। আজ অফিস থেকে ফিরে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ গিফট দেবো। তা তুমি ভাবতেও পারবে না এমন গিফট। " অনিক স্মিত হাসি হাসল। মনে মনে ইন্দিরাকে উদ্দেশ্য করে বলেও উঠল---"তুমি কী সারপ্রাইজ গিফট দেবে ইন্দু তার চাইতে অনেক বড় সারপ্রাইজ গিফট আমি দেবো তোমাকে। তুমি ও ভাবতে পারবেনা সারপ্রাইজ টা কী । একজন বাবা তাঁর সন্তানের প্রতি সঠিক বিচার করতে চলেছে সেটাই সারপ্রাইজ গিফট । হয়তো তোমার মানতে কষ্ট হবে। আমাকে ঘৃণা ও করবে। পুলিশের কাছে আমার নামে নিজের সন্তানকে হত্যা করার অপরাধে অভিযুক্ত করে ফাঁসি চাইবে কিন্তু ইন্দু আমরা কী সত্যিই বেঁচে আছি ? আমি, তুমি কিংবা টিনা ? না না কেউ বেঁচে নেই প্রতিনিয়ত মরছি একটু একটু করে । তার চাইতে পুরোপুরি মরার আগে ওই জড়বুদ্ধি টাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাই না কেন দূরে কোথাও ?
সব সব ভুলে গিয়ে শুরু করি নতুন জীবন।",,,,,,,,,,,,,,,
---" কী ভাবছ অনিক? যাইহোক আমাকে অফিস যেতেই হবে পাঞ্চালিকে বলে দিয়েছি টিনা কে আজ দুধটা না দিতে । গতকাল রাত থেকেই মেয়ে টার পায়খানা হচ্ছে । আর তুমি যখন অফিস যাচ্ছ না তখন টিনার দিকে একটু খেয়াল রেখ। বেশি পায়খানা করলে ডাক্তার কাকু কে একটা খবর দিও।" কথাগুলি প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে ইন্দিরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনিক। মনে মনে খুব হাসিও পেল অনিকের। নিজের অজান্তেই বলে ফেলল---
----' আমাকে তুমি টিনাকে দেখার দায়িত্ব দিয়ে গেলে ইন্দু! দেখবো পরম যত্নে দেখবো। আজ তো প্রাণ ভরে দেখারই দিন । যে মেয়ে জন্ম গ্রহণ করার আগে তোমার আমার দুজনের চোখ ভরে তুলেছিল কত স্বপ্ন । যাঁকে বড় করে তোলার জন্য ছিল কত পরিকল্পনা সেই মেয়েটাকেই তো আজ দেখব প্রাণ ভরে।",,,,,,,,,,,,
সন্ধ্যের পর থেকে মনটা ছটফট করছে অনিকের। ইন্দিরা অফিস চলে যেতেই ওর প্রেসক্রিপশন নিয়ে মেডিকেল স্টোর থেকে কিনে এনেছে গোটা কয়েক স্লিপিং পিল । রাতে ঘুম হয়না বলে ডাক্তার বক্সি ইন্দিরাকে এই পাওয়ার ফুল স্লিপিং পিলের অর্ধেকেরও কম পরিমাণ ক্ষেতে বলেছিলেন । ---"কোন্ কাজে কী লাগে কে বলতে পারে? মায়ের স্লিপিং পিল মেয়ে খাবে । তারপর অনন্ত ঘুমে ডুবে যাবে মেয়েটা। কোনো জ্বালা যন্ত্রণা কিছুই পাবেনা। নিজে মুক্ত হবে আমাদের ও মুক্ত করবে। না আর দেরী নয়। মনে মনে বির বির করে উঠলো অনিক ।" পাঞ্চালিকে আজ আগেভাগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে । ইন্দিরার ফিরতে আরো ঘন্টা খানেক দেরী। এই তো সুযোগ । রান্না ঘরে সোজা ঢুকে গিয়ে ফ্রিজ থেকে একবাটি দুধ বার করে তা গ্যাস ওভেনে গরম করে নিয়ে বাটি থেকে দুধটুকু গেলাসে ঢেলে স্লিপিং পিল গুলোর সবকটি তাতে মিশিয়ে দিয়ে ভালো করে চামচ দিয়ে তা গুলে অনিক সোজা টিনার ঘরে ঢুকলো।
সন্ধ্যের পর থেকে ইন্দিরা আসা অবধি টিনাকে হুইলচেয়ারেই বসিয়ে রাখে পাঞ্চালি । আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়। ,,,,,,,,,,,,,,,
অনিক ঘরে ঢুকেই এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিল। কেন জানে না মনে হল তার এই হত্যার কেউ সাক্ষী থেকে যাচ্ছে না তো?" না ভুল ভাবছে সে। কেউ নেই। শুধু সে আর ওই জড়বুদ্ধি সম্পন্ন তাঁদের একমাত্র মেয়ে টিনা। একজন মারবে আর একজন মরবে। টিনা নামটা আদর করে অনিকেরই রাখা।
ভালো একটা নাম ইন্দিরা দিয়েছিল পত্রলেখা। ,,,,,,,,,,,,,,,
এগিয়ে গেল অনিক খুব খুব কাছে। ডাকল
--" টিনা," টিনা আর তার ব্যবধান মাত্র হাত খানেক। । স্লিপিং পিল মেশানো হালকা গরম করা দুধ সুদ্ধু গেলাসটা মেয়ের দিকে পরম যত্নে এগিয়ে দিতে গিয়ে মনে পড়ল তাদের টিনা তো এখনো ঝিনুক বাটিতে খায়। ও তো এমন ভাবে গেলাস ধরে খেতে পারবেনা। কিন্তু ঝিনুক কোথায়? এদিকে ইন্দিরা এসে পরার সময় ও এগিয়ে আসছে। মুখে ঢেলে দেওয়াই ঠিক হবে। কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো অনিক তার আত্মজার দিকে। চোখের কোণ দুটো অজান্তেই ভরে উঠলো লবণাক্ত জলে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে ? সে তো এটাই চায়। না কষ্ট পেলে চলবে না। ডান হাতে গেলাস ভর্তি দুধ আর বাম হাতে চেপে ধরলো টিনার মুখ। অবাধ্য মেয়ে হাঁ করতে চায় না দুধটুকু গলাধঃকরণ করার জন্য । কিন্তু অনিকের মুগুর ভাঁজা শক্ত হাতের কঠোর চাপ সে বালিকা বেশিক্ষণ সইতে পারলোনা। হাঁ টুকু করেই ফেলল। আর অপেক্ষা করেনি অনিক স্বল্প স্বল্প করে তার আত্মজার মুখের মধ্যে ঢেলে দিতে লাগল দুধটুকু । আর বাঁধা দিলনা বালিকাও। অবলীলায় গলাধঃকরণ করল সবটুকু দুধ।,,,,,,,,
---" বাবা বাবা বা বাব্বা"।
চমকে উঠলো অনিক। হাতে ধরা খালি দুধের গেলাসটা মাটিতে পড়ার তীব্র আওয়াজ হল। শব্দটুকু অনুসরণ করে পিছন ফিরতেই দৃষ্টি গেল ইন্দিরার দিকে। হাতে মোবাইল ফোন।
সহাস্য মুখ । অনিক কিংকর্তব্যবিমূঢ় । গলা দিয়ে স্বরটুকু বের হলনা। ,,,,,
----" অনিক টিনা কথা বলতে পারছে। গতকাল ও বাবা বাবা বলেছে । আমি মোবাইলে রেকর্ড করেছি শোনো। তোমাকে বলে ছিলাম না সারপ্রাইজ দেবো। অফিস থেকে ফেরার পথে ডাক্তার কাকুর সঙ্গে কথাও বলে ফিরলাম।
টিনার কথা বলার প্রবণতা যে আসছে সেটা খুব পজিটিভ দিক টিনার পক্ষে উনি বললেন।
যাই বলো অনিক মেয়ে কিন্তু মা ডাক আগে শিখলো না বলতে বাবা ডাকটাই শিখল।,,,,,,,,,,,,,,,,,,
অনিক স্তব্ধ । শুধু দুটি চোখের দৃষ্টি ইন্দিরার দিক থেকে সোজাসুজি নিবদ্ধ হল একমাত্র আত্মজার মলিন মুখের দিকে। একটু একটু করে মাথাটা এলিয়ে পরছে মেয়েটার।মুখটা পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে। হঠাত্ বিকট চিৎকার করে উঠলো অনিক বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার নিয়ে
---" টিনা"।
ইন্দিরা বুঝে উঠতে পারলো না অনিকের এমন অদ্ভুত চিৎকারের কারণ । ঘটনার আকস্মিকতায় সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ।
না বুঝেই বোবা চোখের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলো টিনার দিকে।
মোবাইলে তখনও শব্দ গুলো একনাগাড়ে বলে চলেছে ---" বাবা বা বা বাব্বা।"
#সমাপ্ত