সোমনাথ মুখোপাধ্যায় খেলা হল। টানটান উত্তেজনা বহাল থাকল। খেলা শেষও হল। কোভিড অতিমারি আবহে, গণতন্ত্রের খেলায় খেললেন মানুষ। বিপুল জনাদেশ সবুজ ঝড় হয়ে আছড়ে পড়ল রাজ্যে। আবার ফুটল জোড়া ফুল। খেলার শেষ হাসিটা হাসলেন মমতা ব্যানার্জি। ২১৩টি …
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
খেলা হল। টানটান উত্তেজনা বহাল থাকল। খেলা শেষও হল। কোভিড অতিমারি আবহে, গণতন্ত্রের খেলায় খেললেন মানুষ। বিপুল জনাদেশ সবুজ ঝড় হয়ে আছড়ে পড়ল রাজ্যে। আবার ফুটল জোড়া ফুল। খেলার শেষ হাসিটা হাসলেন মমতা ব্যানার্জি। ২১৩টি আসনে জয়লাভের নিরিখে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গড়তে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৭৭টি আসন পেয়ে বিরোধী আসনে বসতে হবে বিজেপিকে। একটিও আসন না পেয়ে কার্যত ধুয়ে মুছে গিয়েছে বাম কংগ্রেস! একদিকে যেমন বাংলা দখলের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল বিজেপির, অন্যদিকে তেমনি বড়োসড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়ে গেল সংযুক্ত মোর্চার নীতি ও ভবিষ্যৎ!
এবারের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছিল বিজেপি। দিল্লি থেকে ঘনঘন রাজ্যে এসেছেন দলের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্, সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা সহ তাবড় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা। পিছিয়ে ছিলেন না দিলীপ ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদার, রাজু ব্যানার্জি সহ বঙ্গ বিজেপির নেতারাও। জনসভা করেছেন। করেছেন মেগা রোড শো। দুর্নীতি, কাটমানি প্রভৃতি ইস্যুতে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কারোকে তুলে ধরতে পারেনি। ধর্মীয় মেরুকরণের রাস্তায় সুকৌশলে হেঁটেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অভিযোগ, ধর্মকে কেন্দ্র করে সংখ্যাগুরু কার্ড খেলতে চাওয়াকে কার্যত লাল কার্ড দেখিয়েছেন মানুষ! প্রায় একতরফা ভোট দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদকামী শক্তিকে রুখে দিয়েছেন তাঁরা! ওদিকে আব্বাস ভাইজানের সঙ্গে জোট প্রবল সিপিআইএম সমর্থকরাও অনেকে মেনে নিতে পারেননি। সূত্রের খবর, ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে সওয়াল করা বামেরা ধর্মগুরুর হাত ধরতে চাওয়া ভুল বার্তা গিয়েছে জনমানসে। ৩৪বছর বাংলা শাসন করা সিপিআইএম একঝাঁক ইয়ং ব্রিগেডকে নির্বাচনে নামালেও, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কারোকে প্রজেক্ট করতে পারেনি! মানুষ জবাব দিয়েছেন ভোটবাক্সে। সুজন চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য, তন্ময় ভট্টাচার্যের মতো পরিচিত বাম নেতারা হেরে গিয়েছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই গোটা রাজ্য চষে বেড়িয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। হুইল চেয়ারে বসে একের পর এক জনসভা করে গিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ও দুয়ারে সরকার কর্মসূচির সুফল তিনি কুড়িয়েছেন। তেমনি মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকরা। তাঁর জনমোহিনী শক্তি যে অটুট তা প্রমাণ করেছে সাম্প্রতিক তাঁর আহ্বানে বিভিন্ন সভায় বিপুল জনসমাগম। দারুণ ভাবে খেটে গিয়েছে 'বাংলা তার নিজের মেয়েকে চায়' স্লোগান।বাংলাকে যে তিনি নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন, তা আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন মমতা।
নন্দীগ্রামে অল্প ব্যবধানে মমতার হেরে যাওয়ার কাঁটা হয়তো থাকবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে কোনো আসন থেকে জিতে আসতে হবে তাঁকে। আগামী দিনে কোভিড পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রভৃতি ক্ষেত্র তাঁর মন্ত্রিসভার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে মমতা ব্যানার্জির কোনো বিকল্প নেই, ইভিএমের বোতাম টিপে তা প্রমাণ করে দিলেন মানুষ। গণতন্ত্রের খেলায় শেষ কথা বলেন সেই মানুষই!