# সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন #শিরোনামঃ লিওন্তিস-গার্ডেন #কলমে- জুলি ব্যানার্জী #তারিখ- 14/ 5 /2021 লিওন্তিস তার নাতি টমকে নিয়ে অভিশপ্ত ইউরোপ থেকে চলে আসে নির্জন পাহাড়ি এলাকায়। পরিবেশটা ছিল বড়ই মনোরম । সামনেই পাহাড় বেয়ে পড়ছে…
# সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
#শিরোনামঃ লিওন্তিস-গার্ডেন
#কলমে- জুলি ব্যানার্জী
#তারিখ- 14/ 5 /2021
লিওন্তিস তার নাতি টমকে নিয়ে অভিশপ্ত ইউরোপ থেকে চলে আসে নির্জন পাহাড়ি এলাকায়। পরিবেশটা ছিল বড়ই মনোরম । সামনেই পাহাড় বেয়ে পড়ছে ঝরনা। কিছুটা দূরে চা বাগান। চা বাগানের মেয়েরা যখন গান করে করে চা তোলে..... দেখতে অপূর্ব লাগে।
লিওন্তিস যে জমিটি কিনে ছিল তার ওপরে একটি কাঠের বাড়ি বানালো। তার পরেও বেশ অনেকটা জমি পড়েছিল। সেখানে লিওন্তিস বাগান বানালো। সারা বাড়িটা ঘিরেই সেই বাগান।
লিওন্তিস তার সমস্ত দুঃখ ভুলে থাকতো ওই বাগানটাকে নিয়ে। ইউরোপে থাকাকালীন তার সুন্দরী অল্প বয়সী স্ত্রীকে হারায়। তার স্ত্রীর চিকিৎসায় কোনরকম ত্রুটি রাখেনি। বেশকিছু সঞ্চিত অর্থ বেরিয়ে যায় তার চিকিৎসায় ।
চোখের সামনে তার স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। লিওন্তিসের ছেলে সেবান্টি তার ভালোলাগার মানুষ অলিভিয়া কে বিয়ে করে নিয়ে বাড়িতে আসে। আবার যেন নতুন করে ঘরে প্রাণ ফিরে আসে। অলিভিয়া ছেলের বউ হয়ে আসার পর থেকে ঘর আনন্দ মুখরিত হয়ে ওঠে। বছর দুই বাদে অলিভিয়া টমের জন্ম দেয়।
অলিভিয়া আর সেবান্টি একই অফিসে কাজ করতো। টম বেশ দাদুর স্নেহে বড় হতে লাগল। দেখতে দেখতে তিন বছর বয়স হয়ে গেল টমের। ফ্রাইডে সেদিন টমের জন্মদিন ছিল । টমের বাবা-মা বেশ কিছু কেনাকাটা করলেন টমকে উপহার দেবে বলে।
সেইদিনই দুর্ঘটনা ঘটলো টমের বাবা-মায়ের। গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারল পোস্টে। টেলিফোনে মৃত্যু খবর এলো। লিওন্তিস সেই দিনই ঠিক করল এই শহর ছেড়ে চলে যাবে কোন নির্জন এলাকায়। লিওন্তিস কোনভাবেই জানতে দেয়নি টমকে যে তার বাবা মা নেই।
বেশ কিছুদিনের মধ্যে চলে আসে এই নির্জন এলাকায় .....
পর্যটকরা যখন আসতেন বেড়াতে পাহাড়ে, চা-বাগানে.... দূর থেকে দেখা যেত লিওন্তিসের সুন্দর বাগান। পর্যটকরাও দলে দলে আসতেন তার সুন্দর বাগান টি দেখার জন্য। এক সময় সবার মুখে মুখে বিখ্যাত হয়ে গেল বাগানটি। নাম হল লিওন্তিস-গার্ডেন।
খবর পেয়ে এক বিরাট ব্যবসায়ী তার মেয়ে হেলেনার আবদারে....জন্মদিনে উপহার হিসেবে চেয়ে বসে লিওন্তিসগার্ডেন। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে না করতে পারে না। ভ্যালেন্টা ও পলিনা মিলে যায় লিওন্তিসের কাছে।
এই প্রস্তাব শুনে লিওন্তিস প্রচন্ড রেগে যায়। তিনি বললেন এই প্রতিটি গাছ আমার সন্তানের মতো। আমার এই শান্ত-স্নিগ্ধ বাগানে আমার স্ত্রী , ছেলে , বৌমাকে আমি খুঁজে পাই। তারা রোজ আসে... আমার সঙ্গে কথা বলে। টম আমার নাতি ভুলে থাকে এই বাগানটিকে নিয়ে।
পলিনা বললে, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা এসব ঘটনা জানতাম না ।যদি কোনদিন দরকার পড়ে অবশ্যই আমাদের খবর দেবেন। ভ্যালেন্টা ফোন নাম্বার লেখা একটি কার্ড এগিয়ে দেয় লিওন্তিসকে।
তারপর বেশ কিছু বছর নাতিকে নিয়ে সুন্দর জীবন কাটাতে থাকে। এখন নাতির বয়স সাত বছর।
এক দিন লিওন্তিস বাগানের কাজ করতে ব্যস্ত ছিল। সেই সময় হঠাৎই তার নাতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় বাগানে। লিওন্তিস ভয় পেয়ে গিয়ে.... চা বাগানের লোকেদের ডাকতে শুরু করে। তারা এসেদেখে টমের এরকম অবস্থা। ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসে। ডাক্তারি চিকিৎসায় বেশ কিছুদিন ভালো ছিল টম।
টম মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যেত, আর জ্ঞান থাকতো না বেশ কিছুক্ষণ। ভয় পেয়ে গেল লিওন্তিস.... তার নিজের বলতে কেউ নেই। টম হল একটিমাত্র বংশধর। লিওন্তিসের অর্থ বল বলতে কিছুই ছিলনা। তার স্ত্রীর চিকিৎসায় বেশকিছু অর্থ ব্যয় হয়ে গিয়েছিল। যেটুকু অর্থ ছিল টম এর চিকিৎসা আর বাগান সাজাতেই সব শেষ হয়ে গেছে। লিওন্তিস বেশ মোটা অংকের টাকা ধার করে টমকে নাম করা ডাক্তারকে দেখায়।
ডাক্তার সমস্ত কিছু টেস্টিং এর পর লিওন্তিসকে ডেকে বলে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করতে হবে। খরচা বেশ মোটা অংকের।
লিওন্তিস পাগলের মত হয়ে যায়। যেকোনো মূল্যে আমার নাতিকে বাঁচাতেই হবে। অনেকদিন আগে.... ভ্যালেন্টার দিয়ে যাওয়া কার্ডের কথা মনে পড়ল। কার্ড খুঁজে পাওয়ার পর ফোন করলো ভ্যালেন্টাকে। তোমাদেরকে আমার খুব প্রয়োজন যত তাড়াতাড়ি পারো দেখা করো ।
ভ্যালেন্টা আর পলিনা মিলে রাতারাতি লিওন্তিসের কাছে যায়। লিওন্তিস সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। লিওন্তিস বললে তোমার মেয়ে হেলেনার জন্য প্রয়োজন আমার এই সুন্দর বাগান। আমার প্রয়োজন প্রচুর অর্থ। সেই অর্থ দিয়ে বেশ কিছু ধার মেটাতে হবে। টমকে চিকিৎসা করে ভালো করতে হবে। আর যেটুকু অর্থ থাকবে আমার আর টমের ভালো মতনই চলে যাবে।
পলিনা বললে আপনার সাধের এত সুন্দর বাগান। যেখানে আপনি আপনার স্ত্রী, ছেলে, বৌমা কে দেখতে পান.... আমাদের দিয়ে দেবেন? প্রয়োজনে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয় । লিওন্তিস বললে আমার বয়স হয়েছে। জীবনে বড় বড় যন্ত্রণা পেয়েছি। আমি চাই আমার নাতি বেঁচে থাক এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে।