মহিষাদল , কাজল মাইতি, দেশ মানুষ : ঘরবাড়ি সমুদ্রের অতল নীল জলরাশি। সাধারণত দেখা মেলে সৈকতের বালুচরে। কিন্তু মোহনা ছাড়িয়ে নদীর নোনা জল যে তাকে মোহগ্রস্ত করে এত দূরে টেনে আনবে, তা ভাবতে পারেননি মহিষাদলের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকাল…
মহিষাদল , কাজল মাইতি, দেশ মানুষ : ঘরবাড়ি সমুদ্রের অতল নীল জলরাশি। সাধারণত দেখা মেলে সৈকতের বালুচরে। কিন্তু মোহনা ছাড়িয়ে নদীর নোনা জল যে তাকে মোহগ্রস্ত করে এত দূরে টেনে আনবে, তা ভাবতে পারেননি মহিষাদলের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকালে রূপনারায়ণের জলে জাল ফেলতেই উঠে এল এক বিশাল আকৃতির অলিভ রিডলি কচ্ছপ। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের অমৃতবেড়িয়া এলাকায়।
বন দফতর সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া ওই কচ্ছপটি পূর্ণবয়স্ক এবং ওজন প্রায় ৫৫ কেজির বেশি। সাধারণত গভীর সমুদ্রের বাসিন্দা এই কচ্ছপগুলি প্রজননের সময় উপকূলের বালুচরে উঠে আসে। কিন্তু সমুদ্রতট থেকে প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে নদীর শান্ত স্রোতে কেন সে চলে এল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। বন আধিকারিকদের প্রাথমিক অনুমান, পথ ভুল করেই হয়তো সমুদ্র থেকে নদীপথে ঢুকে পড়েছিল এই সামুদ্রিক জীবটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে অমৃতবেড়িয়া সংলগ্ন রূপনারায়ণ নদে চারা পোনা ধরার জন্য জাল পেতেছিলেন এক মৎস্যজীবী। জাল টানতেই ভারী কিছু একটার অস্তিত্ব টের পান তিনি। ডাঙায় জাল তুলতেই চক্ষু চড়কগাছ! দেখা যায়, জালে ছটফট করছে বিশাল এক কচ্ছপ। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমে যায় এলাকায়। স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা তৎক্ষণাৎ খবর দেন বন দফতরে। খবর পেয়ে জেলা ফরেস্ট বিভাগের নন্দকুমার রেঞ্জের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেটি কে উদ্ধার করেন।
এক সময় দিঘা, মন্দারমণি বা তাজপুরের সৈকতে অলিভ রিডলিদের অবাধ যাতায়াত ছিল। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনের ভিড় ও কোলাহলে সেই চেনা সৈকতগুলোতে আর সেভাবে দেখা মেলে না এই প্রজাতির কচ্ছপদের। রূপনারায়ণের এই ঘটনা যেন সেই স্মৃতিকেই আরও একবার উস্কে দিল।
নন্দকুমার ফরেস্ট রেঞ্জের অফিসার অতুলপ্রসাদ দে বলেন:
"অমৃতবেড়িয়া এলাকায় এক মৎস্যজীবীর জালে এই অলিভ রিডলি কচ্ছপটি ধরা পড়ে। এটি একটি পূর্ণবয়স্ক কচ্ছপ এবং বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর নিয়ম মেনে একে ফের সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হবে।"
আধিকারিকদের মতে, বন্যপ্রাণ ও লুপ্তপ্রায় প্রাণী রক্ষায় জেলায় যে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে, এটি তারই সাফল্যের প্রতিফলন। সাধারণ মানুষ এখন সচেতন। তাই প্রাণীটিকে আঘাত না করে বা কোথাও পাচার না করে সঙ্গে সঙ্গে বন দফতরে খবর দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও রূপনারায়ণ ও হলদি নদীতে পথ ভুলে এই প্রজাতির কচ্ছপ ঢুকে পড়ার নজির রয়েছে।
