Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#রানীবৌদি#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী #ছোটগল্প#সৃষ্টি সাহিত্য যাপনআমাদের বাড়িটা আর পাঁচটা বাড়ির মতো নয়। বাড়িটি কবেকার তা বলতে পারবো না তবে যেটুকু আন্দাজ করতে পারি বয়স একশোর কমে নয়। দাদুর আমল থেকে চারতলা বাড়িটির তিনতলা পর্যন্ত প্রায় দশ…

 


#রানীবৌদি

#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী 

#ছোটগল্প

#সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

আমাদের বাড়িটা আর পাঁচটা বাড়ির মতো নয়। বাড়িটি কবেকার তা বলতে পারবো না তবে যেটুকু আন্দাজ করতে পারি বয়স একশোর কমে নয়। দাদুর আমল থেকে চারতলা বাড়িটির তিনতলা পর্যন্ত প্রায় দশ টি ঘর নিয়ে পাঁচ টি পরিবারের বাস । আমি আর মা থাকি সব চাইতে ওপর তলায় তিনটি ঘর নিয়ে । আমি বিএ পাশ করে বেকার। বাবা বেসরকারি কর্মচারী ছিলেন হঠাত্ করে মারা গেলে এখন বাড়ির ভাড়াতেই আমার আর মায়ের চলে যায় কোনো রকমে। মায়ের বক্তব্য কেউ বাড়ি এসে আমাকে কাজের অফার না করলে কাজ করার কোনো দরকার নেই। যেভাবে চলছে চলুক। তাছাড়া পুরনো আমলের বাড়ি শ্যাম বাজারের বুকে মোটের ওপর দাম কয়েক কোটি টাকা। প্রমোটার রজত সেন তো তাকিয়ে বসে আছে আমাদের বাড়ির দিকে নেহাত্ পুরনো ভাড়াটে গুলোর প্রতি একটা মায়া জন্মেগেছে মায়ের তাই ভাড়া তুলে বাড়ি প্রমোটার কে দেওয়া কখনোই ভাবতে চান না। বললে ভুল হবে না আমারও তাই মতামত। 

************************

আমাদের যে কয়েকজন ভাড়া আছেন সকলের কেউ সুখী দম্পতি তো কেউ পুত্র কন্যা সমেত সুখী পরিবার । কেবল মাত্র দুজন ছাড়া । সে হল রানী বৌদি আর ওর পঙ্গু বাবা রামলাল । আর রতন কাকা যে ডিভোর্সি একাই থাকেন। 

যাইহোক রানী বৌদির ভালো একটা নাম থাকলেও থাকতে পারে তবে আমরা ডাকতাম রানী বৌদি বলেই। বৌদি রাজস্থানী। তবে বাংলা সুন্দর বলতে পারতো। আটষট্টি বছরের বৃদ্ধ বাবা রামলাল কে নিয়ে আমাদের বাড়ির নিচের তলায় দীর্ঘ পনেরো বছরের ওপর বাস। রানী বৌদির বৃদ্ধ বাবার অগাধ পয়সা আর তা ভাঙিয়েই খাওয়া দুজনের।

***********************

 রানী বৌদি অসম্ভব সুন্দরী অথচ তার বর কেন

 তার কাছে আসে না সে সম্পর্কে আমি , মা , বা এই বাড়ির কেউ জানতাম না। অবশ্য মাঝে মধ্যে রতন কাকা যিনি রানী বৌদি র পাশের ঘরে থাকতেন মাকে এসে আশ্চর্য কথা শোনাতেন। মা তো অবাক হতো ,সাথে সাথে আমি ও। আশ্চর্য কথাটি হল পঙ্গু অথর্ব রামলাল সম্পর্কে রানীর বাবা নয় স্বামী। ওদের মধ্যে বয়সের বিস্তর ফারাক বলে রানী ওকে স্বামী বলে পরিচয় দেয় না। যাইহোক আমি বা আমার মা এ বিষয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে চাইতাম না। অবশ্যই তার কারণ রানী বৌদি র অসামান্য রূপ। যার দিকে তাকিয়ে তাকে রূঢ কোনো শব্দে আঘাত দেওয়া আমার পক্ষে তো অসম্ভব আর আমার মায়ের পক্ষে ও।আর অপরের কেচ্ছা কাহিনী শুনে আমাদের লাভ ও বা কী তা মনে করতাম ?

*******************

যাইহোক রানী বৌদি সহ আরো অন্যান্য ভাড়াটে নিয়ে আমাদের কেটে যাচ্ছিল বেশ কিন্তু তাল কাটলো রানী বৌদির বাবা রামলালের মৃত্যুতে। 

সে রাত শ্রাবণ মাসের কোনো একটি রাত। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে চলেছে সকাল থেকে। ঘড়িতে রাত এগারোটা হবে। যে যার ঘরের দরজা দিয়ে শুয়ে পড়েছিল বোধকরি । হঠাত্ আমার ঘরের দরজায় সজোরে ধাক্কা " রিকু বাবু,(রিকু আমার ডাক নাম) রিকু বাবু তাড়াতাড়ি দরজাটা খোলেন। উনি যে আর নেই। খোলেন বাবু।" আমি টিভিতে কোনো অনুষ্ঠান দেখছিলাম। হঠাত্ রানী বৌদি র কন্ঠস্বরে দ্রুত দরজা খুলে দিতেই দেখলাম সিক্ত বসনে আমার সামনে রানী বৌদি। গাত্র বর্ণ শ্বেতশুভ্র , চোখদুটি কালো ভ্রমরের ন্যায় । খোলা একরাশ চুল যেন অন্ধকারের গভীরতার পরিচায়ক। কিছু মুহূর্ত সেই অপার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে বলে উঠেছিলাম " কী হয়েছে রানী বৌদি? এতো রাতে? খোলা উঠোন পেরিয়ে আসতে গিয়ে তো ভিজেও গেছেন।"

" উনি নেই রিকু বাবু উনি নেই।"

" উনি মানে রামলাল বাবু? আপনার পিতাজী?"

" হ্যাঁ উনি মারা গিয়েছেন। সৎকার করতে হবে। তার আগে ডাক্তার বাবু কে ডেকে সার্টিফিকেট লেখাতে হবে।" 

আমি তৎক্ষণাৎ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে রানী বৌদিকে আস্বস্ত করে ওর ঘরে পাঠিয়ে পারিবারিক ডাক্তার নকুল কাকা কে ফোন করে ডেকে আনালাম। উনি এসে দেখলেন রামলাল কে খুঁটিয়ে । হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু। রানী বৌদি কে উদ্দেশ্য করে নকুল কাকা বলে উঠলেন " তোমার বাবার হার্টের রোগ ছিলো জানতে না? চিকিৎসা করালে হয়তো সুস্থ হয়ে যেতেন।" 

" উনি আমার বাবা নন। 

উনি আমার সোয়ামী আছে ডাক্তার বাবু । 

" মানে! আমরা যে জানতাম,,,,

'ভুল জানতেন। কারণ ওর আমার বয়সের অনেক তফাত । আমি ওর বালিকা বধূ হয়ে ছিলাম। "

"মানে!" বিস্ময় প্রকাশ এবার আমার।

"মানে ওর যখন চল্লিশ বছর বয়স আমি তখন তেরো বছরের বালিকা। বিয়ে হয়ে গেল আমার সাথে। ওর আগের দুটো বৌ ছিলো তারা দুজনেই মারা গিয়েছিল আগে তাদের ছেলে মেয়েরা সব জয়পুরে থাকে। একদিন রামলাল জমি দেখে আসার পথে হঠাত্ করে পড়ে যায় আর ওর কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশ অবশ হয়ে যায় । তখন ছেলেরা বলে কলকাতায় যেতে ভালো চিকিৎসা হবে। সেই জন্যেই আসা।

বয়সটা আমার কম যদি পুলিশ ধরে বাল্য বিবাহ আইন করে বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে সেখানে রামলালের মতো বৃদ্ধের বৌ আমার মতো বালিকা বধূ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে পুলিশ রামলাল কে অ্যারেস্ট করতে পারে তাই ও বাবা আর আমি ওর মেয়ে হয়েই এই পনেরো বছর কাটাচ্ছিলাম অভিনয় করে। আরো কয়েকবছর হয়তো কাটাতাম ও কিন্তু গতকাল রাতে ওর যে কী হলো প্রবল উত্তেজনায় ছটফট করতে লাগল। ওর পঙ্গু শরীরটা কামার্ত হয়ে উঠেছিলো। বাধ্য হয়ে ওর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে এই বিপত্তি । হার্টের রোগ আছে জানতাম তার ওপর পঙ্গু মানুষ আমার শরীরের উত্তাপ কে দমন করতে গিয়ে নিজেই নিরুত্তাপ হয়ে গেল। যখন সঙ্গম মুহূর্ত প্রবল ঠিক তখনই ওর হৃদযন্র থেমে গেল মুহূর্তের মধ্যে ।" 

স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম রানী বৌদি র অকপট স্বীকারোক্তি শুনতে গিয়ে আমি ডাক্তার নকুল কাকা সহ আরো সকল ভাড়াটে। শুধু রতন কাকার চোখে কোনো বিস্ময় দেখিনি। যেন এইরূপ ভাব ,এটাই হওয়ার ছিলো।

***********************

এরপর মাস খানেকের মতো সময় চলে গেছে। হঠাত্ একদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রানী বৌদি নিখোঁজ । যে রানী বৌদি কোথাও বের হয় না সে গেল কোথায়? অনেক জল্পনা কল্পনার নিরসন ঘটিয়ে রাত বারোটার সময় রতন কাকার সাথে লাল বেনারসি পরে গলায় ফুলের মালা ঝুলিয়ে সিঁথিতে লাল টুকটুকে সিঁদুর এঁকে আমাদের তেরো নম্বর গোঁসাই পাড়া লেনের বাড়িটাতে উপস্থিত হলো । ওদের দুজনের ঠোঁটের প্রান্তে সলজ্জ হাসির রেখা দেখে আমাদের কারো বুঝতে অসুবিধা হলো না যে রানী বৌদি রতন কাকা কে বিয়ে করেছে। সত্যি বলতে কী খুব খুব আনন্দ পেয়েছিলাম রানী বৌদি র এতোদিনে প্রকৃত জীবনসঙ্গী হিসেবে রতন কাকা কে পাশে দেখে। ওরা ভালো থাকুক মায়ের মতো আমিও সেই কামনাই করলাম।

#সমাপ্ত