Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর প্রতিশ্রুতি জেলায় জেলায়,যুদ্ধ কালীন তৎপরতা কোথায় ?

অক্সিজেনের অভাবে রোগী মরছে রোজই, জেলায় জেলায় অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর প্রতিশ্রুতি ।যুদ্ধ কালীন তৎপরতা কোথায়?তরুন চট্টোপাধ্যায় । গাছ বসালে ফলের আশা করা যায় ।কিন্তু রুক্ষভূমিতে তো আর ফসল ফলে না।ফসল ফলাতে গেলে জমিকে উর্বর করে,সার দিয়ে…


 অক্সিজেনের অভাবে রোগী মরছে রোজই, জেলায় জেলায় অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর প্রতিশ্রুতি ।যুদ্ধ কালীন তৎপরতা কোথায়?

তরুন চট্টোপাধ্যায় ।

গাছ বসালে ফলের আশা করা যায় ।কিন্তু রুক্ষভূমিতে তো আর ফসল ফলে না।ফসল ফলাতে গেলে জমিকে উর্বর করে,সার দিয়ে বীজ বুনে অপেক্ষা করে তবে তো ফল আশা করা যায় ।কথাটি এমনি এমনি বলিনি।বলেছি আজকের পরিপেক্ষিতে ও সরেজমিনে তদন্ত করেই।

  সব জেলাতেই অক্সিজেন প্লান্ট বসাবে কেন্দ্র ।অক্সিজেন প্রতিশ্রুতি মতো তৈরি হবে।কিন্তু কবে।সেই ফল কবে আসবে।

করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে সব থেকে বেশি চাহিদা এই অক্সিজেনের ই।কারন মুমূর্ষু রোগীকে করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচাতে গেলে এই অক্সিজেন সব থেকে বেশি প্রয়োজন ।কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি ।দেখতে পাচ্ছি দেশ জুড়ে অক্সিজেনের ঘাটতি।হা পিত্যেশ করে মানুষ এদিক সেদিক ছুটে বেড়ালেও অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না।

করোনার প্রথম ঢেউ এসেছিল বঙ্গে গত বছর মার্চ মাস নাগাদ ।তখনোও পরিস্থিতি এমন হয়নি ।কারন সে ঢেউ সামলে দিয়ে ছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী রা।কিন্তু তারপর থেকে প্রায় এক বছর সময় পেয়ে ও আমরা অক্সিজেন প্লান্ট এর কথা সে ভাবে ভেবে উঠিনি।যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বলছেন আমরা সমস্ত রাজ্য কেই অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর ছাড়পত্র দিয়েছিলাম।কিন্তু তা যে কতখানি সত্য তা নিয়ে তর্ক তো আছেই।তবে বাস্তব চিত্র বলছে দিল্লি আট টির মধ্যে একটি প্লান্ট বসিয়েছে।বাংলা পাঁচটির মধ্যে একটি ও করেনি।অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও কোন আশা ব্যাঞ্জক ছবি চোখে পড়েনি।ফলস্বরূপ আজ অক্সিজেনের হাহাকার ।

অক্সিজেন আর অক্সিজেন ।চরম সঙ্কটে গোটা দেশ।নূন্যতম জীবনদায়ী অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে গোটা দেশ।কয়েকশো মানুষ ইতিমধ্যেই মারা গেছেন।অবশেষে নড়েচড়ে বসেছেন নরেন্দ্র মোদীর সরকার ।

এখন পি এম কেয়ারস তহবিলের টাকায় যুদ্ধ কালীন ভাবে দেশে 551 টি অক্সিজেন প্লান্ট বসাতে সিদ্ধান্ত নিলো কেন্দ্র ।অক্সিজেন সরবরাহ সুনিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত ।তবে এতদিন কি করছিল কেন্দ্র এ প্রশ্ন তো উঠছেই ।পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে তখন এই প্লান্ট বসিয়ে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয় তো থাকবেই।

এ ছাড়া আজ সিদ্ধান্ত নিয়ে কাল তো অক্সিজেন পাওয়া যাবে না।এর জন্য বেশ কিছু সময় তো দরকার ।কমপক্ষে একটি প্লান্ট বসিয়ে যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা যাক মাস দুয়েক সময় তো লাগবেই।কিন্তু এই দু মাসের ঘাটতি আসবে কোথা থেকে।ততদিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।কিন্তু আমরা হাতে সময় পেয়ে ও সেই কাজ করে উঠতে পারিনি।এতো নিশ্চয় লজ্জার।

অথচ বিশেষজ্ঞ রা বার বার বলে এসেছেন এই পরিস্থিতি আসতে চলেছে।সাবধান বানী তো ছিলই ।কিন্তু সে কথার কথা।আজ যখন দুয়ারে বিপদ তখন আমরা নড়েচড়ে বসছি।

করোনা পরিস্থিতি কে মাথায় রেখে এ বছর জানুয়ারি মাসে কেন্দ্র 262 টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করার জন্য বরাদ্দ করেছিলেন 201.58 কোটি টাকা।কিন্তু আজ যখন করোনা মহামারীর রুপ নিয়েছে তখন হিসাব বলছে 262 টির মধ্যে সমগ্র দেশে প্লান্ট তৈরি হয়েছে মাত্র 33 টি।যদিও পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে একটিও প্লান্ট গড়ে ওঠেনি।কেন হয়নি সে প্রসঙ্গ আলাদা ।

আজ দেশ জুড়ে এই অক্সিজেন সঙ্কট।যদিও এখন অক্সিজেন সাময়িক ভাবে রপ্তানি বন্ধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ।এছাড়া শিল্প ক্ষেত্রে ও অক্সিজেন বন্ধ করা হয়েছে ।শুধুমাত্র দেশের চিকিৎসা জগতের চাহিদা মেটাতেই এই সব পদক্ষেপ।কিন্তু এভাবে কি অক্সিজেনের ব্যাপক চাহিদা ও যোগানের সামঞ্জস্য বজায় রাখা যাবে।এছাড়া যে ভাবে করোনার ঢেউ প্রতিদিন বাড়ছে তাতে করে অক্সিজেনের ঘাটতি তো থাকছেই।শুধুমাত্র বঙ্গেই দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ষোল হাজারের দিকে।দেশের চিত্র তো আরো ভয়ঙ্কর ।

পিএম কেয়ারস ফান্ডের টাকায় তৈরি হতে চলেছে এইসব অক্সিজেন প্লান্ট ।ভোটের রাজনীতিতে বিজেপি দল আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।কিন্তু বিরোধী দের বক্তব্য ফান্ডের টাকা তো আগেও ছিল।তবে আজ কেন ঘুম ভাঙলো।এতদিন কেন্দ্রীয় সরকার একথা ভাবেন নি কেন।মানুষ মরার পর এই অক্সিজেনের কি আর দরকার হবে।

দেশের স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ।তাই রাজ্য ও কেন্দ্র কে যৌথ ভাবেই এই পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে হবে।কিন্তু একদল সবসময় কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা বলেন।আর অপর দল বলে চলেছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের এক দলের শাসন।

প্রশ্ন হলো দেশের তো বেশ কিছু রাজ্যেই চলছে ডবল ইঞ্জিন ।তাহলে সেই সব রাজ্য গুলিতে অক্সিজেনের এত আকাল কেন।সেখানেই বা কেন অক্সিজেন প্লান্ট গড়ে ওঠেনি।তাহলে তো সেই সব রাজ্য বাকি রাজ্য গুলিতে অক্সিজেনের যোগান দিতে পারতো।কিন্তু তাতো হয়নি।বরং সেই সব রাজ্য ও অক্সিজেন অভাবে সমানেই নাভিশ্বাস ফেলেছে।

আসলে আমরা কোন দিনই বিপদের আগে ঘুম থেকে উঠিনি।আজও না।করোনা এসেছিল, আবার কমেও গিসলো।রাজনৈতিক নেতারা বুঝে উঠতে পারেননি সে আবার সুনামি হয়ে ফিরে আসবে।ফলে ফল যা হবার তাই হলো।গোটা দেশ জুড়ে সঙ্কট দেখা দিল অক্সিজেনের ।

যাইহোক যা হয়নি তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আর রাজ্য সরকারের দড়ি টানাটানি করে ভোট বাজারে কিছু মুনাফা এলেও তা মানুষের কোন কাজে লাগবে না।মানুষ কে বাঁচাতে হলে আশু দরকার অক্সিজেন ।

প্রতিশ্রুতি তো রয়েছে প্রতি জেলায় অক্সিজেন প্লান্ট ।আর তা যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতিতে ।আর সব রাজ্যের সব জেলাতে এই প্লান্ট তৈরি করা হয়তো সম্ভব নয়।তবুও যতগুলো বরাদ্দ হয়েছে সেই গুলি যাতে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে সে দিকেই নজর দিতে হবে।আর তা এক্ষুনি ই।

শুরু করেছিলাম ফসলের বীজ বোনার কথা বলে।বীজ বুনে পরিচর্যা করলে তবে ফসল ওঠে ঘরে।আমাদেরও সব ভুলে সেই বীজ বপনের কথাই ভাবতে হবে।শুধুমাত্র অক্সিজেন নয় বিশেষজ্ঞ দের নিয়ে বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কে বার বার মিটিং করে বুঝতে হবে অদূর ভবিষ্যতে কি কি বিপদ আসতে পারে।আর সেই মতো পরিকল্পনা গ্রহন করাটাই জরুরি ।

নৌকা ডোবার আগে নৌকোর ছিদ্র খুঁজে বার করতে না পারলে নৌকো তো ডুববেই।

কবে আর আমরা শিখবো।1947 সালের পর থেকেই তো অনেক গুলো দশক আমরা পার করে এলাম।

উনুনে হাঁড়ি বসিয়ে চাল কিনতে গেলে ভাতের জল তো ফুটে ফুটে শুকিয়ে যাবেই।

আর তাই ঘটছে আমাদের দেশে অক্সিজেন প্লান্ট নিয়ে ।

দেরিতে হলেও তাড়াতাড়ি তৈরি হোক অক্সিজেন প্লান্ট ।এছাড়া আর কি বলার আছে।