Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কজনায় হৃদয় দিয়ে গাইতে জানে": মান্না দে-র জন্ম দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ"

✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 
শচীন কর্তা 'মানা' নামে ডাকতেন। সংগীত জগতের অন্যতম কিংবদন্তি শচীন দেব বর্মণের দেওয়া মানা নামটাই শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে গেল। পিতৃদত্ত নাম প্রবোধচন্দ্র দে বড়ো একটা কেউ জানল না! তিনি হয়ে উঠলেন আসমুদ্রহিম…

  


✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 


শচীন কর্তা 'মানা' নামে ডাকতেন। সংগীত জগতের অন্যতম কিংবদন্তি শচীন দেব বর্মণের দেওয়া মানা নামটাই শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে গেল। পিতৃদত্ত নাম প্রবোধচন্দ্র দে বড়ো একটা কেউ জানল না! তিনি হয়ে উঠলেন আসমুদ্রহিমাচলের জনমানসের হৃদয়তন্ত্রী দোলা দেওয়া মান্না দে।


সাবেক উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিট সংলগ্ন ৯নং মদন ঘোষ লেনের দে বাড়িতে জন্ম মান্না দের। সালটা ১৯১৯এর ১লা মে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সংগীতের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ। গান গেয়ে মাতিয়ে দেওয়া বন্ধুদের। পরবর্তীতে স্কটিশ চার্চ কলেজে উচ্চ শিক্ষা, গোয়াবাগানে প্রখ্যাত কুস্তিগির গোবর গোহর আখড়ায় কুস্তি বা দল বেঁধে ফুটবল খেলা, সংগীত চর্চায় কখনো ছেদ পড়েনি তাঁর। সংগীতের সঙ্গেই যে প্রথম প্রেম। এক অচ্ছেদ্য বন্ধন। আলাপ ধরে, তান বিস্তার করে আবার সেই তো সমে এসে পড়া! কাকা প্রখ্যাত শিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন তাঁর গুরু। পরে ওস্তাদ দবির খাঁয়ের কাছে নাড়া বাঁধেন। কলেজ সংগীত প্রতিযোগিতায় পরপর তিন বার তিনটি আলাদা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন মান্না দে। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন ওস্তাদ আমান আলি খাঁ ও আবদুল রহমান খাঁয়ের কাছে।

পৈত্রিক বাসভবনের সামনে আবক্ষ মূর্তি


প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি গান গেয়েছেন মান্না দে। গেয়েছেন বাংলা, হিন্দি, মারাঠি প্রভৃতি চব্বিশটি ভাষায়। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল গুপ্ত, নচিকেতা ঘোষ, দিকপাল সব গীতিকার সুরকারদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সাগরপারে মুম্বইতে নৌসাদ, মজরুহ সুলতানপুরি, লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল, শচীন দেব বর্মণ, গান গেয়েছেন প্রায় সকলের কথায়। একক ছাড়াও ডুয়েট গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, রফি সাহেব বা মুকেশের সঙ্গে। লতা মঙ্গেশকর বা গীতা দত্তের সঙ্গে অসংখ্য ছায়াছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। সুরে ভিজিয়েছেন অসংখ্য মানুষের মন। পেয়েছেন অকুন্ঠ ভালোবাসা ও সম্মান। ষাট বছরের সংগীত জীবনে ১৯৭১ ভারত সরকারের থেকে পেয়েছেন পদ্মশ্রী। ২০০৫এ পদ্মভূষণ সম্মাননা ও ২০০৭এ দাদাসাহেব ফালকে। ২০১১এ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বঙ্গবিভূষণ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট দিয়েছে। ২০১৯এ জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর পৈত্রিক বাসভবনের সামনে আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।


আক্ষরিক অর্থেই এক বিরল ও ব্যতিক্রমী শিল্পী মান্না দে। রেওয়াজ ছাড়া একদিনও থাকতে পারতেন না। কখনো বলেননি যে তিনি 'গান গাইতে জানেন'! বরং শিল্পীচিত বিনয়ী ভাবে বিচারের ভার মানুষের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। 

আজ তিনি নেই। কিন্তু আছেন প্রবলভাবেই। আছেন অসংখ্য গুণমুগ্ধদের মনে 'নিরালায় বসে স্মরণবিন বেঁধে! 'জীবনের জলসাঘরে' অগণিত মণি মাণিক্য। তিনি 'তার ঠিকানা রাখেননি'! সুরলোকে আজ সুরসাগর। তাঁর 'মুকুটটা তো পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই '।