Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সোনার বাংলা নয়, বাংলা ঘরের মেয়েকে চায় !

ভোটের ময়নাতদন্তে উঠে এলো বিজেপির সোনার বাংলার স্বপ্ন কে ধূলিসাৎ করতে পারেন বঙ্গের ঘরের মেয়ে মমতা,বাকি কেউ নয়। বামের ভোট রামে।ফলে 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে ঢাল নেই তরোয়াল নেই বঙ্গ থেকে 18 টি আসন ছিনিয়ে নিয়ে ছিল বিজেপি দল।কিন্তু 202…

ভোটের ময়নাতদন্তে উঠে এলো বিজেপির সোনার বাংলার স্বপ্ন কে ধূলিসাৎ করতে পারেন বঙ্গের ঘরের মেয়ে মমতা,বাকি কেউ নয়। 

তরুন চট্টোপাধ্যায়
বামের ভোট রামে।ফলে 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে ঢাল নেই তরোয়াল নেই বঙ্গ থেকে 18 টি আসন ছিনিয়ে নিয়ে ছিল বিজেপি দল।কিন্তু 2021  এ ভরাডুবি বিজেপি।তাই মানুষ বলছেন এবার বামের ভোট তো রামে নয়,সে ভোট গেছে তৃনমূলে ।আর সে কথার যথার্থতা নিশ্চয় আছে।কারন ভোটের ভাগাভাগি না করেই বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস কে শূন্য আসন নিয়ে এবারের ভোট থেকে ফিরতে হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার হিসাব বলছে বিজেপি দল ই এবার প্রধান বিরোধী দল।বাম ও কংগ্রেস জোট শূন্য ।শুধু একটি আসন নিয়ে মুখ রক্ষা করেছেন আব্বাস সিদ্দিকী ।ফলে জোটের হিসাব বলছে তিন দলের মোট পাওনা এক।আর অন্য দিকে বিজেপি দল তিন অঙ্ক না ছুঁতে পারলেও সেই অঙ্কের কাছাকাছি তাঁরা পৌঁছে ছেন।আর বিরোধী দল নেতা নির্বাচিত হয়েছেন এক কালের মমতার ঘনিষ্ঠ সৈনিক শুভেন্দু অধিকারী ।এর মধ্যে যে খেলাই থাক মুখ্যমন্ত্রী মমতা কে পরাজিত করার পুরস্কার হিসেবেই তাঁকে বিরোধী দলনেতার আসন টি দেওয়া হয়েছে।আর এটি সেই 2026 এর দিকেই তাকিয়ে ।
2 রা মে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার সব ফল প্রকাশিত হয়েছে।নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও নবান্নের নীল বাড়িতে মমতার সরকার ।আর এই ফাঁকে আমরাও একটু ময়নাতদন্ত করে ফেলি এবারের ফলাফল নিয়ে ।কেন ,কি কোথায় নানা প্রসঙ্গে চেষ্টা করি একটু আলোকপাতের।অবশ্য সবটাই ফলাফল বিশ্লেষন করেই।
বাম ও কংগ্রেস এবার খাতা খুলতে পারেনি।গত 2016 সালে বামপন্থী দের আসন ছিল 32 টি।তার 23টি পেয়েছে তৃনমূল ও 9 টি বিজেপি দল।এই নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল মোট 44 টি।এর 29 টি ছিনিয়ে নিয়েছে তৃনমূল ও বিজেপি 15 টি।ফলে ছবি পরিস্কার রামের ভোট ভেবে বিজেপি যে 200 পার করতে চেয়ে ছিল তা বুমেরাং হয়ে চলে গেছে তৃনমূলের দিকেই।ফলে তৃনমূল অনায়াসে 200 পার করলেও বিজেপি র ভাগটা কম ই হয়ে গেছে।এর মধ্যে কোন জল নেই।তবে বিজেপি দল 2016 টিকে তাদের অঙ্কে না রেখে 2019 কে অগ্রাধিকার দেওয়া তেই এই বিপত্তি ।এছাড়া হিন্দুদের একটা বড় অংশ এবারেও ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোট দেন নি।বরং ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোট চাইলেও বিজেপির সেই ভোট সুইং করেছে মমতার দিকেই।তাই এই ফলাফল নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই।মমতার তৃনমূল ঝড় তুলেছে এবারের ভোটে।ফলশ্রুতি আবারও ক্ষমতায় ।আর সে রকম কিছু ঘটনা না ঘটলে বঙ্গ দখল করতে বিজেপি দল কে আবার ও পাঁচ বছর অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই।আর সেই অপেক্ষা তো বিজেপি দল করবেই।
এবারের ভোটে বাম কংগ্রেসের শূন্য হওয়ার ফলাফলে বিজেপি যে একেবারে লাভবান হয়নি তা কিন্তু নয়,তবে লাভের ভাগের সিংহভাগ ই দখলে রেখেছে তৃনমূল ।অঙ্ক মেলেনি বিজেপির অথচ তৃনমূল ঠিকঠাক অঙ্ক কষে স্টার মার্ক নিয়ে আবারও ক্ষমতায় ।
এবার তৃনমূল যেমন সংখ্যা লঘু ভোট কে ধরে রেখেছে সঙ্গে সঙ্গে মহিলা ভোট ও নিজেদের দিকে টানতে সমর্থ হয়েছে ।মহিলা ও সংখ্যা লঘু ভোটের সিংহভাগই গেছে তৃনমূলের ঘাসফুলের দিকেই।মহিলাদের শতকরা 50 ভাগ ভোট গেছে মমতার দিকে।বিজেপির দিকে 37 পারসেন্ট ।আরো উল্লেখ যোগ্য হলো মধ্য ও উচ্চবিত্ত মহিলা দের ভোট দু দলেই সমান সমান হয়েছে।কিন্তু নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র দের ভোটে এগিয়ে গেছে তৃনমূল দল।সংখ্যা লঘু ভোট ব্যাঙ্কের বেশিটাই পেয়েছেন মমতা।বিশেষ করে মালদা ও মুর্শিদাবাদে যেখানে সংখ্যা লঘু ভোট বেশি।সেখানে কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল দেখার মতো।কিন্তু এবার কংগ্রেস হয়েছে ভরাডুবি ।আর সেই ভরাডুবির মূল কারন এই সব অঞ্চলে ও তৃনমূলের বাড়বাড়ন্ত ।বিজেপি সংখ্যা লঘু ভোট হারিয়েছে তার মূল কারন এন আর সি।আর নাগরিকত্ব নিয়ে শুধু সংখ্যা লঘু নয় হিন্দুরাও বিরক্ত ।কে আর এতদিন বাস করার পরেও ভিনদেশি হতে চান ।ফলে মমতার প্রতি যে বিশ্বাস যোগ্যতা আছে,তার প্রমাণ এবারের ভোট।
তৃনমূল দল এবার ও জয়ী হয়েছেন রেকর্ড ভোটে।হিন্দু ভোট ও সংখ্যা লঘু ভোট এককাট্টা হয়ে তৃনমূল কেই ভোট দিয়ে ছেন।ফলে সব আশা কে নিরাশ করে বিজেপি কে থামতে হয়েছে দু অঙ্কেই।
বিজেপির সাধ ছিল কিন্তু তা সাধ্যে কুলায় নি বিজেপি দলের।
পরাজয় নিয়ে বিজেপি দলের অন্দরে কাঁটা ছেঁড়া আজও অব্যাহত ।দিল্লির নেতারা বার বার হাওয়া তুললেও যে কাজের কাজ কিছুই হয়নি সেটি তো প্রমাণিত ।আসলে ভোট যুদ্ধের থেকেও দল বদলের যুদ্ধে বেশি মন ছিল বিজেপি দলের।
তৃনমূলের হাতে মার খাওয়া পুরানো বিজেপি, ভোটের আগে ঢাকা পড়ে গিসলো তৃনমূলের দল বদলু দের কাছেই।সবাই তো আর শুভেন্দু অধিকারী নয় যে নন্দীগ্রামে এই বাজারে ও অল্প মার্জিন নিয়ে ও মুখ্যমন্ত্রী কে হারাতে পারে।সে প্রসঙ্গে নয় অন্য লেখাতে আলোচনা করা যাবে।
দল বদলে নেতারা এলেও ভোটাররা যে আসে না তার উদাহরন লক্ষ্য ভোটে আগের নির্বাচন জেতা রাজীব বন্দোপাধ্যায় নিজেই।দলের থেকে যে ব্যক্তি বড় নয় একথা সেদিন তিনি বুঝলে আজকের এই পরাজয় তাঁকে বিদ্ধ করতে পারতো না।চ্যাটার প্লেনে চেপে দিল্লি যাওয়া এক জিনিস আর মানুষের মন পাওয়া ঠিক অন্য জিনিস।আর সে কথা আজ বুঝেছেন প্রবীর ঘোষালের মতো অভিজ্ঞ সাংবাদিক কাঞ্চনের কাছে পরাজিত হয়ে।
শুধু এই দুজন নয় বাকিদের ক্ষেত্রেও সেই একই ফরমূলা।
সৈনিক যে তৈরি করা যায় তা আবারও প্রমাণ করে দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায় ।হেভিওয়েট নেতারা বিজেপি দলে যাবার পরেও এই ভোটে উল্লেখ যোগ্য জয় নিয়ে এসে।
এবারের ভোটে বিজেপি সামনে এনেছিল ধর্মীয় মেরুকরণ ।যার সুফল শুভেন্দু ছাড়া আর কেউ ফায়দা তুলতে পারেন নি।
অন্য দিকে মমতা একাই উন্নয়নের জোয়ার এনে গাঁ গঞ্জের মানুষের মন কেড়ে নিল।শুধু গ্রাম কেন খোদ কলকাতা তেও জয় আনলেন তিনি।
ভোট একটি যুদ্ধ ।সেখানে ছোট বড় সব নেতা আঙুল তুললেন ভাইপো অভিষেক ও পিসিমা মমতার দিকে।অথচ কত ইস্যু ছিল হাতে।তার ধার দিয়ে ও গেলেন না কেউ।ফলে এই পরিসংখ্যান ।
আর সব থেকে বড় কারন হলো মমতা বন্দোপাধ্যায় ।তার মুখের ধারে কাছে কোন নেতাই এলো না বিজেপি দলের।
মমতার বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে এখন ও এই বঙ্গে কোন প্রশ্ন তোলা যে যায় না তা তো প্রমাণিত ।অগ্নি কন্যা তো একদিনে হওয়া যায় না।উঠে আসতে হয় নানা লড়াই এর মধ্যে দিয়েই।
মমতা তা পেরেছেন বলেই তিনি জয়ী।বাকিরা তা পারেন নি।
বামপন্থী, কংগ্রেস কে ধুয়ে মুছে বিজেপির সোনার বাংলা কে ধূলিসাৎ করতে পারেন যিনি তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায় ।বাকি আর কেউ নয়।ঘরের মেয়ে এই কেরামতির কাছে নতি স্বীকার করলেন দিল্লির হেভিওয়েটের দলবল।এমন কি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ।

তরুন চট্টোপাধ্যায় ।