Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

দৈনিক_ কলম _ সেরা _ সম্মাননা শিরোনাম - অধিকার কলমে- সুদীপা ধর তারিখ -29/6/2021     
আজ বাসে অন্যদিনের থেকে ভীড়টা একটু বেশী।একটু যেন বেশীই দমবন্ধ করা পরিবেশ।তাই অস্বস্তিটা রাই এর একটু যেন বেশীই।ভীড় বাসে মানুষজনের গুঁতোর জন্য নয়,…

 


দৈনিক_ কলম _ সেরা _ সম্মাননা

 শিরোনাম - অধিকার

 কলমে- সুদীপা ধর

 তারিখ -29/6/2021     


আজ বাসে অন্যদিনের থেকে ভীড়টা একটু বেশী।একটু যেন বেশীই দমবন্ধ করা পরিবেশ।তাই অস্বস্তিটা রাই এর একটু যেন বেশীই।ভীড় বাসে মানুষজনের গুঁতোর জন্য নয়,কোনও এক চেনা মুখ দেখতে না পাওয়ার জন্য।


আলাপ হয়েছিল আজ থেকে পাঁচদিন আগে।আলাপটা ছিল ভীষণই অদ্ভুত।সেদিন বাড়িতে মায়ের সঙ্গে অহেতুক কথা কাটাকাটি হওয়াতে মাথাটা একটু গরমই ছিল। প্রসঙ্গ ছিল বিয়ে।সবে রাই তার কেরিয়ার শুরু করেছে,তাই এখুনি নতুন কোন   সম্পর্ক বাঁধার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু মা তো মাই সে যে সমস্ত কিছুরঊর্ধ্বে।তার কাছে থিতু হওয়া মানে বিয়েটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।যাই হোক সেদিন তর্কাতর্কির ফলে মানিব্যাগ টাই নিতে ভুলে গিয়েছিল।যার ফলস্বরুপ বাসের কন্ডাক্টরকে পয়সা দিতে গিয়ে পড়েছিল সে মহাবিপদে।এক অদ্ভুত পরিস্হিতিতে পরে মাথা আর কাজ করছিল না রাই এর।সে যে কি করবে তা ভাবতেও পারছিল না।কিন্তু কথায় আছে না মন যার    পরিষ্কার, আদ্যোপান্ত যে সত মনের মানুষ ভগবান হয়তো সেই মুহূর্তে কোন দূতকে পাঠিয়ে দেয় উদ্ধার করতে।


                  হঠাৎ করে গম্ভীর গলায় পাশে বসা যুবকটির গলা ছেড়ে দিন খুঁজে পাবেন না।বাড়িতে বোধহয় ফেলে এসেছেন।এই নিন আমি না হয় দিয়ে দিচ্ছি।'না' বলার কোন  যৌক্তিকতা রাই খুঁজে পেল না।ঘাড় নেড়ে সম্মতিই জানাল।আরও বিস্ময়কর ব্যাপার যুবকটি আরও কিছু টাকা রাই কে দিয়ে বলল এটা রাখুন কাজে লাগবে।হাত পাতা ছাড়া এ   ক্ষেত্রে আর কোন উপায় ছিল না।কারণ বাড়ি ফিরতে হবে যে। ধন্যবাদ কি ভাবে দেবে ভাবতে ভাবতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরের স্টপেজে যুবকটি নেমে গেল।


                      যা: নিজেকেই যেন   ভর্ৎসনা ।করতে ইচ্ছা হল। এত আহাম্মক সে কবে থেকে হল। ধন্যবাদ দেওয়া তো দূরের কথা,মুখের দিকে তাকিয়েও দেখল না যে এত বড় একটা বিপদ থেকে তাকে বাঁচালো। না দেখতে পাওয়ার একটা চিনচিনে কষ্ট বুকে নিয়ে পরের স্টপেজে রাই নেমে গেল।


                    পরের কটা দিন শুধু একবার তাকে দেখতে পাওয়ার বাসনা শনি ও রবিবারটি তার   মনোকষ্টেই কাটল।এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল ওই গলাটির স্বরের মধ্যে।সেই আকর্ষণকে  উপেক্ষা করা খুব শক্ত।সেই আকর্ষণের সুর মূর্চ্ছনা সেই দিনের সেই ক্ষণটুকুতে এতটাই বেষ্টন করে রেখেছিল যে মানুষটাকে না দেখেই তার গলার স্বরের প্রেমে  পড়ে গিয়েছিল। তার দৃঢ়চেতা বাচনভঙ্গির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।কথাতো সে বিশেষ বলেনি,অথচ কি টান ওই কটা কথার মধ্যে।


                       আজ আবার যথারীতি অফিস যাওয়ার  হুড়োহুড়ি। আবার সেই চেনা ছক। আজকে যথারীতি বাসে উঠে সিট  পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চোখ যে ঘুরছিল সেই মানুষটির উদ্দেশ্যে। একবার শুধু তাকে  দেখার জন্য মনটা করছিল ছটফট। কিন্তু না আজও তাকে দেখেতে পেল না। এইভাবে দু দুটো মাস   পার হয়ে গেল।


                           হঠাৎ করে সেদিন ভিড়  বাসে, মানুষের গুঁতোর মধ্যে থেকে কে যেন বলে উঠলো ভালো আছেন ম্যাডাম। ব্যাগ আনতে ভোলেননি তো আজকে। মাথাটা  ভনভন করে ঘুরতে লাগল যেন, কোথায় আপনি? বাসের মধ্যেই রাই লজ্জার মাথা খেয়ে চিৎকার করতে আরম্ভ করল।আরে,এই যে রডের পাশে। রাই  বাচ্চাদের মতন চিৎকার করে বলে উঠলো কোথায় ছিলেন এতদিন দেখতে পাইনি। রোজ খুঁজেছি আপনাকে, ধন্যবাদ টুকু পর্যন্ত দিতে পারিনি।  চলন্ত বাসে এই এতো অচেনা মানুষ শুনছিল এই দুই অচেনা মানুষ দুটির কথোপকথন। কিন্তু এদের দুজনের যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এই ভাবেই আলাপটা বেড়ে গেল আস্তে আস্তে। রাই এই সম্পর্কের ভিত্তি গড়তে একটু বেশি উদ্যত হয়েছিল l  অর্ণব কোনদিন বুঝতে পারেনি রাই তাকে এত ভালবাসে l অর্ণব একজন ভাল বন্ধু হিসাবে রাই এর সাথে মেলামেশা করতো l এখন আর একমাস দু'মাসের নয় মাঝে মাঝেই এখানে ওখানে দেখা হয় দুজনের l


                          এইভাবেই রাইয়ের দিনগুলি বেশ ভালই কাটছিল l একদিন অত্যন্ত সাহস করেই প্রস্তাবটি রেখেছিল রাই---------- বিয়ে করবে আমায়, আমার হাতটা শক্ত করে সারা জীবনের মতো ধরবে তুমি?


                             সোজাসুজি সপাটে গালে চড় মারার মত উত্তর এলো 'না'l পৃথিবীটা মুহূর্তে যেন রংহীন হয়ে গেল রাই এর কাছেl এত বড় লজ্জা, অপমানিত সে বোধহয় কোনো দিন হয়নিl  কেন জিজ্ঞেস করাতে অর্ণব যা বলেছিল তাতে রাই তাই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে গিয়েছিলl জানো রাই আমি তোমাকে বলিনি বাসে করে কোথায় যাইl ডক্টর চেম্বারে রিপোর্ট দেখাতে, আমার যে মারণরোগl সময় ঘনিয়ে এসেছে, বেশি দিন বাঁচবো না, ধরে নাও বড়জোর এক দু বছরl তাইতো ইচ্ছা করলেও তোমায় আমি বাঁধতে পারব নাl  ভগবান কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেl তাই ভালোবাসো, তুমি আমাকে এই কথাটি আর বলো নাl আজকের পর থেকে আর এসো না দেখা করতেl এটাই শেষ দেখাl


                             ঘোর কাটতে সময় লেগেছিল রাইয়ের l  ঘোর কাটার পরমুহুূর্তে রাই এর উক্তি ওই দুই  বছরই আমি তোমার সাথে ঘর বাঁধতে চাইl আমার ভালো লাগার মানুষটার সাথে থাকতে চাইl এটাই ভালো লাগা, এটাই ভালোবাসাl এই ভালোবাসা টুকু আমি হারাতে চাই নাl এটা আমার হক, আমার 'অধিকার'l  রাইয়ের কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যেখানে হেরে গেল অর্ণবl বাকরুদ্ধ হয়ে গাল বে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লl


                             একটি ফুলের ঝরে পড়ার কষ্ট সেই হয়তো বোঝে যে ফুলটি কে ভালোবেসেছে,  সেই অর্ণব নামক ফুলটি তাই ঝরে পড়ার আগে রাই তাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চাই,  যে কোন কিছুর বিনিময়ll