Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#দৈনিক_সেরা_কলম_সম্মাননা#বিভাগ : রম্যরচনা #শিরোনাম গণেশের দাবী#কলমে অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় #তারিখ ১৫/০৬/২০২১------------------------আমি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নই, আর গণেশও তাঁর অমর সৃষ্টি মেজদা নয়। তবুও কোথায় যেন হালকা মিল আছে। ঘট…

 


#দৈনিক_সেরা_কলম_সম্মাননা

#বিভাগ : রম্যরচনা 

#শিরোনাম গণেশের দাবী

#কলমে অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় 

#তারিখ ১৫/০৬/২০২১

------------------------

আমি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নই, আর গণেশও তাঁর অমর সৃষ্টি মেজদা নয়। তবুও কোথায় যেন হালকা মিল আছে। ঘটনাটা বলেই ফেলি।

আরে না না, ইনি সিদ্ধিদাতা গণেশ নন। এ হল আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বন্ধু গণশা। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্টি 'বরযাত্রী'র গণশার চেয়ে এর জনপ্রিয়তা আমাদের কাছে বিন্দুমাত্র কম ছিল না। তখন আমরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ি। চতুর্থ বর্ষের মতো হোস্টেলে একা একটা ঘরে থাকার অধিকার তখনও আমাদের জন্মায়নি। অত্যন্ত সুশীল আর শুদ্ধ বাংলাভাষী তিতাস আর নির্বিরোধী কমলকে নিয়ে ছিল গণশার সুখের সংসার। গণশা নামটি তার পিতৃদত্ত নয়, তার নিজের চেহারা সাদৃশ্যে অর্জিত। সে যখন নধর ফর্সা গায়ে উদর প্রদর্শন করে হালকা নীল রঙের পাশবালিশের খোল পরে  ( ওর দাবী অনুযায়ী পাজামা ) হেঁটে চলে বেড়াতো , তখন তার নাম-মাহাত্ম্য  বাড়ত বই কমত না। স্পষ্ট মনে পড়ে -- দিনটি ছিল ১৯৯৩ সালের শ্রাবণ মাসের একটি দিন, সময় দ্বিপ্রহর। আসন্ন পরীক্ষার পড়াশোনা (আমাদের ভাষায় ঘষাঘষি) নিয়ে অধিকাংশ ছেলেই মহাব্যস্ত। নিজে পড়াশোনার ধারেকাছে যেতাম না বলে এইরকম থমথমে পরিবেশ মোটেই মনঃপুত হচ্ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, নতুন বর্ষের ছাত্রদের নবীনবরণ  উপলক্ষে যে চকলেট বোম মজুত ছিল, সেটা পুরোপুরি শেষ হয় নি। সঙ্গে সঙ্গে একই ঘরের বাসিন্দা তিন বন্ধুর মধ্যে দায়িত্ব  ভাগাভাগি করে নিয়ে আমাদের অভিযান শুরু করলাম। প্রবাল দেশলাই কাঠি জ্বালাবে, আমি চকলেট বোম ধরাবো এবং ছুঁড়ব, আর ধূর্জটি উৎসাহ প্রদান ও নজরদারি করবে --মোটামুটি এই ঠিক হল। তিনতলা হোস্টেলের দুটো তলাতে সকলের নজর এড়িয়ে বিস্তর শাপ-শাপান্ত হজম করে পিলে চমকানো শব্দের মধ্যে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে আমাদের অভিযান চলল। হঠাৎ প্রবালের আফসোস --" ধুৎ শালা ! দেশলাই কাঠি শেষ।” তিনতলাতে সামনেই জনপ্রিয় গণশার ঘর। খুব নিরীহ মুখে বন্ধ দরজায় ধাক্কা মেরে আমার বিনীত আবেদন --"এই গণশা, একটা দেশলাই দে না। প্রবাল পড়াশোনা করছে, সিগারেট খাবে, দেশলাই ফুরিয়ে গেছে।" গণশা সরল বিশ্বাসে তৎক্ষনাৎ আমাকে দেশলাই দিয়ে দিল। সকলের অলক্ষ্যে আমরা বেশ কিছুক্ষণ শব্দবাজি চালিয়ে গেলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম জনরোষ বাড়ছে, ধরা পড়লে ধোলাই এর শব্দ এর থেকেও জোরদার হবে। তাই ঠিক করলাম, গণশাকে দেশলাই ফিরিয়ে দিয়ে অভিযান শেষ করব।

 এক পাল্লার দরজাটার কাছে এসে হঠাৎ মনে কৃতজ্ঞতা জাগ্রত হল। এখানেই শেষ বোমটা ফাটিয়ে আমরা গণশার দেশলাই ঋণ শোধ করব। দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে প্রবাল দেশলাই কাঠি জ্বালাতেই আমি বোমের সলতেটা তাতে ঠেকিয়ে সবে মাত্র হালকা ভাবে দরজার দিকে ঠেলে দিয়েছি, হঠাৎ দেখি দরজাটা কেউ খুলছে! গণশা খালি গায়ে মা লক্ষ্মীর কায়দায় বগলে জলের জগটা নিয়ে গুনগুন করে বেরিয়ে এলো --" হয়তো তোমারই জন্য.......(ক্ষণিকের বিরতি) .... (গগনবিদারী আওয়াজে) ওরে শালা বোমমমমম।" তারপরেই তাড়াহুড়ো করে গড়িয়ে যাওয়া বোমটাকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল এবং দরজাটাকে বন্ধ করে দিল! ঘটনার আকস্মিকতায় ও আমাকে আর প্রবালকে লক্ষ্যই করলো না! আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় প্রবাল সোজা দৌড়ে নিজের ঘরে, আর আমি উল্টো দিকের বাথরুমে।বন্ধ ঘরে বোম ফাটলে ভয়ানক আওয়াজ হয়। তবে তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল গণশার আতঙ্কিত চিৎকার! ৪-৫ মিনিট পরে নিঃশব্দে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি গণশার ঘরের সামনে গড়িয়াহাটের চৈত্র সেলের মতো ভিড়! সঙ্গে না ধরা পড়া অপরাধীদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে করা অমৃত-ভাষণ। আমিও সেই দলে যোগদান করে কত গালিগালাজই না করলাম! কিন্তু ফেরার সময় ঠোঁটের কোণে অজান্তে লেগে থাকা হাসিটা গণশার চোখে পড়ে গেল! একটু পরে আমার ঘরে এসে গণশা একটা ন্যায্য দাবি পেশ করেছিল --" তুই ঘরে থাক হাসু, আমি একটা বোম ফাটাবো।" তোর সে দাবি না মানার গ্লানিতে আজও আমি মর্মাহত। 

"ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম্ দ্রাম্, শুনে লাগে খটকা-

ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা!"