Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#ইভেন্ট_সৃজনী_বন্যাশিরোনামঃ-পূর্বাশাকলমেঃ-রজত সরকারতারিখঃ-১১/০৬/২০২১শব্দ সংখ্যাঃ- ৪৯৮
আটের দশকের শুরুর দিক, বেকার সমস্যায় জর্জরিত সমাজ। কুপথে চলে যাচ্ছে অনেক মেধাবী ছেলে মেয়েরা। তৈরী হচ্ছে মস্তান, সমাজ বিরোধী, চোরা কারবারী, এমন সম…

 


#ইভেন্ট_সৃজনী_বন্যা

শিরোনামঃ-পূর্বাশা

কলমেঃ-রজত সরকার

তারিখঃ-১১/০৬/২০২১

শব্দ সংখ্যাঃ- ৪৯৮


আটের দশকের শুরুর দিক, বেকার সমস্যায় জর্জরিত সমাজ। কুপথে চলে যাচ্ছে অনেক মেধাবী ছেলে মেয়েরা। তৈরী হচ্ছে মস্তান, সমাজ বিরোধী, চোরা কারবারী, এমন সময়ে টুটুল এক বুক তারুন্য নিয়ে কলেজের আঙিনায়। কান ঢাকা চুল, প্রায় মাঝখানে সিঁথি, লম্বা জুলফি, ফর্সা রং, লম্বা ছিপছিপে চেহারা। অদ্ভুত গানের গলা, পাড়ায় থিয়েটারেও বেশ নাম ডাক, মান্না দের গানও গায় দারুণ! বিএ পরীক্ষার কিছু আগে দুবছরের জুনিয়ার পূর্বাশার সাথে মন দেওয়া নেওয়া হল শুরু, দুচোখে তাদের রঙিন স্বপ্নেরা বাসা বেঁধেছে এখন। শাল মহুয়ার বনে দুজনের সময় কাটে প্রায়, সাদা রঙের গ্যাভাডিনের বেলবটম প্যান্ট আর গোলাপী ডগ কলারের শার্টে নায়কোচিত টুটুল আর মানানসই ঢলঢলে পদ্ম লতার মতো পূর্বাশা পিওর সিল্কের শাড়ী, মাথায় লম্বা একটা বিনুনি, চোখে টানা কাজল।

টুটুলের বন্ধু অরুন রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছে, তার চোখে স্বপ্ন সমাজের বৈষম্য দূর করার, মানুষকে ভালোভাবে বাঁচার অধিকার অর্জন করিয়ে দেওয়ার, কৃষক শ্রমিকদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তার লড়াই। অরুন টুটুল দুজনেই বিএ পাশ করল, এদিকে টুটুলের দিদির বিয়ে, বাড়িতে দুটো ছোট বোন, একটা ভাই। সংসারের ভার তার বাবার পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছেনা। টুটুলের ওপর চাপ, এবার রোজগার করতে হবে, দিদির বিয়ের গয়না ও অন্যান্য খরচ বাবা জোগাড় করেছেন, পণের নগদ কুড়ি হাজার টাকা টুটুলই ব্যবস্থা করবে, বাড়িতে কথা দিয়েছে। টুটুলের দুই বন্ধু শ্যাম, জ্যাম্বো আশ্বাস দিল ব্যবস্থা হয়ে যাবে। শ্যাম ক্লাস নাইন থেকেই লেখাপড়া ছেড়ে রোজগারে নেমেছে। রোজগার মানে চলন্ত ট্রেন থেকে ইঞ্জিনের কয়লা চুরি করে বাজারে বিক্রি। বড়ো ঝুঁকির কাজ, রেলের ড্রাইভারকে টাকা দেওয়া, রেল পুলিশকে টাকা দেওয়া, তা সত্বেও ধরা পড়ার ভয়, দুর্ঘটনার ভয়তো আছেই। শ্যামের সাথে যোগ দিয়েছে এখন জ্যাম্বো, দুজনের রোজগার ভালোই, ইয়াজদি বাইক কিনেছে, বাড়ির খরের চালা তুলে ঢালাই করিয়েছে, বেশ সচ্ছল তারা এখন। জ্যাম্বো বলল আমাদের সাথে ব্যবসায় লেগে পড়। টুটুল বলল চুরি করতে পারবে না। শ্যাম বলল, আরে এ চুরি সে চুরি নয়! তুই শিক্ষিত ছেলে, আমাদের সাথে চল, কোলিয়ারীর ম্যানেজারের সাথে কথা বলে চার গাড়ি কয়লার ডিও বের কর, আমরাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি, লোডার কে পয়সা দিয়ে ছয় গাড়ি লোড করাবো, শিলিগুড়ি ইট ভাটায় সাপ্লাই দেবো, রাস্তা খরচ, পুলিশ খরচ বাদ দিয়ে গাড়ি প্রতি পনেরো হাজার টাকা লাভ। চল্লিশ হাজার টাকা লাগাতে হবে, আমরা পঁচিশ হাজার জোগাড় করেছি, বাকী পনেরো কোথাও থেকে ধার নিতে হবে। টুটুল মায়ের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা নিল বাবাকে লুকিয়ে, পূর্বাশাও লুকিয়ে চার হাজার টাকা দিল, বাকী টাকা এদিক ওদিক থেকে জোগার করে প্রথম বারের ছয় গাড়ি সাপ্লাই দিল শিলিগুড়িতে, লাভের টাকা থেকে দিদির বিয়ে, ধার শোধ সব হল, টুটুলের ব্যাবসাও চলতে লাগল রমরমিয়ে। কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় CISF এর গুলিতে মারা গেল শ্যাম, জ্যাম্বো আত্মগোপন করল, টুটুলের নামে ওয়ারেন্ট, পুর্বাশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, ভাবতে পারেনি টুটুল ব্যবসার নামে কুখ্যাত কোল মাফিয়া হয়ে উঠেছে, শ্যুটআউটের অর্ডার! পূর্বাশা টুটুলের বন্ধু অরুনের কাছে গেল সাহায্যের আশায়, সে এখন বিধায়ক। অরুনকে বলল, তার বড়ো বিপদ, বন্ধুকে বাঁচাও অরুণ দা। অরুন টুটুলের খবর জোগাড় করে পূর্বাশাকে বলল, যাও তুমি, আমি দেখছি। কিন্তু পূর্বাশা নাছোড়, বাধ্য হয়ে পূর্বাশাকে নিয়ে গেল কলকাতায়, সুরাশক্ত অবস্থায় টুটুলকে উদ্ধার করে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করল, টুটুল বিভ্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেছিল। সুস্থ হয়ে দুজনের বিয়ে, জমানো টাকা থেকে এখন হার্ডওয়ারের দোকান করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, মেয়ের বিয়েও দিয়ে ফেলেছে।