Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
বিষয় : গল্প (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
তারিখ : ২৯/০৬/২০২১ ইং
কলমে : কমল কুমার মুখার্জী
শিরোনাম : "অকৃতজ্ঞতার নিষ্ঠুর পরিহাস"
সেই ১৯৫৩ ইংরেজি সালের কথা, যে বছর শেরপা তেনজিং নোরগে ও এডমান্ড হিলারি সর্বপ্রথম মাউন…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


বিষয় : গল্প (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)


তারিখ : ২৯/০৬/২০২১ ইং


কলমে : কমল কুমার মুখার্জী


শিরোনাম : "অকৃতজ্ঞতার নিষ্ঠুর পরিহাস"


সেই ১৯৫৩ ইংরেজি সালের কথা, যে বছর শেরপা তেনজিং নোরগে ও এডমান্ড হিলারি সর্বপ্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন। সেই বছরই আমার বাবা আমাদের ছোট্ট পরিবারকে নিয়ে রাঁচি থেকে শিলং বদলী হয়ে আসেন। শিলং এ এসেই বাবা আপার লাবান এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিলেন। বাড়ির মালিক খুবই ভদ্র এবং তিনি আসাম সেক্রেটারিয়েটে অফিসার পোস্টে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সময় আসামের রাজধানী ছিল শিলং। আমাদের ভাড়া বাড়িতে দুটো পার্ট ছিল। একটি পার্টে মালিক নিজে থাকতেন এবং অন্য পার্টে আমরা ভাড়া থাকতাম। ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষার জন্য বাড়িটি আসাম টাইপ ও মাটি থেকে উঁচু মেজে চেরা কাঠের তক্তায় নির্মিত ছিল। মাটি ও মেজের মাঝখানে খালি জায়গাতে আমরা রান্না করার জ্বালানি কাঠ রৌদ্রে শুকিয়ে রাখতাম। তখনকার সময় গ্যাস ছিলনা, কাঠের উনুনে রান্না হতো। নিচের আরেক পাশে মালিক ছোট্ট একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই ঘরে একজন বুড়ি থাকতেন। মালিক বাবাকে বলেছিলেন যে ওই বুড়িটা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতো এবং ওর থাকার কোনো জায়গা ছিলোনা। তাই মালিক বুড়ির কষ্ট লাঘব করার জন্য প্ল্যাঙ্কিকের নিচে বুড়িকে এই ছোট্ট ঘরটা বানিয়ে দিয়েছেন এবং বুড়ির অন্ন বস্ত্র মালিক নিজেই দিয়ে থাকেন। আমাদের মালিকের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল।


রোজ রাত্রেই আমরা বুড়ির কান্নার আওয়াজ পেতাম। মালিকের স্ত্রীকে মা জিগ্গেস করায় উনি বলেছিলেন যে বুড়ির মাথায় নাকি একটু ছিট আছে।


একদিন মালিক উনার সম্পূর্ণ পরিবারকে নিয়ে সকাল থেকেই একটা বিয়ে বাড়ীতে গেলেন। বুড়িটা আমার মায়ের কাছে এসে খেতে চাইলো। মা বুড়িকে পেট ভরে খাইয়ে দিলেন। বুড়ি তৃপ্তিতে খেয়ে আমাদের সবাইকে খুব আশীর্বাদ দিলেন। মা তখন বুড়িকে জিগ্গেস করলেন, "তুমি রাত্রে কাঁদো কেন?" বুড়িটা কিছুতেই মুখ খুলতে চাইলোনা। অনেক বিনতির পর বুড়িটা মাকে বললো, তাহলে শোনো, "তোমাদের তথাকথিত ভদ্র মালিকটি আমার একমাত্র সন্তান। নিজের আভিজাত্য বজায় রাখার জন্য আমাকে ভিখিরি সাজিয়ে প্ল্যাঙ্কিকের তলায় রেখেছে। ঠান্ডায় বড্ডো কষ্ট পাই, তাই কাঁদি। কোনো জন্মের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি। ঠাকুর ও আমার ওপর বিরূপ। আমাকে তো মুক্তি দেননা।" এই কয়টা কথা বলেই বুড়ি হন হন করে চলে গেলেন। মা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। 


বিকেলে বাবা অফিস থেকে ফিরতেই সব কথা বাবাকে খুলে বললেন এবং আরও বললেন যে এই বাড়িতে আমি আর থাকতে পারবোনা, আমাকে অন্য বাড়িতে নিয়ে চল। এক সপ্তাহের ভেতরেই আমরা অন্য আরেকটি ভাড়া বাড়িতে চলে গেলাম।


কিছুদিন পর জানতে পারলাম যে বুড়িটা ইহলোক ছেড়ে চলে গেছেন। মা তখন বলেছিলেন "যাক্ অবশেষে ঠাকুর বুড়ির ডাক শুনেছেন, বুড়িকে মুক্তি দিয়েছেন।"


অকৃতজ্ঞতার নিষ্ঠুর পরিহাস।