Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
গঙ্গাবতরণ বা গঙ্গাপূজা বা দশহরা********************************✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়২০.০৬.২১©কপিরাইট সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
আজকে দশহরা, পুণ্যতোয়া গঙ্গাদেবীর মর্ত্য অবতরণের দিন। আদি শঙ্করাচার্যের গঙ্গাস্তোত্রটি হলো…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


গঙ্গাবতরণ বা গঙ্গাপূজা বা দশহরা

********************************

✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়

২০.০৬.২১

©কপিরাইট সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত


আজকে দশহরা, পুণ্যতোয়া গঙ্গাদেবীর মর্ত্য অবতরণের দিন। আদি শঙ্করাচার্যের গঙ্গাস্তোত্রটি হলো :


গঙ্গা স্তোত্র


দেবি সুরেশ্বরি ভগবতি গঙ্গে 

ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে 

শংকর মৌলিবিহারিণি বিমলে

মম মতি রাস্তাং তব পদ কমলে  .. ১..


ভাগিরথি সুখদাযিনি মাতঃ

তব জলমহিমা নিগমে খ্যাতঃ .

নাহং জানে তব মহিমানং

পাহি কৃপামযি মামজ্নানম্ .. ২..


হরি পদ পাদ্য তরংগিণি গঙ্গে হিমবিধুমুক্তাধবলতরংগে .

দূরীকুরু মম দুষ্কৃতি ভারং

কুরু কৃপযা ভব সাগর পারম্ .. ৩..


তব জলমমলং যেন নিপীতং

পরমপদং খলু তেন গৃহীতম্ .

মাতর্গংগে ত্বযি যো ভক্তঃ

কিল তং দ্রষ্টুং ন যমঃ শক্তঃ .. ৪..


পতিতোদ্ধারিণি জাহ্নবি গঙ্গে

খণ্ডিত গিরিবরমণ্ডিত ভংগে .

ভীষ্ম জননি হে মুনিবরকন্যে

পতিতনিবারিণি ত্রিভুবন ধন্যে .. ৫..


কল্পলতামিব ফলদাম্ লোকে

প্রণমতি যস্ত্বাং ন পততি শোকে .

পারাবারবিহারিণি গঙ্গে

বিমুখযুবতি কৃততরলাপাংগে .. ৬..


তব চেন্মাতঃ স্রোতঃ স্নাতঃ

পুনরপি জঠরে সোপি ন জাতঃ .

নরকনিবারিণি জাহ্নবি গঙ্গে

কলুষবিনাশিনি মহিমোত্তুংগে .. ৭..


পুনরসদংগে পুণ্যতরংগে

জয জয জাহ্নবি করুণাপাংগে .

ইন্দ্রমুকুটমণিরাজিতচরণে

সুখদে শুভদে ভৃত্যশরণ্যে .. ৮..


রোগং শোকং তাপং পাপং

হর মে ভগবতি কুমতি কলাপম্ .

ত্রিভুবনসারে বসুধাহারে

ত্বমসি গতির্মম খলু সংসারে .. ৯..


অলকানংদে পরমানংদে

কুরু করুণামযি কাতরবন্দ্যে .

তব তট নিকটে যস্য নিবাসঃ

খলু বৈকুণ্ঠে তস্য নিবাসঃ .. ১০..


বরমিহ মীরে কমঠো মীনঃ

কিং বা তীরে শরটঃ ক্ষীণঃ .

অথবা শ্বপচো মলিনো দীনঃ

তব ন হি দূরে নৃপতিকুলীনঃ .. ১১..


ভো ভুবনেশ্বরি পুণ্যে ধন্যে

দেবি দ্রবমযি মুনিবরকন্যে .

গংগাস্তবমিমমমলং নিত্যং

পঠতি নরো যঃ স জযতি সত্যম্ .. ১২..


যেষাং হৃদযে গঙ্গা ভক্তিঃ

তেষাং ভবতি সদা সুখমুক্তিঃ .

মধুরাকন্তা পঞ্ঝটিকাভিঃ

পরমানন্দকলিত ললিতাভিঃ .. ১৩..


গঙ্গাস্তোত্রমিদং ভবসারং

বাংছিতফলদম্ বিমলং সারম্ .

শংকরসেবক শংকর রচিতং

পঠতি সুখীঃ তব ইতি চ সমাপ্তম্ .. ১৪..


.. ইতি শ্রীমচ্ছংকরাচার্যবিরচিতং গঙ্গাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ 


গঙ্গা কলিযুগে পরম তীর্থ । বিশেষ করে সব শাস্ত্রই এই কথা বলে। মহাভারতে ঋষি পুলস্ত্য, ভীস্মের নিকট কীর্তন করেছেন-- 'যেখানে গঙ্গা আছেন সেটাই দেশ, গঙ্গা তীরের সেই দেশই তপোবন ও সিদ্ধ তীর্থ' আর্য্যদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও 'গঙ্গা' নাম উল্লেখ আছে। গঙ্গা বৈদিকী নদী।ভৌগোলিক তথ্যে গঙ্গার উৎপত্তি গোমুখী শৃঙ্গ থেকে। আকাশ ( স্বর্গ ) থেকে পতিত মেঘের জল ও তুষার গলিত জল একত্রিত হয়ে গঙ্গা নদীর সৃষ্টি। গঙ্গা যেখানে অলকানন্দার সহিত মিলিত হয়েছেন সে স্থানের নাম দেবপ্রয়োগ ।ধর্মীয় গ্রন্থে লেখা রয়েছে, গঙ্গা নদীতে স্নান, নর্মদা নদীর দর্শন এবং শিপ্রা নদীর নাম জপ করলে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়।গঙ্গা বৈদিকী নদী। ঋক্ বেদের একটি শ্লোকে যমুনা, সরস্বতী, শতুদ্রী , পরুষ্ণী , অসিক্লী , মরুৎবৃধা , বিতস্তা , সুষোমা ও আর্জীকিয়া নদীর সাথে গঙ্গার নাম পাওয়া যায় ( ঋক্- ১০/৭৫/০৫) ।


স্কন্ধপুরাণ অনুযায়ী, এই দিনে গঙ্গায় স্নান করে গঙ্গাকে দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ দিয়ে পুজো করার কথা বলা হয়েছে। আবার সনাতন ধর্মশাস্ত্র অনুসারে-যোগ, যাগযজ্ঞ, পুজো, অর্চনা, ব্রত, নিয়ম সবই পাপ বিনাশ করে। দশ পাপ হরা দশহরা এমনই পুণ্য তিথি।ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গার পূজা করলে মানুষ দশ প্রকার পাপ থেকে মুক্তি পায়। গঙ্গা দশহরার দিন ধ্যান ও স্নানের দ্বারা কোনও ব্যক্তি কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, ঈর্ষা, হিংসা, হত্যা, ছলনা, জালিয়াতি, পরনিন্দার মতো পাপ থেকে মুক্তি পায়।বিশ্বাস করা হয়, এই দিনই রাজা ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে গঙ্গা পৃথিবীতে নেমে আসেন। তিথি ছিল জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল দশমী। এই কারণেই এদিন গঙ্গা দশহরার পুজো হয়। কথিত আছে, এদিন আবক্ষ গঙ্গাজলে দাঁড়িয়ে গঙ্গাস্তোত্র পাঠ করলে পাপমুক্তি ঘটে।


পৌরাণিক আখ্যান মতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র কপিল শাপে ভস্ম হলে, তাহাদিগের প্রেতাত্মার মুক্তির জন্য স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে আনবার প্রয়োজন হয় ।তপস্যা করতে করতে একে একে রাজা সগর, অসমঞ্জ, অংশুমান, দিলীপ রাজা দেহ ত্যাগ করেন। অবশেষে দিলীপ পুত্র ভগীরথ সফল হন। গঙ্গাকে মর্তে আনতে পারেন ।


সনাতন ধর্মশাস্ত্র অভয় দিয়ে বলেছে, পাপমুক্তির উপায় নিশ্চয়ই রয়েছে কলিযুগে । শুভকাজে অশুভ কর্মের বিনাশ, পূণ্যকর্মে পাপের ক্ষয়। যোগ, যাগযজ্ঞ, পুজো, অর্চনা, ব্রত, নিয়ম সবই পাপ বিনাশ করে। দশ পাপ হরা দশহরা এমনই পুণ্য তিথি। বঙ্গের প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা পুণ্য তিথিগুলির মধ্যে দশহরার উল্লেখ করেছেন। জীমূতবাহন, রায়মুকুট, বৃহস্পতি ও রঘুনন্দন প্রমুখ পণ্ডিতবর্গ জ্যৈষ্ঠ্য শুক্লা দশমী তিথিতে দশহরাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।


বৈদিক যুগের কোনও এক সময়ে দশহরা তিথি থেকেই বৎসর গণনা আরম্ভ হতো। দশহরা সেদিন নববর্ষের মর্যাদা পেত। দশহরার প্রধান ধর্মীয় কর্ম গঙ্গায় স্নান। কারণ, এই তিথিতেই গঙ্গা মর্ত্যলোকে নেমে এসেছিলেন। তিনি এই তিথিতে দশবিধ পাপ হরণ করেন। দশবিধ পাপের প্রথম তিনটি হলো দেহগত, বাক্যগত আর মানসিক।


পরদ্রব্য হরণ, অযথা হিংসা অর্থাৎ বৃথা প্রাণী হত্যা ও পরদার গমন অর্থাৎ অবৈধ প্রণয় এই তিনটি দেহগত পাপ।


অহংকারী বাক্য, মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা এবং অসংবদ্ধ প্রলাপ বা বাজে বকা— এই চারটি বাক্যগত পাপ।


মনে মনে পরের দ্রব্যের কামনা, পরের অনিষ্ট চিন্তা এবং মিথ্যার প্রতি আসক্তি— এই তিনটি মানসিক পাপ।


যেখানে গঙ্গানদী যমুনা ও গুপ্তা সরস্বতীর সাথে মিলিত হয়েছেন সে স্থানের নাম ‘প্রয়াগ’ বা ‘ত্রিবেনীসঙ্গম’। গঙ্গার সহিত গোমতী, ঘর্ঘরা, শোন, বরুণা, অসি, গণ্ডকী, কুশী, রূপনারায়ন ইত্যাদি বহু নদ নদী মিলিত হয়েছে । উত্তর ভারতের বহু তীর্থ যেমন হরিদ্বার, প্রয়োগ, কাশী, নবদ্বীপ, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট তীর্থ গঙ্গার ধারেই । গঙ্গা পাপনাশিনী, কলি কলুষ নাশিনী । গঙ্গাপূজার সঙ্গে শিবপূজা অবশ্য বিধি। হর হর মহাদেব.....হর হর গঙ্গে ।


গঙ্গা পূজার মন্ত্র :

************::

রোগং শোকং তাপং পাপং হর মে ভগবতী কুমতিকলাপাম্।

ত্রিভুবনসারে বসুধাহারে ত্বমসি গতির্মম খলু সংসারে।

🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏