Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#পালিয়ে #নবনীতা সই 7,7,21
বাইরে বেশ গরম৷ আজ অর্ণবের বাড়িতে কেউ নেই ৷ অর্ণবের মা বাবা গেছে বোনকে নিয়ে মামাবাড়ি৷ অর্ণব জমিয়ে বসেছে , কোলে চিপসের প্যাকেট নিয়ে৷ টিভিতে রহস্য রোমাঞ্চ চলছে৷
মাঝে মাঝে বাড়িতে একা থাকতেও ভালো লাগে৷ মা রান্ন…

 


#পালিয়ে 

#নবনীতা সই 

7,7,21


বাইরে বেশ গরম৷ আজ অর্ণবের বাড়িতে কেউ নেই ৷ অর্ণবের মা বাবা গেছে বোনকে নিয়ে মামাবাড়ি৷ অর্ণব জমিয়ে বসেছে , কোলে চিপসের প্যাকেট নিয়ে৷

 টিভিতে রহস্য রোমাঞ্চ চলছে৷


মাঝে মাঝে বাড়িতে একা থাকতেও ভালো লাগে৷ মা রান্না করে গেছে, তবুও রাতের জন্য বিরিয়ানী অর্ডার করে দিয়েছে অর্ণব৷ বেশ হাত পা ছড়িয়ে আজ টিভি দেখবে৷ মা থাকলে তো সব বাংলা সিরিয়াল চলে টিভিতে৷


হঠাৎ বাইরে শো শো আওয়াজ উঠেই মিলিয়ে গেলো৷ অর্ণব পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো ঝড় উঠলো নাকি? দুম করে লোডশেডিং....

মনে মনে বিরক্ত হয়ে , শালা ঝড় না উঠতেই লাইট-অফ? অর্ণব ফোনের টর্চটা জ্বালানোর আগেই .....


কিরে একা একা বসে টিভি দেখছিস?

বিকাশের কথায় চমকে যায় অর্ণব৷ 

কিরে ভুত দেখছিস মনে হলো?

না না মা মা নে কালকে...

হ্যাঁ রে নিজেকে খুব সাহসী মনে করিস আর আমাকে ফেলে পালালি?

শোন বিশ্বাস কর আমি ভেবেছিলাম যাবো৷


যাবো ? শালা আমার বাড়িতে অবধি জানাস নি? 


আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম রে৷ আমি তোকে ডেকেছিলাম ৷ কোন আওয়াজ পাইনি৷ ভেবেছিলাম তুই চলে এসেছিস৷


তুই আর ভয়? 


এবার অর্ণব লজ্জা পায়৷ সেদিন যখন অশোক কাকু বলছিলো, তোরা তো অনেক ভুতুরে বাড়িতে রাত কাটাস কিন্তু হাবিগঞ্জের ডাকবাংলায় রাত কাটাতে পারবি না৷ 

ঐ বাংলোর এখন যিনি মালিক সে দুই লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে বলেছে, একরাত যদি কেউ ওখানে থাকতে পারে৷

সেই সময় সবচেয়ে বেশী উৎসাহ টা অর্ণব ই দেখিয়েছিলো৷


বিকাশের কেন জানিনা মনটা খুঁতখুঁত করছিলো৷ অর্ণব তখন খুব হেয় করে ভিতু বলেছিলো বিকাশ কে৷


আসলে অর্ণব আর বিকাশ এক কলেজে পড়ে, বিকাশ হোস্টেলে থাকে আর অর্ণব বাড়ি থেকে যাতায়াত করে৷ 

মাঝে মাঝেই বিকাশ অর্ণবের বাড়িতে আসে৷ দুজনে মিলে ফেসবুকে পেজ করেছে৷

" আমরা ভূত দেখতে চাই ", নাম দিয়ে৷

অনেকে বিভিন্ন ঠিকানা দিয়ে , অর্ণব আর বিকাশ কে সেখানে যেতে বলেছে৷ অনেক জায়গায় গিয়ে , অর্ণব আর বিকাশ থেকেও এসেছে৷ সেসব ছবি, ভিডিও পোষ্ট করে, আজ দুজনেই ফেসবুকে বেশ পরিচিত মুখ৷ 


অনেক তর্ক - বিতর্ক , তান্ত্রিক থেকে ওঝা ওরা দেখেছে৷ দুজনেই বেশ মজা পায় এসব রোমাঞ্চ যাত্রায়৷ 


সেদিন সব শুনে বিকাশ কেমন দমে গিয়েছিলো৷ শত হলেও অতগুলো টাকা কেউ এমনি এমনি তো দেবেনা৷ কিন্তু অর্ণব তখন টাকার স্বপ্নে বিভোর৷ বেশ ব্যঙ্গ করাতেই , বিকাশ রাজি হয়ে গিয়েছিলো ৷


 পরদিন রাতে সব গুছিয়ে নিয়ে দুজনে বাইকে করে চলে তো গিয়েছিলো হাবিগঞ্জ৷ কিন্তু কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ ছিলো৷ এর আগেও অর্ণব আর বিকাশ বেশ কয়েকটা ভুতুরে বাড়িতে রাত কাটিয়েছে৷ দুজনের বেশ নাম আছে৷ কিন্তু কাল হঠাৎ যে কি হয়ে গেলো৷


প্রথমে অর্ণব বাইক রেখে বাড়িটার দিকে টর্চ মেরে দেখতেই বুকটা শুকিয়ে গিয়েছিলো৷ কেমন যেন কঙ্কালসার বাড়ি৷ কিন্তু প্রতিটি দেওয়াল যেন জীবন্ত৷ কোথাও ভাঙেনি বাড়িটা৷ কিন্তু যেন চিররুগ্ন রুগীর মতন বেঁচে আছে৷ 

নিজের মন থেকে ভয় সরিয়ে , ভিডিও শুরু করে অর্ণব৷ 

বিকাশ ব্যাগ নিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে বলেছিলো, আজ ফিরে চল৷ অমাবস্যা তার উপর আবহাওয়া খুব খারাপ ৷ 


অর্ণব তখনও বিদ্রূপ করেছে বিকাশ কে৷ দুজনে মিলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গিয়েছিলো উপরে৷ দুটো বড় বড় ঘর৷ পাশেই বাথরুম৷ ভাঙাচোরা বাড়ি নয় কিন্তু কেমন যেন প্লাস্টারহীন কঙ্কালসার ৷ 

চাদর পেতে মেঝেতে , দেশলাই দিয়ে মশার ধূপ জ্বালাতেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় ৷ 


তারপর যে কি হলো , মাঝরাতে টুকরো টুকরো কথা, মুষুল ধারে বৃষ্টি ৷ ঘুম ভেঙেই দ্যাখে ঘরের মাঝে রক্তধারা আর ঐ বিশাল নখের .... উফ!! কোনরকমে প্রাণ টা নিয়ে পালিয়েছিলো অর্ণব৷ 


ফিরে বিকাশের জন্য চিন্তা হলেও ভয়ে আর যেতে পারেনি৷ আর সত্যিই বিকাশের কিছু হয়ে গেলে, কে মানবে সেটা ভুতে করেছে? সেই জন্য আর কাউকে কিছু জানায়নি অর্ণব৷ 


কি রে কি ভাবছিস?

আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম রে বিকাশ৷ সরি৷ 

কিন্তু আজ তো ভয় পেলে হবে না রে অর্ণব ৷ সবার আগে আমার বাড়িতে ফোন করে বল এখানে আসতে৷

এখানে? 

হ্যাঁ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি কর৷ 


বিকাশের বাড়ি দূর্গাপুর, এখানে হোস্টেলে থাকে ৷ আর অর্ণব থাকে নিজের বাড়িতে৷ অর্ণব বিকাশের বাড়ি গেছে অনেকবার ৷ ফোনটা করেই বললো, কাকিমা বিকাশ... আর কিছু বলার আগেই বিশাল বাজ পড়লো৷ ফোনটা পড়ে গেলো হাত থেকে৷


অর্ণব কাল কে ঐ রকম পরিবেশে ভয় পেয়ে তুই আমাকে রেখেই পালিয়েছিলি বাইক নিয়ে৷

একবার মনে হলোনা বিকাশের কি হলো?


আ আ আ মি ভেবেছিলাম!


কি ভেবেছিলি? আমি মরে গেছি? আর যদি বেঁচে থাকি তাও তো তোর লাভ৷

জানিস কি হয়েছিলো? 


কি কি হয়েছিলো রে?


কাল আমি বাথরুম থেকে এসে দেখি মেঝেতে ভর্তি রক্ত ৷ আমি ভেবেছিলাম তোর কিছু একটা হয়েছে, আমি ছুটে অন্যঘরে তোকে খুঁজেছি, তারপর মেঝে থেকে দুটো হাত আমাকে টেনে ফেলে দেয়৷ উফ! কি বড় বড় নখ৷ 

ঐ বাড়ির মালিক এক বড় মাড়োয়ারী ব্যবসায়ী৷ তার মেয়েকে ঐ বাড়িতে পুড়িয়ে মেরেছিলো তার সৎ মা ৷ তার সৎ মা বলতো , মেয়েটা নাকি রক্ত খেতো৷

 একদিন নখ দিয়ে সেই সৎ মায়ের পোষা বিড়াল টাকে চিরে রক্ত খেতে দেখে ফেলে ওর সৎ মা৷ ব্যাস তারপর ঘরের দরজা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ 

মেয়েটা প্রতি অমাবস্যার আগে ওর বাবা কে স্বপ্ন দেখায়৷ প্রতি অমাবস্যায় রক্ত লাগে ওর৷ আর ওর বাবা টাকার লোভ দেখিয়ে শিকার পাঠায় ঐ বাড়িতে৷


গতরাতে আমি ছিলাম ওর শিকার৷ তোর জন্য আমি শিকার হলাম৷ তোর টাকার লোভ আর ভয়ের জন্য৷ 


 আজ সেই হঠাৎ বৃষ্টি ..... সেই রক্তধারা আর সেই নখ, বিকাশের হাসিটা পাল্টে যেতে লাগলো, বিকাশ বলে উঠলো, আমার মা কে বল, তুই কাল আমাকে ফেলে পালিয়েছিস৷ আমার শরীর টা যে ঐ খানে পরে আছে রে অর্ণব ... আজও কি তুই পালিয়ে বাঁচবি?????


শেষ৷