সৃষ্টি সাহিত্য যাপনবিভাগ: রম্যগল্পশিরোনাম আধারকার্ড অভিযানকলমে: সোমনাথ চ্যাটার্জী২১-০৭-২০২১""""""""""""""""""""""&qu…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
বিভাগ: রম্যগল্প
শিরোনাম আধারকার্ড অভিযান
কলমে: সোমনাথ চ্যাটার্জী
২১-০৭-২০২১
""""""""""""""""""""""""""""""""""”"
সকাল বেলা চা খাবার পরেই দীপক বলে ওঠে "শুনছো, একটু তাড়াতাড়ি করো। লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। যে ভাবেই হোক আজ ভ্যাকসিনটা নিতেই হবে"। রান্নাঘর থেকে সুপর্নার উত্তর ভেসে আসে "হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে, এইতো জলখাবার খেয়েই রওনা দেব"।
- বলছি যে আধার কার্ডের জেরক্স আর অরিজিনাল দুটোই সঙ্গে নিও কিন্তু। ওটা লাগবে।
- আধারকার্ড! আধারকার্ডতো তোমার কাছেই আছে, বলে ওঠে সুপর্না। গত সপ্তাহে জেরক্স করতে নিয়ে গেলে। তারপর আর আমায় ফেরত দাওনি।
- কি বলছো কি! একসপ্তাহ ধরে আধারকার্ড নিয়ে আমি ঘুরছি নাকি? তোমাকে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। আলমারিতে দেখো।
- আরে, আমার হাতেই দাওনি। আলমারিতে যাবে কি করে। পি সি সরকারের ম্যাজিক নাকি? ফুসস করে আলমারিতে সেঁধিয়ে যাবে নিজে থেকে।
শুরু হলো আধারকার্ড তল্লাশি অভিযান। আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, দরজার পিছনে ঝোলানো যত প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, পুরোনো খবরের কাগজের দিস্তের ভিতর, সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখা ম্যাগাজিনের ফাঁকে, এমনকি ওয়াশিং মেশিনের ভিতরে না কাচা জামা প্যান্টের পকেটে অবধি। নাঃ তিনি বেপাত্তা। তল্লাশি অভিযানে মেয়ে তাতু এসেও হাত লাগায়। যতরকমের সম্ভাব্য স্থান আছে বাড়িতে তোলপাড় হচ্ছে। আধারের দেখা নেই। "তোমার দেখা নাই রে তোমার দেখা নাই" এফ এমে গান বাজছে। বারান্দায় রোদ্দুর ও নেই। পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে এবং বেশ উত্তপ্ত। আধারকার্ড তো মেহুল চোকসি নয় যে সবার চোখে ধুলো দিয়ে সোজা আ্যান্টিগায় গা ঢাকা দেবে। দীপক চিৎকার করে ওঠে সুপর্নার ওপর
- তোমার কিচ্ছু মনে থাকেনা। নিজে দিয়েছিলাম জেরক্স করে এনে। এমন দুর্গম জায়গায় তাকে যত্ন করে রেখেছো যে এখন নিজেই পাচ্ছনা।
সুপর্নাও ছাড়ার পাত্রী নয়। সেও মুখের স্টেনগান চালাতে আরম্ভ করে।
-সবকিছু রাখার দায়িত্ব খালি আমার একার নাকি ? তুমিই হারিয়েছো। এখন আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছ।
বেলা বাড়তে থাকে। এতক্ষণে হয়তো বিশাল লাইন হয়ে গেছে। এতদিন নেব কি নেবনা দোটানায় চলে গেছে। তারপর মাঝে জাল ভ্যাকসিন কেস। আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেসব কাটিয়ে উঠে আজ ভ্যাকসিন নেবার জন্য মনস্থির করেছিল। গত সপ্তাহে সরকারি এ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে আজ যাবার সময় এই আধার বিপত্তি।
এবার খোঁজ শুরু হলো বিছানার তলায়। বাঙালির এক অতি বিশ্বস্ত জায়গা বিছানার তলা। রেডিমেড গদির ওপর ঘুম আসেনা বলে ধুনুরী ডেকে দুখানা তোষক বানিয়েছিল দীপক। তোষকের তলায় যাবতীয় কাগজপত্র রেখে দেওয়া বাঙালির এক পরম্পরা। হাতের কাছেই টেম্পুরারি স্টোরেজ। তোষক তুললে কি পাওয়া যাবেনা। জন্মের শংশাপত্রের কপি, দশ বছর আগের ওষুধের বিল, তিন বছর আগের রেস্টুরেন্টের বিল, অজস্র ক্যারিব্যাগ দোমড়ানো, মচড়ানো, ২০০৫ সালের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, শনের দড়ির টুকরো, পুরোনো দুটাকার নোট, খুচরো পয়সা ইত্যাদি ইত্যাদি। তোলা শুরু হলো তাকে। দীপক সুপর্না ও তাতু তিনজনে তোষকটাকে এগরোলের মত গুটিয়ে ফেলে প্রতিটি সন্দেহজনক কাগজ, খাম, ক্যারিব্যাগ চেকিং শুরু করলো। যেন ইনকাম ট্যাক্সের রেইড চলছে। অবশেষে ধরা পড়লো আধারকার্ড, জেরক্স এবং অরিজিনাল সমেত কদিনের আগের এক খবরের কাগজের খাঁজে তোষকের তলায় নিশ্চিন্তে নিদ্রা দিচ্ছে। এইতো! পেয়েছি, তাতুর উচ্ছ্বাস। এভারেস্ট জয়ের হাসি দীপক আর সুপর্নার মুখে। "তুমিই রেখেছিলে" সরাসরি দীপকের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল সুপর্নার। নিরুদ্দেশ ব্যক্তির সন্ধান দিলে পুরস্কৃত করা হয়। তাতুর মুখে সেই আবেদনটি লক্ষ্য করে সুপর্না বলে উঠল আজ জোমাটো থেকে রাতের খাবারের অর্ডার দেবে, আমি কিন্তু কিচ্ছু রান্না করতে পারবনা রাত্তিরে। তাতু খুব খুশি। দীপক খানিকটা নিরুপায় হয়ে মাথা নেড়ে সায় দেয়।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে, এখন তাড়াতাড়ি চলো, ভ্যাকসিনটা ফুঁটিয়ে আসি। না হলে গিয়ে শুনবো ভ্যাকসিনও বেপাত্তা !
©️সোমনাথ চ্যাটার্জী
রচনাকাল: ১৮-০৭-২০২১