দেশমানুষ ডেস্ক : দুয়ারে ত্রানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রায় ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। সেইমতো ইতিমধ্যেই ১৯ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাষীদের একাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দে…
দেশমানুষ ডেস্ক : দুয়ারে ত্রানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রায় ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। সেইমতো ইতিমধ্যেই ১৯ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাষীদের একাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় দুই লক্ষ আশি হাজার হেক্টর এলাকা কৃষি ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত। যেখানে ধান পান সবজি ফুল সহ রকমারি চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু কৃষিনির্ভর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আবার সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা হওয়ার দরুন একাধিকবার বুলবুল আম্ফান ফনি সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়তে হয়। সম্প্রতি জলোচ্ছ্বাস এবং জশ ঘূর্ণিঝড়ের দরুন উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে চাষ-বাস এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচির মাধ্যমে সমস্ত রকমের সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্যে বিধ্বস্ত ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার চাষীদের প্রায় ২০ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। জেলার প্রায় ১৩টি ব্লকের ৩৮৩ টি মৌজার এক লক্ষ ৪৯ হাজার ১২৭ জন কৃষক এই ক্ষতিপূরণ পেতে চলেছেন।
মূলত যে সমস্ত মৌজায় যশের তাণ্ডবে এবং জলোচ্ছ্বাসে চাষবাসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই সমস্ত এলাকার ৩৮৩ মৌজাকে এর আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত মৌজায় যে সমস্ত কৃষকরা কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছেন তারা ন্যূনতম ১০০০ এবং সর্বাধিক আড়াই হাজার টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচিতে আবেদনকারীদেরও এই ক্ষতিপূরণের টাকা বিলিবন্টন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারি এই ক্ষতি পূরণের পাশাপাশি উপকূলবর্তী যে সমস্ত এলাকার কৃষিক্ষেত্রে সমুদ্র কিংবা নদীর নোনাজল জলোচ্ছ্বাসের কারণে ঢুকে গিয়ে জলবন্দি অবস্থা তৈরি হয়েছিল সেখানে সরকারি উদ্যোগে কৃষি প্রদর্শনী ক্ষেত্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রায় ৩০০ একর এলাকাজুড়ে লবণাক্ত সহনশীল বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দিনে এই সকল বীজতলা থেকে চাষীদের সহায়তায় বিনামূল্যে বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা কৃষি দপ্তর। এক্ষেত্রে জেলার মোট আটটি ব্লকে এই বীজতলা তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে খেজুরি ১ নম্বর ব্লকের ৬০ একর, খেজুরি ২ , রামনগর ১ এবং ২ ব্লকে প্রায় ৫০একর এলাকা করে। এছাড়া কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকে ৪৫ একর এলাকায়, কাঁথি এক নম্বর ব্লক এ ২৫, এবং নন্দীগ্রামের দুইটি ব্লকে ১০ একর এলাকাজুড়ে এই বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চাষীদের জমিতেই এই বীজতলা প্রদর্শনী ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সমূহ অর্থ বরাদ্দ করছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে ১০০ দিনের কাজে এই প্রকল্পটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপর্যয়ের এই ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে নতুন করে চাষবাসের উদ্বুদ্ধ করতে জেলার চাষীদের কৃষক বন্ধু প্রকল্পে সহায়তা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এই সমস্ত এলাকায় প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন বিভিন্ন উন্নত ফলনশীল ধানের বীজ কিট আকারে চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা( শস্য সুরক্ষা) মৃণাল কান্তি বেরা বলেন, সম্প্রতি যশ ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চাষিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে সিংহভাগ অর্থ ইতিমধ্যেই চাষীদের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বিতরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় বিনামূল্যে ধানের চারা বিতরণের ক্ষেত্রে জেলার প্রায় ১০হাজার ক্ষুদ্র প্রান্তিক ক্ষতিগ্রস্ত চাষী সরাসরি উপকৃত হবেন।