Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ফাদারের মৃত্যু, জামিন আর লাগবে না

জেসুইট পাদরি ফাদার স্ট্যানিস্লাস লাডু স্বামীর মৃত্যু কোন নিছক এক মৃত্যু নয়।বরং এটি পরিকল্পিত খুন।রাষ্ট্রেরই হাতে খুন হলেন ফাদার।যতই শাসক এটিকে নিছক সাধারন মৃত্যুর শিলমোহর দিক না কেন,এটি আসলে ঠান্ডা মাথায় খুন ছাড়া আর কিছু নয়। তিল…

ছবি- উইকিপিডিয়া


তরুণ চট্টোপাধ্যায় ।
 জেসুইট পাদরি ফাদার স্ট্যানিস্লাস লাডু স্বামীর মৃত্যু কোন নিছক এক মৃত্যু নয়।বরং এটি পরিকল্পিত খুন।রাষ্ট্রেরই হাতে খুন হলেন ফাদার।যতই শাসক এটিকে নিছক সাধারন মৃত্যুর শিলমোহর দিক না কেন,এটি আসলে ঠান্ডা মাথায় খুন ছাড়া আর কিছু নয়। তিলে তিলে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে এই খুনের নকশা আঁকা হয়। রাষ্ট্রযন্ত্র যে এই খুনের যে পিছনে আজ তা আর গোপন করা যাচ্ছে না। আর যতই যাই বলি না কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরোক্ষ ভাবে এই খুনের দায় এড়াতে পারে না।

84 বছর বয়স হয়েছিল ফাদারের।তিনি স্বাভাবিক ভাবেই যে কোন দিন মারা যেতে পারতেন। কিন্তু দিনের পর দিন জেলখানায় তাঁর ওপর যে বর্বরচিত অত্যাচার হয়েছে সে কাহিনী সেলুলয়েডকেও হার মানায় ।

চশমা ছাড়া আমরা অনেকেই অন্ধ।চোখে দেখি না।ফাদার কে গ্রেফতারের সময় তাঁকে চশমাটিও নিতে দেওয়া হয়নি।কেন নিতে দেওয়া হয়নি তাঁর কোন জবাব নেই।চশমা কি কোন বিস্ফোরক।

আসলে চশমা বিস্ফোরক নয় ঠিকই কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়া মানুষটি বিস্ফোরক শাসকের চোখে।

আসলে আদিবাসী দের অধিকার রক্ষায় অশক্ত শরীর নিয়ে ও তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন অবিরাম ।আর তাই তিনি শাসকের কু নজরে। হাজারো ধারা প্রয়োগ করে গ্রেপ্তাতার করা হয়েছিল তাকে। আর সেই গ্রেপ্তার হওয়ার সময় চোখে দেখার চশমাটিতেও ভয় পেয়ে ছিলেন গ্রেপ্তার করতে আসা অফিসারেরা। কিন্তু চোখে না দেখলেও এই বয়সেও ফাদারের মনে ছিল আদিবাসীদের দুঃখ যন্ত্রণার ছবি।

পারকিনসন্স ব্যাধিতে দুর্বল ছিলেন ফাদার। তরল খাবার ছাড়া আর কিছুই খাওয়ার সাধ্য ছিল না। খাবার চটকে দিলেও স্ট্র ও সিপার ছাড়া তা গলা দিয়ে তিনি নামাতে পারতেন না। কিন্তু তদন্তকারী অফিসারেরাও সেই স্ট্র ও সিপার তাঁকে সঙ্গে নিতে দেন নি।পরে আদালতে আবেদন করে এই স্ট্র ও সিপার ব্যাবহার করতে দেওয়া হয়। কিন্তু ততদিনে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়েন।

বার বার তাঁর জামিনের আবেদন করেও সেই আবেদন নাকচ হয়। একজন 84 বছরের বৃদ্ধকে এতো ভয় কিসের সেকথা জনসমক্ষে স্বীকার না করলেও শাসক বুঝেছিলেন যে ফাদারকে ভিতরে আটকে রাখলে আদিবাসীরা ভয় পাবে। কিন্তু সত্যি কি তাই। বরং ক্ষোভের আগুনে সেই আন্দোলনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছিলো দেশময় ।

আসলে আমরা যারা শাসকের অন্যায়ের কথা জন সমক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করি তাঁদের বার বার লাঞ্ছিত হতে হয় শাসকের হাতে।এছাড়া আর কি করার আছে।গনতন্তের কন্ঠ রোধ তো এই শাসকেরা গোড়া থেকেই করে আসছেন। ফাদার তার এক সংযোজন মাত্র ।

স্ট্যান স্বামীর ওপর এই ধরনের অতিরিক্ত অত্যাচার তাঁকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছিল।আর আমরা বুঝেছিলাম ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন।

দেশের সংবিধানের ওপর পূর্ণ আস্হা রেখেও বলি বিচারাধীন বন্দীকেও অভুক্ত থেকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু স্ট্যান স্বামীর প্রতি তাই হয়েছিল দিনের পর দিন। আর তা নিয়ে বিরোধীরা ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ আনলেও শাসক তা কানে নেয় নি। আর এর ফলস্বরূপ স্ট্যান স্বামীর যে মৃত্যু তা তো দেশের মানুষ চাক্ষুষ করলেন।

পরাধীন ভারতবর্ষের পুলিশ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার করতেন,স্ট্যান স্বামীর ক্ষেত্রে ও কি তাই ঘটলো।তবে আর স্বাধীনতা আর পরাধীনতার মধ্যে তফাত কোথায় ।

স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু কি তবে আমাদের নতূন করে ভাবতে শিখিয়ে দিয়ে গেল।

স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমাদের দেশের আদিবাসীরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত । আর তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করা যদি অপরাধ হয় তা হলে তিনি তো দোষী। কিন্তু এর মধ্যে ও তো রয়ে গেছে হাজারো প্রশ্নের ঢেউ। কি অপরাধ ছিল এই 84 বছরের স্ট্যান স্বামীর । যিনি নিজেই রোগ যন্ত্রণায় কাতর।

সরকারী নথি অবশ্য অন্য কথা বলছে। কি কি মামলা ছিল তাঁর মাথার ওপরে।

2018 এর 1লা জানুয়ারি ভীমা কোঁরেগাঁওয়ে দলিত ও উচ্চবর্ণের সংঘর্ষ ।

এছাড়া ও আরো অজস্র মামলায় সমাজ কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ বুঝিয়ে দিয়েছিল এদের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগসাজশে এই সব ঘটনা ঘটছে অহরহ।আর তা দমন করতে হলে স্ট্যান স্বামীদের কারার অন্তরালে রেখে দেওয়া টাই সঠিক পথ।

আইন আইনের পথে চলুক তা নিয়ে কারো কোন বক্তব্য থাকতে পারে না। কিন্তু একজন অশীতিপর বৃদ্ধকে চোখে দেখার চশমা টুকুও কি কেড়ে নেওয়া হবে। খাবার জন্য স্ট্র ও সিপার যোগাড় করতে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। এ কেমন পুলিশী রাজ।

পুলিশ কি নিজেই এগিয়ে এসে এই সব করেছেন। না কি কলকাঠি নেড়েছেন পিছন থেকে শাসক। এই সব প্রশ্ন তো উঠে আসবেই। আর তা স্বাভাবিক ।

উওর মিলতে পারে বা নাও মিলতে পারে।

তবে এতো খবরের মধ্যে একটাই হেড লাইন। আর তা হলো জামিন আর লাগবে না। স্ট্যান স্বামী যে মৃত।