Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

১৩৯তম জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ

১৩৯তম জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ====================
বিধানচন্দ্রের কল্যাণী : এক অব্যক্ত অনুচ্চারিত ইতিহাস 
✍🏽সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 
সব ফুল কি ফুলদানিতে স্থান পায়? সব নদী কি সাগরে মেশে? যদিও নদীরা সাগরেই মেশে, আর সেটাই দস্তুর। কিন্…

 


১৩৯তম জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ

====================


বিধানচন্দ্রের কল্যাণী : এক অব্যক্ত অনুচ্চারিত ইতিহাস 


✍🏽সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 


সব ফুল কি ফুলদানিতে স্থান পায়? সব নদী কি সাগরে মেশে? যদিও নদীরা সাগরেই মেশে, আর সেটাই দস্তুর। কিন্তু কেউ তো মাঝপথে হারিয়েও যায়! যেমন বাতাসে সুগন্ধ ছড়িয়েও দেবতার চরণ লাভে বঞ্চিত থাকে কিছু ফুল!  ঠিক তেমনি সব প্রেমের কি স্বাভাবিক পরিণতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়? কিছু হয়। কিছু হয় না। কিছু প্রেম অনুচ্চারিত ইতিহাস হয়ে সৃষ্টির আঙিনায় বিচরণ করে! পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছিল। প্রথিতযশা চিকিৎসক তথা রাজ্যের নব রূপকার বিধানচন্দ্র স্বাধীনতাত্তোর পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে যে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। সে বিষয়ে কোনো মহলের তরফে দ্বিমত নেই। আজীবন কর্মই ধর্ম, আপ্তবাক্যের পূজারী বিধানচন্দ্র প্রেমিক ছিলেন!  কাজকে ভালোবাসতেন। কিন্তু  প্রেম? আলোকপাত তো সেই অনুচ্চারিত অধ্যায়ে! 



কলকাতা মেডিকেল কলেজের পাঠ শেষ করে পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তৎকালীন বিলেত। এমআরসিপি ও এফআরসিএস করে দেশে ফিরে চেম্বার খুলে বসলেন কলকাতায়। একই রাস্তায় আর এক ডাকসাইটে চিকিৎসক ডাক্তার নীলরতন সরকারের চেম্বার। বিধানের 'সিনিয়র'। পরে যাঁর নামে শিয়ালদহে গড়ে উঠবে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছোট করে এন আর এস।

যাতায়াতের সুবাদে সরকার পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বিধানের। প্রায়শই দেখা ডাক্তার সরকারের ছোট মেয়ে কল্যাণীর সঙ্গে। দেখা হলেই হৃদয়ে চলকে ওঠা রক্ত,  একটা উত্তেজনা, একটা তাড়না, একটা নিয়তি, একটা স্বপ্নের ডানা মেলা...

মনের কোণে, "এতটুকু বাসা করেছিনু আশা"-র জন্ম...

কিন্তু না। তখনো যে পর্দায় দেখা কন্যার পাণিপ্রার্থী উত্তম কুমারদের সামনে অচলায়তনের মতো এসে দাঁড়াতেন কন্যার পিতা ছবি বিশ্বাসরা! "অভাব দরজায় কড়া নাড়লে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবে" গোছের আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী এই পিতারা। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না। মাসিক পাঁচ টাকা রোজগার শুনে বেঁকে বসলেন নীলরতন সরকার। তৎকালীন রোগী পিছু বত্রিশ টাকা ফি নেওয়া ডাক্তারবাবু সদম্ভে জানিয়ে দেন, তাঁর আদরের কন্যার দৈনিক হাতখরচ বিধানের রোজগারের থেকে বেশি। ফলে এই সম্পর্ক বিবাহে পরিণত হওয়া একান্তই অসম্ভব।

ভাঙা প্রেম, ভাঙা মন নিয়ে ফিরে আসেন ছ ফুটের বেশি লম্বা ৠজু মানুষটি। ঝাঁপিয়ে পড়েন কর্ম সমুদ্রে। নিজেকে ডুবিয়ে দেন চিকিৎসা ও দেশের কাজে।


আজীবন অকৃতদার থেকে গেলেন বিধানচন্দ্র। কল্যাণীকে তো পাওয়া হল না তাঁর! আর কল্যাণী? অন্যত্র বিবাহের ঠিক করেছিলেন নীলরতন সরকার। মনের মানুষকে না পেয়ে নিজেকেই শেষ করে দিয়েছিলেন কল্যাণী! আর বিধান আজীবন স্মৃতির মণিকোঠায় রেখে দিলেন তাঁর কল্যাণীকে!


সেটা ১৯৫১ সাল। আধুনিক শহর রূপায়নের পরিকল্পনায় বিধানচন্দ্র বেছে নিলেন নদিয়া জেলার রুজভেল্ট নগরকে। শিলান্যাস করলেন তৎকালীন রাজ্যপাল কৈলাশনাথ কাটজু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ছিল মার্কিন সেনা উপনিবেশ। রেল ও সড়কপথে কলকাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে উঠলো। পূর্ব রেলের চাঁদমারি হল্ট স্টেশন হল আজকের কল্যাণী স্টেশন। মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ আধুনিক নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের সবকিছু আছে আজকের 'স্মার্ট সিটি' কল্যাণীতে। যার রূপকার স্বয়ং বিধানচন্দ্র রায়। জনশ্রুতি, কল্যাণী নামকরণের পিছনে রয়েছে এই পরিণতি না পাওয়া প্রেমের অব্যক্ত অনুচ্চারিত ইতিহাস!


১লা জুলাই ২০২১