Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

নামঃ- ড্রাগসকলমেঃ- তপন কুমার রায় তারিখঃ- ০২/০৭/২১
ভোর হতে না হতেই পাড়ার মোড়ে হরিসভারমাঠে কিসের একটা বিশাল হৈ হল্লার আওয়াজে  ঘুম ভেঙে গেল বিকাশের।স্ত্রী  মিতা ছুটেমুটে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে --"তাড়াতাড়ি ওঠো বাড়ীতে বিপদ হয়ে গেছে…

 


নামঃ- ড্রাগস

কলমেঃ- তপন কুমার রায় 

তারিখঃ- ০২/০৭/২১


ভোর হতে না হতেই পাড়ার মোড়ে হরিসভারমাঠে কিসের একটা বিশাল হৈ হল্লার আওয়াজে  ঘুম ভেঙে গেল বিকাশের।স্ত্রী  মিতা ছুটেমুটে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে --"তাড়াতাড়ি ওঠো বাড়ীতে বিপদ হয়ে গেছে।"

ঘুমভাঙা চোখ দুটো দুই মুঠি দিয়ে শিশুদের মতো  রগড়াতে রগড়াতে বিকাশ বলে --"কার বিপদ? কি বিপদ?

--- বড়দার ছেলে রণ মারা গেছে, খবরএসেছে,যাও আগে,দেখো।

-- কে? রণ? কি  করে?

বলে মিতা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বাড়ীর সামনের হরিসভার মাঠে নেমে যায়।সব লোকই ওখানে জড়ো হয়ে আলোচনা করছে।

             বিকাশ লুঙ্গিটাকে টেনে বেঁধে নিয়ে ওপরে একটা শার্ট গলিয়ে নেমে আসে। নীচে হরিসভার চাতালে বসে তার দাদা সুহাস কাঁদছেন। লোকজন ঘিরে আছে।বিকাশ আসতেই লোকজন সরে জায়গা করে দেয়। দাদার কান্না দেখে বিকাশেরও চোখে জল এসে যায়। বাবার মতো দাদা তার।বড়দা কে জিজ্ঞেস করে -- " কি রে,  কি শুনছি? রণ?"

বড়দা কোনক্রমে বলে -- হ্যাঁ। বউমা তো ফোন করে তাই বললো।

-- তারা কোথায় এখন? যেতে হবে তো বড়দা ,ওঠ, রেডি হয়ে নে।

 বড়দা বলে, যেতে হবে না। ওরা সবাই  রণকে নিয়ে ফিরে আসছে।

" ফিরে আসছে? এখুনি?" আশ্চর্য হয় বিকাশ। 


কি করে ফিরে আসবে? পুলিশি ফরমালিটিজ গুলো? কখন করলো? এত তাড়াতাড়ি  কি করে কমপ্লিট করলো? কিছু না করেই ছেড়ে দিলো নাকি পুলিশ? না কি পুলিশ জানেই না? যায়ই নি এরা পুলিশের কাছে? হাই ওয়ে পেট্রল এর গাড়ী বা কি করছিলো? মেডিকেল  সার্টিফিকেট?  বিকাশ  বুঝে উঠতে পারে না।


           সুহাসের একমাত্র ছেলে রণজয়।ছোটবেলা থেকেই বাইক চলাতে ভালোবাসে। ইয়া ঢাউস একটা রয়্যাল এনফিল্ড  বাইক নিয়ে হিল্লি দিল্লি  করতো সেই কবে থেকে। এর মাঝে কবে ব্যাঙ্গালোর বাইকার এসোসিয়েশনের মেম্বারশিপ  নিয়ে ছিল।চাকরি পেয়ে গতবছর বিয়ে করেছিলো রণজয়, কাছাকাছিরই মেয়ে, সুন্দরী, স্মার্ট সাবিত্রী কে  । এবছর ওর পাড়ার চারজন বন্ধু দের  সাথে বাইকে সিকিম যাওয়া ঠিক  হয়েছিলো।পাড়ার ছেলেরা সবাই বউ নিয়ে যাবে বলে কোন নিষেধ  কানেই তোলেনি।


            কালকেই দুপুরেই চারটে বুলেটে চার বন্ধু বউদের পিছনে বসিয়ে সিকিম উদ্দেশ্যে  রওয়ানা দিয়েছিলো।  ফারাক্কা পেরিয়ে মালদা ঢোকার আগেই নাকি রণজয়ের বাইকের সাথে একটা রঙ সাইড ধরে উল্টোদিক থেকে আসা 407. ম্যাটাডোরের  মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। রণজয় স্পট ডেড হয়। ওরা রণজয়ের বডি নিয়ে ফিরছে।


            বিকাশ, রনোর বন্ধু আকাশের কাছে খবর নেন, ওরা কিসে করে ফিরছে, কত দুর এলো? সাবিত্রীর ইনজুরি কতটা? হাসপাতাল গিয়েছিলো? আকাশ জানায়, সাবিত্রীর তো কিছু ইনজুরি হয় নি, সাবিত্রী তো গাড়ীতে ছিলো। কোন ইনজুরি নেই কারো। এখন কৃষ্ণনগরের কাছাকাছি আছে ওদের গাড়ী। 

      "   গাড়ীতে ছিলো " মানে কি?  ওরা তো বাইকে যাচ্ছিলো। বিকাশবাবু ভবানী ভবনে পুলিশের অনেক উঁচু পোষ্টে আছেন। একবার মালদহ এসপি কে ফোন করে ঘটনাটা বলে ওভার ফোন রিপোর্ট দিতে বললেন এখুনি। ইংলিশবাজার থানার ওসিকে রিপোর্ট  চাইলেন। হাইওয়ে পেট্রলের রিপোর্ট  চাইলেন।


        সব জায়গা থেকেই ফোনে রিপোর্ট এলো। কোন থানায় কোনো এ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট  বা ডাইরি হয়নি। কোন হসপিটালে এরকম  কোন কেস আসে নি। শুধু  হাই ওয়ে পেট্রোল  একটা বুলেটকে ভাঙা অবস্থায় রাস্তার ডান দিকে পেয়েছে। বিকাশ ওখান কার থানায় মেল পাঠিয়ে একটা ডাইরি জমা করেন। 

        বেলা বারোটা নাগাদ ওদের টয়োটা ইনোভা গাড়ীটা  হরিসভার মাঠে এসে থামে। মেয়েরা সামনে বসে ছিলো আর একেবারে পিছনের সিটটাতে রণজয়ের বডিটা  নিয়ে এসেছে।  ছেলেরা বাইকেই ফিরেছে।  গাড়ীটা  হরিসভার মাঠে থামতেই দাদা সুহাস আর বৌদি ঝাঁপিয়ে পড়ে গাড়ীটাতে, অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে।বিকাশ ও তার স্ত্রী  মিতাও অঝোরে কাঁদতে থাকেন বৌমা সাবিত্রী কে  জড়িয়ে ধরে।সাবিত্রী ও সশব্দে  কাঁদতে থাকে। ইতিমধ্যে  লোকাল থানার আই সি  দু গাড়ী ফোর্স নিয়ে হাজির হরিসভার মাঠে।

          পুলিশ দেখে চমকে ওঠে  সকলে। পুলিশ কেন? সুহাস কাঁদতে কাঁদতেই জিজ্ঞেস  করেন-- " বিকাশ, পুলিশ কেন আবার?

---- "এ্যাক্সিডেন্ট কেস বড়দা,  পুলিশ তো আসবেই। ঘাবড়াস না আমি দেখছি"। বিকাশ বলেন। 

   ----তুই কিসের বড় পুলিশ অফিসার? ওরা তোর বাড়ীর লোকজন কে নিয়ে যাবে। সুহাস কাঁদতে কাঁদতে  বলেন।

--- দেখ দাদা পুলিশের কাজ পুলিশ করবেই।  এ্যাক্সিডেন্ট কেস, এখানের কোনো ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দেবে?  পোস্টমরটেম তো করতেই হবে। আমি তো  আছি।

        পুলিশ  গাড়ীটা ড্রাইভার খালাসি সমেত টেনে নিয়ে যায়। একটা ট্রলি ভ্যানে রণর বডিটা তুলে মর্গে পাঠিয়ে দেয়।তারপর  সাবিত্রী  সহ চারটি মেয়েকে গাড়ীতে তোলে। আর তিনটি ছেলেকেও ধরে নিয়ে যায়।

           পাড়ার লোকেরা,  বিশেষ করে রণর ওই তিন বন্ধুর বাড়ীর লোকেরা হৈ হৈ করে ওঠে--- এটা কি হল বিকাশ। 

        বিকাশ বাবু দাদা বৌদিকে নিয়ে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসেন। কাজের মাসিকে  একটু করে নুনচিনির শরবত ওদের কে  দিতে বলেন? মিতাকে ডেকে বলেন, আমি একটু থানায় যাচ্ছি, ওদের দেখো।আর রণর ঘরটা তালা দিয়ে রাখো তো।

   

          ভেতরে গিয়ে দেখেন এসপি ও এসে গেছেন থানায়। এসপির  নির্দেশে সবার স্টেটমেন্ট রেকর্ড  চলছে ।  বিকাশ ফোনে চীফ মেডিক্যাল  অফিসার কে বলে আজই পোস্টমর্টেম টা  সেরে,বডি ছাড়ার রিকোয়েস্ট  করলেন। ফিরে এসে ড্রাইভারের গাড়ীর কাগজ লাইসেন্স পরীক্ষা  করলেন।বারাসাতের গাড়ী,ড্রাইভার ও বারসাতের। ড্রাইভারের স্টেটমেন্ট  খানা তুলে নিয়ে চমকে উঠলেন। গাড়ী আগে থেকেই ভাড়া করা ছিল।বারাসাতেই মেয়েরা সবাই গাড়ীতে ওঠে।  ওর গাড়ী আর দুটো মোটরসাইকেল  এগিয়ে গিয়েছিলো। ওরা মালদা রথবাড়ীর পাশে একটা হোটেলের  লবিতে  বসে  খাচ্ছিলো, দুটো বাইক যেহেতু পিছিয়ে পড়েছিলো। প্রায় আধঘন্টা পরে আকাশ খবর নিয়ে আসে বাইক চালাতে চালাতে রণজয় উল্টোরুটে আসা একটা টাটা চারশো সাতের সাথে মুখোমুখি  ধাক্কা মারে, আর তাতেই রণজয় মারা যায়। ফেরার রাস্তায় ওরা লেনের পাশ থেকেই ডেড বডিটা গাড়ীতে তোলে। 

            

      থানার আই সি বলেন,  চিন্তা করবেন না স্যার।ইনভেস্টিগেশন সেরে,তাড়াতাড়িই  চার্জ শীট দেবো। মেয়েদের বাড়ী নিয়ে যাক সব, কিন্তু কাল কোর্টে তুলতে হবে, আমি সেই কন্ডিশনে জামিন দেব । আর কোর্টেও আমরা মেয়েদের জামীন অপোজ করবো না।

  

           বিকাশ  সাবিত্রী কে নিয়ে বাড়ী ফিরে দেখেন তার পাঁচ দিদি এসে গেছেন সপরিবারে।সবাই সাবিত্রীকে দেখে কেঁদে উঠলো। সুহাস আর বিকাশের মধ্যে এই দিদিরা। বিকাশ দিদিদেরকে সংসারের দায়িত্ব নিতে বলে জামাইবাবুদের নিয়ে মর্গে চলে যান। থানা থেকে এক কনেস্টবল রিপোর্ট  নিয়ে দাঁড়িয়েই  ছিলো, ওখান থেকে বডি নিয়ে ওরা বাড়ী ঘুরিয়ে শ্মশান চলে যায়।

           বিকাশের মাথায় ঘুরতে থাকে কি কারন? কেন এই মৃত্যু? হোয়াট ইস দ্য মোটিভ? এদের চারজনের ছোটবেলা থেকে বন্ধুত্ব। মেয়েগুলোও এদের ছোট থেকে চেনা।প্রেমের কাঁটা তো মনে হচ্ছে না। ওরা তো বেশ ফ্রীলি মেশে ওদের মধ্যে। হ্যাঁ, অল্প বয়েস হৈ হুল্লোর একটু বেশী হয় অবশ্য। ওরা ভেদিক ভিলেজ,রায়চক থেকে শুরু করে  কলকাতার যত নাইটক্লাব,হুক্কাবার,ডান্সবার,টলিউডে ওদের অবাধ বিচরণ ছিলো।রণজয়ও যেত। 

কেন যেতো? রণ মদ টদ খায় না তো জানি।সে তুলনায় সাবিত্রী কে বরং মনে হতো বেশী বেশী উচ্ছ্বল। সুহাসের বাড়ী থেকে  ওদের নতুন যুগের এই সব কালচার নিয়ে মাথা ঘামাত না কেউ। বিকাশ  ক্রাইম ব্রাঞ্চ কে সব জায়গার সি সি টিভির ফুটেজ গুলো খুঁটিয়ে  দেখে ফুটেজ সংগ্রহ  করতে বললেন।

         পরের দিন সকালবেলা, সাবিত্রীর  মা বাবা এলেন একটা কালো মার্সিডিজ  গাড়ী চেপে, ধোপদূরস্ত জামাকাপড়।বেশ কেউকেটা ভাব।নতুন জামাই যে মারা গেছে তার কোন ছাপ নেই চোখে মুখে। বরং দেখনদারী প্রকট। বিকাশ খুব  অবাক হয় এক বছর  আগেও তো এদের মধ্যবিত্ত ছেড়ে নিম্নমধ্যবিত্ত অবস্থায় দেখেছেন। একবছরের মধ্য রেলের সামান্য কেরানীর এতো উন্নতি! পিছনে কি? 

ওনারা সাবিত্রী কে নিতে এসেছেন। সুহাস  জানান আজ তো বাবুর কাজ, আজ সাবিত্রীকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। 

বিকাশ বলেন, কাজ ছাড়াও ও তো আজ কোর্টের জামিন নেওয়ার ব্যাপার আছে, এ বাড়ী ছেড়ে সাবিত্রী এখন কোথাও যেতে পারবে না। আর,আজ সকালে কোর্ট  ঘুরে এসে ওকে কাজে বসতে হবে।

--- "ও সব কোর্ট  ফোট আমি বুঝে নেবো মশায়।দু পয়সার জজ নিয়ে ভাবার কিছু নেই।ও সব আমি বুজে নেবো।" সাবিত্রীর বাবা বলেন। 

   থানার পুলিশ  সাাবিত্রী কে  নিতে আসে? বাড়ীতে যে একটা কাজ আছে,  তার যোগাড় মিতা আর বিকাশের দিদিরা মিলে করে ফেলেন। এমনিতেই এই শ্রাদ্ধের  কিয়াকর্ম বারবেলায় শুরু হয়। তারওপর  সাবিত্রীর কোর্ট থেকে ফিরতে কটা বাজবে তার তো ঠিক নেই। কিন্তু এই কাজে সাবিত্রী কে বসতেই হবে একবার। 

 পুলিশ সাবিত্রীর বাবা মার সাথে সাবিত্রীকে নিয়ে চলে যায় কোর্টে ।

         বিকাশ মিতার কাছ থেকে চাবি  নিয়ে  রণর ঘর খুলে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।তারপর চারিদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকেন। ওদের ঘরে  অস্বাভাবিক পরিমান টাকা পয়সা দেখেন বিকাশ বাবু। আলমিরা, ওয়ার্ডোব,বাক্স সব টাকায় উপছে পড়ছে। এতো পয়সা রণ পেলো কি করে? ব্যাঙ্ক পাসবই গুলো উল্টে দেখেন  বিশাল টাকা শুধু সেভিংস এ্যাকাউন্টেসেই।  সাবিত্রী  পাসবইয়েও তাই। ফিক্সড ও প্রচুর। মন চাইছিলো না তাও সাবিত্রীর ব্যাগগুলো হাটকাতে শুরু করেন। বেশী খুঁজতে  হলো না। একটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে এলো এক তাল ড্রাগস। কি এটা? কোন ড্রাগস?  বিকাশ বাবুর নারকোটিক্স ট্রেনিং নেওয়া ছিলো। তিনি আন্দাজ করলেন এটা কোকেন। কিন্তু ল্যাবরেটরি টেস্টিং এ কনফার্মড হতে হবে। সামান্য স্যাম্পেল নিয়ে পকেটে রাখলেন।সাবিত্রীর আলমারীতে হাজার শাড়ী বোধহয় ঠাস হয়ে ঝুলছে। কেমন যেন সন্দেহ হল বিকাশবাবুর। ঠাস হয়ে ঝোলা শাড়ীর মধ্যে চেপে চুপে হাত ঢুকিয়েও  দিলেন।একি?  এতো গুলো প্যাকেট? কিসের সব? সবই কি কোকেন? না মনে হচ্ছে। পাউডার মানে হেরোইন  ও হতে পারে। শাড়ী গুলো সরালে হয়। যা ঠাস করে রাখা, ওলট পালট হয়ে যাবে ফের রাখতে গেলে। তাই খেয়াল করে ধারের দিক থেকে একলট শাড়ী সরালেন বিকাশ, সর্বনাশ , হেরোইন  কোকেন চরসের বিশাল স্টক। বিকাশবাবু নিজেই ভয় খেয়ে গেলেন।  তারই বাড়ীতে এতো ড্রাগস। । সব গুছিয়ে আবার ঘর বন্ধ  করে চাবিটা নিজের পকেটে রেখে দেন বিকাশবাবু।

              বের হতেই বউ জিজ্ঞাসা  করে, -- "কি করছিলো ভেতরে?"

--- পরে বলবো।অনেক প্রবলেম। চাবি আমার কাছেই থাক।সাবিত্রী কে কালকের মতো বৌদির কাছেই শুইও রাতে।

          কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ফিরে রণজয়ের শ্রাদ্ধের  কাজ সারে সাবিত্রী। কোর্ট  জামিন অর্ডারে  বলে দিয়েছে বাড়ীর বাইরে যাওয়া যাবে না টিল ডিসিশন  অফ দা কেস। আকাশ সহ দুই বন্ধুর ও ড্রাইভার দের পনের দিনের পুলিশ কাস্টোডির অর্ডার হয়।  

               বিকাশ বাবু সন্ধ্যের পর একবার বেরলেন।থানায় এসে বিকাশ বাবু  বললেন একবার ইনোভাটা দেখবো, চাবিটা নিয়ে একজন ড্রাইভারকে আসতে বলুন। ড্রাইভার  আসতেই গাড়ীটা খুলে বিকাশবাবু  গাড়ীর সীট গুলো তুলে তুলে তল্লাসী আরম্ভ করলেন। কিছু নেই। তারপর একটা টর্চ নিয়ে গাড়ীর নীচেটা পরীক্ষা করতে লাগলেন।  থানার বড়ো বাবু বলেন --" স্যার কাল দিনের বেলা দেখবেন। নাহলে আমি ফোর্স ডাকছি, ওরা দেখবে, আপনি এত কষ্ট করবেন না, দাঁড়ান।" 

--- বড়োবাবু, বসে দাঁড়িয়েই তো জীবন গেলো। একটু দেখি।ড্রাইভার  সাহেব, ম্যাটটা বার করে গাড়ীর নীচে পেতে দাও তো একটু। বিকাশ বলেন।

ড্রাইভার  ম্যাটটা গাড়ীর নীচে পেতে বলে,  -- স্যার আমি দেখছি, আপনি ছাড়ুন।

-- "হবে না ভাইটি, আমাকেই দেখতে হবে। " বলে টর্চ টা  নিয়ে  গাড়ীর নীচে শুয়ে পড়েন বিকাশবাবু। নিখুঁত  করে দেখতে দেখতে তেলের ট্যাঙ্কের লাগোয়া একটা জায়গাকে অস্বাভাবিক  মনে হয়। ক্যাভিটি হতে পারে। একট বড়ো সাইজের স্ক্রু-ড্রাইভার  চান ড্রাইভারের  কাছ থেকে।স্ক্রু- ড্রাইভার নিয়ে  দুটো নাটবল্টু খুলতেই  ড্রাগসের প্যাকেট বেরিয়ে আসে। আরো দুটো খুলতেই কিলো পাঁচেক কোকেন পায়। আইসি পুরো ঘটনা টা কে ভিডিগ্রাফি করে রাখেন। বিকাশ প্রতিটার স্যাম্পেল ড্র করে বড়বাবুকে দেন টেস্টিং এ পাঠানোর জন্য।আর এফ আই আর এ এই ঘটনা জুড়ে নেন। 

            বৌদি,  সাবিত্রী র কাছে বসে ছিলো । সাবিত্রী বিকাশ কে দেখা মাত্র ছুটে এসে বলে -- "ছোটকা, তুমি আমার ঘরের চাবি নিয়ে রেখেছো? আমাকে দাও। "

--- এই মাত্র বাড়ীতে একটা দুর্ঘটনা  ঘটেছে সাবিত্রী ,তোমাকে এখন ওঘরে থাকতে হবে না কদিন। তুমি বৌদির সাথে থাকো। চাবি আমার কাছে থাক।

--- "কেন?  আমার ঘরের চাবি তোমার কাছে থাকবে কেন? আমার সবকিছু ওখানে আছে। আমার দরকার, চাবি দিয়ে দাও।" সাবিত্রী  বলে।

---না। কদিন আমার কাছে থাকুক চাবি। কিছু দরকার লাগলে আমাকে বোলো আমি সঙ্গে যাব,তোমার জিনিস  তুমি নিয়ে নিও।

--- না না এভাবে আমার স্বাধীনতায় হাত দিতে পারো না তোমরা।আমি একাই যাবো।

সুহাস   এতক্ষন চুপ করেছিলেন, এগিয়ে এসে বললেন--" দিয়ে দেনা বিকাশ, কেন ঝামেলা করিস। ওর ঘরের চাবি ওকে দিয়ে দে।"

--- তুই যেটা জানিস না বড়দা।চুপ করে থাক, সবিত্রী কদিন ওখানেই থাকবে।বৌদির কাছে।

--- ছোটকা, জুলুম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। এরপর অন্যরকম হবে।  

বিকাশ বাড়ীর গার্ড বাড়িয়ে দিতে অর্ডার  করেন। আর অফিসে সাবিত্রী ও তার তিন বন্ধুর ফোন ট্যাপের অর্ডার করেন।

              এর মাঝে আইবির পাঠানো  সি সি টিভির ফুটেজ রিপোর্ট  গুলো এসেছিলো। একে একে খুঁটিয়ে দেখেন বিকাশ। দেখেন সব  জায়গায়, হোটেল,নাইট  ক্লাব, ফিল্মজগত সব জায়গায় আাকাশ আর সাবিত্রী  যাচ্ছে নিয়মিত। কিছু সাপ্লাই করছে ক্যাশ নিয়ে আাসছে। রণ ভেতরে যাচ্ছে না। তবে সঙ্গে যাচ্ছে। সীমানা আর সুমিতা মাল কালেক্ট করছে কখনও প্রিন্সেপ ঘাটের নৌকা  থেকে, কখনও হাতানিয়া দোয়ানিয়ায় নৌকা  থেকে। সর্বনাশ।  অনেক সময়ই রণজয়ের সাথে সাবিত্রীর ঝগড়া শোনা যাচ্ছে। রণজয়ের সাথে সাবিত্রীর হাতাহাতির সব ফুটেজও পেয়ে গেছে।     

           মালদা হাইওয়ে পেট্রোল রিপোর্ দিয়েছে, আকাশ সম্ভবত রণোর মৃত্যুর সময় ছিলো।   রথবারীর পাশের হোটেলে আগে থেকে বসা বন্ধুদের সাথে এই মৃত্যুটা আকাশ   বিয়ার খেয়ে সেলিব্রেট করেছিলো।  হোটেলের  লবির  সি সি টিভি ফুটেজ থেকে সেরকমি মনে হচ্ছে।


        এতোটা এগিয়ে বিকাশ থামতে নারাজ।  তিনি মালদহ  চলে যান। মালদা গিয়ে এসপি ও মালদা থানার ওসিকে নিয়ে মঙ্গলবাড়ী মহানন্দা  ব্রীজের  পাশের সি সি টভি ফুটেজ ও চারশো বিশ মোড়ের সিসি টিভির  ওইদিন  ঘটনারপাঁচ ঘন্টা আগের থেকে মালদার দিকে আসা সব গাড়ীর নাম্বার নেন। একজন এসডিপিও কে বিভিন্ন আরটিও অফিসে পাঠয়ে ওই সব গাড়ীর মধ্যে টাটা407 এর  মালিকের নাম নাম্বার কালেক্ট করে একে একে  গাড়ীর ড্রাইভারদের ডেকে ডেকে ইন্টারোগেট করতে থাকেন।খুঁজে  পেতে খুব  অসুবিধা  হয় না।  ডাইভারকে একটু ধমকাতেই বলতে শুরু করে--" ছার, সেই রাতে আমি মালদা পেরিয়ে ফরাক্কার দিকে যাওয়ার সময় উল্টোদিক থেকে দুটো বাইক আসতে দেখি। একটা বাইকের ছেলে ছার, পাশের জনকে ডানদিকে  চাপতে থাকে।দুজনের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছেও বুঝতে পারি। খালাসিও শুনেছে, ছার। কাছে আসতেই আমি স্লো করে দিই গাড়ী।একদম সামনে আসতেই বাঁদিকের ছেলেটি ডানদিকের  বাইকটায় লাথি মেরে আমার গাড়ীর সামনে  ফেলে দেয়। প্রানপনে ব্রেক চেপেও  ছার, বাঁচাতে  পারিনি। ছেলেটা বাম্পারে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। ততক্ষণে  বাইকটা খানিক ভেঙেছে। পিছনে তখন গাড়ী ছিলো না, ছার। তাই বেঁচে  গেছি। নেমে বডিটা আর বাইকটাকে সরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি  পালাই, ছার। আমারতো প্রানের ভয় আছে, ছার। আমার কুনো দোষ ছিলো না, ছার।"  এসডিপিও পুরোটা ভিডিও রেকর্ডিং  করে। রাখেন। তারপর স্টেটমেন্ট ও রেকর্ড করে ড্রাইভারকে  এ্যারেস্ট করেন।একটা অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর  কেস দেন।

 বিকাশ অফিসে আইজি কে বলে নিয়েছেন  এবং ডে টু ডে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট  গুলো সাজিয়ে আাই জি কে দিয়ে  সাইন করিয়ে অর্ডার করিয়ে রেখে ছিলেন।ড্রাগসের টেস্ট রিপোর্ট গুলো এসে গিয়েছিলো,সেগুলো ফাইলে পুটআপ করে আই জি কে দিয়ে অর্ডার  করিয়ে নিলেন যে এই কেসটা এনসিবি কে দেওয়ার দরকার নেই। পুলিশ ডিপার্টমেন্টই করবে।

         অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন,এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ফোন ট্যাপিংয়ের ইনফরমেশন  ইনচার্জ  ছেলেটি এসে হাজির। কতকগুলো প্রিন্টআউট নিয়ে হাজির, "আজ মাল ডেলিভারি হবে প্রিন্সেপ ঘাটে রাত সারে আটটা"।বিকাশ বাবু তাড়াতাড়ি  ফোনগুলো সেরে নিলেন। সকলকে রেডি হয়ে থাকতে বললেন যথাস্থানে। 

     বিকাশ মিতাকে ফোন করে জেনে নিলেন যে  সাবিত্রী বাড়ীতে আছে কিনা।ওদিক থেকে মিতা জানায়, তার দরকারী কাজ আছে তাকে বেরতেই হবে বলে সাবিত্রী বেরিয়ে গেছে,কারো নিষেধ মানে নি। তারপর রাত আটটা নাগাদ বিকাশবাবুও হাজির। পুরনো আমলের ওই গেটটার মাথায় আ্মস, সার্চলাইট, মাইক নিয়ে অফিসারদের পজিশন নিতে বলেন। সেকেন্ড ব্রীজের নীচে গাধাবোটগুলোর গায়ে লাগিয়ে রাখা ছিলো রিভার পুলিশের স্পীড বোট গুলো।

       ঠিক  সাড়ে আটটায়  একটা লাল লন্ঠন ওলা জেলে ডিঙ্গি দুলতে দুলতে এগিয়ে এসে ঘাটে লাগলো।কজন মাঝি টাইপের লোক চার পাঁচ টা বাক্স নিয়ে নামলো। সাবিত্রী ও আর একটি বউ এগিয়ে গিয়ে বাক্স গুলি  নিলো। হঠাৎ  মাইকে প্রচন্ড  জোর আওয়াজ--"  হল্ট। নড়লেই গুলি করবো।" মাঝি দুজন নৌকায় ঝাঁপিয়ে পড়লো। ততক্ষণে  স্পীড বোট থেকে  নৌকার ওপর গুলিবৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। উপায় না দেখে দুহাত তুলে  নৌকা থেকে চারজন নেমে আসে। পুলিশ সতর্ক থেকে এগিয়ে ওদের এবং সাবিত্রী দের দশ কেজি হেরোইন  সমেত রেড হ্যন্ড এ্যারেষ্ট করে।

      ওদিকে থানার বড়বাবু ফোন করে জানান, যে আকাশ স্টেটমেন্ট দিয়েছে এবং বাকি দুজনও সত্যতা স্বীকার করে সই করেছে। লিখেছে --" রণজয় ড্রাগসের ব্যাপারটায়  এই দলে  আর থাকতে চাইছিলো না। ও সব কিছু পুলিশের কাছে ফাঁস করে দিতে চাইছিলো ওর কাকার মাধ্যমে। সাবিত্রীর  অনেক টাকার দরকার ছিলো তার গরীব বাবাকে দেওয়ার জন্য। তাই সাবিত্রী  বারবার রণজয়কে বোঝানোর চেষ্টাকরে,রণজয় না বুঝতে চাইলে ওদের মধ্যে ঝগড়া ছেড়ে হাতাহাতি ও হোত। সাবিত্রী  কোন ভাবেই রণজয়কে রাজী করাতে পারে না। এই অবস্থায় ও বিট্রে করলে আমাদের সকলকে ধরা পড়তে হবে। আমাদের আজীবন জেল হয়ে যাবে। এ থেকে বাঁচার  জন্য  সাবিত্রী ও আমরা মিলে  রণজয়কে খুনের পরিকল্পনা করি।  সেই অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা  সাজাই।  মেয়েরা দেখতে পারবে না বলে আমরা বারাসাতের একটা গাড়ী ভাড়া করে রাখি ওদের জন্য। বারাসাতে মেয়েদের গাড়ীতে তুলে দিই। তারপর জায়গা খুঁজতে থাকি। বেশীর ভাগ জায়গা খুব কনজেসটেড,তাছাড়া একটু রাত বেশী হওয়াও দরকার। তাই ফরাক্কা ব্রীজে  রিপেয়ারিংএর জন্য একটা করে লেনে গাড়ী ছাড়ছিলো। আর একটা করে লেন আধঘন্টার জন্য সব গাড়ী আটকে যাচ্ছিলো। এই সুযোগটা নিয়ে বাকি সকলকে এগিয়ে দিই। ওরা মালদায় আমার জন্য ওয়েট করবে। আমি রণকে সাইড চেপে চেপে ডান দিকের লেনের কাছ দিয়ে যেতে বাধ্য করি। ও অনেক বার বলেছে আমাকে বাঁদিকে সরে যেতে।আমি সরে যাওয়ার ভান করলেও যাই নি। আচমকা সুযোগ এসে যায়।উল্টো দিক দিয়ে  একটা চারশো সাত আস ছিলো। আমি রণকে চাপতে চাপতে  গাড়ীটা কাছে আসতেই ওর বাইকে একটা জোরে লাথি মারি, আর রণ গাড়ীটার সামনে পড়ে যায়। গাড়ীটা জোর ব্রেক কষে। কিন্তু ততক্ষনে যা হবার হয়ে গেছে।খানিক এগিয়ে তাও অপক্ষা করি, গাড়ীটা আবার তুলে নিয়ে হাসপাতালে যায় নাকি দেখার জন্য। কিন্তু ড্রাইভার খালাসি মিলে রণর বডিটা রাস্তার ধারের দিকে সরিয়ে দিয়ে চলে যায়।বুঝতে পারি রণ মারা গেছে, নাহলে ওরা তুলে নিয়ে যেত। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আমি ওদের কাছে মালদা টাউনে দেখা করে জানাই সব শেষ। আমরা চলে যেতাম, গিয়ে শিলিগুড়ি  থেকে ফোন করতাম রণজয় পিছিয়ে পরে ছিলো, এখনো আসে নি। আমরা ওর জন্য ওয়েট করছি। কিন্তু সাবিত্রী  রাজী না হওয়ায় আমরা ফিরে আসি আসতে বাধ্য হই।"  

         বিকাশ,সাবিত্রীর বাপের বাড়ীসহ সকলের বাড়ী একসাথে সার্চ করার অর্ডার দেন। 

আরো ফোর্স আনাতে হয়। সব বাড়ী সার্চ করে প্রচুর টাকা ও নানান ড্রাগস উদ্ধার  হয়। এই সব ড্রাগস ওই নাইট ক্লাব,ডান্সবার, হোটেল, সিনমা জগতেই সাপ্লাই হতো। সেখানেও এজেন্টদের তুলে আনা হয়। 

এরপর একটা হোমিসািড ও এনডিপিএস এ্যাক্টে নিখুঁত  চার্জসীট তৈরী করে কোর্টে সাবমীট হয়। বিচার শেষে কোর্টের  অর্ডারে তারা

সকলেই আজীবন জেলের অন্তরালে অন্তরীন।