Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#গেমবিভাগ- ছোটোগল্প©নবনীতা-সই05,08,2021
লম্বা করিডোরটা দিয়ে যেতে যেতে, তানিয়ার ঘরের দরজাটা সামান্য  ফাঁকা দেখে আমিই উঁকি মেরেছিলাম৷ হট করে বুকটা কেঁপে ওঠে ৷ ফ্লোরে একটা লাল ধারা৷ ধড়াম করে দরজাটা ধাক্কা মেরে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ি আমি…

 


#গেম

বিভাগ- ছোটোগল্প

©নবনীতা-সই

05,08,2021


লম্বা করিডোরটা দিয়ে যেতে যেতে, তানিয়ার ঘরের দরজাটা সামান্য  ফাঁকা দেখে আমিই উঁকি মেরেছিলাম৷ হট করে বুকটা কেঁপে ওঠে ৷ ফ্লোরে একটা লাল ধারা৷ ধড়াম করে দরজাটা ধাক্কা মেরে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ি আমি......


সামনে বসা থাকা, পুলিস অফিসার সৌমিত্র গাঙ্গুলীকে জবানবন্দী দিতে দিতে, জেবিস কম্পানির সিইওর স্ত্রী মৈনালী চ্যাটার্জী কান্নায় ভেঙে পড়েন৷


মৈনালী আর বোধিসত্ত্ব যাকে সবাই বিডি বলেই চেনে, সেই দুজনের একমাত্র মেয়ে তানিয়া৷ ভালোনাম তুঙ্গভদ্রা চ্যাটার্জী ৷ সকাল থেকে নিখোঁজ ৷ হয়ত কাল রাত থেকে৷ 


সুতীক্ষ্ণ নজরে মিস্টার গাঙ্গুলী, মৈনালীর মুখটা আর মাখনের মতন বাহুদুটো এক ঝলকে দেখে নিয়ে, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন:

কোন বয়ঃফ্রেন্ড?

আই রিয়েলি ডোন্ট নো৷

কোন শত্রু বা কোনরকম সাইকো লাভার?

প্লিজ অফিসার, আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না৷ 

আপনি বোঝার চেষ্টা করুন, আমরা যে তদন্ত করবো, আমাদের তো জানতে হবে৷ মিসেস হালদার, ম্যামকে প্লিজ জল দিন৷ 


লেডি কনস্টেবল মিসেস হালদার, জলের গ্লাসটা নিয়ে মৈনালীর হাতে দিয়ে বলে ওঠে, আপনার গলায় কিসের দাগ?


মিস্টার গাঙ্গুলী দ্যাখেন, সত্যিই বেশ বড় একটা আঁচড়ের দাগ মৈনালীর গলার ঘাড়ের পাশ থেকে পিঠের দিকে নেমে গেছে৷ 


মৈনালী জলটা খেয়ে, গ্লাসটা কনস্টেবলের হাতে দিয়ে বলে, পারসোনাল ব্যাপার৷


মিস্টার গাঙ্গুলী, হালকা হেসে বলেন, আপনার মেয়ে নিখোঁজ সেটা বিডি জানেন?

হ্যাঁ, আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেছি বিডিকে৷ 

ওকে, তিনি এখন কোথায়?

লণ্ডনে আছে৷ আজ রাতেই ফ্লাইট ধরবে৷ 


দেখুন মিসেস চ্যাটার্জী , চব্বিশ ঘন্টার আগে মিসিং ডাইরি নেওয়া হয় না, তবুও এটা স্পেশাল কেস বলে অলরেডি সার্চ টিম অ্যাকটিভ হয়ে গেছে৷ ঘরটা আমরা সিল করে দেবো ফরেনসিক ডিপারমেন্টের কাজ হয়ে গেলেই ৷ আপনি সাবধানে থাকবেন৷ 


আমার মেয়ে, তানিয়া?


সব ঠিক হয়ে যাবে৷ তানিয়ার ছবি আমরা ফেসবুক থেকে পেয়ে গেছি, কিন্তু ওর ফোনটা পেলাম না৷ 


আমিও পাইনি৷ 


শুধু বুঝতে পারছি না, আপনাদের এই ড্রিমল্যান্ড আবাসনের সিকিউরিটি পেরিয়ে কেউ আসবে কি করে?


পিছন দিকটা বেশ জঙ্গল মতন, ওদিকটা কাজ চলছিলো একটা মলের, হঠাৎ একটা পলিটিক্যাল মার্ডার কেসে কাজ বন্ধ আছে একবছর৷ 


তবুও খুব আশ্চর্য ঘটনা৷ তবে আপনি নিরাশ হবেন না৷ আমরা দেখছি৷


প্লিজ অফিসার৷


চিন্তা করবেন না ম্যাম৷ 


তোমরা সব এখানে থাকো৷ আমি সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বলে আসছি৷ আর হ্যাঁ সি সি টিভি রুমটা দেখে আসবো৷


হাত- পা যেন পেটের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে ৷ অজানা আতঙ্কে মৈনালীর বুকটা কাঁপছে৷ এতোদিন নিউজে কতোকিছু দেখেছে, কিন্ত নিজের মেয়ের সাথে .... না না তানির কিছু হবে না৷ কাল বাধ্য হয়েই রাতটা বাইরে কাটাতে হয়েছিলো মৈনালীকে৷ কদিন ধরেই বাজোরিয়ার সাথে সম্পর্কটা খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ মৈনালীরা যে লন্ডন ট্যুরে গিয়ে জিগালো ডেকেছে সেটা বাজোরিয়াকে ওদের গ্রুপের কেউ বলে দিয়েছে৷ 


বাজোরিয়া কাল হোটেল- ইনে ডেকেছিলো মৈনালীকে৷ আঁচড়ে - খামচে যেন শোধ নিয়েছে মৈনালীর উপর৷ মৈনালী কিছুই বলেনি, মৈনালী জানে যে সয় সে রয়৷ বাজোরিয়াকে তার দরকার ৷ তার ফ্যাশন হাউজটাকে বাড়াতে যে ফান্ড দরকার তা একমাত্র তার বর্তমান প্রেমিক বাজোরিয়া দিতে পারে৷ একটা এয়ারহোস্টেস ব্লাউজের সাথে সাদা শাড়িটা পড়ে নেয় মৈনালী ৷ 


বিডির আসার কথা দশদিন পর ছিলো আজ এসে পড়লে দাগগুলো কি দিয়ে ঢাকবে ভাবার আগেই দরজায় ন্যান্সি নক করে ৷


ম্যাম পুলিস আপনাকে ডাকছে৷ 

তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায় মৈনালী৷


ম্যাম আপনাদের আবাসনের পিছন দিকটার সব সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙা৷


হ্যাঁ ঐ মলটা নিয়ে গন্ডোগোলের সময় সব ভেঙে দিয়েছিলো৷


আমরা কিছুই পেলাম না৷ তবে কাল রাতে জ্যাক নামে একজন আপনার মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলো৷ দুজনের কোন ফ্রন্ট ক্যামেরায় বেরিয়ে যাবার ফুটেজ নেই ৷ 


জ্যাক? হু ইজ হি? আমি কোন জ্যাককে চিনি না৷


আপনি আপনার মেয়ের সব বন্ধুদের ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দিন৷


সেসব ন্যান্সি দিয়ে দেবে৷ আমি আপনাদের কমিশনারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি৷


আমরা তো চেষ্টা করছি।


অফিসার আমাদের একটাই মেয়ে৷ আমি কোনো চান্স নিতে চাই না৷


সুজয় তুমি বিল্ডিংয়ের সার্চ ওয়ারেন্টটার ব্যবস্থা করো৷ উপরে গিয়ে ছাদটা সার্চ করো৷ 

ওকে স্যার৷


স্যার স্যার বোসবাবু ডাকছেন৷ ঘরের দিকে দৌড়ে যান অফিসার সৌমিত্র৷


মিষ্টার সৌমিত্র, ঘরে ক্যামেরা লাগানো আর খুব সম্ভব কেউ সব দেখছে৷ 


কি বলছেন বোস?


হ্যাঁ সেটাই ৷ আর মিসেস মৈনালীকে বলুন চিন্তা করতে না এটা ব্লাড নয় ৷ ঘাবড়াবার কিছু নেই ৷ 


ব্লাড নয় মানে?


আপনি কি দেখেছেন রক্তটা?


না না স্যার ক্রাইম সিনের কিছুতে হাত আমরা দিতে পারি না, আপনারা না আসা অবধি৷


এটা নকল, ঐ সিনেমায় যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়৷


রঙ?


আপনি এই ক্যামেরার ব্যাপারটা দেখুন৷ এই ঘরে কোন ক্রাইম মনে হয় না হয়েছে৷ হ্যাঁ মিসিং কেস আপনি বলতেই পারেন বা কিডন্যাপিং৷ কোন কল কি এসেছে?


না আসে নি৷


যাই হোক আমি আসছি৷ আপনারা সার্চ করুন৷ ঘরটা লক করে দিন৷ সঙ্গে মেয়েটার ফোনটা ট্রাক করুন৷


করে দিয়েছি স্যার৷ সুইচ অফ আছে৷ 

আমি আসছি, আমার এখানে কিছু করার নেই আর৷


থ্যাংক ইউ স্যার৷


হালদার আপনি মিসেস মৈনালীকে থামান, বলুন কমিশনারের কাছে যাবার দরকার নেই। 


উনি বেরিয়ে গেছেন৷


শিট৷


আমি যাই নি।


ভালো করেছেন৷ আপনার মেয়ে..


জানি কিছু হয়নি৷ জাস্ট প্রাঙ্ক করেছে৷


মানে?


মানে জাস্ট আ ফান৷ আমাকে ফোন করেছিলো বাড়িতে আসছে৷


এটা কি কোন জোকস? আজকালকার এই এক ফ্যাশন , ক্যামেরা হাতে নয়ে ফান ভিডিও তৈরী করো৷ যত্তসব ৷


আপনি আসুন, আমি কমিশনারের সাথে কথা বলে নেবো৷


মুখটা রাগে গনগনে হয়ে যায় সৌমিত্র গাঙ্গুলীর৷ বেরিয়ে যান দলবল নিয়ে৷


তানিয়া দুপুরের পর বাড়ি আসে ৷ ততক্ষণে পুলিস চলে গেছে৷ ঘরটা ন্যান্সি ক্লিন করে দিয়েছে৷


মৈনালীর বুক থেকে পাথর নামে৷ যতই পুলিসের সামনে নিজেকে কন্ট্রোল করছিলো, কিন্তু ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো মৈনালী৷ তানির ফোনে বুকে বল এসেছিলো ৷


তানিয়ে ঘরে এসেই খেয়ে ঘুমিয়ে পরে৷


ঘুম থেকে উঠে বেরোনোর আগে, মৈনালী চ্যাটার্জী বলে, এটা কি তানি? তুমি কি জানো আজ কতোটা এমবেরাসড হয়েছি আমি?

কতোবার কমিশনারের কাছে সরি বলতে হয়েছে? দিজ ইজ ডিসগাসটিং৷

কেন করলে এসব? আর এই জ্যাকই বা কে? আমি তাকে পুলিসে দেবো৷


পারবে না৷


হোয়াট?


হুম পারবে না, জ্যাক তোমার বন্ধু বাজোরিয়ার ভাইয়ের ছেলে৷ আর এটা ফান ছিলো মম৷ কাল আমার জন্মদিন ৷ এটা না করলে ড্যাড আসতো না৷


তার জন্য তুমি এটা করবে? ভাবলে না আমার কি মনের অবস্থা হবে?


মন? মম আমি আজ তিনমাস বাড়িতে প্রায় একা৷ তোমরা ভেবেছো একবারও এই দুর্ঘটনাটা যখন তখন আমার সাথে হতে পারে? ঐ ন্যান্সি আর ড্রাইভার নিয়ে আমার জন্মদিন পালন করে যাচ্ছি আজ তিনবছর৷ তোমরা সবসময় বিজি৷ আই অ্যাম ফেডআপ৷  আমি কিছুই করি নি তেমন, জাস্ট কাল তুমি বেরিয়ে গেলে যখন আমি জ্যাককে ডাকলাম ৷ ক্যামেরাটা ফিট করে, রক্তের রঙটা লাগিয়ে চলে গেলাম৷ আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি করো৷ আই মাস্ট সে, তুমি বড্ড প্যানিক করো৷


তোমার মাথায় এসব বুদ্ধি আসলো কেন? যদি কিছু হয়ে যেতো? বেবী তানি তুমি আমাদের প্রাণ হানি৷ সব কিছুই তো তোমার। তোমার জন্যই আমরা এতো কষ্ট করি৷


মোটেই না মম৷ আমার জন্য তোমরা আমাকে ফেলে ফেলে বাইরে পরে থাকো? আমার কতটা খারাপ লাগে জানো? তুমি বলতে পারবে আমার পিরিয়ড কবে হয়েছিলো? আমি  কোনদিন ফার্স্ট কিস করেছি? আমার ফার্স্ট ডেট? 

কিছুই জানো না মম৷ আর কিছুই হতো না মম৷ ঐ ফরেনসিক মালটা সব ডুবিয়ে দিলো৷ যাক ড্যাড তো আসছে ৷ আমার প্ল্যান সাকসেসফুল। 


তুমি অ্যারেস্ট হতে পারতে তানি৷ এসব প্রাঙ্ক করার কোন মানে হয় না৷ বিডি তো বিজনেস ....


মা আমি একটা প্রশ্ন করবো? মাত্র একটা?


বলো৷


আমি যদি না থাকি তখন এসব কিছু দিয়ে তুমি কি করবে? তোমরা ভালো থাকবে তো?


মৈনালীকে এক গম্ভীর প্রশ্নের জালে রেখে তানি বেরিয়ে যায়৷


শেষ৷