# ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পরিবার # দৈনিক সাহিত্য প্রতিযোগিতা # বিভাগ_ গল্প# তারিখ_ ২৫/৮/২১
#একটি_অসমবয়সী_প্রেম
বিদিশাকে নিয়ে ওর মা যথাসময়ে পৌঁছে গেলেন ছোট ননদের বাড়ি। ওখানেই আজ বিদিশাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ। পিসতুতো বৌদি মনামি ওকে নিজ…
# ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পরিবার
# দৈনিক সাহিত্য প্রতিযোগিতা
# বিভাগ_ গল্প
# তারিখ_ ২৫/৮/২১
#একটি_অসমবয়সী_প্রেম
বিদিশাকে নিয়ে ওর মা যথাসময়ে পৌঁছে গেলেন ছোট ননদের বাড়ি। ওখানেই আজ বিদিশাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ। পিসতুতো বৌদি মনামি ওকে নিজের একটা শাড়ি পড়িয়ে দিল। তারপর মুখে কি সব ছাইভস্ম মাখিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলল।
বিদিশার মুখশ্রী এমনিতেই বড় সুন্দর। চোখ , নাক, ঠোঁট, সব কিছুই বেশ নিখুঁত মাপে কাটা। পিঠ ছাপানো কালো চুলের ঢল। গানের গলাটাও বড় মিষ্টি।
পিসি বললেন,
-'দেখবি , কেমন ভালো পাত্তর জোগাড় করেছি। ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ। কি ভালো একখানা চাকরি করে। বয়সটাই যা একটু বেশি। তবে তোর মত মা কালী কে পছন্দ হলে হয়। '
বলেই ফিকফিক করে হাসলেন।
বিদিশা ওসব গায়ে না মেখে মজা করে বলল,
-ওহ্, তা তার বয়স কত পিসি! বাবা,জ্যাঠা নাকি একেবারে দাদুর বয়সী হবে।
পিসি বললেন,
-ফাজলামি রাখ্। ওই পঁয়তাল্লিশ এর কাছাকাছি হবে। তাতে কি শুনি ! তুই কি কচি খুকি? নয় নয় করেও তো তিরিশের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেছিস । কি বলো বৌদি!
বৌদি অর্থাৎ বিদিশার মা ঘাড় কাত করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কপালে হাত ঠেকালেন। বললেন,
-ভালোয় ভালোয় সব উদ্ধার হয়ে যাক্ বাবা এই হচ্ছে কথা।
যথাসময়ে ছেলের বাড়ির লোকজন এসে হাজির । ছেলে নিজেও এসেছে সাথে। খানিক বাক্য বিনিময়ের পর ডাক পড়ল বিদিশার।
চা মিষ্টির ট্রে টা সেন্টার টেবিলের উপর সাবধানে রেখে উল্টোদিকের চেয়ারে বসে সামনে তাকাল বিদিশা। সাথে সাথেই হৃৎপিন্ডটা তড়াক করে এক লাফে যেন গলায় উঠে এল ওর । চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে উঠল। দাঁড়িয়ে পড়তেই যাচ্ছিল। পাশ থেকে মা চেপে ধরে বসিয়ে রাখল। যদিও তিনিও বেশ খানিকটা অবাকই হয়েছেন।
পাত্রের সাথে আলাদা করে কথা বলে আসার পর মনামি বিদিশাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে সবটা শুনল। তারপর আনন্দে জড়িয়ে ধরল ওকে।
ওরা একেবারে পাকা কথা দিয়ে বিয়ের দিন মোটামুটি ফিক্সড করেই গেল।
রাতে বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসতে চাইল না বিদিশার। উঠে বারান্দায় গিয়ে বসল। মনে পড়ে গেল অনেক পুরোনো কথা।
ও তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। ওর আর ভাইয়ের জন্য ওদের বাবা একজন গৃহশিক্ষক রেখেছিলেন। বেশ ভালো পড়াতেন তিনি। অঙ্কের ল. সা. গু, গ. সা. গু থেকে শুরু করে ইংরেজির লেটার রাইটিং অব্দি সবই শেখা তাঁর কাছে। বেশ যত্ন নিয়ে শেখাতেন। অনেক রকম গল্পও করতেন। যদিও বিদিশার থেকে বয়সে প্রায় বছর পনেরোর বড়ো, তবুও বড় ভালো লাগতে শুরু করেছিল মানুষটাকে ওর। ভালো লাগাটা যে ও তরফেও ছিল তা কয়েকদিন পরেই বোঝা গেল। বিদিশা যখন ক্লাস এইটে তখন একদিন ইংরেজি খাতার পিছনে পেন্সিল দিয়ে লিখে তিনি তাঁর ভালোবাসার কথা জানালেন। অজানা একটা অনুভূতিতে বুকের ভিতরটা দুলে উঠেছিল। সেই মুহুর্তে মনে হয়েছিল ওর পা দুটো আর বুঝি মাটিতে নেই। আকাশের অনেকটা উঁচুতে উঠে যেন পাখি হয়ে গেছে। নীরবে সম্মতি জানিয়েছিল বিদিশা। বয়স আর সম্পর্কের ভেদাভেদ ভুলে এক অন্যরকম ভালোলাগার জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল । তারপর থেকে
স্বপ্নের মত কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। অধীর আগ্রহ নিয়ে রোজ সন্ধ্যেবেলা তাকিয়ে থাকত তাঁর আগমন পথের দিকে। তখন ক্লাস নাইন। একদিন হঠাৎ উনি এলেন না। তার পরদিন, তার পরদিন, তার পরদিনও না। বাবা বললেন সে নাকি ভালো চাকরি পেয়ে গেছে। তাই আর পড়াতে পারবে না।
শুনে অভিমানে চোখে জল এসে গিয়েছিল বিদিশার। পরে নিজের উপরেই রাগ হয়েছিল। নিজেই নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছিল যে তার মত একটা কালো মেয়ের কাছে ভালোবাসা শব্দটা একটা উপহাস ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। হতে পারেও না কখনও। এটুকু বুঝতে অনেকটাই দেরি করে ফেলেছে ভেবে প্রাণ খুলে কেঁদেছিল । তারপর আস্তে আস্তে কবে যেন সব ভুলেও গিয়েছিল।
কিন্তু আজ যখন অনেকদিন পর বিদিশা আবার দেখল তাঁকে, তখনই বুঝল আসলে ভোলেনি। ভুলতে পারেইনি কোনদিন নিজের জীবনের প্রথম পুরুষ টি কে । কানের পাশে দু একটা রূপোলি রেখা ছাড়া অবিকল একই রকম দেখতে রয়েছে সে । সেও যে ভোলেনি, আপ্রাণ সেটাই বোঝাতে চাইছিল। বলেছিল,
-বাড়িতে বিয়ের কথা বললে এতদিন এড়িয়ে গেছি। আমার ঠাকুরমা অসুস্থ। নব্বই বছর বয়স। নাতবৌ না দেখে যাবেন না মাথার দিব্যি দিয়ে রেখেছেন। অগত্যা এই বুড়ো বয়সেই.......।
তবে, মন থেকে কাউকে চাইলে ভগবানও সহায় হন এটা বেশ বুঝতে পারছি। আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি বিশ্বাস কর। তোমাদের আগের বাসায় খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম তোমরা আর ওখানে থাকো না। আজ এখানে এভাবে তোমায় পাবো সত্যিই ভাবি নি। আমায় ক্ষমা করো বিদিশা।
উত্তপ্ত বারিধারা তখন বিদিশার দুই গাল বেয়ে নামছে।
পিসির বাড়ির একতলায় দুই বাড়ির সকলে যখন আসন্ন বিয়ের আনন্দে আত্মহারা তখন তিনতলার ছাদে বিদিশার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে ওর হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে সে গেয়ে উঠেছিল....
"আয় আর একটিবার আয় রে সখা প্রাণের মাঝে আয়,
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়। "
# অচেনা লেখক " নীল "