✍ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আর্থিক মন্দার কারণে এবারে বিশ্বকর্মা প্রতিমা আকারে অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছে। প্রতিমার অর্ডারের সংখ্যাও এ বছর অনেক কম। ছোটো কারখানার মালিকেরা জানিয়েছেন, করোনা আবহ চলছে। লকডাউনের রেশও চলছে। এই কারণে এবারে নমো নম…
✍ সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
আর্থিক মন্দার কারণে এবারে বিশ্বকর্মা প্রতিমা আকারে অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছে। প্রতিমার অর্ডারের সংখ্যাও এ বছর অনেক কম। ছোটো কারখানার মালিকেরা জানিয়েছেন, করোনা আবহ চলছে। লকডাউনের রেশও চলছে। এই কারণে এবারে নমো নমো করে বিশ্বকর্মা পুজো করা হবে। নিয়মরক্ষার তাগিদে আকারে অনেক ছোট বিশ্বকর্মার এনে পুজো হবে। প্রতিমা শিল্পীরাও জানিয়েছেন, ঠিক মতো কারখানা না চলায় পুজোর বাজেটে কোপ পড়েছে। ফলে এ বছরে প্রতিমার চাহিদা অনেক কমে গিয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় কারখানা মালিকরা ঘটেই পুজো করছেন। কোনো কোনো জায়গায় একদম ছোট্ট প্রতিমা এনে পুজোর ব্যবস্থা করছেন কারখানা মালিকেরা। বাজারে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিকোচ্ছে 'মিনি বিশ্বকর্মা'। কিন্তু তারও বাজার খুব একটা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। দক্ষিণ শহরতলির বাঁশদ্রোণী বাজারের বিক্রেতা মিহির কর্মকার, সুখরঞ্জন সাহা, প্রদীপ দাসেরা বলেন, বাজার খুবই খারাপ। বড়ো বা মাঝারি আকারের প্রতিমা ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে দাম পড়ে। কিন্তু এ বছর চাহিদা নেই। ছোট মিনি বিশ্বকর্মা তবু কিছু বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্বকর্মাকে মানা হয় কারিগরি ও শিল্পের দেবতা বলে। সেই রীতি মেনেই প্রতি বছর বিভিন্ন কারখানায় জাঁকজমকের সঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজো হত। পুজোর কয়েকদিন আগে থাকতেই কারখানা জুড়ে থাকত খুশির মেজাজ। বড়ো প্রতিমার পাশাপাশি আলোর মালায় সেজে উঠত কারখানা। কর্মীদের বোনাস দেওয়া হত। পুজোর দিনে সারাদিন খাওয়া দাওয়া হইহুল্লোড় লেগেই থাকত। কিন্তু গত কয়েক বছরে বেমালুম বদলে গিয়েছে ছবিটা। নোটবন্দি ও আর্থিক মন্দার কারণে ধুঁকছে ছোটো কারখানাগুলি। গত বছর থেকে করোনা এবং লকডাউনের কারণে লোকাল ট্রেন চলাচল ঠিক মতো না হওয়ায় শ্রমিক আসাও কমে গিয়েছে। এইসব কারণেই গত বছরের মত এই বছরেও অধিকাংশ কারখানায় প্রতিমার আকার অনেক ছোটো হয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি অনেক কারখানায় মূর্তির পরিবর্তে ঘটেই পুজো করা হচ্ছে।
দক্ষিণ শহরতলির খানপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টের এক পাখা কারখানার মালিক জানিয়েছেন, করোনা আবহে ব্যবসার হাল ভালো নয়। আগে মূর্তি এনে বিশ্বকর্মা পুজো হত। এ বছর নমো নমো করে ঘটেই পুজো করা হবে। কর্মীদের বোনাস দেওয়া যাচ্ছে না। জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে চলছে। অপর এক কারখানা মালিক বলেন, এই এলাকায় প্রায় ৩৬টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কারখানা রয়েছে। মূলত তৈরি হয় পাখার ব্লেড, বেয়ারিং। বাঁধা হয় কয়েল। কিন্তু কোনোটিরই অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। শ্রমিকের সমস্যা আছে। কিছু বন্ধও হয়ে গিয়েছে। এদিকে অর্ডার এবং পেমেন্ট ঠিক মতো না আসার কারণে সমস্যা বাড়ছে। নগদের যোগান খুবই কম। লোহার মতো কাঁচামালের দাম আকাশছোঁয়া। তাই নমো নমো করে নিয়মরক্ষার তাগিদে ছোট্ট মূর্তি এনে পুজো সারা হবে। খানপুরের অদূরে উষা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতেও ছবিটা বিশেষ আলাদা নয়। সেখানেও কোনওরকমে পুজোর প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে শিল্পের এই মন্দার প্রভাব পড়েছে মৃৎশিল্পেও। প্রতিমা শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এবারে অনেক কম সংখ্যক বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। তাও সাইজে আবার ছোট। কাঁচামালের দাম বাড়লেও প্রতিমার দাম বাড়াতে পারছেন না। এতে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। এক মৃৎশিল্পী মন্টু পাল জানান, বিগত বছরগুলোতে ১০০ থেকে ১২০টির মতো বিশ্বকর্মা ঠাকুরের অর্ডার থাকত। এ বছর ১০০টাও হয়নি। ঠাকুরের অর্ডার কমে গিয়েছে। বাজেট কম। ফলে ছোটো ছাঁচের ঠাকুর বিকোচ্ছে বাজারে। তিনি আরো জানালেন, দড়ি, বিচালি, পেরেক, রং প্রভৃতি কাঁচামালের দাম খুব বেড়ে গিয়েছে। ফলে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
শিল্পগুলি আবার কবে কারিগরি দেবতা বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে ঘুরে দাঁড়াবে সেই আশায় দিন গুনছেন সকলেই।