Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

রবি রঞ্জনী সাপ্তাহিক সেরা সাহিত্য সম্মাননা

#শিরোনাম_মোদক #কলমে : শাশ্বতী মুন্সী 
      জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষা ঋতুর সূচনা হয়ে গেছে কিন্তু বঙ্গের মাটিকে সিক্ত করতে বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও এখনো অবধি পড়েনি। গ্রীষ্মের দাবদাহ সমান ভাবেই বহমান রয়েছে। এইরকম…

 


#শিরোনাম_মোদক

 #কলমে : শাশ্বতী মুন্সী 


      জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষা ঋতুর সূচনা হয়ে গেছে কিন্তু বঙ্গের মাটিকে সিক্ত করতে বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও এখনো অবধি পড়েনি। গ্রীষ্মের দাবদাহ সমান ভাবেই বহমান রয়েছে। এইরকম একদিনে দোকানের ভেতর বসে বাইরে পথচারিদের দিকে চেয়ে আছেন  হীরেনবাবু। পরনে সুতির ফতুয়া আর একটু ঢোলা মতন পাজামা। চোখের চাহনি ও মুখে ভাবনার ছাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে কোনো কারণে তিনি বেশ চিন্তিত রয়েছেন।


      পেশায় হীরেবাবু মিষ্টি ব্যবসায়ী। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া "জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে"র বর্তমান মালিক। পুরো নাম হীরেন মোদক। রানাঘাট অঞ্চলে চার পুরুষের বাস। বৌ-ছেলে নিয়ে ছোট পরিবার। মিষ্টির দোকানের আয়ের ওপর নির্ভর করে স্বচ্ছলতা আছে সংসারে। সকাল থেকেই বেশ ভীড় শুরু হয়ে যায় দোকানে। নানা মিষ্টির সম্ভার ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ তো করেই সাথে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ রসনাকেও তৃপ্তি দেয়! দামও সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে।


  সকালে ও বিকেলে সিঙ্গারা, মটর-আলুর ঝাল ঝাল তরকারিসহ হিঙের কচুরি, খাস্তা কচুরি, জিলিপি আশেপাশের এলাকার কিছু মানুষদের নিত্য খদ্দের করে নিয়েছে।


      স্ত্রী রীনাদেবী গৃহবধূ। একমাত্র ছেলে সোহম সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। বিয়ের কিছুমাস পরেই মারা যান হীরেনবাবুর মা। তারপর থেকে গৃহকর্মে নিপুনা রীনাদেবী সংসার সামলানোর যাবতীয় ভার নিজ কাঁধে নিয়েছে। বুদ্ধিমতী পুত্রবধূকে খুব স্নেহ করতেন শ্বশুর মশাই। দোকানের বিষয়ে বৌমার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। যার অন্যথা করেন না হীরেনবাবু। একবার দোকানের আর্থিক অবস্থায় মন্দা দেখা দিলে রীনাদেবীর পরামর্শে এবং তার দেখানো মিষ্টি তৈরীর প্রণালী অনুসরণ করে দোকানের বিক্রিবাটা আবার লাভের মুখ দেখে।


   বাপেরবাড়িতে থাকাকালীন মায়ের কাছে শিখে আসা 'লবঙ্গ লতিকা ও বালুসাই' নামক মিষ্টি দুটি " জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভান্ডার"এর খদ্দেরদের রসনার চাহিদা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়! সেবারে রন্ধন পটিয়সী স্ত্রীর বিচক্ষণতা এবং সহায়তা ব্যবসায় ক্ষতির আঁচ লাগতে দেয়নি। সেই সময় থেকে সহধর্মিনী তথা সহকর্মিনী রূপে সংসার ও দোকানের  দায়িত্বভার হাসি মুখে সামলে যাচ্ছেন।


     মাস তিনেক হল দুটো নতুন মিষ্টির দোকান হয়েছে অঞ্চলে। " মল্লিক মিষ্টান্ন ভান্ডার " এবং " জে. কে. সুইটস "। দোকান দুটি উদ্বোধনের পর থেকেই রকমারি মিষ্টি বানিয়ে রানাঘাট দের তাক লাগিয়ে দিয়েছে! এমন, এমন সব মিষ্টি তারা তৈরী করছে যাকে চোখে দেখা তো দূর, নাম পর্যন্ত শোনে নি! যেমন -- ক্ষীরের পান্তুয়া, আমের রসকদম্ব,সবুজ বরফি, ক্ষীর কমলা, গাজরের পাটিসাপ্টা, আমসত্ব সন্দেশ  ইত্যাদি। ফল যা হবার তাই হয়েছে। "জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে "র অধিকাংশ খদ্দের রসনায় নতুন মিষ্টির স্বাদ চাখতে আগ্রহে ওই দোকানে ভীড় জমিয়েছে। আর সেকারণে হীরেনবাবুর ব্যবসা আবার মন্দার সম্মুখীন হয়েছে।


          

    রানাঘাট বয়েজ স্কুলের ছাত্র সোহম লেখাপড়ায় যথেষ্ট মনোযোগী। মিশুকে স্বভাবের জন্যে বন্ধুমহলেও বেশ প্রিয়। প্রায় দিন সে টিফিনে বাবার দোকানের মিষ্টি নিয়ে আসে। তবে একা সেই মিষ্টিগুলো না খেয়ে বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে খায়। মায়ের কাছে পাওয়া এই শিক্ষায় সে বুঝেছে ভাগ করে খাওয়াতে যে আনন্দ, তা কখনই একা খাওয়াতে পাওয়া যায় না! তাছাড়া ওদের দোকানের মিষ্টি খেতে ওর বন্ধুরাও যে খুব ভালোবাসে।


      সপ্তম শ্রেণীর পাঠক্রম শুরু হওয়ার মাস ছয়েক  পর সোহমদের সহপাঠী হয়ে রানাঘাট স্কুলে ভর্তি হয় একটি নতুন ছেলে। নাম রিতেশ ভাটিয়া। অবাঙালি পরিবারে জন্মালেও বাঙালি পরিবেশে বড়ো হয়ে ওঠার দরুন বাংলায় কথা বলতে, লিখতে, বাংলা ভাষীদের কথা বুঝতে এবং বাংলা ভাষায় স্কুলের পাঠ্য বই পড়তে রিতেশের কোনো অসুবিধা হয় না। বাড়িতে সে বাবা মায়ের সঙ্গে হিন্দির চেয়ে বাংলা ভাষাতেই বেশি কথা বলে। বাবা যতীন ভাটিয়ার বদলির চাকরি। তাই  রিতেশ ও তার মা অঞ্জলি ভাটিয়াকে সারা বছর যতীনবাবুর কর্মস্থলের নানা জায়গায় নানা ভাষাভাষী পরিবেশে কাটাতে হয়। এখনো অবধি বেশিরভাগ পরিবেশ বাঙালি অধ্যুষিত হওয়ায় সুমধুর বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে রপ্ত করে নিয়েছে তারা। তবে শুধু বাংলা ভাষাই নয়, বাঙালিদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বিভিন্ন খাবারের লোভনীয় স্বাদে মজেছে!


      বন্ধুসুলভ আচরণের সুবাদে অল্পদিনেই সোহমের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় রিতেশের। জায়গা করে নেয় সোহমের বন্ধুবৃত্তে। টিফিনও খায় ওদের সঙ্গে বসে। বাঙালী মায়েদের হাতের রকমারি রান্না খুব পছন্দ। বিশেষত সোহমের বাবার দোকানের মিষ্টি তার ভীষণ ভালো লাগে। বন্ধুর মুখের অবাঙালি টানে নিজেদের মিষ্টির তারিফ শুনলে, অনাবিল খুশি ছড়িয়ে পড়ে সোহমের মনে।


      চারটে পিরিয়ডের পরে পঠন-পাঠনের বিরতির সময় বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগাভাগি করে খাচ্ছে সোহম। হঠাৎ রিতেশ জিজ্ঞেস করল,

 -- "তোর বাবার দোকানের মোদক মিষ্টি কোনোদিন টিফিনে আনিস না কেন, সোহম ?"


 হাতে ধরা মাখন লাগানো পাউরুটিতে সবে এক কামড় দিয়েছে, ওই অবস্থাতে অবাক চোখে তাকায় রিতেশের দিকে!

 বন্ধুর মুখভঙ্গি লক্ষ করে বললে,

--" কি আশ্চর্য! তোদের মিষ্টির দোকান অথচ তোকে দেখে মনে হচ্ছে মোদক মিষ্টির নাম তুই আমার মুখেই আজ প্রথম শুনলি.."


পাউরুটির টুকরোটা চিবিয়ে গলা দিয়ে নেমে যেতে সোহম বলল,

--", মোদক! এই নাম আবার মিষ্টিও আছে বুঝি!"

 --" সেকি রে..রোজ টিফিনে নানা রকম আনিস কিন্তু তোর পদবিই যে একটি বিখ্যাত মিষ্টির নাম, তা তুই জানতিস না...!"

দু'পাশে ঘাড় নাড়িয়ে বোঝায় সত্যি সে জানত না। ওর দেখাদিখি অন্য বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠল, আমরা কেউ-ই এমন মিষ্টির নাম জানতাম না।


 মোদক মিষ্টি টা কেমন খেতে রে? কোথায় পাওয়া যায়? তুই কখন খেয়েছিস?-- এসব জানার জন্য পরপর প্রশ্ন করে সোহম।

 --" হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরাও জানতে চাই। "


  বন্ধুদের কৌতূহল মেটাতে এবার রিতেশ বলতে লাগল,

 --" গণপতি বাপ্পার পুজো মহারাষ্ট্রের শহরগুলিতে বেশি হয়, সেখানে লাড্ডু আর মোদক --- দুই প্রধান প্রসাদ।"

 --"ও, আমি তো জেনে এসেছি গণেশ পুজোয় লাড্ডু ই আসল প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়..তা ভালো করলি বলে,  বাবাকে গিয়ে এই মিষ্টির কথা বলব, আর মাকে জিজ্ঞেস করব বানাতে পারে কিনা? "


  টিফিন বাক্সের ঢাকনায় রাখা মিষ্টিটা ভেঙে এক টুকরো মুখে পুরল রিতেশ। বালুসাইয়ের ভেতরের পুরের স্বাদ তেবলল,

--" আমার মা খুব ভালো মোদক বানাতে পারে, কাকিমা না জানলেও অসুবিধা নেই... মাকে বলব মোদক বানানো শিখিয়ে দিতে.. খুব সহজে বাড়িতে তৈরী করা যায়। "


  

   " জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভান্ডার " বাহ্যিকভাবে হীরেনবাবুর ব্যবসার ক্ষেত্র। কিন্তু বাবার হাতে গড়া  দোকানটা তার নিজস্ব দুনিয়া। দোকানের সবকিছু যেন তার বুকের পাঁজরের সাথে মিশে গেছে। ছ'জন কর্মচারী আছে দোকানে। সবাই খুব বিশ্বস্ত এবং কর্মঠ। মিষ্টি বিক্রির লভ্যাংশ থেকে তাদের শ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে কোনোদিন কার্পণ্য করেননি। বিক্রিবাটা কমে যাওয়ার দরুন অধিকাংশ দিন শো-কেসে মিষ্টির সংখ্যার তেমন কোনো তারতম্য চোখে পড়ছে না। সকালে- বিকেলে সিঙ্গারা-কচুরির নিত্য খদ্দের আগের মতোই থাকাটা দোকানের অর্থের কোষাগারকে খানিক সামাল দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এইভাবে সংসার চালিয়ে দোকানের কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেওয়া কতদিন সম্ভব হবে... সেই ব্যাপারটা হীরেনবাবুকে গভীর ভাবনায় ভাবিত রেখেছে!


    অনুপ দলুই "জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে"র সবচেয়ে পুরোনো কর্মচারী। দোকান শুরু প্রথমদিকে হীরেনবাবুর বাবার পাশে থেকে প্রভুত সহায়তা করেছিলেন তিনি। বলতে গেলে ওনাদের যৌথ প্রচেষ্টায় রানাঘাট অঞ্চলে এই দোকানের মিষ্টির সুখ্যাতি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। দোকান চালানোর জন্যে নিঃসংশয় ভাবে ওনাকে ভরসা করে আসছেন হীরেনবাবু। মালিকের আসনে থাকলেও বর্ষীয়ান অনুপবাবুকে সমীহ করে চলেন। ষাটের গোড়া ছুঁই ছুঁই অনুপবাবুর বলিরেখাঙ্কিত কপালে আরো কয়েকটি  ভাঁজ যোগ হয়েছে দোকানের আর্থিক মন্দার চিন্তা।


     বাড়ি থেকে দোকান ১২/১৫ মিনিটের  দূরত্ব। দুপুরবেলা দোকানের দায়িত্ব অনুপবাবুর ওপর দিয়ে বাড়িতে খেতে যান তিনি। রোজ দিনের মতো বাড়ি যাওয়ার আগে অনুপবাবুকে বললেন,

-- " দোকানের বিক্রিবাটার হার কমে যাওয়ায় আপনি এবং অন্য কর্মচারীরা চিন্তায় রয়েছেন, তা বুঝতে পারছি..আজ বাড়ি গিয়ে রীনার সঙ্গে আলোচনা করব..দেখি যদি কিছু উপায় বার করতে পারে.. "


  দুপুরের খাওয়া সেরে শোয়ার ঘরের খাটে বসে বিশ্রাম করছেন হীরেনবাবু। রান্নার জায়গা পরিষ্কার করতে বেলা গড়িয়ে তিনটে বেজে গেল। হাত খালি হতে ঘরে ঢুকে এক খিলি পান স্বামীর হাতে দিলেন রীনাদেবী। খাটে মুখোমুখি বসে বললেন,

 --" ক'দিন ধরে দেখছি দোকান থেকে ফিরে কেমন যেন হতাশ লাগে তোমায়.. বিক্রিবাটা সব ঠিকমতো চলছে তো..? "

--" ওখানেই যে সমস্যা হয়েছে রীনা "।

 

 তারপর রাইভিলারি দোকান দুটোর ব্যাপারে জানান স্ত্রীকে জানিয়ে বলেন, আচ্ছা, তোমার রান্নার খাতায় তো হরেক রকম পুরাতনী খাবারের পদ আছে, তার মধ্যে থেকে এমন কোনো মিষ্টি তৈরির প্রণালী যদি বের করতে পারো... তাহলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে ব্যবসাটা রক্ষা পায়!

স্মিত হেসে বলেন,

 --" দ্যাখো, মায়ের কাছে যেসব রান্না শিখেছি, তার বেশিরভাগ আমিষ-নিরামিষ পদ। মিষ্টি জাতীয় খাবার বলতে মালপোয়া, চন্দ্রপুলি, ভাপা সন্দেশ,খাস্তা গজা ইত্যাদি বানানোর পদ্ধতি জানা আছে, এগুলো দোকানের কর্মচারীদের শিখিয়ে দিলে যদি কিছুটা সুরাহা হয়.. "

 --" নাহ, এই মিষ্টিগুলোর নাম অনেকে জানেন, খেয়েও দেখেছেন নিশ্চয়ই... আমি চাইছি এমন কোনো মিষ্টি,  যা খদ্দেরদের অজানা হবে। "মল্লিক মিষ্টান্ন ভান্ডার" এবং "জে. কে. সুইটস " এর সাথে পাল্লা দিতে চাই নতুন কোনো মিষ্টির নাম এবং রেসিপি। "


    ইতিমধ্যে স্কুল থেকে চলে এসেছে সোহম। জুতো খুলে, সোফায় ব্যাগ রেখে দৌড়ে ঢোকে বাবা মায়ের ঘরে। উৎফুল্ল দেখায় ওকে। খাটের কাছে এসে বলল,

-- " জানো বাবা, আজ রিতেশ এমন একটা মিষ্টির নাম বলেছে যেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে!"


   নতুন মিষ্টির সন্ধানে হীরেনবাবু যখন ভাবনার অতলে ডুবে রয়েছেন, এমন সময়ে ' মিষ্টি ' কথাটা শুনে চমকে তাকান সোহমের দিকে। কিছু প্রশ্ন করার আগেই তড়বড় করে রিতেশের মুখে শোনা কথাগুলো বলে দিল। ছেলের কথায় বিস্মিত নয়নে মুখ চাওয়াচায়ি করলেন দুজনে!


   হীরেনবাবু ভাবলেন, বরাবর জেনে এসেছেন গণেশ পুজোয় লাড্ডু প্রধান প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়, কিন্তু মোদক মিষ্টির কথা তো কখনও শোনেননি।

  এবার উৎসুক স্বরে রীনাদেবী জিজ্ঞাসা করেন,

-- " সোমু (সোহমের ডাকনাম), রিতেশকে জিজ্ঞেস করিস তো, কীভাবে মোদক তৈরী করতে হয়, ওর মা জানে কিনা? "

--" হ্যাঁ গো মা অঞ্জলি কাকিমা খুব ভালো মোদক বানাতে পারে, আর রিতেশ নিজেই বলেছে মাকে বলবে, তোমায় মোদক বানানো শিখিয়ে দিতে.. ",উৎসাহের ভঙ্গিতে বলল সোহম।


  ছেলের কথায় সংকট থেকে ব্যবসাকে উদ্ধার করার রাস্তা পেয়ে গেলেন রীনাদেবী। স্বামীর উদ্দেশে বলেন,

 শোনো, একটা উপায় পেয়েছি। এ বছরের গণেশ পুজোর আগে আমাদের দোকানে মোদক মিষ্টির দু 'তিনটি ট্রে রাখবে, যা রিতেশের মা অঞ্জলীর কাছ থেকে শিখে কর্মচারীদের শিখিয়ে দেব। আমার বিশ্বাস অজানা নামের ও স্বাদের এই মিষ্টি এলাকাবাসীর রসনায় নতুনত্বের স্বাদ আনতে সফল হবে। আর একবার ক্রেতাদের পছন্দ হয়ে গেলে সারা বছরই মোদক মিষ্টি "জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে "র শোকেসে রাখা থাকবে।


  স্ত্রীর পরামর্শে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন সতীশবাবু। চিন্তার কালো মেঘের ছায়া কেটে আশার মনের কোনায় উঁকি দিল একফালি আশার আলো।

           

    রিতেশের মা অঞ্জলীর সঙ্গে রীনাদেবীর আগেই পরিচয় হয়েছে। রিতেশরা রানাঘাটে আসার পরে ছেলেকে নিয়ে ওদের বাড়ি একদিন গেছিলেন তিনি। এলাকায় নতুন অবাঙালি পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে এসেছিলেন। অঞ্জলীর অমায়িক ব্যবহারে সেদিন আলাপ জমে উঠতে বেশি দেরি হয়নি | তাই ব্যবসার সংকটকালে এককথায় মোদক তৈরীর পদ্ধতি শেখাতে রাজি হন। সোৎসাহে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সাহায্যের হাত। যত্নসহকারে মোদক বানানোর প্রণালী শিখিয়ে দেন অঞ্জলী।


      গণেশ পুজোর আগে "জগন্ময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে "র সম্ভারে নতুন নামের মিষ্টি দেখে অনেক উৎসাহী এবং রসনাবিলাসী ক্রেতা ভীড় জমায় দোকানে। অপূর্ব স্বাদের মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত এই মিষ্টি বঙ্গবাসীর রসনাকে তৃপ্ত করতে প্রথমবারে সফল হয়। প্রবল চাহিদা অনুযায়ী অচিরেই খালি হয়ে যেতে থাকে শো-কেসে থরে থরে সাজানো ট্রে ভর্তি চকোলেট মোদক, ক্ষীরের মোদক, চালের মোদক, কাজু মোদক।


   গণেশ পুজো উপলক্ষে মোদক মিষ্টি প্রচুর বিক্রি হওয়ার জন্যে হীরেনবাবুর সংসারের আর্থিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটে। মিষ্টি বিক্রির লভ্যাংশের একটা বড়ো অংশ তিনি কর্মচারীদের মাসিক পারিশ্রমিকের সঙ্গে বোনাস হিসেবে যুক্ত করে দেন। দোকানের কোষাগারের অর্থের ঘাটতি পূরণে ওদের অবদানও তো কম নয়...!


                            সমাপ্ত