বিভাগ- গল্পশিরোনাম—“ ওরা “কলমে — সূর্যকন্যা তপতী( তপতী দাস )তারিখ-২২\১১\২০২১5:10 PM"""""""""””””””””””””””””””””””””””আজ আর কবিতা নয়!!!!আমার কবিতা মুখ লুকিয়ে অঝোরে কেঁদেছে, নিঃশব্দের ন…
বিভাগ- গল্প
শিরোনাম—“ ওরা “
কলমে — সূর্যকন্যা তপতী( তপতী দাস )
তারিখ-২২\১১\২০২১
5:10 PM
"""""""""””””””””””””””””””””””””””
আজ আর কবিতা নয়!!!!
আমার কবিতা মুখ লুকিয়ে অঝোরে কেঁদেছে, নিঃশব্দের নিঃসঙ্গতা সাথে নিয়ে। কিছু করতে না পারার বেদনা বুকের ভিতরে উথাল পাথাল ঢেউয়ের তালে আছড়ে পড়ছে।
চার থেকে আশি ,নারী, হোক না সে যে বয়সী
হয় তারা, পুরুষের লোভের শিকার --
নারী ধর্ষণের ছড়ায় খবর
শিশু কন্যারাও পায়নি রেহাই
অপরাধ করেছে যারা তাদের দোষে--
সমস্ত পুরুষ আজ যেন দোষী হয়ে গেছে !!!
ফুটফুটে ফুলের মতো মিষ্টি মেয়ে
তাকে স্বাভাবিক নিয়মে আদর করতে গিয়ে
অনেক পুরুষই আজ
হাতটাকে নিচ্ছে গুটিয়ে--
সন্দিহান কন্যার প্রিয় পরিজন
না হয় যেন কন্যার ধর্ষণ
হায় রে সমাজ-!!!
একি তোর নির্মম পরিহাস--?
কিছু শয়তান পুরুষের জন্য
দোষী সাব্যস্ত হলো আজ সমগ্র পুরুষ সমাজ --
সূর্যকন্যা তপতী দাঁড়াতে চাই সেই সব পুরুষের পাশে--
তাই সে তুলে নেয় কলম--।
লেখে এমন এক ছেলের জীবনের সত্য ঘটনা
যার নাম,ধাম, পরিচয় নাই বা বললাম আমি--!
আমার মহান দেশ ভারতবর্ষের বহু জায়গায় এখনও শিশু কন্যার বিবাহ দেওয়া হয় সরকারি নিয়মকানুন না মেনে--
এমনই এক মেয়ে রাজলক্ষ্মী। রাজস্থানের কোটা শহরে বাড়ি। সাত বছরের ছোট্ট মেয়েটি 'সহেলি' দের (বান্ধবী)সাথে এক্কা-দোক্কা খেলছে বাড়ির সামনে উঠানে।
কর্ম সুত্রে বিহারের সমস্তিপুরের নিবাসী ভানু প্রতাপ সিং হোলি উৎসব উপলক্ষে দেশে এসেছেন।
রাজলক্ষ্মীদের বাড়ির পাশেই তার বোনের ঘর।
সপরিবারে বোনের বাড়িতে আসার সময় এক্কা-দোক্কা খেলায় মত্ত রাজলক্ষ্মীকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। স্বামীর দিকে চেয়ে ভানু প্রতাপের স্ত্রী ফুলমতিয়া বলে ওঠেন 'হামারি বেটে কা লিয়ে ইয়ে লেড়কি বহুত সুন্দর জোড়ি বনেগী ,তুম্ খবর লো'
বোনের সাহায্যে খবরাখবর নিতে দেরি হয় না--।
রাজলক্ষ্মীর মা,বাবুজীর তো খুশির অন্ত নেই--।
ঘর ' বঠে বঠে ' এত ভাল সম্বন্ধ পেয়ে বারবার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।
ছোট্ট মেয়ে রাজলক্ষ্মীও বিয়ের আনন্দে মহাখুশি-!!
কত উপহার পাচ্ছে সে-জরির ফুলতোলা লাল রঙের ঘাগরা চোলি , হাত ভরা কাঁচের চুড়ি- আরও কত কি---।
ওদের বাড়িটা কি সুন্দর লাগছে--!ফুল আর কাগজের মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বাড়িতে ভিয়েন বসেছে--
ওদের উঠানে তৈরি বড় বড় উনানে আগুন জ্বেলে লাড্ডু, মেঠাই তৈরি করা হচ্ছে।
আত্মীয় স্বজনে ভর্তি বাড়িটা আনন্দে মেতে উঠেছে
দুপুরে পুতুল কোলে ছাতে উঠেছে রাজলক্ষ্মী। এই ছাতের এক কোণে তার পুতুলের ঘর সংসার ।।এ জায়গাটা তার বড়ো প্রিয়।
নির্জন দুপুর।আপন মনে পুতুল খেলছে রাজলক্ষ্মী।
হঠাৎ পেছন থেকে আচমকা একটা শক্ত হাত রাজলক্ষ্মীকে জড়িয়ে ধরে।
ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতেই সেই হাত মুখ চেপে ধরে ।
ভয়ে আতঙ্কে সে দেখতে পায় দিল্লি থেকে আসা তার মাসীর ছেলে শিবপ্রসাদকে।ছোট্ট রাজলক্ষ্মী কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে তার নিম্নাঙ্গ।
সন্ধ্যা বেলায় ছাতে শুকোতে দেওয়া শুকনো মরিচ,আচার তুলতে এসেছেন রাজলক্ষ্মীর 'দাদি' (ঠাকুর মা)।
পুতুল ঘরের পাশে রাজলক্ষ্মীকে দেখে প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন আহা রে, ছোট মানুষ ,পুতুল খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে-
কাছে গিয়ে ডাকতে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞ চোখ বুঝে ফ্যালে অঘটন ঘটে গেছে।
নিজের ওড়না পেঁচিয়ে কোলে করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে জলের ছিটে দিতেই চোখ মেলে চাই রাজলক্ষ্মী।
দাদিমা কে সামনে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠতে গেল। 'চুপ -চুপ হো যা একদম্'--
দাদিমার এমন ভয়ঙ্কর রাগী মুখ আগে কখনও দেখেনি রাজলক্ষ্মী। ভয়ে বেদনাতে কান্নার শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে বটে তবে দু'চোখ গড়িয়ে পড়ছে বাঁধ ভাঙ্গা 'পানি '(জল)।
অনেকক্ষণ মেয়ে কে না দেখে রাজলক্ষ্মীর মা শ্বাশুড়ির বন্ধ ঘরে কড়া নেড়ে ঢুকতেই আবারও দরজা বন্ধ করে দ্যান তার শ্বাশুড়ি মা।
শ্বশুমায়ের এ হেন আচড়নে অবাক হতেই শুনতে পান হিসহিস শব্দে কান্না চেপে বলছেন ' একদম রোনা ধোনা বন্ধ কর , কান ও কান কিসিকা কঈ খবর না পৌঁছে-- শাদী হ্যায় ইয়ে অভাগন কা-টুট জায়েগী শাদী '
কিছু না বলে মেয়েকে বুকের ভিতরে জড়িয়ে ধরে মা।ছোট্ট রাজলক্ষ্মী থরথর করে কাঁপছে মায়ের বুকের ভিতরে।
বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। এই ক'দিনেই ছোট্ট রাজলক্ষ্মী যেন কত বড় হয়ে গেছে!!!
সহেলিদের সাথে খেলতে যাই না--
দোলনাতে ঝুলে না --মা ,ঠাকুমার সাথে সাথে তার মুখের হাসিটাও হারিয়ে গেছে--!
সবাই ভাবে ' শ্বশুরাল' যাবে (শ্বশুর বাড়ি) লেড়কি তাই।
স্বান্তনাও দেয় অনেক । বলে ' আভি ভি তো লেড়কি কা গওনা কা দের হ্যায়' তব আপলোগ ইতনা উদাস কিঁউ হো--লেড়কি ধন্ তো পঢ়ায়াই হোতা'--।
ভারতবর্ষের বহু জায়গায় এখনও ও এমন একটি প্রথা আছে যেথায় অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হবার পরও কন্যা ঋতুমতী না হলে তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হয় না। ওদের ভাষায় একে গওনা বলা হয়।
কন্যা ঋতুমতী হওয়ার খবর পাঠান হলে কন্যার শ্বশুর বাড়ি থেকে আত্মীয় স্বজন সবাই মিলে এসে বধূ ঘরে নিয়ে যায়। আচার অনুষ্ঠান বিয়ের মতই।
সাত বছরের ছোট্টরাজলক্ষ্মীও সেই নিয়ম অনুযায়ী বিবাহের পরে পিতৃ গৃহে রয়ে গেল।--।
বড় হচ্ছে রাজলক্ষ্মী। মাত্র আর এক বছর পরেই তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হবে।বড়দের কাছে এ কথাটা সে হামেশাই শোনে--।
তার মা ঠাকুর মা তাকে সুযোগ পেলেই কঠিন স্বরে বলেন সেদিনের সেই ছাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা সে যেন কাউকে না বলে।
ভয়ে আতঙ্কে রাজলক্ষ্মীর সোনার অঙ্গ কাল হয়ে যাচ্ছে ।
তার দিল্লির মাসি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ওদের বাড়িতে এসেছে।ওরা আসা অব্দি ও লক্ষ করছে ওর সেই মাসতুতো ভাই ওকে দেখলেই নানারকম চোখের ইশারায় ওকে উত্যক্ত করছে।
কাকে বলবে রাজলক্ষ্মী সে কথা -- সেদিন তো তার যন্ত্রণার কথা শুনতে চাইনি তার মা দাদিমা।
এরই মধ্যে একদিন তার দাদিমা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন । দাদিমাকে নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত সে তখন ছাতে ঠাকুর ঘরে দাদিমার জন্য প্রার্থনা করতে গিয়েছে ।হঠাৎ শিকল টানার শব্দে ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সামনে দাঁড়ান মাসতুতো দাদা কে দেখে ভয়ঙ্কর ভয়ে আতঙ্কে কাঁপতে থাকে।
'মুঝে ছোড় দো' কান্না থেমে যায়।দু'খানি সবল হাত
রাজলক্ষ্মীকে চেপে ধরে শুইয়ে ফ্যালে।নিজেকে রক্ষা করতে পারে না সে।আবারও ধর্ষিতা হলো রাজলক্ষ্মী। নিজের মায়ের কাছে সে বলতে যায় তার কষ্ট কথা। 'চুপ হো যা , একদম চুপ হো যা' মায়ের কড়া শাসন । 'মেহমান হ্যায় উ লোগ , উসকে বাড়ে মু মাত খুলনা। বরণা বহুত খারাপ হো যায়েগী' এর মানে বোঝে রাজলক্ষ্মী।কারও কাছে এ কথা বললে মা তার পিঠের চামড়া ছাড়িয়ে ফেলবে।
দিন যায়-- এরই মধ্যে ঋতুমতী হয় রাজলক্ষ্মী-। তার তল পেটে অসহ্য যন্ত্রণা।সহ্য করে মুখ বুঝে একাকী সব কিছু।
বাড়িতে খুশির হাওয়া - তার ঋতুমতী হওয়ার খবর পাঠান হয়ে গেছে তার 'শ্বশুরালে' (শ্বশুর বাড়িতে)।
শুভ দিন দেখে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সালঙ্কারা রাজলক্ষ্মীকে চোখের জলে বিদায় দিল সকলে।
শুরু হলো তের বছরে সেই মেয়ের নূতন জীবন।
এ বাড়ির স্ত্রী আচার অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হয়ে গেল।
বর কোণের শোবার ঘরের খাট পালঙ্ক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
সম্পর্কে ননদ,বৌদিরা সালঙ্কারা রাজলক্ষ্মীকে হাসি ঠাট্টা করতে করতে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল।
তার থেকে মাত্র কয়েক বছরের বড় ছেলেটি তার স্বামী। তাকেও হাসি ঠাট্টা করতে করতে
ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
এরই মধ্যে একজন সেই ছেলের হাতে হলুদ রঙে রাঙানো একটি কাপড় ধরিয়ে দিয়ে তার কানে কানে কি যেন বলে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
যাওয়ার সময় পাল্লা দুটো টেনে বন্ধ করে দিয়ে গেল।
সেই ছেলে এগিয়ে গিয়ে দরজার ছিটকিনিটা বন্ধ করে এগিয়ে আসছে রাজলক্ষ্মীর কাছে।
তীর বেঁধা পাখির মতো থরথর করে কাঁপছে সেই ছেলের 'দুলনীহা' (নব বধূ)।
ওদের বাসর ঘরের বাইরে অনেক লোকের কথা বার্তার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এ পোড়া সমাজের নিয়ম হলো পুরুষ তুমি যত দোষই করো না কেন তোমার তো কোঁচা ঝাড়লেই সাফ -- কিন্তু নারী, তোমাকে তো তোমার কুমারীত্বের পরীক্ষা দিতেই হবে---!!!
বিবাহ বাসরে পতি পত্নীর মিলন শেষে ওই হলুদ রাঙানো কাপড়ে মোছা লাল রক্তের দাগ ছুঁড়ে দিয়ে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মান আর হুশ হারান মানুষদের প্রমাণ দিতে হবে নব বধূর কুমারীত্বের।
উপযুক্ত প্রমাণ পেলে উল্লাসে ফেটে পড়ে পাত্র পক্ষের আত্মীয় স্বজন আর উল্টোটা হলে কন্যা সহ তার পরিবারের সদস্যদের সহ্য করতে হবে
অপূরণীয় লাঞ্ছনা।
পরম স্নেহে ওই টুকু সময়ের মধ্যে সেই ছেলে জয় করে নেয় তার নববধূর মন।
সেই মেয়েও তার এতদিনের লুকিয়ে রাখা যন্ত্রণা ভরা কষ্ট কথা বলতে পেরেছে তার নূতন বন্ধু সম আপনজন কে।
এখন সেই ছেলের বুকের মাঝে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তার নব বধূ মাত্র তের বছরের ছোট্ট রাজলক্ষ্মী।
ওদের ঘরের বন্ধ দরজাতে ঘণ ঘণ আঘাত পড়ছে।
হাসি তামাশার শব্দ ক্রমশ বদলে যাচ্ছে।
বাড়ছে ক্রোধ --বাড়ছে উত্তেজনা-বাড়ছে হুঙ্কার।
সেই ছেলে বেশ বুঝতে পারছে তাদের ঘরের বাইরে শুরু হয়েছে ঝড়ের পূর্বাভাস।
কি করে সেই ছেলে এখন ---?
মুহুর্তে কি যেন ভেবে নেয় সেই ছেলে---
ঘুমন্ত স্ত্রীকে সন্তর্পণে বালিশে মাথা দিয়ে শুইয়ে দেয়।
তার খোঁপা থেকে খুলে নেয় একটি কাঁটা।
আর দেরি না করে সেই ছেলে চোখ বন্ধ করে নিজের হাত সজোরে ফুটিয়ে দেয় সেই খোঁপার কাঁটা ।
গল গল করে হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে সেই ছেলের। মুখ বুঝে যন্ত্রণা সহ্য করে সে না করে একটি কাতর শব্দ।
সেই রক্ত হলুদ রাঙানো কাপড়ে মুছে জানালার পাল্লা খুলে ছুঁড়ে দেয় সেই ছেলে ।
ঘরের বাইরে তখন খুশির উদ্দাম উচ্ছ্বাস
সব কিছু উপেক্ষা করে সেই ছেলে ঘুমন্ত স্ত্রীর পাশে এসে বসে। মাথা নিচু করে ঝুঁকে
পরম মমতায় এঁকে দেয় চুম্বন সে তার নিষ্পাপ নব বধূর কপালে ।
তের বছরের রাজলক্ষ্মী কি জানতে পারল ওরা অর্থাৎ সব পুরুষই অমানুষ নয় !!!
********************************************সূর্যকন্যা তপতী👃
বি,দ্র :- এই লেখার সমস্ত সত্ব লেখিকা তপতীকে দাস কতৃক সংরক্ষিত।