Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#গল্প_ভালোবাসার_পরিণাম #কলমে_অর্পিতা_ভট্টাচার্য্য
তৃষা আর অহন ছোট থেকে খুব ভালো বন্ধু, একই স্কুলে দুজনে পড়াশোনা করে। মাধ্যমিকে বাংলা পরীক্ষার দিন অহন রচনা লিখতে পারে না ওর কমন আসেনি এবং অহন একটু বাংলাতে দুর্বল …

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#গল্প_ভালোবাসার_পরিণাম 

#কলমে_অর্পিতা_ভট্টাচার্য্য


তৃষা আর অহন ছোট থেকে খুব ভালো বন্ধু, একই স্কুলে দুজনে পড়াশোনা করে। মাধ্যমিকে বাংলা পরীক্ষার দিন অহন রচনা লিখতে পারে না ওর কমন আসেনি এবং অহন একটু বাংলাতে দুর্বল ও ছিল তাই নিজের ভাষাতেও বানিয়ে লিখতে পারেনি। তৃষার রচনাটা লেখা হয়ে গেছে সামনে টিচার থাকা সত্ত্বেও লুকিয়ে নিজের লেখা বাদ দিয়ে ওকে পুরো রচনাটা দেখিয়ে দেয় কিন্তু পরের দিন ইংরেজির একটা দুই নাম্বারের প্রশ্ন তৃষা অহনকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায়নি অহনের লেখার সময় নষ্ট হবে বলে। তৃষার খুব কষ্ট হয় সে নিজে না লিখেও দুই তিন পাতার রচনা নিজের লেখার সময় নষ্ট করে দেখিও আজ সে একটা ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর পেলো না। মুখে বলে দিলেই তো হয়ে যেত তাও নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় দুই নাম্বার বলেই সে বলেনি, একটা ছোট প্রশ্নের উত্তর না লিখলেও চলে যদি বড়ো প্রশ্ন হতো ঠিক দেখাতো। তৃষা অহনের থেকে পড়াশোনাতে খুব ভালো তাই যে পড়াশোনাতে ভালো তার সত্যিই একটা ছোট প্রশ্ন না লিখলে কিছুই এসে যায়না। মাধ্যমিকের রেজাল্টে অহনের থেকে তৃষা ভালো নাম্বার পায় এবং আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করে। অহন সাইন্সে ভর্তি হয় এবং মনে মনে খুব অহংকার হয় তৃষা এতো ভালো রেজাল্ট হওয়া সত্ত্বেও আর্টসে ভর্তি হয় আর সে সাইন্সে ভর্তি হয়। এই ফালতু অহংকারে সত্যিই যে পড়াশোনাতে ভালো তার কিছু এসে যায় না। 


এর পর বেশ কয়েকবছর কেটে যায় তৃষা একটি সরকারি স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা আর অহন একজন বড়ো বিজনেস ম্যান। দুজনেই দুজনের জায়গাতে বেশ নাম করেছে। দুই বাড়ি থেকে সমন্ধ করে ওদের বিয়ে হয় ওদের ও আপত্তি ছিল না এই বিয়েতে। কিন্তু সময় তো সবসময় এক যায় না বিশেষ করে বিজনেসের ক্ষেত্রে। অহনের বিজনেসের বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়, চারদিকে প্রচুর ধার কর্মচারিদের টাকা পর্যন্ত দিতে পারে না সবাই আন্দোলন পর্যন্ত করতে শুরু করে অয়ন কে আটকে রাখে। তৃষা খবরটা পেয়ে স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি যায় অহনের অফিসে। সেই অফিস যেখানে তৃষা যেতে চাইলে অহন বলতো, "তুমি ওখানে গিয়ে কী করবে একটা তো বাংলার টিচার ঠিকমতো ইংরেজিও বলতে পারো না তুমি বিজনেসের কিছু বুঝবে না। ছাত্র পেটানো ছাড়া তুমি আর কী পারো"। কথাটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল তৃষার একজন শিক্ষক শুধু ছাত্র পেটান ছাত্র তৈরী করেন না? কতো যত্ন নিয়ে কতো ভালোবাসা দিয়ে নিজের সন্তান মনে করে ছাত্রদের পড়ান আর অহন সেই কাজটা বিদ্রুপ করছে। অনেককিছু বলতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু ওই অহনের প্রতি ভালোবাসা আর শিক্ষা তৃষাকে আটকে দিল। আজ বোধহয় ভগবানই তৃষাকে পাঠালেন ওই অফিসে, সবাইকে ভালো করে বুঝিয়ে কিছুদিন সময় নিয়ে অহনকে ওখান থেকে বেড় করে আনে তৃষা। নিজের জমানো সব টাকা দিয়ে ধার শোধ করে। নিজের স্যালারির দিকেও তাকায় না সব অহনের বিজনেসের পিছনে দিয়ে দেয়। প্রচুর টিউশন পড়ানো শুরু করে। তৃষা খুব ভালো পড়াতো এবং ওর ভালো ব্যবহারে সবাই তৃষার কাছে পড়তে শুরু করলো। নিজের দিকে তাকানোর পযর্ন্ত সময় ছিল না। সকালে দুটো ব্যাচ পড়িয়ে তার মধ্যে ঘরের সব কাজ শেষ করে রান্না করে স্নান খাওয়া করে স্কুল। একেকদিন খাওয়ার ও সময় পেতো না। তারপর এসে আবার তিনটে ব্যাচ পড়ানো তারমধ্যে ঘরের সব কাজ করতো। নিজের জমানো এখন আর কিছুই নেই তৃষার শুধু এইটুকু বিশ্বাস ছিল খারাপ সময় যেমন এসেছে এর পর ভালো সময় ও আসবে। তৃষার বিশ্বাস ফলে গেলো অহনের বিজনেস দাড়িয়ে গেলো ভালো মতো। আজ অহনের অফিস থেকে বিশাল পার্টি রাখা হয়েছে এবার তৃষাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে অহন। অহন যখন ওর বিজনেসের দাড়ানোর কথা ওর স্ট্রাগেলের কথা বলতে শুরু করলো একবারের জন্য তৃষার নাম নিল না। বাড়ি ফিরে তৃষা অনেক কষ্ট থেকে বললো, "একবার তো আমার নামটা বলতে পারতে অহন আজ এই বিজনেস দাড়ানোর পিছনে আমার অবদান তো কম নেই"। অহনের কথা শুনে তৃষা অবাক অহন বললো, "আমি তো তোমাকে কিছু করতে বলেনি তৃষা যা করেছো তুমি নিজের ইচ্ছাতে করেছো। তুমি তাহলে নিজের নাম কেনার জন্য সব করেছো, করে কখনো কিছু বলো না প্লিজ"। তৃষা সেদিন বুঝে গিয়েছিল নিজের সবকিছু দিয়ে কখনো কারোর কাছে নাম পাবে না এতো কিছু করেও শুনতে হলো সে নিজের ইচ্ছাতে করেছে। তৃষা শুধু একটাই কথা বললো অহনকে, "যা করেছি নিজের ইচ্ছাতেই করেছি তুমি কিছু বলোনি কিন্তু ভালোবাসার মানুষের কাছে যদি একটু প্রশংসা পায় আর কিছু চাওয়া থাকে না। আসলে তুমি সেটা বুঝবে না যদি কাউকে মন থেকে ভালোবাসতে ঠিকই বুঝতে পারতে"।


#সমাপ্ত