নিজস্ব সংবাদদাতা তমলুক: করোনার আতঙ্কও দমিয়ে রাখতে পারল না। অনলাইনেই খড়গপুর আইআইটি থেকে পড়াশোনা করে বিশ্বজোড়া মন্দাবাজারেও কোটি টাকার প্যাকেজের সফটওয়্যার ডেভলপারের চাকরি হাতের মুঠোয়। পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলের এই অভা…
নিজস্ব সংবাদদাতা তমলুক: করোনার আতঙ্কও দমিয়ে রাখতে পারল না। অনলাইনেই খড়গপুর আইআইটি থেকে পড়াশোনা করে বিশ্বজোড়া মন্দাবাজারেও কোটি টাকার প্যাকেজের সফটওয়্যার ডেভলপারের চাকরি হাতের মুঠোয়। পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলের এই অভাবনীয় সাফল্যের কাহিনীতে যেন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বাসিত আত্মীয়-পরিজন থেকে শিক্ষানুরাগীরা।
বছর বাইসের শেখ ইজাজুর রহমান। বাবা শেখ ওয়াসেফউর রহমান। পাঁশকুড়ার ভোগপুরের চাকদহ এলাকার বাসিন্দা। পাশের গ্রামের কামিনাচক হরিচরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইজাজুর প্রথম থেকেই পড়াশোনাতে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। মা গৃহকর্তী আনোয়ারা বেগম।গ্রামের স্কুলেই বাংলা মিডিয়ামে অষ্টম শ্রেণীর পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে শহরের স্কুলে আসে ইজাজুর। তমলুকের হ্যামিল্টন হাইস্কুল এ নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত চার বছর পড়াশোনার চলে। তবে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে সেভাবে রেঙ্ক না হলেও তমলুকের একটি রাইজার ক্লাসেস নামে আইআইটি প্রবেশিকার জন্য প্রশিক্ষণ চালিয়ে যায়। একটু একটু করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এ ১০৪ রেঙ্ক হয়। সুযোগ হয় যাদবপুরে। কিশোর বৈজ্ঞানিক প্রস্থান যোজনা (kVPY) মাধ্যমে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স ব্যাঙ্গালোরে মাস্টার অব সায়েন্স পড়ার জন্য। কিন্তু সে সমস্ত ছেড়ে ভর্তি হয় নিজের পছন্দের খড়গপুর আইআইটিতে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিটেক m-tech ডুয়েল ডিগ্রী কোর্স এ। পাঁচ বছরের এই কোর্স এর আগামী এপ্রিল মাসেই সমাপ্তি হতে চলেছে। কিন্তু তার আগেই চলতি মাসের শুরুতে অনলাইন ক্যাম্পাসিং এ উঠে আসে অভাবনীয় সাফল্য। মোটা টাকার অফার করে ডাক আসে গুগোল তাইওয়ান থেকে। কিন্তু সেসব ছেড়ে অবশেষে ইজাজুর সায় দেয় দিল্লির গুরগাঁওতে গ্লাভিটন রিসার্চ' ক্যাপিটাল নামে একটি সংস্থার সফটওয়্যার ডেভলপার পদে চাকরিতে। বার্ষিক বেতন প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই গ্রামের ছেলের এই সাফল্যের খবরে অনেকটাই উৎসাহিত হয়ে পড়েন আত্মীয়-পরিজন থেকে শুরু করে শিক্ষানুরাগীরা। করোনা পরিস্থিতির মাঝেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ছেলের এই কৃতিত্বের খবর সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার বিকেলেই আইআইটি খড়গপুর এর সাময়িক কিছু কাজ মিটিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে ইজাজুর। সাফল্যের এই কাহিনী জানাজানি হতেই বাড়িতে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজনদের। তবে সকলে খুশিতে ডগোমগো হলেও ইজাজুল কিন্তু অনেকটাই প্রচার বিমুখ। তার কথায়, করোনার আতঙ্ক থাকলেও অনলাইন ক্লাসে নিজের সেরাটা দিতে পেরেছি। আর তাতেই এই সাফল্য এসেছে। বাবা শেখ ওয়াসেফউর রহমান বলেন, ও ভাল কিছু করবে জানতাম। কিন্তু এতটা ভালো হবে সেটা আশা করিনি। তমলুক হ্যামিলটন হাইস্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক তথা কাকু শেখ মিজানুর রহমান বলেন, ও ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তবে বেঙ্গলি মিডিয়ামে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করে যে এমন সাফল্য এসেছে সেটা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত।