Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#ক্ষমা#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
টিনার বাঁ হাতে মনিবন্ধের কাছে বেশ কয়েকটা কাটা দাগ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো একসময় বারবার ব্লেড চলে গেছে ঐ স্থানের ওপর দিয়ে। অর্ক অনেকক্ষণ থেকেই লক্ষ্য করছিল টিনার ফর্সা হাতের ওপর লম্বা লম্বা সাদা সাদা …

 


#ক্ষমা

#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য


টিনার বাঁ হাতে মনিবন্ধের কাছে বেশ কয়েকটা কাটা দাগ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো একসময় বারবার ব্লেড চলে গেছে ঐ স্থানের ওপর দিয়ে। অর্ক অনেকক্ষণ থেকেই লক্ষ্য করছিল টিনার ফর্সা হাতের ওপর লম্বা লম্বা সাদা সাদা ঐ দাগগুলো। নিজের বিয়ের জন্য বেশ কয়েক জায়গায় মেয়ে দেখে বেড়িয়েছে সে। কিন্তু তার খুঁতখুঁতে ভাবটাই কাল হয়েছে সব স্থানে।


আজ বরং একটু উল্টো। এতক্ষণ আলাপচারিতার পর মনে মনে সে একপ্রকার ভেবেই নিয়েছে, টিনাই হতে পারে তার যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী। 

-- আমরা কি ছাদে গিয়ে একটু নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিতে পারি? অর্ক ছাদের দিকে তাকিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় কথাগুলো। মনে মনে ভাবে, এতো জন আছে, কেউ একজন ক্যাচ করলেই হলো।


যেমন ভাবা তেমন কাজ। কথাগুলো ছাদে গিয়ে স্পর্শ করার আগেই, সন্ধ্যাদেবী(টিনার মা) লাফিয়ে ক্যাচ করলেন -- নিশ্চয় বলবে বাবা! যা মা, অর্ককে ছাদে নিয়ে যা।


টিনা অর্ককে নিয়ে ছাদে চলে যায়। গোধূলির আলোয় টিনাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু অর্ক-র নজর টিনার হাতের ঐ দাগগুলোর দিকেই। টিনা বুঝতে পেরে কথার ফাঁকে দাগগুলো ঢাকার চেষ্টা করতে থাকে। অর্ক বেশীক্ষণ নিজেকে আটকাতে পারে না। সে প্রশ্ন করে -- আচ্ছা! আপনার হাতের ঐ দাগগুলো.....

 

প্রশ্ন শেষ হ‌ওয়ার পূর্বেই টিনা মৃদূ হেসে জবাব দেয় -- এই প্রশ্নটার‌ই অপেক্ষায় ছিলাম। বুঝতেই পারছিলাম, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ব্যাপারটা আপনার কাছে ক্লিয়ার হচ্ছে, ততক্ষণ আমি বা আমার কোনো কথা আপনার মন স্পর্শ করতে পারবে না।


হেসে ওঠে অর্ক -- না-না- সেরকম কোনো ব্যাপার না। জাষ্ট কিউরিসিটি।


-- ব্লেডের দাগ। এইচ এসের রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল, মেনে নিতে পারিনি। গম্ভীর মুখে জবাব দেয় টিনা। সে যেন আজ‌ও মেনে নিতে পারেনি ঐ রেজাল্ট।


-- নট একজ্যাক্টলি, তবে আমি এরকমই কিছু একটা আন্দাজ করেছিলাম। কিছু মনে করবেন না, আপনার অভিধানে 'ক্ষমা' বলে কোনো শব্দ আছে বলে আমার মনে হয় না। অর্ক একগাল হাসি নিয়ে টিনার দিকে তাকায়।


-- ঠিক তা নয়। আমি সবাই কে ক্ষমা করে দিতে পারি, শুধু নিজেকে ছাড়া। এভাবে হাসছেন কেন? আমি খুব একটা বোকামো করেছি বলে মনে হচ্ছে, আর এ জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না, এই তো? টিনার মুখ লাল হয়ে যায়।


-- টিনা, আপনার ভেতরটা এখনো বাচ্চার মতোই রয়ে গেছে। আপনি বোধহয় জানেন না, যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না, সে দুনিয়ার কাউকে ক্ষমা করতে পারে না। 'ক্ষমা' একটা পরম গুণ। যেটা প্র্যাক্টিস করতে হয়। আর সেই প্র্যাক্টিসটা শুরু করতে হয় নিজেকে দিয়েই।

যাই হোক, কোনো ব্যাপার না। বিয়ের পর এটা ঠিক প্র্যাক্টিস হয়ে যাবে। কারণ আমি প্রচুর ভুলভাল কাজ করি। বিয়ের দিনটা তাহলে আজ‌ই ঠিক করে ফেলি? ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে টিনার দিকে আড় চোখে তাকায় অর্ক।


টিনা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অর্কর দিকে -- সত্যি! জীবনটা যে এত সহজ, আগে মনে হয়নি কোনো দিন।