Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন🕳️ বিভাগ - অণুগল্প🕳️ শিরোনাম - দাম্পত্যপ্রেম  🕳️ কলমে - গৌতম তরফদার 🕳️ তারিখ - ১১.১২.২০২১ 
        আজ সকাল থেকেই মেজাজ সপ্তমে  হৈমন্তিকার। সকালবেলাতেই ছেলে-মেয়েকে সামান্য কারণেই গালিগালাজ ও কানমলা দিয়েছে। বর…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

🕳️ বিভাগ - অণুগল্প

🕳️ শিরোনাম - দাম্পত্যপ্রেম  

🕳️ কলমে - গৌতম তরফদার 

🕳️ তারিখ - ১১.১২.২০২১ 


        আজ সকাল থেকেই মেজাজ সপ্তমে  হৈমন্তিকার। সকালবেলাতেই ছেলে-মেয়েকে সামান্য কারণেই গালিগালাজ ও কানমলা দিয়েছে। বর প্রাণেশকে অকারণে কটুক্তি করেছে সংসারের দিকে ঠিকমতো নজর না দেবার কথা বলে। কিছুতেই স্থীর থাকতে পারছে না হৈমন্তিকা। ঠিক কী জন্য মনে এত চঞ্চলতা, এত মনখারাপ!  ঠাহর করতে পারছে না। 


     অনেক চিন্তা করে তিনটা কারণ সামনে এল। প্রথমে মনে হল গতকাল প্রাণেশের কাছে সবসময় ব্যবহার করার জন্য একটা সোনার চেন চেয়েছিল সামনের ধনতেরাস্ উৎসব উপলক্ষে। সোনার প্রতি অসম্ভব দুর্বলতা হৈমন্তিকার। প্রাণেশ এড়িয়ে গেছে ছেলে-মেয়ের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনার অতিরিক্ত খরচা আর নিজের যৎসামান্য আয় দেখিয়ে। দ্বিতীয়টা হল গতকাল চার প্রতিবেশিনীর সাথে গল্পগুজব করার নির্যাস। সবাই তার বরের প্রশংসা করেছে বিভিন্ন ভাবে। কেউ বলেছে তার বর এবার নিজেই সোনার হার উপহার দেবে তার জন্মদিন উপলক্ষে। কেউ বলেছে তার স্বামী বছরে দুই-তিনবার নিজের উদ্যোগেই বেড়াতে নিয়ে যায়। এবার ভুটান নিয়ে যাবে পূজার পরে। অন্যজন বলেছে তার বর নাকি তাকে চোখে হারায়। কিছু চাওয়ার আগেই অনেককিছু পেয়ে যায়। অথচ প্রাণেশ! কোনোকিছুই যে মেলে না অন্যদের বরের সাথে। 


        তৃতীয় কারণ হৈমন্তিকার প্রিয় বান্ধবীর বিবাহবিচ্ছেদের খবর। গতকালই পেয়েছে। ওর বর নাকি চরিত্রহীন। অফিসের কোন মেয়ের সাথে অতিরিক্ত ফষ্টিনষ্টি। প্রায় প্রতিদিন দেরি করে বাড়ি ফেরা, মাঝে মাঝেই অফিস টুরের নামে বাইরে চলে যাওয়া...... এসবই নাকি বিচ্ছেদের মূল কারণ। প্রাণেশও তো রোজ রাত করে অফিস থেকে ফেরে। মাঝেমধ্যে অফিসের কাজে বাইরেও যায়। কোনোদিন তো হৈমন্তিকাকে সাথে যাবার কথা বলে না! তবে কী হৈমন্তিকার মনে সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে! 


       প্রাণেশ অফিসে, ছেলে-মেয়ে স্কুলে। আজেবাজে চিন্তায় মাথা চিনচিন করছে। একেলা ঘরে বিছানায় শুয়েও ঘুম আসছে না। 


      হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। ভরা দুপুরে আবার কে এল ভেবে জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে প্রাণেশের সহকর্মী বিপ্লব ঘোষ।  অল্পবয়সী ছেলে। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসে প্রাণেশের কাছে। সাথে একটা মেয়ে। সেও অল্পবয়সী।  


      দরজা খুলে ওদের আপ্যায়ন করে ঘরে বসাল। বিপ্লব হাতজোড় করে নমস্কার করে কার্ড দিয়ে হৈমন্তিকাকে বলল," আগামী ১২ই পৌষ আমাদের বিয়ে।" 


         মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল," আমরা দু'জনেই প্রাণেশদার সাথে চাকরি করি। দাদা আমাদের প্রিয় মানুষ। বিয়ে ঠিক হতেই আমাকে বলেছে স্ত্রীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিও। ওর অনেক ইচ্ছে, আবদার বা দাবি সময়মত মেটাতে পারবে না জানি, কিন্ত ওর রাগ-অভিমানকে অবহেলা করো না। সময়-সুযোগ পেলে পূরণ করার চেষ্টা কোরো। " 


          মেয়েটি মুখ খুলল," প্রাণেশদা শুধু আমাদের সহকর্মীই নয়, আমার পূজনীয় দাদা। আমাদের বিয়ের প্রস্তাবে ঘোর আপত্তি ছিল বাবা-মায়ের জাতিগত বৈষম্যের কারণে। প্রানেশদাই কথা বলে রাজি করিয়েছে। দাদার ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না।" 


         হঠাৎ মন ভালো হয়ে গেল হৈমন্তিকার। মনের অবুঝ বোঝা নেমেও গেল অগোচরে। 


        সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরল প্রাণেশ। এসেই হৈমন্তিকাকে হাঁকডাক, " কই গো, কোথায় গেলে? এদিকে এসো। " 


        হৈমন্তিকা লজ্জা পেল সকালের অকারণ দুর্ব্যবহারের জন্য। 


        " জানো, আজ পে-কমিশনের সুপারিশে বাড়তি বেতনের বকেয়া হিসাবে এক লাখ নব্বই হাজার টাকা পেয়েছি। আমরা পূজার পরেই আন্দামান বেড়াতে যাব। ছেলে-মেয়ের তো ছুটি থাকবে। কয়েকজন সহকর্মীর সাথে বসে ঠিক করেছি। চল, আজ তোমার সোনার চেন কিনতে যাব।  রেডি হও গো।" 


         দু'চোখ জলে ভরে গেল হৈমন্তিকার।

জানে না সেটা খুশির নাকি অনুশোচনার! 


_______// ® বুদ্ধুরাম