Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন :-
অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করতাম সুভাষ ফিরে আসবে। দেশ পাল্টে যাবে। সবাই শুধরে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ কোথাও কোনো দেয়ালে বড়ো বড়ো করে সে লেখাও দেখতাম-""নেতাজি ফিরে আসবে""। কারা লিখতো কে জা…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন :-


অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করতাম সুভাষ ফিরে আসবে। দেশ পাল্টে যাবে। সবাই শুধরে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। 

হঠাৎ কোথাও কোনো দেয়ালে বড়ো বড়ো করে সে লেখাও দেখতাম-""নেতাজি ফিরে আসবে""। কারা লিখতো কে জানে। তবে কী যে এক স্বস্তি আসতো! ভাবতাম আড়াল থেকে তিনি সব দেখছেন। সব হিসেবে রাখছেন। একদিন বিচার হবে। 


সালটা একাত্তর কি বাহাত্তর হবে। সারা রাজ্যে তখন ভীষণ এক রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বাবার চাকরি সূত্রে আমরা তখন দুর্গাপুর থাকি। ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি আমি। দেখেছিলাম সে অস্থিরতার ভয়ানক চেহারা। রোজই কোনো রক্তপাত বা খুনের ঘটনা ঘটতো। একদিন স্কুলে ক্লাস চলছে। হঠাৎ ভীষণ শব্দে সবাই চমকে গেলাম। আমরা বন্দুকের শব্দ চিনে গেছিলাম। খুব কাছেই কোথাও গুলি চলেছে বুঝলাম। মাস্টারমশাই দৌড়ে ক্লাসের দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমরা ক্লাস ঘরের এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এভাবে কিছুক্ষন থাকার পর দরজায় কড়া নেড়ে পিয়ন এসে ছুটির নোটিস দিয়ে গেলো। মাস্টারমশাই বললেন তোমরা সবাই বাড়ি চলে যাও, কোথাও দাঁড়াবে না। কিন্তু দাঁড়িয়ে যেতেই হলো। স্কুল পাঁচিলের ওপারেই সে খুন। লাস দেখে বুকটা ধক করে উঠলো। খুব চেনা ছেলে। পার্টি মিছিলে বহুবার দেখেছি। ছবি আঁকতো, আঁকার স্কুল চালাতো বাড়িতে। কিছু দিন আগেই বিয়ে করেছে। তার বৌ সে দেহের উপুড় হুমড়ি খেয়ে আছে। পুলিশ তাকে সরাবার চেষ্টা করছে। অমন করুন কান্না আমি আর কখনো শুনিনি। জীবনের অর্থ বদলে দেয়। 


তারপর যা হয়ে থাকে, নেতারা এসে এসে সমবেদনা জানাতে গেলো।..কিন্তু সে বৌ দরজা খোলেনি কারোর ডাকেই। তারপর শুনলাম বাড়িতে তালা দিয়ে সে বৌ কোথায় চলে গেছে। বাড়ির দেয়ালে স্বামীর আঁকার সব রং দিয়ে সে এক চিঠি লিখে গেছে, তার দুটি লাইন আজও মনে আছে ""নেতাজি তুমি কবে আসবে?..এর বিচার কোরো তুমি""।


এলাকায় বেশ আলোড়ন ফেলেছিলো এই চিঠি। দূর দূর থেকে মানুষ আসতো ও চিঠি পড়তে। চিঠির পাশে তারাও ইটের টুকরো দিয়ে লিখে যেতো, "ফিরে এসো এবার নেতাজি..ফিরে এসো বোন"।

স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সে ছবি দিয়ে খবর হয়েছিলো অনেক বার।

সেদিন মনে হয়েছিল এ করুন চিঠি পড়ে তিনি নিশ্চই না এসে আর পারবেন না। শুধু আমি নয়, এলাকার সকলেই তা ভাবতো।

..না তিনি আসেন নি। তবে অপেক্ষারও শেষ ছিলো না।


ক্লাসে একদিন স্বাধীনতা বিপ্লবেরই কোনো কোনো একটি অধ্যায় নিয়ে পড়া হচ্ছিলো। ঠিক মনে নেই কোন ঘটনার উপর ছিলো। যাইহোক পড়াতে পড়াতে স্যার হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ধরো দেশ এখনও পরাধীন। তো, তোমরা কে কে স্বদেশী দলে নাম লেখাতে? দেশের জন্য জীবন দিতেও পিছুপা হতে না?"

সকলেই হাত তুললাম। স্যার, সবার দিকে তাকাতে তাকতে, আমার ক্লাস মেট বিভুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, "আরে বিভু! তুইও জীবন দিতে রাজি?" বিভু খুব ভীতু টাইপের ছিলো। ক্লাসে একবার এক ইঁদুর ওর গায়ে উঠে যাওয়াতে অজ্ঞান হয়ে গেছিলো। এ কথা স্কুলের সকলেই জানে। স্যারের সাথে আমরাও খুব হাসছিলাম। 

বিভু মাথা নিচু করে বললো, "হ্যাঁ, আমি ভীতু। কিন্তু যদি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস এসে বলে জীবন দিতে..আমি দিয়ে দেবো।"

সারা ক্লাস চুপ হয়ে গেলো। স্যারও চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলেন বিভুর দিকে। সেদিন আমি বিভুর আগুন চোখ দেখেছিলাম।


না, তিনি আসেন নি। তার মতোও কেউ আর আসেনি। আসলে অনেক বিভুও জেগে যেতো নিশ্চই।

                           -- অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়