Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তমলুকে হিউ এন সাঙ এর মূর্তি স্থাপন অনুষ্ঠান

দেশমানুষডেস্ক, জয়দীপ পন্ডা :   তাম্রলিপ্ত অধুনা তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্কর আড়া 14 নম্বর ওয়ার্ডের আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেজ জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী অধ্যাপক ডক্টর সৌমেন কুমার মহাপাত্র উন্মোচন করলেন কিংবদন্তি চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়…

হিউ এন সাং এর মূর্তি উন্মোচন

মন্ত্রী সোমেন মহাপাত্র



দেশমানুষডেস্ক, জয়দীপ পন্ডা : 
 তাম্রলিপ্ত অধুনা তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্কর আড়া 14 নম্বর ওয়ার্ডের আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেজ জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী অধ্যাপক ডক্টর সৌমেন কুমার মহাপাত্র উন্মোচন করলেন কিংবদন্তি চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর তাম্রলিপ্ত রাজ্যে শুভ আগমন উপলক্ষে পূর্নবয়ব মূর্তি এবং সেইসঙ্গে উন্মোচিত হলো তমলুকের স্টিমার ঘাট এর ঐতিহাসিক স্মারক।


অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তাম্রলিপ্ত পৌরসভার মাননীয় পৌর প্রশাসক ডক্টর দীপেন্দ্র নারায়ন রায়, মুখ্য সহ পৌর প্রশাসক শ্রী চিত্তরঞ্জন মাইতি, প্রফেসর ব্রহ্মময় নন্দ, তমলুক কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন, ইতিহাস গবেষক শ্রদ্ধেয় রাজর্ষি মহাপাত্র, গবেষক শ্রদ্ধেয় জয়দেব মালাকার, তরুণ ইতিহাস গবেষক জয়দীপ পান্ডা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের পৌরসভার উদ্যোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

 প্রসঙ্গত প্রাচীন তাম্রলিপ্ত বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও মহামতি সম্রাট অশোকের সময় খ্রিস্টপূর্ব 273 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 232 যে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে তা অনুমান করা বোধ হয় ভুল হবেনা। চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাং এর বিবরণ থেকে জানা যায় তিনি পুন্ড্রবর্ধন ছাড়া প্রাচীন বাংলার অন্যান্য জনপদে যেমন তাম্রলিপ্ত কর্ণসুবর্ণ সমতটে মৌর্য সম্রাট অশোকের তৈরি বৌদ্ধ বিহার দেখেছিলেন বা লোকমুখে তাদের বিবরণ শুনে ছিলেন ।পালি ভাষায় লেখা সিংহলের প্রাচীন ইতিবৃত্ত মহাবংশ পুষ্পক থেকে জানা যায় তাম্রলিপ্ত জনপদটি সম্ভবত অশোকের সাম্রাজ্য ভুক্ত ছিল। একটি কাহিনী থেকে জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সিংহলের অধিপতি পান্ডুকাভয় এর পৌত্র দেবানজ প্রিয় অথবা দেবানং প্রিয়  তিসসের রাজত্বকালে ভারত সম্রাট অশোক তাম্রলিপ্তের প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য প্রেরণ করেছিলেন মহন্দ্র ও সংহমিত্রাকে। তাদের সঙ্গে ছিল পবিত্র বোধিদ্রুম এর চারা। সম্রাট স্বয়ং এই ধর্মীয় প্রচার যাত্রার সময় তাম্রলিপ্ত উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। মহামতি অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের ফলে বৌদ্ধধর্ম যে বাংলার অন্যান্য জনপদের নেয় তাম্রলিপ্ত রাজ্যে বিস্তার লাভ করেছিল তা অনুমান করা বোধ হয় ভুল হবেনা। গুপ্ত যুগ থেকে চৈনিক পরিব্রাজক দের ভ্রমণ বৃত্তান্ত এর মধ্য দিয়ে তাম্রলিপ্তি বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা জানা যায়। পঞ্চম শতকের প্রথম দিকে চৈনিক বৌদ্ধ শ্রমন ফা-হিয়েন চম্পা থেকে দক্ষিণ মুখে 50 যোজন পথ অতিক্রম করে গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত তাম্রলিপ্ত বন্দর শহরে আসেন এবং এখানে দুবছর অবস্থান করেন। তাম্রলিপ্ত অবস্থিত বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন উন্নত মানের পাঠাগার তাকে এমনি মুগ্ধ করে যে তিনি দু'বছর এখানে একটি বৌদ্ধ মঠে অবস্থান করে বৌদ্ধ সূত্র ও বৌদ্ধ প্রতিমা চিত্র নকল করেন। ফা হিয়েন এর সময়ে তাম্রলিপ্ত যে বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্ট সমৃদ্ধি ছিল তা তার বিবরণ থেকে জানা যায় তার সময়ে তাম্রলিপ্তি অসংখ্য বিকশিত চব্বিশটি বৌদ্ধ বিহার ছিল এমনকি তিনি লিখেছেন সমগ্র দেশটি ছিল বৌদ্ধপ্রধান। আনুমানিক 639 অথবা 40 খ্রিস্টাব্দে চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙ বাংলাদেশে আসেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রগুলি অনুসন্ধানের জন্য বাংলার বিভিন্ন জনপদ ঘুরে বেড়ান। তার বিবরণ থেকে জানা যায় তিনি পুন্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, তাম্রলিপ্ত ও সমতটে গিয়েছিলেন এবং ঐ সকল জনপদগুলোতে প্রচলিত ধর্মমত সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত লিখেছেন। তার লেখা থেকে জানা যায় পুন্ড্রবর্ধন হীনযান ও মহাযান উভয় পন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষু, কর্ণসুবর্ণ সম্মতিও শাখাবোলম্বি
বৌদ্ধ ভিক্ষু, তাম্রলিপ্তের সর্বাস্তিবাদ এ বিশ্বাসী শ্রমণ এবং সমতটে হীনজানপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষু বাস করতেন। 


তার বিবরণ থেকে জানা যায় ওই সময় তাম্রলিপ্তি মাত্র 10 টি বিহার ছিল এবং ওই বিহার গুলিতে মোট প্রায় 1000 স্রবন বাস করতেন। এছাড়া তিনি তাম্রলিপ্ত রাজ্যে সম্রাট অশোক নির্মিত একটি বৌদ্ধ স্তুপ এর নিকট চারটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপিত ছিল তাও লিপিবদ্ধ করে গেছেন। শুধু হিউ এন সাং নন 673 খ্রিস্টাব্দে চৈনিক পরিব্রাজক ইৎসিং তাম্রলিপ্ত এসেছিলেন এবং তিনি সেই সময়ে 5-6 টি বৌদ্ধ বিহার এখানে দেখেছিলেন।
 সুতরাং তাম্রলিপ্ত যে উচ্চমানের বৌদ্ধ শিক্ষার কেন্দ্র ছিল তা চৈনিক পরিব্রাজক দের বারবার আকর্ষণের অন্যতম কারণ। ইৎসিং এখানে অবস্থানকালে চৈনিক শ্রমন তা-চেন-তেন এর দর্শন পান।

 ইৎসিং এখানে কিছুকাল অবস্থান করে সংস্কৃত শব্দ বিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং "নাগার্জুন বোধিসত্ত্ব  সু হৃ লেখ " উল্লেখ নামে একটি সংস্কৃত পুস্তক চৈনিক ভাষায় অনুবাদ করেন । তার সময়ে এই বরাহ ও বিহারে রাহুল মিত্র নামে 30 বছরের বয়স্ক ভিক্ষু বাস করতেন। তার অসীম জ্ঞান ও অনিন্দনীয় চরিত্র যে ইদ সিং কে মুগ্ধ করেছিল তার পরিচয় তিনি দিতে ভোলেননি। প্রাচীনকালে তাম্রলিপ্ত বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করেছিল তা চৈনিক পরিব্রাজক দেশ ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।   অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে একদিকে তাম্রলিপ্ত বন্দর এর পতন ঘটে অপরদিকে হুগলি রূপনারায়ন গতিপথ পরিবর্তন ও সমুদ্রের নাব্যতা কমে যাওয়ার জন্য তাম্রলিপ্ত নামটি বিবর্তনের 23 টি অধ্যায় অতিক্রম করে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় থেকে তমলুক নামে পরিচিতি লাভ করে।


 ব্রিটিশ শাসিত তমলুকের নগরায়নের কালে তমলুক থেকে রাজ্যের মহানগরী কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের জন্য তমলুকের রূপনারায়ণের তীরবর্তী স্টিমারঘাট গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে জল পরিবহনের জন্য দুটি স্টিমার স্টেশন ও টিকিট ঘর। জলপথে পরিবহনের জন্য গভর্মেন্ট কোম্পানি ও ঘরোয়া কোম্পানীর জল পরিবহন সংস্থা রূপনারায়ণ নদ ও হুগলি নদীতে স্টিমার চলাচলের ব্যবস্থা করে। গভমেন্ট কোম্পানির স্টিমারের নাম ছিল ডগলাস, ফক্স ,লিংক। হরমিলার কোম্পানির স্টিমারের নামছিল ঊর্বশী ,কিন্নরী, ষোড়শী। এই সকল স্টিমারের মধ্যে কয়েকটি যেত 24 পরগনা ছুঁয়ে যাওয়া হাওড়া ও কলকাতার পথে আর্মেনিয়ান ঘাট এ। কয়েকটি যেত ঘাটালের বাক্সি হয়ে হুগলির গড় ঘাট পর্যন্ত। সড়ক ও রেল পথের উন্নয়ন ও রূপনারায়ণের নাব্যতা কমে যাওয়ায় তমলুক থেকে স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বর্তমানে তমলুকের ফেরিঘাট থেকে কয়েকটি নৌকা হাওড়া জেলার ঝুমঝুমি, ডি হি মোগুল ঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করে।