Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন "ভ্রুণহত্যা"লেখিকা :সোহিনী ঘোষরূপায়নে : নির্মলেন্দু নন্দী২২/০২/২০২২
কুমু তখন ক্লাস ৯ কোচিং পড়া শুরু। এতদিন বাড়িতে দিদিমনি আসত। এবার কোচিং গিয়ে পড়া শুরু। তিনটে কোচিংয়ে পড়া শুরু। অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন 

"ভ্রুণহত্যা"

লেখিকা :সোহিনী ঘোষ

রূপায়নে : নির্মলেন্দু নন্দী

২২/০২/২০২২


কুমু তখন ক্লাস ৯ কোচিং পড়া শুরু। এতদিন বাড়িতে দিদিমনি আসত। এবার কোচিং গিয়ে পড়া শুরু। তিনটে কোচিংয়ে পড়া শুরু। অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। এতদিন মেয়েদের স্কুলে পড়েছে এখন কোচিংয়ে ছেলে মেয়ে একসাথে। প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি হত কুমুর। ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হয়ে যায়। অনেক ছেলে বন্ধু হয়। নিয়মমাফিক পড়া করতে হয় নাহলে ছেলেদের সামনে লজ্জায় পড়তে হয়। কুমু একটু কম কথা বলে শান্ত প্রকৃতির। এরই মধ্যে একটি ছেলের সাথে বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়।


কুমুর জন্য অপেক্ষা করে। একসাথে যায় কোচিংয়ে ফেরেও একসাথে। কোন কোন দিন রনি এগিয়ে দিয়ে যায় কুমুকে। বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। একটু বেশিই ভাল লাগে দু-জনের দু-জনকে। অন্য বন্ধুরা তাদের ভ্যাঙায়। বলে কিরে তোরা প্রেম করছিস? এটা প্রেমে পড়ার বয়স।


প্রেমে পড়েছে কিনা তা জানা নেই কুমু-রনির। তবে একদিন দেখা বা কথা না হলে বেশ খারাপ লাগে দুজনেরই। এভাবেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ চলতে থাকে। দুজনেই আজ যুবক যুবতী। কলেজে আরো নতুন বন্ধু হয়। কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব নজরকাড়া।


এবার হয়তো তারা অনুভব করছে যে তারা প্রেমে পড়েছে একে অপরের। কলেজ জীবন পার করে প্রেম করে। প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। কেউ কাউকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারে না।


দুজনেই মাস্টার্স করে। স্কুলে শিক্ষকতা করবে এটাই তাদের লক্ষ্য। স্বপ্ন দেখে তারা। তাদের সংসার হবে নতুন বাড়ি করবে মনমতো সাজাবে।


যৌবনের দোরগোড়ায় পা রেখেছে কুমু-রনি। কুমুর মা বাবা চাকরি করে। সেই সুবাদে বাড়ি ফাঁকাই থাকে। মাঝে মাঝে রনি আসে আগেও আসত।


কিন্তু আজ তারা বড় হয়েছে। অন্যরকম আকর্ষণ বোধ করে। সুযোগ এসেছে একান্তে নিজেদেরকে ভালবাসার। প্রায়ই তারা মিলিত হয়। কুমু হঠাৎ করেই একদিন অসুস্থ বোধ করে। আবার ঠিক হয়ে যায়। সেভাবে বুঝতে পারে না। সাধারণ শরীর খারাপ হতেই পারে। মায়ের চোখ এড়ায় না। মা চেপে ধরে কুমুকে। কুমু স্বীকার করে। কুমুর মা ডাক্তার দেখিয়ে কুমুকে সুস্থ করতে চেষ্টা করে। অবিবাহিতা মেয়ে গর্ভবতী হয়েছে সমাজ মেনে নেবে না। কি বলবে সমাজ?কি পরিচয়ে বড় হবে। গর্ভপাত করানো হয়। কারো বাড়ির লোক এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবে না।


এভাবে দুবার গর্ভপাত ঘটাতে বাদ্য হয় কুমু। রনি বিয়ে করতে রাজি হয় না কারণ রনি বেকার। কি খাওয়াবে কিভাবে চালাবে তাদের জীবন। তাদের দেখা স্বপ্ন ভেঙে যায়।


কুমুর মা বাবা এবার মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মেয়েকে যে করেই হোক পাত্রস্থ করতে হবে। বিয়ে ঠিক হয় কুমুর। বনেদি পরিবার খুবই রক্ষণশীল পরিবার। বিয়ের পর নানা নিয়ম মেনে চলতে হয় কুমুকে। স্বাধীনতা প্রায় নেই বললেই চলে। কুমুর বর উচ্চপদস্থ কর্মচারী। বেশ বয়স্ক রাশভারী। ভাল চাকরি দেখে কুমুর বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে দোজবরে। আগের বৌকে নাকি ডিভোর্স দিয়েছে পুত্রসন্তান জন্ম দিতে পারেনি বলে। মাসে মাসে খোরপোষ দেয়।


কিছুদিন পর কুমু গর্ভবতী হয়। নানা নিয়মের বেড়াজাল। নিয়ম মানতে হয়। কিছু মাস পর আলট্রা সোনোগ্রাফি তে জানতে পারে গর্ভে যে রয়েছে সে কন্যা সন্তান। নিয়ম না মেনে অনেক কষ্টে তারা জানতে পারে গর্ভের সন্তান কন্যা।


যে কারণে আগের স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে সেই একই ব্যাপার। কিছুতেই কুমুর স্বামী এই সন্তান রাখতে রাজি নয়। কুমু আজ মা হতে চলেছে আজ সে বিবাহিতা। অবিবাহিতা অবস্থায় সে ভ্রুণ হত্যা করেছে সমাজের ভয়ে।, লোকলজ্জার ভয়ে। কুমারী মা সমাজের চোখে নিন্দিত। আজ সে বিবাহিতা হয়েও সন্তান জন্ম দিতে পারছে না। আবারও এই ভ্রুণ কে হত্যা করবে বাড়ির মানুষ। শুধুমাত্র কন্যা সন্তান গর্ভে বলে।


সমাজ সংসার কবে শোধরাবে কবে মেয়েকে ভালবাসবে বরণ করবে? মেয়েও তো চাই। মা তো শ্রেষ্ঠ উপহার ভগবানের দেওয়া। এই মা ই যদি না থাকে পৃথিবী এগোবে কি করে? কন্যা সন্তান জন্ম দেবেই কুমু। সে আর ভ্রুণ হত্যা করবে না। যদি তাকে স্বামী সংসার ছাড়তে হয় তাও সে ভ্রুণ হত্যা করবে না। জন্ম দেবে শিশুর। মানিয়ে নেয় বাড়ির লোকেদের অনেক কষ্টে। সন্তান জন্ম নেয়। সবাই অখুশি। কিন্তু কুমু খুব খুশি। অনেক যুদ্ধ করে সে তার সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেরেছে।