Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

তারিখ--25--3--2022#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন ।
গল্প-- বেড়াজাল ।লেখিকা--শিপ্রা মুখার্জি (মুখোপাধ্যায়)।
পল্লব রা পঁচিশ জন এল আই সি র এজেন্ট এসেছিল 'ডি ও ' র ট্রেনিং নিতে জলপাইগুড়ি ।মাত্র দু টো পোস্ট । শেষ অবধি ডি ও ,র পোস্ট টা…

 


তারিখ--25--3--2022

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন ।


গল্প-- বেড়াজাল ।

লেখিকা--শিপ্রা মুখার্জি (মুখোপাধ্যায়)।


পল্লব রা পঁচিশ জন এল আই সি র এজেন্ট এসেছিল 'ডি ও ' র ট্রেনিং নিতে জলপাইগুড়ি ।মাত্র দু টো পোস্ট । শেষ অবধি ডি ও ,র পোস্ট টা জুটলো না ওদের কারো।পল্লব আর কৌশিক নতুন ডেভলপমেন্ট অফিসারের আন্ডারে কাজ করবে ।তাই পল্লব 

ছুটে চলেছে নতুন ডেভলপমেন্ট অফিসারের সাথে দেখা করতে ।

পাঁচটার বাসটা ধরতে ই হবে ।তাই পা চালালো 

পল্লব।এতক্ষণে বাস ঘুমটি থেকে বেরিয়ে গেছে ।

  কুয়াশার চাদরে মোড়া রাস্তা । রাস্তার আলো এখনও জ্বলছে । তবু ও কুয়াশায় পথ দেখাযাচ্ছে না ।

ঐ তো কুয়াশার পর্দা চিরে আসছে বাস। এক টানে শেষ ধোঁয়া টেনে নিয়ে পল্লব সিগারেট টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো রাস্তায় । হোক না লড়ঝড়ে বাস। বাস তো বটেই। বাস টা দাঁড়াতে না দাঁড়াতে পল্লব পা-দানিতে পা রেখে হাতল টা ধরে ফেলল । এত সকালে এতো ভীড় ।পাদানী থেকে সুরঙ্গ কেটে ঢুকতে লাগল পল্লব।

পল্লবের পায়ের গুঁতো খেয়ে হাঁস মুরগি গুলো কঁককঁক,প্যাঁক প্যাঁক করে জানান দিল যে ওরাও 

সে বাসে আছে। কুয়াশার পর্দা চিরে ছুটে চলেছে বাস ,লকড় ঝকড় শব্দ তুলে । যে ভাবে পল্লব ভেতরে 

ঢুকছে তাতে সবার ই অসুবিধা হচ্ছে । কিন্তু এসব 

বাস এ আপত্তি তোলার কেউ নেই । পৌঁছানোটাই 

এদের কাছে বড়ো কথা ।


পল্লব গলা তুলে বলল, --কন্ডাক্টর টিকিট টা।

---কোথায় যাবেন?

---আলিপুরদুয়ার ।একটা--


খুচরো পয়সা সমেত টিকিট টা পকেটে ঢোকাতে 

ঢোকাতে চোখ পড়ল সামনের সীট্ এ। স্বামী স্ত্রী 

বোধহয় নামার তোড়জোড় করছে ।ঠিক বড়শি,

গাঁথা র ঢংয়ে লাফ দিলো পল্লব ।লটারির টাকা 

পাবার মতো আনন্দে বসে পড়লো সীট্ এ।


বসলো ঠিক ই কিন্তু মনটা খচ্ খচ্ করতে লাগল ।

কারণ ওরই পায়ের কাছে জনা তিনেক গুটিশুটি 

বসে ।হিসেব মতো তাদের ই পাওনা এই সীট্।বঞ্চনা 

করার কষ্ট ভুলতে নিজেকেই সান্ত্বনা দিলো পল্লব ।

তিন জন বেশ আরাম করে ই চাদরে মুড়িয়ে বসে 

আছে ।এখানে বসলে ওদের কষ্ট হতো ।

বেশ কিছুক্ষণ পর বাস দাঁড়ালো ।ভোরের বাস তাই 

কয়েক জন ঝোপঝাড়ের দিকে নেমে গেল।একটা 

ছোট বাচ্চা কে হেল্পার নামিয়ে দিলো।নিচ থেকে 

ছেলেটার বাবা ধরে নিলো বাচ্চাকে । ছেলেটাকে 

একটা চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছে ।তার হাত দুটো 

চাদরের ভেতরে ।

চোখ ভার হয়ে এলো পল্লবের ।মা ও এমনই করে 

ওর শিশু কালে একটা চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে ঘাড়ের 

কাছে চাদরের কোনা দুটো গিট্ দিয়ে দিত ।সেই 

চাদরে মায়ের ওম্ থাকতো ।তা এখন কার দামি

পশমী সোয়েটার এ ও থাকে না ।

হেলপার চেঁচিয়ে উঠল, রোক্ কে, ডেরাইভার ।

দূর থেকে হাত দেখাতে দেখাতে এক যাত্রী ছুটে 

আসছে ।বাস ব্রেক্ কষার সাথে সাথে লকড় ঝকড় শব্দ তুলে বাস থেমে গেল ।ধুপ ধাপ করে ওপর 

থেকে কয়েকটা পোঁটলা পড়লো মুরগির খাঁচার

ওপর ।কঁক কঁক করতে লাগল মুরগি গুলো ।মুরগির মালিক রেগে গেল।

--আরে বাবা, হঠাৎ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ো কেন?

আমার মুরগি গুলা গেল গো।

জালের ফাঁক দিয়ে মুরগি গুলো কক্কর ক্কো বলে 

জানান দিলো-----ঠিক আছি আমরা ।

ড্রাইভার বললো-----যার বাইরে যাওয়ার যান ।

এরপর একে বারে ময়নাগুড়ি দাঁড়াবে ।


চোখ বুজলো পল্লব ।আর ঝাঁকি নেই ।সেই ময়না 

গুড়ি আসছে ।অনেক অনেক স্মৃতি নিয়ে ।ভোরের 

আলোয় ছেয়ে যাওয়া মাঠ ।বর্ষা কালে একনাগাড়ে 

বৃষ্টির মধ্যে মাঠে খেলা ।আর ঝড়ের পরে তনিমার

কুল কুড়াতে যাওয়া ।ঘুমিয়ে ই পড়েছিল পল্লব ।ঝাঁকুনি তে জেগে গেল ।"ময়না গুড়ি""ময়না গুড়ি",

বলে চ্যচাচ্ছে কন্ডাক্টর ।চোখ খুলে দেখলো ,ময়না গুড়ির তখন ও দেখা নেই ।


স্মৃতির দুয়ারে পৌঁছে গেল পল্লব । ময়না গুড়ি কথা টা শোনার সাথে সাথে পল্লবের সমস্ত সত্তা টান টান 

হয়ে উঠলো । ময়না গুড়ির এমন ভোরের বিছানা ।মায়ের কোল ঘেঁষে শোয়া । সব ভিড় করছে মনে ।তনিমার সাথে মেলামেশার পর থেকে মায়ের কোল ঘেঁষে শোয়া বন্ধ করেছিল । মা বলতো ।

--বাবুল, আমার কাছে আসস না ক্যান রে?মায়েরে আর দরকার নাই?বাবুল, আমারে আজকাল জড়ায়ে শোষ না কেন?


আবার মায়ের গলা কানে এলো ।---কথা কস না ক্যান? তরে জিগাইতাছি । মায়েরে আর লাগে না?আমারে জড়াইয়া শুইতি।অখন এক হাত জায়গা রাইখ্যা শোস।

পল্লব--কেন?

---বড়ো হইয়া গ্যাছস?বুঝজি । আমার পোলাটা 

বড়ো হইয়া গ্যাছে ।


মনে ভাবে পল্লব, হ্যাঁ মা,তোমার ছেলে সত্যি বড়ো 

হয়ে গ্যাছে । অনেক বড় ,এই দেখো। খুব ভালো আছে তোমার ছেলে চিন্তা করো না ।

--দাদা,কোথায় যাবেন?

পাশের লোকটির কথায়, মায়ের কোল থেকে ছিটকে 

পড়ে বাসে । হ্যাঁ, কোল তো বটেই । বুক দিয়ে আগলে 

রাখতো মা।

চোখ পড়ে লোক টির দিকে । উত্তরের আশায় 

এখন ও চেয়ে আছে পল্লবের দিকে ।

---আলিপুর দুয়ার ।


যদিও কথা বলতে মন চাইছে না পল্লবের, তবু ও 

উত্তর দিতে ই হলো ।

--আপনার বোতলে জল আছে?--লোক টি বলে ।

---হ্যাঁ ।এই নিন।

পল্লব বুঝলো, এই জলের জন্য ই কথা বলেন লোক টি।জল পেয়ে লোকটির চোখে উপচানো খুশির হাসি। 

তনিমার সাথে মেলামেশার পর থেকেই মায়ের কোল 

ঘেঁষে শোয়া বন্ধ হয়েছিল । সিনেমার মতো রীল এর

পর রীল ঘুড়ছে, আর একের পর এক সিন্ চলে 

আসছে ।

দুপাশে ধান ক্ষেত, হলুদ হয়ে আছে ।ধান পেকে গেছে 

তাই হলুদ ।অন্য দিকে চাষীরা খালি গায়ে চাষ করছে।আর চাষী বৌয়েরা হলুদ শাড়ি পড়ে নুয়ে ধান বুনছে ।অদ্ভুত এক কুশলতায়।


তনিমা ও স্বরস্বতী পুজোর দিন হলুদ রঙের শাড়ি 

পড়েছিল । তনিমার মা খিচুড়ি, লাবড়া আর চাটনি 

রেঁধেছিল ।তনিমা পরিবেশন করেছিল । গরম গরম 

খিচুড়ি লাবড়া আর চাটনি দারুণ লেগেছিল । সে কি,

শুধু রান্নার গুনে?নাকি তনিমা তার আঁচল সামলে 

পরিবেশন করেছিল বলে?

মেথর পট্টির পাশ দিয়ে বাঁক নিল বাস টা। কোত্ 

কোত্ শব্দে শুয়োরের পাল ছুটছে । ওরা কেন ছুটছে 

তা পল্লবের জানা । ওদের পেছনে কয়েক জন ছুঁচলো বাঁশ আর দড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে । ছোট বেলায় অনেক দেখেছে,কেমন করে ওরা চক্র ব্যুহ করে শুয়োরকে ধরে ফেলে কয়জন। আর একজন ছুঁচলো বাঁশের ডগা শুয়োরের পেটে ঢুকিয়ে দেয় । শুয়োরের সেই মৃত্যু যন্ত্রণার চিৎকার সহ্য করতে পারতো না পল্লব। পল্লবের মনে হতো ঐ বাঁশটা ঐ লোক গুলোর পেটে ঢুকিয়ে দিলে ভালো হয় ।


হাসি পায় একটা কথা মনে পড়ে, মা কখনো খারাপ 

কথা বলা পছন্দ করতো না । তা জেনেই পল্লব 

শুয়োরের বাচ্চা দেখে মা কে রাগাবার জন্য বলতো 

---"-মা দেখো,শুয়োরের বাচ্চা---শুয়োরের বাচ্চা "।

মা জানতেন পল্লবের দুষ্টুমি। তাই চুপ করে থাকতেন ।

যাক্ গে,যা হবার তা হয়ে গেল । চলন্ত বাসে বসে ই

পল্লব কে সেই খারাপ কাজ টা দেখতে হলো । বেচারা 

শুয়োরেরা বেঁচে ই বা কি করবে! বলী হবার অপেক্ষায় দিন পাত করা ।

তখনই নিজের কথা মনে হলো । ওর নিজেরই বেঁচে 

থাকার কি কোন দরকার আছে? একটা মাস্টার 

ডিগ্রি করে এল আই সি র এজেন্সি করছে ।জলপাইগুড়ি যাওয়ার আগে অনেক আশা করেছিল ।দুটো মাত্র ডেভলপমেন্ট অফিসারের পোস্ট ।

একটা আরবান এ,আর একটা রুরাল এর পোস্ট ।


ট্রেনিং শেষে তমাল বললো, --ডেভলপমেন্ট 

অফিসারের পোস্ট আমাদের একজনের ও হবে না ।

--কি করে জানলি?

---হরেকৃষ্ণ পাল যেখানে এ ব্লাঞ্চ মেনেজার ,সেখানে মেয়ে ছাড়া ছেলে ঐ পোস্ট পেতেই পারে না । ঐ লোকটার লুজ ক্যারেকটার ,বুঝলি?শুনেছি অনিমা রাই য়ের সঙ্গে লটর পটর আছে ।

-- তার মানে ,আমাদের ঐ অনিমা রাইয়ের আন্ডারে 

কাজ করতে হবে?

--হ্যাঁ ।

পল্লব বলল --যাক্ গে বাবা, আমার কোন অসুবিধা নেই। 

--তা থাকবে কেন, তুই তো আর বিয়ে করিসনি?


বাস এর ঝাঁকুনি তে চিন্তা টা হোঁচট খেলো রাস্তায়। 

নিউ ময়না গুঁড়িতে ওরা থাকতো । পল্লব আর 

তনিমারা ময়না গুড়ির স্কুলে পড়তে যেত।


দূর থেকে ময়নাগুড়ি দেখা যাচ্ছে । পল্লবের মেরুদণ্ড

টান টান হয়ে গেল । সেই রাস্তা ঘাট একটু ও বদলায়নি। নামে মাত্র পীচ ঢালে রাস্তায়। কিছু দিন পর 

হয় বেহাল । যাত্রীরা হয় নাকাল। পদযাত্রির এক রকম 

হয়রানি । এবড়োখেবড়ো রাস্তায় খাবলা খাবলা জল

জমে থাকে । পদযাত্রির পদের টুকরো না হবার 

কোন কারণ থাকে না । তাছাড়া বেশী ধারে গেলে 

কাদায় পা ডুবে যায়। আর মাঝ রাস্তায় গেলে 

তো বাসের তলে পিষ্ট হতে হয়। অন্য সময় শুধু 

ধুলো পা।


রাস্তার বেহাল অবস্থায় বাস যাত্রীদের প্লীহা,মেরুদণ্ডের ইনশিওর করা যায় না । তবে মরে গেলে ইনশিওরেন্স এর টাকা পাইয়ে দেওয়া যায় ।

বাস ধুঁকতে ধুঁকতে দাঁড়ালো ময়না গুঁড়িতে । অনেকেই এক চিলতে আগুনের লোভে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে। রাস্তার যে দোকানে উনুনে চা বসেছে সেখানেই ভিড় । তবে চায়ের থেকে ও শীতের দিনে উনুন বেশী টানে ।


কবেকার কথা । ব্রডগেজ যখন বসল,তখন পল্লবের বাবা বদলি হয়ে এলেন নিউ ময়না গুঁড়িতে । সবে নতুন রেল বসেছে । তাই ইলেট্রিক এর কথা ই নেই । ঘরে ঘরে কেরোসিনের বাতি দিয়ে কাজ চালাতে হতো ।স্টেশন চত্বরে ও উঁচুতে কেরোসিন বাতি জ্বলেছে । চার দিকে ধূ ধূ করা অন্ধকার । তখন পল্লব এগারো ক্লাস এ পড়ে ।


বহু বার তনিমা আর পল্লব ফালাকাটা বন্দরেও গেছে। মানে শহরে গেছে । আবার স্টেশন মোর এ কালজানি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করেছে। মাঝে মাঝে তনিমার শাড়ি পল্লবের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছিল । সে এক অন্য অনুভূতিতে মাখামাখি । এ সবই অনেক আগের কথা ।

নজর গেল কালজানির জলে । নৌকা এখন ও বাঁধা 

রয়েছে ঘাটে। তবে এখন শুধুই চর । মানুষের চরিত্রে

চর পড়ে গেল! তায় আবার নদী নালা? কাজের কাজ

নেই, বুলিতে ভরে গেল দেশটা । একটু হিম পড়ছে মনে হতে কলার টা তুলে দিল পল্লব । পুলওভারের গলাটা ভি সেপ্ ।গলাটা বাঁচাতে হবে ।

'ফৎ' করে সামনে র লোক টা নাক ঝাড়লো । কাজ

সারা হতেই হাতের ময়লা টা ঝাড়া দিলেন বাইরে ।

জানালার বাইরে । হাওয়ার বেগে সেই ময়লা অর্থাৎ 

শ্লেস্মা ছিটকে পড়লো পল্লবের পুলওভারের 

হাতায় । চরম বিরক্তিতে চিৎকার করে উঠলো পল্লব। ----কি করলেন বলুন তো?নোংরামি করার আর জায়গা পান নি?

চিৎকারের সাথে ঘাড়ে ধাক্কা লাগায় পিছু ফিরেছে 

সেই মানুষ টি। দৃষ্টিতে অসহায়তা । বয়সে বৃদ্ধ । দৈনতার ছাপ সারা মুখে। অনুতপ্ত সুরে বলে ।

---আমি বুঝতে পারি নাই বাবা । মুছে দিতেছি।


বলেই পেছনে ফিরে নিজের চাদর খানা দিয়ে মুছে 

দিয়েছে । যা ও বা একটা জায়গায় ছিল । মুছতে গিয়ে 

পুলওভারের হাতায় আমেরিকার ম্যাপ হয়ে গেল ।

ঘেন্নায় সিঁটিয়ে রইলো পল্লব ।


পল্লব আর কৌশিক, নতুন ডেভলপমেন্ট অফিসারের অধীনে কাজ করবে । নাম অনিমা রাই ।শুনেছে এ বি এম এর সঙ্গে শরীরের খেলা খেলে ডেভলপমেন্ট অফিসার এর পোস্ট টা করায়ত্ত করেছে নতুন ডি ও ।এও শোনা, তিনি নাকি বিবাহিত ।


এতো সুযোগ তাকে দেওয়া হয়েছে যে ট্রেনিং চলা

কালীন তাঁকে ক্লাস ও করতে হয় নি। অনিমা রাই

নাম টা মনে করিয়ে দিচ্ছে জটেশ্বর এর কথা । সিঁদূর

পড়ার পর তনিমা ও বলেছিল, 'আজ থেকে আমি তনিমা বোস হলাম । 'তনিমা না অনিমা বোস' । যাক্ গে পুরোনো কথা ভেবে লাভ নেই । তবু ও তনিমা এসে

যায় বারে বার ।


সেই সময়ে তনিমা প্রচন্ড গরমেও ভারি ভারি স্কার্ট 

পড়ত। পরে তনিমা বলেছে বাতিল হওয়া বেডকভার দিয়ে স্কার্ট বানিয়ে দিতো ওর মা।


হৈচৈ শুনে চিন্তাটা হোঁচট খেল মাঝ রাস্তায় । ভাড়া 

নিয়ে বাক্ বিতণ্ডা চলেছে । একজন কন্ডাক্টর কে বললো ---ছেড়ে দাও ভাই । গরীব মানুষ ।


তনিমারা কি গরীব ছিল? বরং পল্লবদের মাস কাবারে টানা টানি চলতো । পিসে মারা যাবার পর পিসিকে টাকা পাঠাত বাবা। পল্লবের ও টান পড়েছিল তনিমার ওপর । ঝাঁঝাঁ রোদে মাস্টারের কাছে পড়ে ফিরছিল পল্লব ।

পথে তনিমা আর বিলুর সাথে দেখা । তনিমা কোঁচর থেকে ডাঁসা কুল তুলে তুলে খাচ্ছিল।


তনিমা বলেছিল, --একটা কুল খেয়ে দেখ পল্লব দা।কি মিষ্টি কুল ।

গাছের ডালে বসে তনিমা কুল খাচ্ছিল । তনিমার 

কোঁচড়ের কুল পেড়িয়ে পল্লবের চোখ গেছে কোঁচরের ফাঁকের উরুতে । কি দারুণ ফর্সা । যেন মাখন । ইচ্ছা একটু ছুঁয়ে দেখার ।


বিলু রাগ করে বলে---এই দিদি, বাড়ি চল।

---না।তুই যা।

--তাহলে আমার কুলের ভাগ দে।

বিলু চলে যেতে পল্লবের সেই ভয়টা আকড়ে ধরলো ।

-বললো--যাইরে তনিমা।

--না।তুই যাবি না ।

বলেই পল্লবের হাত ধরে আচমকা এক টান মারলো 

তনিমা। দুজনেই চিৎপাৎ মাটিতে ।


---দেখলি তো ,আমায় ছেড়ে গেলে কি হয়?


বলে ই হাসতে লাগল তনিমা। হাসতে হাসতে চোখে জল এসে গেল । মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে কুল। চোখে র এ জল হাসির। আশ্চর্য পল্লব । এ কোন তনিমা?তনিমা যেন মিঠে জল ভরা তাল শাঁস ।

---আমি যাই রে তনিমা।


--ন্যাকা। যা মায়ের কোলে শুয়ে' ডুডু'খা।


তনিমার কথায় পল্লবের আঁতে ঘা লাগল ।


তনিমা বললো---ভয় পাস আমাকে? দাঁড়া তোর ভয়

ভাঙিয়ে দেবো। বলে খিল্ খিল্ করে হাসতে লাগল তনিমা।


তনিমা যেন এক ঝাঁক বলাকা । ইচ্ছে হলেই দল বেঁধে 

উড়তে পারে । মোটা বাদামের দানার মতো ওর দাঁত ।

কথায় কথায় ঠোঁটের কোণে দুধের মতো ডাঁসা কুলের রস গড়িয়ে পড়ছে । তাড়িয়ে তাড়িয়ে কুল খাওয়া দেখতে ভালো ই লাগছে পল্লবের ।


"-----ময়নাগুড়ি ময়নাগুড়ি"---হেল্পার চেঁচাচ্ছে। চমকে 

ফিরলো পল্লব । হেল্পারএর চিৎকারে ভাবনাটা

হোঁচট খেল ময়নাগুড়ি রেল স্টেশন মোর এ।


ব্রডগেজ রেললাইন হবার পর সব নতুন স্টেশন 

এর রেল কোয়ার্টার এর বাসিন্দা দের মহা ঝামেলা ।

কোথাও কোনো বাজার নেই । নুন কিনতে হলে ও

সেই আড়াই মাইল দূরে শহরে গিয়ে কিনতে হবে ।

যেহেতু রেল এর জমি তাই সেখানে কেউ দোকান

দেবার কথা ভাবতে পারেনি । অবশ্য সে যুগে ই

কলকাতার আসে পাশে রেল এর জমি র দখলদারি 

চলতো। যে কথা হচ্ছিল, সেই কলোনী তে না ছিল 

ইলেকট্রিসিটি, না ছিল কোন স্কুল । এমনকি স্টেশন 

এ ও কেরোসিনের বাতি জ্বলতো। তাই ছেলে মেয়ে দের হেঁটে নতুন স্টেশন থেকে পুরোনো ময়নাগুড়িতে 

স্কুলে পড়তে যেতে হতো ।


মানুষের জীবন যাপনের যা কিছু দরকার তার সবকিছু পুরোনো ময়নাগুড়িতে গিয়ে নিতে হতো । শহরের চাল কলের পাশেই ময়না মাসীর বাড়ি ।

ঘটনা টা সেদিন ই ঘটলো।


মা ময়নাগুড়িতে ময়না মাসীর বাপের বাড়ি যাবে ।

পল্লব কে বলল ।

-বাবুল, ঘর থিকা বাইরাস না। তর বাবা আওনের আগে ই আইয়া পড়ুম।


-কোথায় যাবে?

--ময়না গো বাড়ি যামু ।


মায়ের কথা মতো পল্লব ঘর থেকে বের হয়নি । কিন্তু 

সেদিন ই নিষেধের বেড়াজাল ডিঙিয়েছিল পল্লব ।

সেই সাঁঝের বেলায় তনিমা এসেছিল পল্লবের 

বাড়িতে। হ্যারিকেন এর আবছা আলোয় ভয় ভাঙাবার কসরত করেছে তনিমা। ভয় ভেঙেছিল কি না তা জানেনা পল্লব । তবে তার শরীরে তরঙ্গ তুলেছিল তনিমা।


বাস টা হঠাৎ ব্রেক্ কষতেে ই জানালায় মাথা ঠুকে 

গেল । মাঝ পথে একপাল গরু । হর্ন বাজতেই দিগভ্রান্ত হয়ে ছুটতে শুরু করলো গরুর পাল।


পল্লব ও ছুটেছিল । তনিমার কথা টা জানাজানি 

হবার পর । তনিমা ধরে নিয়ে গিয়েছিল জটেশ্বর এর

মন্দিরে । চারদিক শুনশান । একটা পোড়ো মন্দিরের

মতো,শিব মন্দির । মরা ডাল,শুকনো পাতা ছড়ানো 

চারদিকে । সেই শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি তে ভয় 

করছিল পল্লবের । তনিমা পল্লবের হাতে সিঁদূরের 

কৌটো দিয়ে বলেছিল ।-আমায় পড়িয়ে দাও।

ভয়ে হাত কেঁপেছিল পল্লবের ।

তনিমা কয়েৎবেল খাবার মতো মুখ চোখ নাচাচ্ছিল।

তনিমার কথা মতো কাজ করেছে পল্লব । সাহসে 

ভর করে সিঁদূর ঢেলেছে তনিমার সিঁথি তে।

---তনিমা।

---তনিমা না। আজ থেকে আমি অনিমা বোস ।

আজ থেকে আমি বোস হলাম ।

তনিমার কথায় পল্লবের শিহরণ । আর অনিমা!!!!! ডাকার সুযোগ হয় নি।


কঁক্ কঁক শব্দে চোখ মেললো পল্লব । মুরগির ঝাঁকা

নিয়ে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে মুরগির মালিক। বাস

থামতেই সীট্ এ ব্যাগ রেখে নীচে নেমে দাঁড়ালো

পল্লব ।


লাল টকটকে গোল সূর্য । দূরের গাছ গাছালিতে

ভরা, কুঁড়ে ঘরের ফাঁক দিয়ে উঠছে লাল সূর্য । কি

তাড়াতাড়ি উঠছে । ঝিরিঝিরি নকসি কাঁটা তালপাতার ফাঁকে সূর্য কে নকসি কাঁটা সূর্য মনে হচ্ছে । এতো গোল কি করে হয়! অমন গোল সিঁদূরের টীপ পড়তো মা। মায়ের মুখ খানা তখন ভালোবাসায় টলমল করতো ।


প্যাঁক প্যাঁক হর্ন বাজছে । বাস ছাড়ার হর্ন । বাস এ

উঠে পড়লো পল্লব । সীট্ এ বসতেই সামনে র 

লোকটি বললো---সড়ে বস গো বাবু। ওপাশে 

মিয়াটার একটা কচি বাচ্চা আছে ।


তখুনি নজর গেল ছোট্ট কচি বাচ্চার দিকে । ওয়াঁওয়াঁ

করে কাঁদছে । বড়ো জোর মাস পেরিয়েছে। মায়ের 

বুকে মুখ ঘষছে সেই কাজল কালো মুখ। অষ্টাদশী

মা তার শিশুর চাহিদা বুঝে আঁচলে ঢেকে নিল তার 

সন্তান কে। চিরাচরিত, তবু ও ভালো লাগে । শিশু 

খত্খত্ শব্দ করতে করতে হঠাৎ ইথেমে যায় ।

তার ঈপ্সিত বস্তু খুঁজে পেয়েছে তা বোঝা গেলো ।


এই মা,। এই মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল 

পল্লব । কথাটা কি করে চাউর হয়ে গিয়েছিল তা বোঝার আগে ই বাবার দুমদুমাদুম মার পড়লো পল্লবের পিঠে । আগে কারণটা না বুঝলেও পরে বুঝেছে জটেশ্বর এ সিঁদূরের খেলা টাই এই মারের কারণ। তনিমার কাছ থেকে দূরে সরাবার জন্য 

পল্লব কে পাঠানো হলো কোলকাতায় । কড়া ধাতের জ্যাঠামশায়ের কাছে । যাতে ছেলের ভালো রকম শায়েস্তা হয় । সেখানে ই একে একে কলেজের পাঠ।

মাস্টার ডিগ্রি করা হল । ময়নাগুড়িি তে আর পা দিতে পারে নি পল্লব । ছুটি ছাঁটায় মা বাবা এসেছে কোলকাতায়।

ময়না গুড়ির তনিমাতে মন আটকে থাকলেও বাবার

নির্দেশ অমান্য করার সাহস হয় নি। পড়াশুনায় মন বসে গেল ।


বাবার বারণ ছিল কোলকাতা ছেড়ে বাবার কাছে যাওয়া । কিন্তু শেষ অবধি ছাড়তে হলো কলকাতা ।বাবার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর মন ছুটলো আলিপুর দুয়ার এ। চাকরির শেষ সময়ে যাতে নড়াচড়া না করতে হয় তাই বদলী নিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার । নড়তে হলো । একেবারে ইহলোক ত্যাগ করতে হলো বাবাকে ।


পল্লবের অপেক্ষায় ছিল সকলে। মরদেহ চিতায় 

দেবার পরই মনে হলো মাথার ছাউনি টা উড়ে গেল ।

বমি হতে লাগল পল্লবের। বাবার অফিস কলিগরা

সামলে নিয়েছিল । বাবাকে দাহ করে ফিরে দেখলো

ঘর ভর্তি লোক । মায়ের মর দেহ রয়েছে উঠোনে।

মা!!!পল্লবের মায়ের পোলাটা কি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে?

---বাবুল রে,খাড়োইয়া আছিস ক্যান?আমার 

কাছে আয় ।কুলে আয় বাবুল।

আর পারে না, পল্লবের মায়ের সেই ছোট্ট বাবুল।

ছুটে গেল মায়ের কোলে । আর কোন দিন কোথাও 

যাবে না মাকে ছেড়ে ।

কিন্তু ছাড়তেই হলো মা কে। সবই ছাড়তে হয়।

সমুদ্রে পড়লে যেমন নিজের ইচ্ছে বলে কিছু 

থাকে না । শুধু ই ভেসে যেতে হয় । ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে যেতে হয় । বাবুল মানে পল্লবের ও কিছু 

করার ছিল না । প্রতিবেশী রা ঢেউ এর কাজ করেছে ।পল্লব সেই ঢেউ এর তালে তালে ভেসে চলেছে ।


নিজেকে গুটিয়ে নিল পল্লব । আপন বলে আর কিছু 

রইলো না । কিছু করতে হয় তাই এল আই সির 

এজেন্সি করা। তনিমার জন্যই ময়নাগুড়ি আর বাবা 

মা কে ছাড়তে হয়েছিল । তবু ও মনে তনিমা থেকে 

গিয়েছিল । মন টেনে ছিল ময়না গুড়ির সেই মেয়েটা।

এক পার্টির এল আই সি করতে যেতে হয়েছিল 

ময়না গুড়ি। খোঁজ করে ও পাওয়া যায় নি সেই 

মেয়ে কে ।

হেল্পার এর চিৎকারে ভাবনাটায় ছেদ পড়ল ।

কন্ডাক্টর চিৎকার করছে----ফালাকাটা ফালাকাটা ।

কিন্তু তখন ও ফালাকাটা আসে নি । যেই জটেশ্বর এ

শিব মন্দিরে তনিমাকে সিঁদূর পড়িয়েছিল পল্লব, তার পাশ দিয়ে চলেছে বাস। সেই জটেশ্বর তনিমা ও

পল্লব কে এক করে দিয়েছিল । সেই জটেশ্বর পার

হলো । ফালাকাটা স্টেশন যারা যাবেন তারা নেমে 

গেলেন। ডানে নদী কে রেখে চলেছে ফালাকাটা 

বন্দরে । এককালে নদী পথে ই এখানে মাল,মানুষ 

চলাচল করতো।

দেখতে দেখতে বন্দর চলে এলো । মোর এ পানের 

দোকান । লটারির টিকিটের দোকান। এতো সকালে

পানের দোকান শুধু ই কাঠের পাটাতন । লোক 

চলাচল শুরু হলে ঐ কাঠের পাটাতন এর রং ফেরে।

প্রাণ সন্চার হয় দোকানের।ডাঁটো ডাঁটো পান পাতা

সরস হয়ে লাল লালুর ভিজে কাপড়ে মোরা থাকে 

তখন ।

আস্তে আস্তে সোজা এগিয়ে চলেছে বাস। একেবারে 

মিষ্টি র দোকানের মালিক গোপাল কর এর দোকানে 

গিয়ে দাঁড়ালো । দোকান এর পেছনে বাস যাত্রীদের 

জন্য কল ঘর।এ রকম একটা কলঘরের ব্যবস্থা করতে পারলে ই রমরমা ব্যবসা ।কারণ কলঘরে শরীর হালকা হবার সাথে ই উদর পূর্তির একটা ব্যাপার থাকে ।

বাসে বসে পল্লবের গা পাকাচ্ছে ।কারণ দোকানে র

সামনে একদিকে ঢাই করা আগের দিনের ময়লা ।তাতে কাকেদের মহোৎসব । চোখ ফিরিয়ে নিলো সে।

একে একে মুরগির ঝাঁকাগুলো নাবছে। শেষ বারের 

মতো হাঁস মুরগি রা কক্কর কো,কক্ কক্ শব্দ তুলে 

জানান দিলো যে ওরা যাচ্ছে । মাটির গন্ধ নিয়ে ওরা 

চলে গেল ।

পল্লব বললো--বাস তো ফাঁকা হয়ে গেল ।

হেল্পার বললো---না গো,এবার অফিস বাবু রা

উঠবে ।

অফিস বাবু কথা টা ভক্তি রস ঢেলে ই বললো ।একটা মাস্টার ডিগ্রি করে ও অফিস বাবু হওয়া গেল 

না।সহজ লভ্য এল আই সির এজেন্ট হলো সে।

ভারে মা ভবানী ।বাক্ চাতুরি নেই যার সে এজেন্ট 

হয়ে ই বা কি করবে?পলিসি করাতে বাক চাতুরি 

দরকার ।

তমাল বলেছিল, ---আরে কালো কুৎসিত ছেলে কে 

বাবা মায়ের সামনে বলবি,কি সুন্দর ছেলে আপনার ।তবে ই না সেই কেস টা হবে ।

পরিমল দা বলে ছিল, ----একবার ডি ও হয়ে যা।

তারপর অফিসে বসে যাবি । আর দালালি করতে 

হবে না ।অফিসে কাজ করবি । মাস গেলে মাইনে 

পাবি । তখন বিজনেস এর কোটা পূরন না হলে ও

চলবে ।

তখন আশা জাগলে ও এখন বুঝতে পারছে ডি ও 

হওয়া স্বপ্ন দেখার মতো।

স্বপ্ন পল্লব দেখে না।তনিমা দেখিয়েছিল ।জটেশ্বর এর মন্দিরে বলেছিল--আজ থেকে তুমি আমি 

স্বামী স্ত্রী ।

তনিমার সিঁদূরে রাঙা মুখখানা দেখে কি করবে 

বুঝতে পারেনি ।মুগ্ধ হয়ে কপালে র গোল টীপ  

দেখেছে ।


কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ।এতটা রাস্তার পেড়িয়ে 

এসেছে বুঝতে ই পারেনি পল্লব ।কুচবিহার ও পার

হয়ে গেল?বাস দাঁড়িয়ে আছে আলিপুর দুয়ারে।


---কি হলো দাদা, এতো ঘুমোচ্ছেন। তখন থেকে এতো ডাকছি ।

হেল্পার এর ডাকে চোখ খুলেছে।

--আলিপুর দুয়ার এসে গেছে?

--হ্যাঁ ।এবার নামেন।


হোটেল চলাচলের দিকে পা বাড়ালো পল্লব ।খেয়ে 

নিয়ে তবে নতুন ডি ও র কাছে যাবে ।কি যেন তাঁর 

নাম টা?অনিমা রাই।হ্যাঁ ।


তনিমা বলেছিল--তনিমা না। অনিমা বোস । আজ

থেকে ।

পল্লব তখন রোমান্চিত হয়েছিল নিজের পদবি 

তনিমার নামের সাথে যুক্ত হওয়ায়। আশ্চর্য হয়েছিল 

তনিমার পোশাকি নাম টা যে অনিমা তা জেনে ই।


হোটেল চলাচল। কোন আহা মরি হোটেল নয়।

কাঠের বেন্চ পাতা । তায় নড়বড়ে টেবল । তবে 

ওখানে পরিচ্ছন্ন খাবারের সাথে পাওয়া যায় 

বিনি পয়সার ভালোবাসা । ভালোবাসা দেয় বলে ই

বুঝি এতো দিনেও মেঝেটা বাঁধানো হয়নি । কিন্তু 

খদ্দরের অভাব হয় না । তবে এ সময় টা খালি 

থাকার কথা ।


পল্লব কে দেখেই হোটেল মালিক বলেন, --অনেক 

দিন দেখছি না আপনাকে?শরীর ঠিক আছে তো?


--শরীর ঠিক আছে ।জলপাইগুড়ি ছিলাম 

কয়েক দিন । এই ফিরছি।

-ও হরি বাবু কে হাত ধোয়ার জল দে। যান 

বাবু, বাথরুম পরিস্কার আছে ।


এই ঘরোয়া ভাব ভালোবাসার জন্য এখানে ভীর ।

বাথরুম থেকে ফিরে ই খেতে বসে পড়লো পল্লব ।

--হরি বাবুকে ডাল,ভাজা ও মুড়িঘণ্ট দিয়ে 

ভাত দে।বাবু, মাছ এখন ও রান্না হয়নি ।


--না,মাছ আমার দরকার নেই । ওতেই হবে ।


ঠাকুর ভাত দিয়ে গেল । মনে পড়ে গেল নবীনের 

কথা । চনমনে ছেলে টা কোথায় গেল?


মালিক কে জিজ্ঞাসা করলো পল্লব--নবীন কি ছুটিতে গেছে?দেখছি না?

--নেই ।মারা গেছে ।জন্ডিস হয়েছিল ।


স্তব্ধ হয়ে গেল পল্লব ।একঘর টাকা হলে বিয়ে 

করবে বলেছিল ।সবার মনে রয়ে গেল নবীন।

ঝাঁপসা হয়ে গেল নবীনের স্মৃতি ।শুধু মোটা 

দাগ রয়ে গেল, সে একদিন ছিল ।


কোন এক সকালে র একফালি রোদে,কখনো বা 

লেপের তলায় শুয়ে, শীতের কাঁপনে তাঁকে মনে পড়বে ।তাঁর ফেলে রেখে যাওয়া টুকরো টুকরো ছবি, তাঁর হাত নাড়া, কথা বলা,তাঁর হাসির ভঙ্গিমা । এমনকি তাঁর করুন কোন মূহুর্তের মুখের কুঞ্চনের ছবি, মনে পড়ে চোখে জল আসবে । যে মানুষ টা একদিন ছিল ।অথচ তাঁর দুঃখ মোচন না করতে পারার জন্য ই অশ্রু জমা হবে চোখে । ইচ্ছে হলে যদি তাঁর টুকরো টুকরো আনন্দ বেদনার ছবি দেখা যেত ?অবশ্য এখন দিন কাল অনেক বদলে গেছে । টুকরো টুকরো স্মৃতি ধরে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে ।


ভাবতে ভাবতে এল আই সি বিল্ডিং এর নিচে পৌঁছে 

গেল । ইচ্ছে ধোঁয়ার একটা সুখ টান দিতে । যদি ও

পল্লবের কোন নেশা নেই ।


---আরে, পল্লব দা না?

কানে যেতেই সেদিকে ফিরে তাকালো পল্লব ।চেনা 

চেনা লাগছে যেন!বহু দিনের পরিচিত বলেই মনে 

হচ্ছে ।ভাবতে ভাবতে নাড়া খেল মগজ ।তনিমা?

বিলু?

--আরে, বিলু না?এখানে?কোথায় থাকো

তোমরা?

---এখানে ই।মানে আলিপুর দুয়ারে।সবে 

এসেছি ।

--এখানে কেন?

--দিদি এল আই সি র ডেভেলপমেন্ট অফিসার এর পোস্ট পেয়েছে।

--তোমার দিদি?তনিমা?

--হ্যাঁ ।যান না। দোতলায় দিদির ঘর।


স্তব্ধ পল্লব ।অনিমা রাই।ওদের ডেভ্ লাপমেন্ট অফিসার!!!এ ই পল্লবের দেওয়া সিঁদূরের তাপে

নিজেকে অনিমা বোস এর আখ্যা দিয়ে ছিল!!!!!!

অনিমা বোস ।কয়েক টা বছরের ব্যবধানে হয়ে 

গেল অনিমা রাই।!!!!!!!----

স্বরসতী পুজোর সময়ের তনিমার শরীরের গন্ধ মাখা 

হলুদ শাড়িটা এল আই সি বিল্ডিং এর অ্যানটেনার তারে আটকে গেল ।পল্লবের ধরা ছোঁয়ার একেবারে 

বাইরে গেছে ।

------------------------সমাপ্ত--------------