Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্রথম-খেয়া-সেরা-সাহিত্য -সম্মাননা

"কুমারী মা"কলমে : সোহিনী ঘোষরূপায়নে : নির্মলেন্দু নন্দী১০/০৩/২০২২
বিনি চাকরির চেষ্টা করছে। গ্রাম থেকে শহরে এসে সে একটা বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকছে। বাড়ির মালকিন বেশ পছন্দ করে বিনিকে। বাড়ির মালকিন দুইজনই বুড়ো বুড়ি একা থাকে।…

 


"কুমারী মা"

কলমে : সোহিনী ঘোষ

রূপায়নে : নির্মলেন্দু নন্দী

১০/০৩/২০২২


বিনি চাকরির চেষ্টা করছে। গ্রাম থেকে শহরে এসে সে একটা বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকছে। বাড়ির মালকিন বেশ পছন্দ করে বিনিকে। বাড়ির মালকিন দুইজনই বুড়ো বুড়ি একা থাকে। তারা বিনিকে পেয়ে বেশ খুশি।


খুব একটা কাজ বিনি পারে না। পড়াশুনা নিয়েই থেকেছে। বৃদ্ধ শিবু আর তার গিন্নি উমা দুজনে ভাবে যদি বিনিকে তাদের পুত্রবধূ করা যায়।


উমার মেয়ের বয়সী প্রায় বিনি।উমার সাথে বিনির বন্ধুত্ব বেশ ভালই। বিনি চাকরিটা পেয়ে যায়। শুরু হল তার অন্য জীবন।


বিনির জীবন পাল্টে যেতে থাকে। স্বাধীন জীবন, বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকে। বেতনের টাকায় নিজের ইচ্ছেমত সব কিছু কেনে। বন্ধুদের সাথে মন খুলে আড্ডা দেয়। যে জীবনটার জন্য এত কষ্ট করছিল এতদিন ধরে আজ তা সে পেয়েছে। উমা তার ছেলের সাথে আলাপ করায়। ছেলে বাইরে পড়াশুনা করে। শেষ হলে তবে বাড়ি আসবে।


এমনি বাড়ি এলে বিনির সাথে সময় কাটায় মাঝে মাঝে। তবে বিনি বাঁধনছাড়া জীবন কাটায়। কারোর কথা সে শোনে না। কারোর বারণ সে শোনবার নয়। বিনি প্রাণভরে বাঁচতে চায়। বিনি বর্তমানে বিশ্বাসী। তাই মন যা চায় তাই করে। অমিত মানে বাড়িওয়ালার ছেলে তার সাথে হালকা প্রেমে জড়িয়েছে।


উমা নিজেই সায় দিয়েছে। কিন্তু বিনি আজকাল বড্ড বাঁধনছাড়া জীবন কাটায়। রাত করে বাড়ি ফেরে। কোন কোন দিন নেশা করে বাড়ি ফেরে। গাড়ি এসে নামিয়ে দিয়ে যায়। প্রায়ই নানা ছেলের গাড়িতে আসে। হাতে সিগারেটে থাকে। আজকাল একটু বেশিই লাগামছাড়া জীবন কাটাচ্ছে বিনি।


উমা বোঝায় কিন্তু বিনি বুঝতে নারাজ। নিজের জীবন সে নিজের মত করে কাটাবে। অমিতও বারণ করে রাত করে বাড়ি ফিরতে কিন্তু বিনি শোনবার পাত্রী নয়। অমিত বিনিকে ভালবাসে বিয়ে করবে তাই সে শাসন করে।


বিনি অফিস সহকর্মীদের সাথে বেড়াতে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় অমিত আপত্তি করে। তাও সে যায়।


এরকম মাঝে মাঝেই যায় বেড়াতে। বিনির বাড়ির লোক জানতে পারে না। জীবনটাকে সে প্রাণভরে উপভোগ করবে। বেড়াতে গিয়ে নিজেকে সামলায় না। নির্জন জায়গায় বেড়াতে যায় লোকালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে। সবাই ঘুরতে বের হয়। হোটেল থেকে বারণ করা সত্ত্বেও তারা রাতের বেলায় বেরিয়েছিল সমুদ্রকে কাছ থেকে দেখবে বলে। রাতের অন্ধকারে চাঁদের আলো সমুদ্রের জলে পড়লে তার আভা কতটা সুন্দর সেটাই দেখার ছিল।


হাতে সিগারেটে পরনে জিন্স টপ। রূপবতী নয় তেমন বিনি তবে মাদকতা আছে। হঠাৎই একদল ছেলে ঘিরে ধরে। চিৎকার করে তারা কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই ঘন অন্ধকার।


শত চিৎকার কেউ শুনতে পাবে না। পাঁচজন বেরিয়েছিল ছেলেগুলো তাদের মারধর করে সবাই পালিয়ে যায় এদিক ওদিক। বিনিকে ধরে ফেলে ছেলেগুলো। কোনভাবেই বিনি পারে না তাদের হাত থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে।


সেই অন্ধকার রাতে বিনির চিৎকার কেউ শোনে নি। শুনলেও কেউ সাহস করেনি বিনিকে বাঁচাতে।


ছেলেগুলো বিনিকে অকথ্য অত্যাচার করে। সকালবেলায় বিনি অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকে সমুদ্রের একধারে বালিতে। খুবই খারাপ অবস্থায়।


আশেপাশের লোক দেখে ব্যবস্থা করে। বিনি অচৈতন্য শরীরে সার নেই। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফেরে।


সে কি, সে কোথায়? এরকম অবস্থা কেন তার? হঠাৎই শরীরে যন্ত্রনা অনুভব করে। উফফ কি ব্যাথা। মনে পড়ে রাতের বীভৎস্যতার কথা। একের পর এক পুরুষ যখন তার শরীরকে ছিড়ে খাচ্ছিল কোন বারণ আবদার শুনছিল না। অসহায়ের মত সেই লোভী চোখ আর নোংরা মানসিকতার লোকগুলো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে ভোগ করছিল। নোংরা ভাষা তার কান আর মাথাকে উন্মাদ করে তুলছিল। মুক্তি নেই এর থেকে মুক্তি নেই। মৃত্যুই যেন শ্রেষ্ঠ উপহার তখন তার কাছে।


কিন্তু সে মরেনি বেঁচে আছে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেন নোংরা ছোবল ঘেন্যা লাগছে নিজেকে। নোংরায় ভোরে গেছে সারা শরীর। স্নান করে হোটেলে ফিরে। এ নোংরা যাবার নয় শরীর থেকে। মন ভেঙে পড়ে। কি হবে এবার? জানাজানি হলে লোক নিন্দায় মুখ দেখাবে কি করে?


পরদিন সকালেই সবাই রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। বিনি বাড়ি ফেরে কিন্তু শরীরে মনে একরাশ ক্লান্তি।


উমা বলে একি বিনি এমন কেন লাগছে তোমায়? বিনি কিছু না বলে ঘরে চলে যায়। কান্নায় বুক ফেটে যায়। কিছুদিন পর বুঝতে পারে শরীরে অন্য অনুভূতি। সে গর্ভবতী নয়ত? পরীক্ষা করে, রিপোর্ট আসে সে গর্ভবতী। এবার কি হবে? উমা বুঝতে পারে বিনিকে দেখে। চোখে মুখে ছাপ পড়েছে। নিশ্চয় বিনি কিছু বাধিয়েছে। অমিত জানতে চায় বিনি কিছু বলে না। বিনির পরিবর্তন উমা বুঝতে পারে অমিতও খেয়াল করে বিনি আজকাল একটু উদাস থাকে। সেই চনমনে বিনি যেন কোথায় হারিয়ে গেছে বেরিয়ে আসার পর থেকে।


অমিত জোর করে জানতে চায় কি হয়েছে?বিনি ভেঙে পড়েছে, অমিতকে বিয়ে করে নিতে বলে -সে গর্ভবতী। অমিত অবাক বলে এ বাচ্চা অন্যের আমি কেন এ দায় নেব? চলো গর্ভপাত করিয়ে নাও।


বিনি কি করবে বুঝতে পারে না। শরীরে প্রাণ বড় হচ্ছে নানা অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। উমা জানতে পারে উমা একদম রাজী নয় অমিতের সাথে বিনির বিয়ে দিতে। কার না কার সন্তান বিনির গর্ভে তার দায় কেন তার ছেলে নেবে।


বিনি ভেবে পায় না এবার সে কি করবে। অমিতের সাথে কথা বললে অমিত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় বিনিকে সে বিয়ে করতে পারবে না।


বিনি এবার গর্ভপাত করাবে ভাবে। আবার ভাবে একটা প্রাণকে সে হত্যা করবে? কিন্তু উপায় কি?সমাজের চোখে সে কুমারী মা পরিচয়ে বাঁচতে পারবে কি?


বিনি সিদ্ধান্ত নেয় এ সন্তানকে সে জন্ম দেবে। চাকরি তো তার আছে। অন্য বাড়ি ভাড়া নেয়। জন্ম দেয় সে ফুটফুটে একটি কন্যার।