Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্রথম-খেয়া-সেরা-সাহিত্য -সম্মাননা

# বাসন্তী দিনের যাপন কাব্য# কলমে মনীষা পলমল15/3/22 বসন্তের মায়াবী সকাল ,পাখিদের ভোরাই দিনমনিকে আহবান জানাচ্ছে। শ্বেত শিমুলের মগডালে ঘুঘু দম্পতির সোহাগ যাপন ভোরের মিষ্টি আলোকে আরো মিষ্টি করে তুলছে। চৈতি সুবাসি ভোর আমাকে ভীষণ ঘর …

 


# বাসন্তী দিনের যাপন কাব্য

# কলমে মনীষা পলমল

15/3/22

 বসন্তের মায়াবী সকাল ,পাখিদের ভোরাই দিনমনিকে আহবান জানাচ্ছে। শ্বেত শিমুলের মগডালে ঘুঘু দম্পতির সোহাগ যাপন ভোরের মিষ্টি আলোকে আরো মিষ্টি করে তুলছে। চৈতি সুবাসি ভোর আমাকে ভীষণ ঘর বিবাগী করে দেয়। বসন্তের বাউল বাতাসে ঝরাপাতার সঙ্গে নিয়ে খেয়ালী মনটা উজান টানে পাতা ঝরার বনে।

 দূরে বড় রাস্তার গড়ানের পলাশ গাছটা আগুন সাজে সেজেছে ।তলাটা ঝরাফুলের আগুনে গালিচায় ঢাকা। পাশের নয়ানজুলিটা এঁকেবেঁকে দক্ষিণের মাঠ চিরে এগিয়েছে দিগন্তের পানে।

 বোরো চাষের মাঠের সবুজে সাদা বকের ঝাঁক নেমেছে, যেন সবুজ গালিচায় সাদার মিনাকারি!

 মাঠের আলের গর্তে থাকা বুড়ো খরিশটার শীত ঘুম ভেঙেছে। খাবারের খোঁজে আলের ঘাসের বিছানায় টানটান হয়ে পড়ে আছে। ছডা খোলোসটাতে ভোরের সোনা আলো ঝিকমিক করছে যেন সলমা চুমকি বসানো ওড়না।


 ঝিল পাড়ের ভূত ভৈরবী ঘেঁটু আকন্দ ঝোপে বুলবুলির বাসা। সারা দিনমান প্রজাপতি মৌমাছি ভ্রমরের সাথে তাদের আলাপন। হালকা বেগুনি সাদা ভূত ভৈরবীর ফুলগুলো সারা ঝোপটাকে সাজিয়ে তুলেছে--- অজানা চিত্রকরের মোহন তুলিতে! দূরে মাঠের মাঝে একলা পলাশ গাছটার আগুন সাজের মাঝে নিঃসঙ্গ নীলকন্ঠ টার বসে থাকা মনকে বিষাদে ভরে দেয়। দুরে কুবো পাখির "কুব" "কুব "ডাকে মনটা কেমন যেন বিবাগী হতে চায়!

 ঝিলের এক কোণে একটা একলা শাপলা পাতায় জল ফড়িংয়ের লুকোচুরি। কচুরিপানা নলবনে জলপিপি ডাহুকের নিঃশব্দ পদচারণা।

 সারা ঝিল পাডের নৈঃশব্দকে ভেঙ্গে চিলের তীক্ষ্ণ স্বরটা যেন বারবার আছড়ে পড়ছে। 

দক্ষিণের মাঠের শেষে শাল জঙ্গল আর সাঁওতাল পাড়া। পাতাঝরা শালের বনে ডাক দিয়ে যায় বসন্তবায়। ঝরা পাতার নূপুর বাজিয়ে রাখাল হাওয়াটা সেখানে ঝুমুরের বোল তোলে। কুসুমের কচিপাতার লালিমা শিমুল পলাশ এর সাথে প্রতিযোগিতায় নামে। "সারহুল "উৎসবে মেতে ওঠা প্রান্তিক মানুষজনের মাদলের দ্রিম দ্রিম বোলে আর সারিন্দার সুরে ভেসে যায় শাল জঙ্গল।

" সারহুল "কুড়মালি শব্দ অর্থ "শাল ফুল"

 এক প্রাণ ছোঁয়া প্রাকৃতিক উৎসব এটি!শাল মহুয়া সহ অন্যান্য গাছের দীর্ঘায়ু কামনায় জন্যই এই পূজা হয়।

 চাকা গডিয়ে চলে। দিনমণি মধ্যগগনে। বাতাসের উষ্ণতা বেড়েছে। একটা ঝিম ধরানো ভাব। বাসন্তী দুপুরের একটা অদ্ভুত পৌরুষত্ব আছে। পলাশ শিমুলের লালিমার সাথে শালফুলের সুবাস এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়ায়। বিষন্ন দুপুরের নিস্তব্ধতা ভেঙে কুবোর "কুব " " কুব" ডাকে মন উদাস হয়ে যায়!

 ঝরা পাতার মর্মরে দখিনা বায় ঝুমুর নাচের ঘূর্ণি তোলে। মেহগনির ফলগুলো ফেটে হাওয়ার ঘূর্ণিতে ভেসে চলে বীজের দল। সারা মাঠ বাদামি রঙে ভরে ওঠে। বসন্ত বন কচি পাতার রঙ এর আলপনা তে সেজে উঠেছে---

 কুসুম পাতার লাল শরমে

শিউরে উঠে মহুয়া সই

 গোলাপী আর সবুজ মিশে 

বসন্ত আজ রং থৈথৈ!

 বাসন্তী দুপুর ধীরে ধীরে সুবাসি বিকেলে ঢলে পড়ে!

 মৃদুমন্দ দখিনাবায় কামিনী গন্ধরাজের বন্ধ বয়ে নিয়ে চলেছে! পশ্চিম দিগন্তে অস্তরাগের লালিমা! এক ঝাঁক বক দক্ষিণের মাঠ ছেড়ে পশ্চিম দিগন্তের পানে উড়ান টানলো। ওদের ডানায় দিনান্তের শেষ আলোটুকু মুছে গেল। সন্ধ্যার মায়াবী আবছায়া ওড়নায় ঢাকা পডলো চরাচর। আকাশে একটি দুটি তারা উঠলো-- যেন রাতের ওডনার সলমা-চুমকির মীনাকারি। পেঁচা দম্পতি নিশিটহলে বেরিয়ে এসে বসল মেহগনি গাছের ডালে। ওদের দাম্পত্য কলহে সন্ধার নীরবতা ছিঁড়ে গেল। বাগানের প্রান্তে পেয়ারা সবেদা গাছে বাদুডের উৎপাত শুরু হলো। বাসন্তী সাঁঝ ধীরে ধীরে গড়িয়ে চললো গভীর রাতের কোলে। শুরু হলো অন্য এক নিশি জাগর কাব্যের!