সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
গল্পের নামঃ ভালবাসালেখাঃ সনজীত কুমার দে।
নগেন মাঝির শরীরটা বেশ কিছু দিন হলো খুব খারাপ যাচ্ছে।কাজে একদম বের হতে পারেন না।সংসারে এক ছেলে আর এক মেয়ে।বউ মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে।সারাদিন নদীতে নৌকা বেয়ে যা পান,তা …
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
গল্পের নামঃ ভালবাসা
লেখাঃ সনজীত কুমার দে।
নগেন মাঝির শরীরটা বেশ কিছু দিন হলো খুব খারাপ যাচ্ছে।
কাজে একদম বের হতে পারেন না।
সংসারে এক ছেলে আর এক মেয়ে।
বউ মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে।
সারাদিন নদীতে নৌকা বেয়ে যা পান,তা দিয়ে গরীবের সংসার টেনে টুনে চলে যায়।
ছেলেটা এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠলো।
মেয়েটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
ছেলে মেয়ে দুজনেই ভালো ছাত্র।
মাত্র আর কয়েক বছর।
ছেলে ভালো চাকরী পেলে তাঁর তো সুখের দিন।
মেয়েটাকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারলে সে মরেও ভালো থাকতে পারবে।
খেয়াঘাটের মাঝি নগেন একদিন অসুস্থ থাকলে গ্রামের মানুষের যেন আর চলে না।
তাদের নদী পারাপারে খগেন মাঝি একমাত্র ভরসা।
ঝড়,বৃষ্টি যাই হোক ভোর থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত খগেন মাঝি খেয়াঘাটে থাকেন।
বেশ কয়েক গ্রামের মানুষ এই খেয়াঘাট দিয়ে চলাচল করে থাকে।
নগেন মাঝি একমাত্র গুরুতর অসুস্থ না হলে তিনি কখনো ঘরে থাকেন না।
নগেন মাঝি অসুস্থ থাকলে তাঁর একমাত্র ছেলে নবীন কুমার বাবার স্থলে নিজে নদী পারাপারের কাজ করে থাকেন।
নবীন কুমার সৌম্য সুদর্শন যুবক।
লেখা পড়াতে বেশ ভালো।
বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
লেখা পড়ার পাশাপাশি বাবাকে সাহায্য করা এবং টিউশনির মাধ্যমে সংসারের আর্থিক উন্নতিতে নবীন কুমার চেষ্টারত থাকেন।
ছোট বোনকে লেখা পড়া শিখিয়ে ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়া এখন তাঁর মূল কাজ।
সংসারে অভাব থাকলেও তাদের ভালবাসার কোন শেষ নেই।
অফুরন্ত ভালবাসা সব সময় তাদের পরিবারে বিরাজ করে।
বাবা আর ছোট বোনের এই সংসারে ভালবাসার বন্ধনে তাঁরা যেন স্বর্গের সুখ ভোগ করে।
ভালবাসার গভীর বন্ধনে তাদের অর্থনৈতিক দৈন্যতা এখানে ম্লান হয়ে গেছে।
নবীনদের পাশের গ্রাম কৈলাশপুর।
কৈলাশপুরের প্রবাল প্রতাপশালী নরোত্তমের ছোট মেয়ে মৌমিতা সরকার নবীন কুমারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
মৌমিতা সরকার বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
বাবা বিশাল প্রভাবশালী নরোত্তম সরকার।
অনিন্দ্য সুন্দরী মৌমিতা।
যেমন তাঁর গায়ের রঙ তেমনি তাঁর রুপ।
আলতা রঙের সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে তাঁর সর্বাঙ্গে।
যে কোন পুরুষ প্রথম দেখায় তাঁর প্রেমে পড়ে যাবে।
মৌমিতার প্রেমে গ্রামের অনেক পুরুষ পাগল হলেও কেউ ভয়ে তাঁর কাছাকাছি হয় না।
এই তো সেদিন তাদের পাশের গ্রামের দীনেশ হালদার তাঁকে প্রেম নিবেদন করে পড়েন বিপাকে।
দীনেশ হালদারের পিতা গ্রামের একজন সম্মানিত ও ধনী ব্যক্তি হলেও মৌমিতার পিতা নরোত্তের প্রভাবের কাছে কিছুই নই।
ফলস্বরূপ দীনেশ হালদারের প্রেম নিবেদনের অপরাধে তাঁর পিতাকে গ্রামের মানুষের সামনে নরোত্তমের কাছে মাফ চেয়ে ছেলের জীবন বাঁচাতে হয়েছে।
এরপর থেকে আশেপাশের গ্রামের কেউ মৌমিতার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাই না।
মৌমিতা তাঁর জীবনে পাইনি এমন কিছু নেই।
বাবার একমাত্র কন্যা সন্তানের সুবাদে সে কোন কিছু চাওয়ার আগে তাঁর পিতা নরোত্তম তাঁর সন্মুখে হাজির রাখে।
নরোত্তম সংসারের আর সবার কাছে কঠিন নির্দয় মানুষ হলেও মেয়ে মৌমিতার নিকট কোমল হৃদয়ের পিতা মাত্র।
মেয়ের অন্যায় অপরাধ তাঁর কাছে সবসময় মার্জনার।
বাবার অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েক দিন ঠিকমতো কলেজে যেতে পারছে না নবীন কুমার।
খেয়াঘাটে মাঝি না থাকলে গ্রামের মানুষ নদী পার হতে পারে না।
নদীর ঘাটে মাঝি একজন আবশ্যক।
নবীন কুমারদের দিন চলে এই খেয়াঘাটের আয়ে।
নদী পার হয়ে যে যা দেয় তাই দিয়ে দিন পার হয়ে যায়।
পিতার অনুপস্থিতিতে কাজটি নবীন কুমারের খুব ভালো লাগে।
তাঁর জন্য মানুষ নদীর ঘাটে অপেক্ষা করে।
হরেক রকম মানুষের আনাগোনা খেয়াঘাটে।
কত রকম মানুষ, কত রকম তাদের রুপ।
সবাই নবীন কুমারকে খুব ভালবাসে।
একটা শিক্ষিত ছেলে খেয়াঘাটের মাঝি কথাটি সবাই মেনে নিলেও মৌমিতা মেনে নিতে পারে না।
নবীনের মতো সুদর্শন শিক্ষিত যুবক খেয়াঘাটের মাঝি!
মৌমিতা কথাটি চিন্তা করলে তাঁর মনের মধ্যে নবীনের জন্য চিনচিনে করে ব্যাথা অনুভব করে।
হয়তো এরি নাম প্রেম,এরি নাম ভালবাসা।
নবীনের তাচ্ছিল্যতায় মৌমিতার মনে জিদ চাপে নবীনের ভালবাসা পাওয়ার।
গরীব মাঝির ছেলে নবীনের কাছে মৌমিতার প্রেম বড় লোকের মেয়ের বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
নবীনের কাছে প্রেম ভালবাসা তাঁর পরিবারকে ঘিরে।
তাঁর ভবিষ্যত জীবনের স্বপ্নকে ঘিরে।
ধনীর দুলারি মৌমিতার প্রেমের খেলায় সে জড়াতে আগ্রহী নয়।
নবীনের কলেজে মৌমিতার পদচারণা প্রায় দিন থাকে।
মৌমিতা গভীর আলিঙ্গনে নবীনকে যতই কাছে টানতে চাই।
নবীন যেন ততই দূরে সরে যায়।
নারীর মন কল্পনা প্রবণ,তাই তো এক সময় মৌমিতার ভালবাসার কাছে নবীনের হার হয়।
মৌমিতা নবীনের মনের সমস্ত বাঁধা দূর করে নবীনকে প্রেম ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে ফেলে।
গ্রামের মানুষের অলক্ষ্যে তাদের প্রেম ভালবাসা জমে উঠে।
নবীন আর মৌমিতার কলেজ পাশাপাশি হবার কারণে তাদের প্রেম চলে কলেজ প্রাঙ্গণে।
কলেজ সময়ের মধ্যে তাদের মন দেওয়া নেওয়া গভীর থেকে গভীরতার দিকে ধাবিত হতে থাকে।
একজন আরেক জনকে একদিন না দেখলে কিছুতেই তাদের দিন কাটে না।
নবীন জানে সে বামন হয়ে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগে আকৃষ্ট হয়েছে।
এর পরিমাণ ভালো হবে না।
মৌমিতার বাবা নরোত্তম একজন মানুষ রুপী জানোয়ার।
তাঁর অন্যায় অত্যাচারের হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না।
তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ২/৩ গ্রামের কাউর নেই।
নরোত্তম যদি তাদের প্রেমের কথা জানতে পারে, তাহলে সে তাঁকে মেরে ফেলবে।
মারুক সে এখন আর পৃথিবীর কাউকে ভয় না।
মৌমিতার প্রেম ভালবাসা তাঁকে আজ মৃত্যুর ভয় থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে।
কথাটি শুনে নরোত্তম প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি।
তাঁর এত আদরের মেয়ে মৌমিতা শেষ পর্যন্ত একটা মাঝির ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে!
এত আদর যত্ন আর ভালবাসা দিয়ে তিনি যে মেয়েকে বড় করছেন, সেই মেয়ে কিনা তাঁর মুখে চুনকালি দিচ্ছে।
কথাটি ভাবতেই তাঁর মনের মধ্যে হিংস্রতা বিরাজ করে।
নিজের মান সম্মান সে কিছুতেই নষ্ট হতে দেবে না।
মেয়ের এমন কর্মকাণ্ডের কথা প্রথমে সে বিশ্বাস করতে পারেনি।
কিন্তু নিজের চোখে দেখার পর তাঁর মুখে এখন কোন কথা নেই।
কথা সব মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মৌমিতার কলেজ যাওয়া বন্ধ।
নবীনের বাবাকে তাঁর লোক শাসিয়ে এসেছে।
দ্রুত নবীনকে গ্রাম থেকে বের করে দিতে হবে।
তা না হলে নবীনকে মেরে নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে।
তাঁর লাশ কেউ খুঁজে পাবে না।
মৌমিতার জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে।
টাকা যত লাগে লাগুক,দ্রুত ভালো পাত্রের হাতে মেয়েকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিতে হবে।
বাবার কঠিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মৌমিতা হতভম্ব হয়ে গেছে।
তাঁর এখন একটাই চিন্তা নবীনকে নিয়ে।
নবীনের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে বাঁচবে না।
যেভাবেই হোক নবীনকে নিয়ে তাঁর অনেক দূরে চলে যেতে হবে।
নগেন মাঝি তাঁর একমাত্র ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে হতভম্ব হয়ে গেছে।
তাঁর মুখে কোন কথা নেই।
ছেলেটি তাঁর কথা তাঁর বোনের কথা একটুও চিন্তা করলো না।
নরোত্তম খুব খারাপ লোক।
সে যখন একবার তাদের পিছনে লেগেছে তখন এই গ্রাম থেকে তাদের ঘর ছাড়া না করে শুনবে না।
আজ ছেলেকে গ্রাম ছাড়তে বলেছে কাল তাদের গ্রাম ছাড়তে হবে।
নগেন মাঝি নিরীহ প্রকৃতির মানুষ হলেও তাঁর ছেলে নবীনের মনে জিদ চেপেছে সে মরে গেলেও গ্রাম ছাড়বে না।
নগেন মাঝি ছেলেকে অনেক বোঝানোর পরেও ছেলে কোন কথা শুনতে রাজি না।
নগেদ মাঝি ছেলের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।
সে আজ নিজের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে বাবা ও বোনের জীবন নিয়ে খেলছে।
প্রচন্ড রাগ,ঘেন্নায় নগেন মাঝি আজ বাকরুদ্ধ।
নরোত্তমের কথাতে নবীন গ্রাম না ছেড়ে খেয়াঘাটে নৌকা বেয়ে চলেছে।
কথাটা নরোত্তম যেন বিশ্বাস করতে পারে না।
আজ অবদি তাঁর কথার বিরুদ্ধে গ্রামের কেউ যাবার সাহস পাইনি।
আর আজ একটা মাঝির ছেলে তাঁর নির্দেশ অমান্য করছে।
রাগে তাঁর শরীর কেঁপে উঠলো।
তাঁর লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান কৈলাশ পালোয়ানের উপর দায়িত্ব গেল নবীনের ব্যাবস্থা করার জন্যে।
নবীন খেয়াঘাটে মানুষ পারাপার করলেও তাঁর মনে যে শান্তি নেই তা গ্রামের অনেকেই টের পেল।
তাঁরা বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন রাখলেও নবীন কুমারের মুখ থেকে সত্য কথাটি বের হয় না।
সে বিভিন্ন কথা বলে সবাইকে কাটিয়ে দিতে থাকে।
খেয়াঘাটে সবাই যখন ব্যস্ত পারাপারে এমন সময় কৈলাশ পালোয়ানের আগমন ঘটে।
কৈলাশ পালোয়ানের নির্দেশে নবীনকে বেধড়ক পেটাতে থাকে।
তাঁর বাবার একমাত্র সম্বল নৌকািটি ভেঙে চুরমার করে ফেলে।
গ্রামের মানুষের সামনে নবীন কুমারের উপর এত অত্যাচারে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে।
কৈলাশ পালোয়ান ধারালো অস্ত্র ধরে গ্রামের সাধারণ মানুষদের আটকিয়ে রাখে।
নবীন কুমার মার খেতে খেতে এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
মারার পরেও এখন তাঁর দেহ আর নড়ছে না।
নবীনের আকর্ষিক মৃত্যুর বার্তা দেখে গ্রামের অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
বাঁধভেঙে গেল সাধারণ মানুষের।
রাগে,দুঃখে, বেদনায় তাদের মন বিদ্রোহ হয়ে উঠলো।
ক্ষেপে তাঁরা হঠাৎ এমন কান্ড ঘটিয়ে বসলেন পালোয়ান কৈলাশ হতভম্ব হয়ে পড়লেন।
ভয়ে খসে পড়লো তাঁর ধারালো অস্ত্র।
গ্রামের সাধারণ মানুষের এমন ভয়ঙ্কর রুপ সে আগে কখনো দেখিনি।
সারা জীবন তাঁরা গ্রামের সাধারণ মানুষদের শক্তির ভয় দেখিয়ে এসেছে।
আজ সেই গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষের আক্রমণে দিশেহারা কৈলাশ পালোয়ান ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গেল।
মুমূর্ষু নবীনকে গ্রামের সাধারণ মানুষ ধরাধরি করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করলেন।
কৈলাশের কাছ থেকে সব কিছু শুনে নরোত্তম যেন আরো ক্ষেপে উঠলেন।
অন্যদিকে ঘরে নেই তাঁর মেয়ে মৌমিতা।
নবীনের মারধরের খবর পেয়ে ছুটে গেছে তাঁর কাছে।
কথাটি নরোত্তমের কানে পৌঁছানো মাত্র নরোত্তম তাঁর ঘরে রাখা ধারালো দা হাতে দলবলসহ বেরিয়ে গেলেন হাসপাতালের দিকে।
ভয়ঙ্কর জানোয়ারের রুপে আর্বিভূত নরোত্তমের সামনে যাওয়ার সাহস কেউ পেল না।
সমস্ত গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন হাসপাতালে।
প্রচন্ড মার খেয়ে নবীন কুমার হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।
পাশে প্রিয়তমা মৌমিতা।
তাঁর চোখের জল যেন কিছুতেই থামছে না।
ডাক্তার চেষ্টা করছেন নবীন কুমারকে বাঁচানোর।
গ্রামের সাধারণ মানুষ নবীন কুমারের জীবন বাঁচাতে সৃষ্টি কর্তার নিকট আরাধনা করছে।
নরোত্তম ধারালো দা হাতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে প্রবেশে সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়ে।
সাধারণ মানুষ যার হাতে যা আছে তাই নিয়ে নরোত্তম সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।
তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তবেই নরোত্তকে হাসপাতালে ঢুকতে হবে।
সাধারণ মানুষের এমন আক্রমণে নরোত্তম যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
বাইরে মানুষের হৈচৈ মৌমিতা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন।
মেয়েকে দেখে নরোত্তম যেন জ্বলে ওঠে।
বাবার সঙ্গে কথা বলার ছলে বাবার চিন্তামগ্ন মনের সুযোগে নরোত্তমের ধারালো দা চলে আসে মেয়ে মৌমিতার হাতে।
মৌমিতা ধারালো দা তাঁর গলায় বসাতে গিয়ে বসিয়ে ফেলেন তাঁর বামহাতে।
গ্রামের হরেন ঠাকুর তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও ধারালো দা এর আঘাত কিছুটা পেয়েছেন।
মৌমিতার কাটা হাত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ দেখে নরোত্তম যেন পাগল হয়ে গেলেন।
যে মেয়েকে তিনি গায়ে টোকা লাগতে দেননি।
আর আজ সেই মেয়েকে শরীর থেকে এত রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।
নরোত্তম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
তাঁর কান্না যেন আর থামে না।
নরোত্তমের কঠিন চেহারার মধ্য থেকে পিতার স্বরুপ বেরিয়ে আসাতে গ্রামের সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে গেলেন।
মেয়ের ভালবাসার কাছে পিতা নরোত্তমের ভিতরে বাস করা পশুর যেন মৃত্যু হলো।
গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে মাফ চাইলেন।
অন্যদিকে ডাক্তার জানালেন নবীন কুমার এখন বিপদমুক্ত তাঁর জ্ঞান ফিরেছে।
পিতা নরোত্তমের হাত ধরে মৌমিতা নবীনের রুমে প্রবেশ করলেন।
মৌমিতার ভালবাসার কাছে হার হলো পিতার অহংকারের।
মৌমিতার ভালবাসার টানে নবীন কুমার আর মৌমিতার ভালবাসার জয় হলো।