মহিষাদলঃ পীতল কাঁসার শহর মহিষাদল, এবার সেই মহিষাদলের রথের মেলায় দেবদেবীর মূর্তি সহ পিতল কাঁসার জিনিস বিক্রি অনেকটাই বেশি হবে আশা শিল্পী থেকে ব্যাবসায়ীদের।বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের জিনিস কমদামে পাওয়া, পীতল ও কাঁসার জিনিস তৈরি ক…
মহিষাদলঃ পীতল কাঁসার শহর মহিষাদল, এবার সেই মহিষাদলের রথের মেলায় দেবদেবীর মূর্তি সহ পিতল কাঁসার জিনিস বিক্রি অনেকটাই বেশি হবে আশা শিল্পী থেকে ব্যাবসায়ীদের।
বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের জিনিস কমদামে পাওয়া, পীতল ও কাঁসার জিনিস তৈরি করার শ্রমিক কম পাওয়ায়, বিদ্যুৎ ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পীতল ও কাঁসা শিল্প এখন ধুঁকছে। এক সময় মহিষাদলের গড়কমল পুরের রানাপাড়ার বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হতো পীতল কাঁসার জিনিস। বর্তমান সময়ে সেই রানাপাড়ায় প্রায় ১০ থেকে ৭টি পরিবার এখন শতাব্দী প্রাচীন শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। সারা বছর কম বেশি নানান জিনিস তৈরি হয়। দুবছর করোনার কারনে সেইভাবে ব্যবসা হয়নি। হয়নি মহিষাদলের প্রাচীন রথের মেলা। তাই এবছর যাতে মেলায় ব্যবসা হয় তার জন্য মহিষাদল রাজবাড়ীর কুলদেবতা মদন গোপালজিউ,জগন্নাথ সহ নানা দেব দেবির মুর্তি তৈরি করে সেগুলির বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রথ উপলক্ষে মহিষাদলের ঐতিহ্যবাহী পীতলের তৈরি, মদন গোপাল জিউ, জগন্নাথদেব, সুভদ্রা, চাহিদা বাড়ছে। করোনা মহামারী কাটতেই এবার জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভালো অর্ডার এসেছে মহিষাদলের রানাপাড়ায়। স্থাপনের জন্য বড় মূর্তির অর্ডার পেয়ে রানাপাড়া অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এবার রথের সময় পিতল কাঁসার বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তির সঙ্গে ছোট সাইজের জগন্নাথদেবের মূর্তি বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন পীতল শিল্পীরা। মহিষাদলের ঐতিহ্যবাহী পীতল কাঁসা শিল্পের বাজার তৈরির উদ্দেশ্যে রথের সময় পর্যটকদের কাছে পিতলের তৈরি এই ছোট মিনে করা জগন্নাথদেবের মূর্তিকে স্মারক তৈরি করা হচ্ছে।
মহিষাদলের গড়কমলপুর ও ঘাগরা গ্রামে একসময় ২৫-৩০টি পরিবার পিতল কাঁসা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গৃহস্থালীর দৈনন্দিন ব্যবহারের থালা, বাটি, গ্লাস, কলসি, জলের জগের পাশাপাশি এখানকার কারিগরদের তৈরি দেবদেবীর মূর্তির সুখ্যাতি রয়েছে। ২০-৩০ হাজার টাকা থেকে দু'তিন লক্ষ টাকা দামের মূর্তি বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে। শিল্পীরা জানান দু'বছর করোনার প্রকোপ থাকার কারণে রথের মেলা বন্ধ ছিল। তার ফলে পিতল কাঁসার ব্যবসা মার খেয়েছে। এবছর রথের মেলা হওয়ার কারণে বিক্রি অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রবীণ পিতল শিল্পী ভবানী প্রসাদ রানা বলেন, এবছর একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। গত দুবছর করোনার জন্য পিতল কাঁসা শিল্প বেশ ধাক্কা খেয়েছে। কাঁচামালের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে এলাকার পিতল কাঁসার কারখানাগুলি। একদিকে তরুণ প্রজন্ম এই কাজে আগ্রহী হচ্ছে না, বিভিন্ন পেশার কাজে বাইরে চলে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
তবে মহিষাদলের রথ উপলক্ষে পিতল কাঁসার বাজার খানিকটা চাঙ্গা হয়েছে। এবার নানা জায়গা থেকে জগন্নাথদেব মূর্তির অর্ডার এসেছে। সাড়ে ৫০০ টাকা থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকার মূর্তি তৈরি হচ্ছে। দামী মূর্তির জন্য আগে থেকে অর্ডার দিতে হয়। গ্রামাঞ্চলে বাচ্চাদের রথের জন্য ছোট জগন্নাথদেবের মূর্তি ভালো বিক্রি হয়। অনেকেই এবার স্নানযাত্রার আগে অর্ডার দিয়ে মদন গোপাল জিউ, জগন্নাথদেব, সুভদ্রা ও বলরামের মূর্তি নিয়ে যাচ্ছেন।
মহিষাদলের রানাপাড়ার পীতল কাঁসার শিল্পীরা আশার আলো দেখছেন। দুবছর পর রথের মেলা বসছে। মানুষের ঢ্ল নামবে। বিক্রির আশায় রাত দিন এক করে প্রস্তুত করে যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যবহারীক জিনিস থেকে দেব দেবির মুর্তি।
