Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মহিষাদল রথযাত্রা ও লোকসংস্কৃতি উৎসবে পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য প্রকাশিত হল গাইড ম্যাপ ও শিশু পরিচয়পত্র

মহিষাদলঃ মহিষাদলবাসীদের অন্যতম গর্ব দুই শতাধিক বছরের প্রচীন রথযাত্রা উৎসব। এবছর সেই রথযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। আগত সধারন মানুষ যাতে সহজেই মহিষাদল রথ প্রাঙ্গণে পৌছাতে পারে তার জন্য গাইড ম্যাপ তৈরি করা হয়ে…



মহিষাদলঃ মহিষাদলবাসীদের অন্যতম গর্ব দুই শতাধিক বছরের প্রচীন রথযাত্রা উৎসব। এবছর সেই রথযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। আগত সধারন মানুষ যাতে সহজেই মহিষাদল রথ প্রাঙ্গণে পৌছাতে পারে তার জন্য গাইড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে শিশুরা হারিয়ে গেলে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দিতে শিশু পরিচয়পত্রও করা হয়েছে।


রবিবার মহিষাদল পঞ্চসায়েত সমিতির সভাগৃহে সংবাদিক বৈঠকের মধ্যদিয়ে মহিষাদল রথের গাইড ম্যাপ ও শিশু পরিচয়পত্রের প্রকাশ হয়। প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহিষাদলের বিধায়ক তিলক কুমার চক্রবর্তী, মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিউলি দাস, মহিষাদল থানার ওসি প্রলয়কুমার চন্দ্র সহ অন্যান্যরা।  

 রথযাত্রা শুরু হয়েছিল মহিষাদলে রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায়। মহিষাদল রাজবংশের আদিপুরুষ জনার্দন উপাধ্যায়। জনার্দন উপাধ্যায়ের উত্তরসূরিদের মধ্যে ১৭৩৮ সালে যুবরাজ আনন্দলাল উপাধ্যায় রাজপদাভিষিক্ত হন। দীর্ঘ ৩১ বছর রাজত্ব করার পর ১৭৬৯ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করলে তাঁর সহধর্মিণী রানি জানকী রাজত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণা ছিলেন। ১৭৭৬ সালে তিনি মিলনমেলার উদ্দেশ্যে এক রথ তৈরি করা শুরু করেন। কিন্তু তাঁর আমলে সেই রথ চলা শুরু হয়নি। ১৮০৫ সালে রাজবংশের মতিলাল পাঁড়ে (উপাধ্যায়)-এর সময়ে সেই রথ চলা শুরু হয়।



রথের ইতিহাস বহু প্রাচীন। আগে সতেরো চূড়া রথ ছিল। এখন তেরো চূড়া রথ হয়েছে। তেরো চূড়া রথের চাকার উচ্চতা ৪ ফুট। বেধ ৮ ইঞ্চি ও পরিধি ১২ ফুট। লোহার পাত দিয়ে মোড়া মোট ৩৪টি চাকা আছে। রথের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। তবে কলস ও ধ্বজা দিয়ে সাজানো হলে উচ্চতা ৫০ ফুটের বেশি হয়ে যায়। প্রথম রথ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় চৌষট্টি হাজার টাকা। বর্তমান সময়ে রথে সাজাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা।মহিষাদলের রথের কারুভাস্কর্য বা কারুকার্যগুলি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর বহিরঙ্গ সজ্জায় প্রতি কোণে উল্লম্বভাবে যে ত্রিকোণ কারুকার্যযুক্ত থাম লাগানো আছে তা শিল্পীর ভাষায় 'বর্ণা' নামে পরিচিত। এর অলঙ্করণের বিষয়বস্তুও অদ্ভুত যা একান্তই কৌতূহলের উদ্রেক করে। রথের ভাস্কর্য 'দ্য চেন অফ ডেথ' নামে খ্যাত। এই ধরনের একটি কৌণিক ভাস্কর্য যা কিনা সংগ্রহ করে লণ্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে সংগৃহীত হয়েছে। যতদূর অনুমান এই ধরনের উন্নত দারুভাস্কর্যগুলি বেশ প্রাচীন। মহিষাদলের প্রখ্যাত শিল্পী মাধব দে ১৯১২ সালে বর্তমান রথে অনেক মূর্তি ও ঘোড়া দু'টি নির্মাণ করেন। এই ঘোড়া দু'টি তাঁর শিল্পনৈপুণ্যের অনন্য স্বাক্ষর। তবে বর্তমান তেরো চূড়া রথের উন্নত কারিগরি কৃতকৌশলের নৈপুণ্য কিন্তু রাজা লছমন প্রসাদের প্রখ্যাত স্থপতি ফরাসি বন্ধু মশিয়ে পেরুর।



পুরী, মাহেশের পরেই মহিষাদলের রথের নাম শোনা যায়। ভারতে একমাত্র কাঠের রথ হল মহিষাদলের প্রাচীন এই রথ। মহিষাদলের রথ মদনগোপাল জিউ-র রথ নামে খ্যাত। মদনগোপল জিউর সঙ্গে থাকেন জগন্নাথ ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ।



মহিষাদলের বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমতী শিউলি দাস জানান, মহিষাদলের রথকে এ বছর আরও নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মেলার আকর্ষণ বাড়াতে জগন্নাথের মাসিবাড়ি গুণ্ডিচাবাটিতে ৩ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে যাত্রা, লোকগান, বাউল, ছৌনৃত্য সহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অতিথি সংগীতশিল্পী হিসেবে থাকবেন জি-বাংলা খ্যাত সায়ম পাল, ঋষি চক্রবর্তী এবং অন্যান্য সংগীতশিল্পীরা। রথের দিন ২০ হাজার পুণ্যার্থীদের হাতে মদনগোপাল জিউর প্রসাদ তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁরা বলেন, ১লা জুলাই রথযাত্রা এবং ৯ জুলাই উল্টোরথ। এ বছর রথযাত্রার মেলা ২৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে।



 তবে করোনা স্বাভাবিক হওয়ায় এ বছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটতে পারে। তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি, পুলিশ-প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। পুণ্যার্থীদের মেলা ও রথ দর্শনের সুবিধার জন্য এই প্রথম রুটম্যাপ ও শিশুদের জন্য পরিচয় পত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মহিষাদল শহরে সিসি টিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হবে।