দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর : অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কলকাতা ন্যূনতম বেদনাদায়ক কার্ডিয়াক সার্জারি (MICS) র মাধ্যমে তিনজন আশি ঊর্ধ্ব মানুষকে নতুন জীবন দিল। MICS হল হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের এক নতুন পথ, যার একগু…
দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর : অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কলকাতা ন্যূনতম বেদনাদায়ক কার্ডিয়াক সার্জারি (MICS) র মাধ্যমে তিনজন আশি ঊর্ধ্ব মানুষকে নতুন জীবন দিল। MICS হল হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের এক নতুন পথ, যার একগুচ্ছ সুবিধা রয়েছে। প্রথাগত ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি কাটার বদলে এই সার্জারিতে ১.৫ থেকে ৩ ইঞ্চি কাটলেই কাজ হয়ে যায়। MICS কম বেদনাদায়ক এবং প্রায় ক্ষতবিহীন। এই সার্জারির পর সেরে ওঠা যায় খুব তাড়াতাড়ি, ফলে হাসপাতালে থাকতে হয় কম দিন এবং চট করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়।
বুকে ব্যাথা নিয়ে একজন ৮৫ বছর বয়সী এবং একজন ৮৭ বছর বয়সী মানুষ অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস কলকাতায় এসেছিলেন । আলাদা আলাদা অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দেখা যায় এমন ধরনের গুরুতর ব্লকেজ আছে যার চিকিৎসা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি দিয়ে করা যাবে না। ফলে দুজনের জন্যই ওপেন হার্ট সার্জারি একমাত্র বিকল্প ছিল। কিন্তু তাঁদের বয়সের কারণে সার্জারি চিকিৎসার প্রথম পছন্দ ছিল না। ওই বয়সে বাইপাস হার্ট সার্জারি না করাই ভাল, কারণ একটা বড় সার্জারি খুব মসৃণভাবে হয় না আর সার্জারি সংক্রান্ত নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। MICS-এর মাধ্যমে দুজন রোগীরই মাল্টি ভেসেল গ্রাফটিং করা হয়েছিল এবং দুজনেই দুদিনের মধ্যে হাঁটাহাঁটি শুরু করেন। স্বাভাবিক রুটে কার্ডিয়াক সার্জারি করলে এটা ভাবাই যায় না।
এই উপলক্ষে ডাঃ সুষণ মুখোপাধ্যায়, ডিরেক্টর, কার্ডিও থোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জেন, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতা, বললেন, “৪০০০-এর বেশি MICS করার রেকর্ডসম্পন্ন অ্যাপোলোর ডাক্তাররা ন্যূনতম হস্তক্ষেপ করে কার্ডিয়াক সার্জারি করেন। আমাদের এখানে আরও একজন ৮২ বছর বয়সী রোগী এসেছিলেন কার্ডিও জেনিক শক, সিভিয়ার এওর্টিক ভালভ স্টেনোসিস নিয়ে। আমরা MICS-এর মাধ্যমে ট্রান্স-ক্যাথিটার এওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট (TAVI) করি। তিনি ৪৮ ঘন্টায় পুরোপুরি সেরে ওঠেন। আরও চেক-আপে দেখা গেছে তাঁর হৃদপিণ্ডের কাজে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং তিনি স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন।”
আগে করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (CABG), ভালভ সারাই অথবা প্রতিস্থাপন, হৃদপিণ্ডের ছিদ্র বন্ধ করা ইত্যাদিতে ওপেন সার্জারিই ছিল একমাত্র সমাধান। কিন্তু এখন মেডিকাল সায়েন্সের উন্নতির ফলে MICS-এর মাধ্যমে করা প্রোসিডিওরগুলো হল ন্যূনতম বেদনাদায়ক বাইপাস সার্জারি (MICS CABG), এন্ডোস্কোপিক ভেন ও রেডিয়াল আর্টারি হারভেস্টিং, MICS এওর্টিক ভালভ, ন্যূনতম বেদনাদায়ক মাইট্রাল ভালভ সার্জারি, কিহোল ASD ক্লোজার এবং করোনারি বাইপাস।
কিহোল হার্ট সার্জারি করা হয় বিশেষভাবে তৈরি সার্জিকাল সরঞ্জাম দিয়ে। ভারতের মোট মৃত্যুর ১৪.৫% হার্ট অ্যাটাকে হয় এবং MICS CABG বা কিহোল বাইপাস করোনারি আর্টারি ডিজিজের রোগীদের জন্য একটা সমাধান হিসাবে উঠে এসেছে। এই সার্জারিগুলো নিরাপদে করতে পারার ব্যাপারে যেসব সন্দেহের জায়গা ছিল, সেগুলো এড়ানো গেছে। যদি MICS নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসাবে সব জায়গায় চালু করা হয়, তাহলে মানুষ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির চেয়ে MICS বাইপাসের দিকেই বেশি ঝুঁকবেন এবং ১৪.৫% সংখ্যাটা অবশ্যই বদলাবে। রুটিন মাল্টি-ভেসেল বাইপাস মৃত্যুর সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলবে।
MICS-এর অনেকগুলো বাড়তি সুবিধা রয়েছে:
• অতি উন্নত সরঞ্জাম এবং উন্নত কৌশলের ফলে অস্ত্রোপচার নিরাপদে করা সম্ভব হয়
• কোনো হাড় কাটা হয় না
• রক্তপাতের পরিমাণ অগ্রাহ্য করার মত, ফলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। রক্তবাহিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না
• আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পরে ফুসফুসে সংক্রমণের পরিমাণ কমে যায়। তাই এই সার্জারি ডায়বেটিসের রোগী বা সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল এমন রোগীদের জন্য আদর্শ
• যে ছিদ্রটা করা হয় তা একেবারেই ছোট, মাত্র ২-৩ ইঞ্চির। ফলে হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছে এটা বোঝা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সুতরাং ক্ষত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
• হাসপাতালে থাকার এবং সেরে ওঠার সময় এই কেসে ন্যূনতম এবং স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণত অস্ত্রোপচারের ৭ দিনের মধ্যে রোগী পুরোপুরি সেরে ওঠেন
• ভবিষ্যতের অস্ত্রোপচারগুলোতে ঝুঁকির দিক উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।