কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর: ভারতের বৃহত্তম শাখাহীন ব্যাঙ্কিং ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক PayNearby আজ ঘোষণা করেছে যে ২০২২ সালে সারা ভারতের আধা শহুরে ও গ্রামীণ এলাকার খুচরো কাউন্টারগুলোতে সাহায্যকারী আর্থিক লেনদেনে মূল্য ও পরিমাণের দিক থেকে বৃদ্…
কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর: ভারতের বৃহত্তম শাখাহীন ব্যাঙ্কিং ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক PayNearby আজ ঘোষণা করেছে যে ২০২২ সালে সারা ভারতের আধা শহুরে ও গ্রামীণ এলাকার খুচরো কাউন্টারগুলোতে সাহায্যকারী আর্থিক লেনদেনে মূল্য ও পরিমাণের দিক থেকে বৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২৫% ও ১৪%। এ থেকে এইসব অঞ্চলগুলোতে ক্রেতাদের ব্যবহারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমশ আরও বেশি সংখ্যক নাগরিক তাঁদের ব্যাঙ্কিং প্রয়োজন এবং জীবনযাপনের আরও নানা প্রয়োজন মেটাতে সাহায্যকারী ডিজিটাল পথগুলো বেছে নিয়ে বিধিবদ্ধ অর্থনীতিতে যোগদান করছেন।
বৃদ্ধির পরিসংখ্যান PayNearby-এর সমস্ত প্রোডাক্টেই লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে আছে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI), টাকা তোলা, এমএসএমই ঋণ, ইউটিলিটি পেমেন্ট, ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, সাহায্যকারী ই-কমার্স এবং আরও অনেককিছু। নাগরিকরা এই পরিষেবাগুলো স্থানীয় কিরানা স্টোর, মোবাইল রিচার্জ স্টোর, ওষুধের দোকান, গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র (CSP), ট্র্যাভেল এজেন্ট প্রভৃতি জায়গা থেকে নিয়েছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) লেনদেন PayNearby খুচরো কাউন্টারগুলো মূল্যের দিক থেকে এবং পরিমাণের দিক থেকে যথাক্রমে ৬৫০% ও ৫০০%-এর বিপুল বৃদ্ধির মুখ দেখেছে। এ থেকে দেশের টিয়ার ২ অঞ্চলগুলোর বাইরেও UPI-এর ব্যবহার যে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে তা প্রমাণিত হচ্ছে। ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে UPI যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে পারে তাও এই তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
এই তথ্যগুলো PayNearby প্রকাশিত ‘রিটেল-ও-নমিক্স’ শীর্ষক রিপোর্টের দ্বিতীয় সংস্করণের অংশ। এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এক মিলিয়নের বেশি খুচরো কেন্দ্রের লেনদেনের ভিত্তিতে। রিপোর্টের ফলাফলগুলো টানা হয়েছে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সংগৃহীত ব্যবসায়িক তথ্যের সঙ্গে ২০২১ সালের একই সময়ের তথ্যের তুলনা করে।
এই রিপোর্টের অন্যতম প্রধান সিদ্ধান্ত হল mPOS ব্যবসার বৃদ্ধি হয়েছে ১০০%-এর বেশি। সেইসঙ্গে মাইক্রো এটিএম এবং mPOS ইনস্ট্রুমেন্টগুলোর ২৫% বৃদ্ধি হয়েছে। খুচরো দোকানগুলোতে ডিজিটাল পেমেন্ট বিকল্পের চাহিদা বৃদ্ধি পরিকাঠামোর অভাব ঘোচাতে এবং লেনদেনের একেবারে শেষ প্রান্তে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে চালিত করতে ছোট খুচরো স্টোরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে চিহ্নিত করে।
মাইক্রো এটিএম ও AePS-এর মাধ্যমে টাকা তোলা এখনো আধা শহুরে ও গ্রামীণ ডিজিটাল কাউন্টারগুলোর আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। সেই ব্যবসার মূল্য ও পরিমাণের দিক থেকে সামগ্রিক বৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৮% ও ৯%। মাইক্রো এটিএমের মাধ্যমে টাকা তোলায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যের দিক থেকে ২৫% বৃদ্ধি হয়েছে এবং পরিমাণের দিক থেকে ২৮% বৃদ্ধি হয়েছে। বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যান দেখিয়ে দিচ্ছে সহজে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নাগাল পাওয়া নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ক্যাশ-অ্যাট-স্টোর ব্যবস্থা আরও কার্যকরী উপায়ে ব্যবহার করায় সাহায্য করতে এবং তাঁদের আয় বাড়াতে ওই ছোট পোর্টেবল যন্ত্রটার ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। তবে লেনদেন পিছু গড় নগদ টাকা তোলা সামান্য কমেছে। ২০২১ সালে যা ছিল ২৬২০ টাকা, ২০২২ সালে তা ২৫৯৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী সাহায্যকারী আর্থিক লেনদেনের এই দু অঙ্কের বৃদ্ধিতে আধা শহর ও গ্রামীণ ভারত সমান অংশীদার এবং যে হারে এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে তাতে পর্যাপ্ত পরিষেবা না পাওয়া শহুরে ও গ্রামীণ জনসংখ্যা তুলনাযোগ্য।
রিপোর্টে নগদ সংগ্রহের ব্যবসাতেও (ইএমআই সমেত) ২০০% বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, মাসিক গড় ১৪০০ কোটি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ঋণ নেওয়া এবং অন্যান্য আর্থিক সমাধানের চাহিদা প্রাক-অতিমারী স্তরে ফিরে আসতে চলেছে। বেশিরভাগ নগদ সংগ্রহ প্রক্রিয়াতেই চাহিদা বাড়তে দেখা গেছে। এই প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে লজিস্টিক্স ও ই-কমার্স কোম্পানিগুলো থেকে সংগ্রহ, যা পরিমাণের দিক থেকে এক লাফে ৮৯%-এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরো স্টোরগুলোতে ক্রেতাদের বিমা প্রিমিয়াম দেওয়াও সার্ভের সময়কালে বিপুল বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রিমিয়াম ৩৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জমা দেওয়া ৩৬৫% বেড়েছে।
রিপোর্টে যা পাওয়া গেছে সেগুলো সম্পর্কে আনন্দ কুমার বাজাজ, প্রতিষ্ঠাতা, এম ডি এবং সিইও, PayNearby মন্তব্য করেন “রিপোর্টের ফলাফল প্রেরণাদায়ক এবং ভারত যে ইন্ডিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তৈরি হচ্ছে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। ভারত উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং সাহায্যকারী বাণিজ্য, ওটিটি সাবস্ক্রিপশন, মাইক্রো-লেন্ডিংয়ের মত গ্রীন শুট পরিষেবাগুলোর ক্রমশ বেড়ে চলা হাতের কাছের স্টোরে এই পরিষেবাওগুলোকে সহজলভ্য করে তোলার ব্যাপারে আমাদের দায়বদ্ধতাকে সঠিক বলে প্রমাণ করে।
২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসেই আমরা ৭০,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি মূল্যের ডিজিটাল পরিষেবা দিয়ে ফেলেছি এবং টাকা তোলার ব্যবসার ধারাবাহিক বৃদ্ধি, সঙ্গে গ্রীন শুট পরিষেবাগুলোর দ্রুত গ্রহণ ইঙ্গিত করছে অতিমারীর বিধ্বংসী প্রভাব আমাদের অর্থনীতি ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে। আমরা উচ্চমানের প্রযুক্তিকে আরও সহজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাব যাতে বেশিরভাগ পরিষেবার গণতন্ত্রীকরণ করা যায় এবং আমাদের গভীর ডিস্ট্রিবিউশন-অ্যাজ-এ-সার্ভিস নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে সেগুলো নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়।
খুচরো ব্যবসার গোষ্ঠীর মধ্যে হাতের কাছের স্টোরে সাহায্যকারী আর্থিক লেনদেনের দ্রুত চাহিদা বৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক। এটা যে শুধু ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধি করার দারুণ ব্যবস্থা তাই নয়, দেশটাকে একেবারে নিচ থেকে তৈরি করার এবং ভারত আর ইন্ডিয়ার ব্যবধান ঘোচাতেও সাহায্য হয়। PayNearby, এগোবার জেদ।”
সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক ডিজিটাল পরিষেবাগুলো, যেমন ওটিটি, অনলাইন শিক্ষা, অনলাইন গেমিং – এসব ক্ষেত্রেও ইতিবাচক বৃদ্ধি দেখা গেছে। তার সংখ্যাগুলো খুব বড় না হলেও প্রমাণ হয় যে ওরকম পরিষেবাগুলোর চাপা দাবি রয়েছে এবং অতিমারীর পরের ভারতের ডিজিটাল প্রোডাক্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বাড়ছে।
স্থানীয় স্টোরগুলোতে বিল পেমেন্ট পরিষেবা মূল্যের দিক থেকে ১২% এবং পরিমাণের দিক থেকে ১০% বেড়েছে। মোবাইল রিচার্জ গত এক বছরে ১৮% বেড়েছে। এবারের উৎসবের মরসুমে ট্র্যাভেল বুকিং বিমানের ক্ষেত্রে ৮% এবং রেলের ক্ষেত্রে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬% বেড়েছে। এর মূল কারণ বন্ধুবান্ধব ও পরিবার নিয়ে উৎসবে মানুষের নিজের আদি নিবাসে যাওয়ার প্রবণতা। রিপোর্ট বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে আগের কোয়ার্টারের চেয়ে এই কোয়ার্টারে প্যান কার্ড ইস্যু হওয়া ৮৮% বেড়েছে। এই সমস্ত তথ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে স্থানীয় কিরানা স্টোর ক্রেতাদের বেশিরভাগ আর্থিক ও ডিজিটাল প্রয়োজন মেটানোর মত মাল্টি-ইউটিলিটি পয়েন্ট হয়ে উঠেছে।
এই সময়কালে এমএসএমইদের জন্য মাইক্রো ক্রেডিটও ২৬৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে এই সেগমেন্টে কার্যকরী ঋণের চাপা চাহিদা রয়েছে। ভারতকে উন্নয়নের পরবর্তী স্তরে পৌঁছতে হলে এই চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
রিপোর্টে আরও একটা কৌতূহলোদ্দীপক জিনিস পাওয়া গেছে। প্রায় ৩২% ব্যাঙ্কিং লেনদেন ঘটেছে দিনের নন-ব্যাঙ্কিং সময়টায়, অর্থাৎ সন্ধে ছটা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে। এই ঘটনা খুচরো আউটলেটগুলো জনতার ব্যাঙ্কিং ও ডিজিটাল প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা চিহ্নিত করে।