Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সুরক্ষিত রাখুন প্রিয়জনদের; পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত রাখতে গোদরেজ নিয়ে আসলো যুগান্তকারী সমাধান

দেবাঞ্জন দাস,৯ ফেব্রুয়ারি: মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে ভারতের এক লাফে বিরাট অগ্রগতি হল। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বোর্ন ডিজিজেজ কন্ট্রোল, ম্যালেরিয়া নো মোর ইন্ডিয়া, ফর্টিস হসপিটাল নয়ডা এবং অন্যান্য জায়গার বিশেষজ্…



দেবাঞ্জন দাস,৯ ফেব্রুয়ারি: মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে ভারতের এক লাফে বিরাট অগ্রগতি হল। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বোর্ন ডিজিজেজ কন্ট্রোল, ম্যালেরিয়া নো মোর ইন্ডিয়া, ফর্টিস হসপিটাল নয়ডা এবং অন্যান্য জায়গার বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে লঞ্চ করা হল গোদরেজ কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড (GCPL)-এর তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে শস্তা মস্কিটো-রিপেলেন্ট যন্ত্র এবং নো-গ্যাস ইনস্ট্যান্ট মস্কিটো-কিল স্প্রে।

গুডনাইট মিনি লিকুইড এবং হিট নো-গ্যাস স্প্রে ব্র্যান্ডের এই উদ্ভাবনগুলো সুরক্ষিত ও ধোঁয়াবিহীন মশার হাত থেকে বাঁচার উপায় কম আয়ের ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে এনে দেয়। এঁদের অনেকেই এখন অসুরক্ষিত ও অনিয়ন্ত্রিত ধোঁয়া ছড়ানো মশার ধূপ ব্যবহার করেন। ডাক্তাররা এই কৃত্রিম ধূপগুলোর বিরুদ্ধে সাবধান করেন কারণ এগুলো ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, রিঅ্যাক্টিভ এয়ারওয়েজ ডিজিজ ও অন্যান্য অসুখের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত ধোঁয়াবিহীন সমাধানের কথা অনেকেরই জানা থাকলেও শুধুমাত্র বেশি দামেই সেগুলো পাওয়া যেত এবং এমন সব বৈশিষ্ট্য সমেত, যেগুলো ক্রেতাদের প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খেত না।

 

GCPL এই প্রয়োজনগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে এবং যুগান্তকারী গবেষণার মাধ্যমে সমাধান উদ্ভাবন করেছে। প্রথমত, চিহ্নিত করেছে যে বহু কম আয়ের পরিবারের বাড়িতে সারারাত প্রচুর মশার প্রকোপ থাকে। সুতরাং তাঁদের বাড়িতে ধারাবাহিক হাই রিপেলেন্ট প্রভাব থাকা দরকার। এর ফলেই তৈরি হয়েছে সারারাত চলার কার্যকারিতাসম্পন্ন সিঙ্গল মোড মেশিন হিসাবে গুডনাইট মিনি। এর দাম ধার্য করা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা (রিপেলেন্ট মেশিন + রিফিল) এবং রিফিলের দাম ৩৫/-। এই সমাধান এক রাত ব্যবহারের খরচ মাত্র ২.৫ টাকা। ভারতের বিদ্যুতায়ন ৯৫% শতাংশের মাইলফলক পেরিয়ে গেছে (মার্চ ২০২২-এ প্রকাশিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে – ৫ অনুসারে), ফলে এই যন্ত্র বহু লোক গ্রহণ করবেন বলে আশা করা যায়।

দ্বিতীয়ত, কম আয়ের পরিবারগুলোর বাড়িতে যেহেতু তুলনায় ছোট আকারের ঘর থাকে, তার পক্ষে বড় ঘরে ছড়ানোর জন্য ডিজাইন করা দামি LPG-ভিত্তিক এয়ারোসল স্প্রে জুতসই নয়। GCPL নো-গ্যাস ডিওডোর‍্যান্টগুলোর থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে তৈরি করেছে হিট নো-গ্যাস স্প্রে। এ হল এক উদ্ভাবনীমূলক ইনস্ট্যান্ট মস্কিটো-কিল, জলভিত্তিক স্প্রে যার একেকবারের খরচ মাত্র ১.৫ টাকা। GCPL-এর করা পরীক্ষা অনুযায়ী হিট নো-গ্যাস স্প্রে কৃত্রিম ধূপগুলোর চেয়ে তাড়াতাড়ি মশা মারে, অথচ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং ধোঁয়াবিহীন।

এই সাধ্যের মধ্যে থাকা উদ্ভাবন সম্পর্কে সুধীর সীতাপতি, এম ডি এবং সিইও, গোদরেজ কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড (GCPL), মন্তব্য করেন “এখন পর্যন্ত আমাদের মশাবাহিত রোগগুলোর প্রভাব কমানোর কাজে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। তবে এগোনোর পথ হল বিশেষ করে ছোট শহর, মফস্বল এবং গ্রামীণ এলাকার মানুষের ক্ষমতায়ন। মশার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী সমাধান হল লিকুইড রিপেলেন্ট আর এয়ারোসল। কিন্তু বেশি দামের কারণে সেগুলো মোটের উপর কম আয়ের পরিবারগুলোর নাগালের বাইরেই থেকে যায়। GCPL-এ আমরা গুডনাইট মিনি আর হিট নো-গ্যাস স্প্রে চালু করতে পেরে গর্বিত। এই উদ্ভাবনগুলো ভারতে লিকুইড রিপেলেন্ট ও স্প্রে ক্যাটেগরির দাম ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে দিচ্ছে এবং সকলের নাগালের মধ্যে এনে দিচ্ছে। এই উদ্ভাবনগুলোর মাধ্যমে আমরা সুরক্ষিত মস্কিটো রিপেলেন্টগুলোকে কম আয়ের ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। দেশের স্বাস্থ্যের বোঝা কমানোর যে স্বপ্ন সরকারের রয়েছে তাকে সমর্থন জোগানো আমাদের বৃহত্তর দায়বদ্ধতা।”

লঞ্চের অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্যানেল ডিসকাশনে প্রতীক কুমার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ম্যালেরিয়া নো মোর ইন্ডিয়া, মত দিলেন “মশাবাহিত রোগগুলো, বিশেষত ম্যালেরিয়া, জনস্বাস্থ্যের সমস্যা এবং আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। আমাদের যদি প্রধানমন্ত্রীর ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ামুক্ত দেশ গড়ার যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে তাকে সফল করতে হয়, তাহলে প্রতিরোধ পেরিয়ে অন্য কৌশল নিতে হবে, যাতে রোগ নির্মূল করা নিশ্চিত করা যায়। নতুন যুগের যন্ত্রগুলো এবং প্রযুক্তি এতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীরা এক বড়সড় ভূমিকা পালন করবে। ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে হলে সমস্ত অংশের মানুষকে একসঙ্গে এমন একটা রোগের উপর বেশি করে নজর দিতে হবে যা বেশি মনোযোগ দাবি করে। আমাদের নতুন নতুন সমাধান, উচ্চমানের প্রযুক্তি তৈরি করতে হবে যাতে দ্রুত এগুলোর নাগাল বেশি মানুষের কাছে পৌঁছয় এবং যথাসময়ে লাস্ট-মাইল হস্তক্ষেপ সম্ভব হয়। আরও জরুরি হল কম আয়ের মানুষের হাতে মহামারীপ্রবণ এলাকাগুলোতে কম দামি সমাধান তুলে দেওয়া। এটা পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বেশি করে জোর দেওয়ার মত অন্যতম জায়গা।”

“জলবায়ু পরিবর্তনের মত ব্যাপারগুলোর জন্যে ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গু হওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে, ফলে দেশের উপর এই রোগগুলোর ভার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। চিকিৎসা জগতের লোকেরা যদিও দ্রুত সেরে ওঠার জন্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গবেষণা করে চলেছেন, নিজেদের মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচানোর জন্যে মানুষের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াও সমান জরুরি। যদিও সাধারণ মানুষ মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন, তাঁরা ঘনঘন বিপজ্জনক এবং অনিয়ন্ত্রিত মশা তাড়ানোর ধূপ জাতীয় বিকল্পের দিকে ঝোঁকেন, যা থেকে আরও বেশি রোগ এবং নিশ্বাস প্রশ্বাসজনিত অসুখ হতে পারে। যদিও এই ধূপগুলো কম দামি, স্বাস্থ্যের উপর এগুলোর খারাপ প্রভাব সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। এই কারণে উদ্ভাবন এবং সকলের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয় এমন শস্তা সমাধান সুলভ করা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন,” বললেন ডাঃ রাহুল শর্মা, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর – পালমোনোলজি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার, ফর্টিস হসপিটাল, নয়ডা।

GCPL দেশের ভেক্টর বাহিত অসুখগুলোর প্রভাব কমানোর ব্যাপারে দায়বদ্ধ। গুডনাইট এবং হিটের মত ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে এই কোম্পানি বহু বছর ধরে সমস্ত ফর্ম্যাটে বিভিন্ন উদ্ভাবন ঘটিয়ে চলেছে।

২০১৬ সালে GCPL তাদের CSR প্রয়াসও লঞ্চ করে, যার নাম এলিমিনেশন অফ ভেক্টর-বোর্ণ ডিজিজেজ (EMBED) প্রোজেক্ট। এই প্রকল্প ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করার জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই প্রকল্প চালাচ্ছে ফ্যামিলি হেলথ ইন্ডিয়া (FHI)। যৌথ উদ্যোগে তার সঙ্গে আছে বিভিন্ন এনজিও এবং মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়ের স্বাস্থ্য দপ্তরগুলো। EMBED-এর লক্ষ্য ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ঘটনা খুব বেশি এরকম এলাকাগুলোতে অসুস্থতা ও মরণশীলতা কমানো। আজ পর্যন্ত EMBED মধ্যপ্রদেশের ৯ জেলায়, উত্তরপ্রদেশের ৪ জেলায় এবং ছত্তিসগড়ের ২ জেলায় ২,০০০+ গ্রামের ৫ লক্ষের বেশি পরিবারে চালানো হয়েছে। GCPL-এর EMBED প্রকল্প এমন একটা পরিমাপযোগ্য মডেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যা ভারতের এইসব রোগে বেশি করে আক্রান্ত হয়ে এমন গ্রামগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ামুক্ত করার লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করতে পারে।

বৃহত্তর বদল আনার ক্রমাগত প্রয়াসের মাধ্যমে GCPL-এর নতুন কম দামি উদ্ভাবন ভেক্টর-বাহিত রোগমুক্ত দেশ তৈরি করার সরকারি স্বপ্নকে মদত জোগাচ্ছে।