#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন #কথার_পিঠে#কলমে_কুহেলী_মুখার্জী
সন্ধ্যা থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা, শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না কোয়েলের। অসময়ের গরম আর প্যাচপ্যাচে বৃষ্টিতে মাইগ্রেন যেন জাঁকিয়ে বসেছে। --"দাদা কি ওষুধের নাম বলেছিল যেন, উফ ছিঁড়…
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
#কথার_পিঠে
#কলমে_কুহেলী_মুখার্জী
সন্ধ্যা থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা, শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না কোয়েলের। অসময়ের গরম আর প্যাচপ্যাচে বৃষ্টিতে মাইগ্রেন যেন জাঁকিয়ে বসেছে। --"দাদা কি ওষুধের নাম বলেছিল যেন, উফ ছিঁড়ে যাচ্ছে মাথাটা।"
কোনমতে ফোন করে নির্দিষ্ট নম্বরে, নম্বরটা ব্যস্ত যান্ত্রিক স্বর জানান দেয়। বারেবারে কল করেও উত্তর না মেলায়, অবশেষে কোনমতে ঘর অন্ধকার করে মাথা গুঁজে খাটের এককোণে শুয়ে পড়ে সে। অনেক রাতে ঘুম ভাঙে ফোনের কর্কশ স্বরে। মাইগ্রেন তখন হাওয়া, তার কোন অস্তিত্বই আর সে অনুভব করতে পারছে না। এদিকে
খিদেও পেয়েছে ভীষণ, মাথাব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে বলে কোয়েলের মা ওকে আর ডাকেননি ঘুম থেকে।
রাতের খাবার শেষ করতেই মনে পড়লো, বেশ কিছুক্ষণ আগে ফোন বাজছিল না! ফোনটা হাতে নিয়েই দেখে আকাঙ্খিত ফোন , মাকে "গুডনাইট" বলে কোয়েল ওনাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলে। আজ এমনিও রাতে অনেকক্ষন ঘুম আসবে না, সন্ধ্যায় এতক্ষণ ঘুমানোর জন্য। ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে মেসেজ আসে--"কিরে বাবু ফোন করেছিলিস? বলতে পারিস।"
কল করতেই যান্ত্রিক স্বর বলে-"যে নম্বরে আপনি কল করেছেন,সেটি এখন ব্যস্ত আছে, অনুগ্রহ করে..."কথা শেষ না হতেই ওপাশের থেকে কাঙ্খিত স্বর বলে ওঠে--"হ্যাঁ রে বল।" কোয়েল বলে--"আসলে একটু দরকারে ফোন করেছিলাম দাদা, আজ আবার মাথাব্যথাটা খুব কষ্ট দিয়েছে। ওষুধের নামটা বলবে প্লিজ।" নামটা বলার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে হাসকি সুরে কে যেন বলে ওঠে--"সরি টু ইন্টারাপ্ট , কোয়েল তোর যখন মাথাব্যথা করছে, তাহলে আজ আর কথা বলিস না, কি বলো দা?"
কোয়েল অবাক হয়ে যায় গলার স্বরে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত পৌনে বারোটা।কোনমতে বিস্ময়ের ভাবটা চেপে রেখে বলে--"রিনি দি না?"মনে মনে কোয়েল ভাবে, ভোর ছটায় যে মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার জন্য দূরপাল্লার ট্রেন ধরে সোম থেকে শনিবার--সে এতরাতে জেগে থাকে কি করে, ঘুম পায় না?" ওপাশ থেকে উত্তর আসে--"হ্যাঁ রে কোয়েল, আসলে সারাদিন কাজের পরে এই রাতটুকুই একটু সময় পাই আড্ডা দেওয়ার।এই তো এবার শুয়ে পড়বো।" কোয়েল বলে--"দাদা রিনিদির সাথে তুমি কথা বলছিলে, তাই ফোনটা এঙ্গেজ বলছিল না?"
প্রসঙ্গ পাল্টে কোয়েলের দাদা বলেন--"একটা নতুন কবিতা লিখলাম, দেখ তো কেমন হলো--মন দিয়ে শুনবি।
--তারপর চাঁদ উঠলো তোমার চিবুক ছুঁয়ে,
নাভিমূলে কস্তুরী সুগন্ধ মেখে তুমি লায়লা হতে চাইলে,
আমি শুধু তোমার প্রেম ছুঁতে চেয়ে ঝাঁপ দিলাম
তোমার অতল জলের আহ্বানে।।"
কোয়েল কিছু বলার আগেই শুনতে পায় রিনির উচ্ছসিত স্বর--"অসাধারণ হয়েছে দা, দারুণ হয়েছে।" ওপারে রিনি আর কোয়েলের দাদা অর্থাৎ ঋষি বলে ওঠে--"কিরে কোয়েল কেমন লিখেছি বললি না তো?" কোয়েল অন্যমনস্ক হয়ে বলে--"খুব সুন্দর লিখেছো, মানেটা.."
ঋষি বলে--"শুধু শুনলেই হবে, মন থেকে বুঝতে হবে--দেখ রিনি কিন্তু খুব ভালো কবিতা লেখা শিখেছে,ও কিন্তু আমার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ে।" একটু থেমে বলে--" বুঝলি না তো? একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার সাথে এভাবেই মিশে যেতে চায়।"
কি ভেবে কোয়েল বলে ফেলে--"দাদা ,বৌদি কোথায় গো? তোমার কবিতা শুনতে এইমুহূর্তে ফিদা হয়ে যেত, এত সুন্দর করে তুমি আবৃত্তি করছিলে।" ঋষি একটু যেন ক্ষুন্নস্বরে বলে--"এখন রাত্রিবেলা, তোর বৌদি সারাদিন স্কুল করার পর মেয়েকে নিয়ে পাশের ঘরে ঘুমিয়ে গেছে। এসব তার পোষাবে না।"
অবাক হয়ে কোয়েল ভাবতে থাকে, যে মানুষটা দাদার কবিতা শুনে ,ভালোবেসে নিজের ঘর ছেড়ে একটা ছন্নছাড়া মানুষকে এককথায় বিয়ে করেছিল--আজ তার ভালোবাসার মানুষটির লেখা কবিতা শোনা পোষায় না! অদ্ভুত তো।
রিনিদি বা কোয়েল কেউই ঋষিদার দুরদুরান্তের কেউই হয় না--একটা সাহিত্যচর্চার গ্রূপে পরিচয়, সেখান থেকে বন্ধুত্ব, আড্ডা। ঋষি একদিন কথায় কথায় কোয়েলকে বলেছিল--"রাতে ডিনারের পর কল করিস, সাহিত্য নিয়ে আড্ডা দেব।আমি অনেকের সাথেই আড্ডা দি, কত মানুষ আমাকে দিয়ে নিজের লেখা সংশোধন করায়, জানিস।"
বাচ্চার স্কুল ছুটি উপলক্ষ্যে কোয়েল এখন বেশ কিছুদিন বাপের বাড়িতে থাকবে। লেখালেখির শখটা দাদাও বেশ প্রশ্রয় দেয়--একাকী কোয়েলের মনে ভাবনা আসে--"প্রথম দিকে ওদের আড্ডাটা নির্ভেজাল সাহিত্য বিষয়ে থাকলেও, পরের দিকে তা স্বচ্ছতা হারিয়েছে। আজকাল ঋষিদার লেখা কবিতায় বড় যৌবনগন্ধ খুঁজে পায় কোয়েল।তার ভাবনা কি একেবারেই ভুল, নাকি রিনিদি এটাকে এনজয় করছে বলেই ঋষিদা রিনিদিকে শুনিয়ে এই ধরণের কবিতাগুলো বলে? আচ্ছা রিনিদি তো অবিবাহিতা, সেই বা রাতের পর রাত জেগে কেন একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে আড্ডা দেয়? ঋষিদার বউ কেন কিছু বলে না? নাকি বলে?
মাথাটা কাজ করে না কোয়েলের। অনেককিছু কথা আজকাল বলতে চেয়েও বলতে পারে না দাদাকে, কারণ অলক্ষ্যে রিনিদির উপস্থিতি। সবসময়ই কনকলে রিনিদি উপস্থিত থেকে ঋষি আর কোয়েলের কথার পিঠে কথা তৈরি করে। মুখে কিছু না বললেও কোয়েল বোঝে--অনেককিছুই রয়ে গেছে ওর অলক্ষ্যে, যেটাকে ক্রমাগত আড়াল করে চলেছে বাকি দুজনে মিলে। রাত জেগে আর কথা নয়, কোথাও একটা দূরত্ব রাখাই ভালো--মনেমনে ঠিক করে নেয় কোয়েল।