Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্মৃতিচারণ(২৮) অমৃত মাইতি

স্মৃতিচারণ(২৮) অমৃত মাইতি#বিপ্লবের মাটি চট্টগ্রাম। স্বপ্ন পূরণ#কিছু স্বপ্ন ছিল মনে। সেলুলার জেল দেখার বাসনা তৈরি হয়েছিল শৈশবে। পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশর মাটি স্পর্শ করার ইচ্ছা ছিল।  সম্পূর্ণ সার্থক হয়েছে।বরিশাল যাওয়ার ইচ্ছা ছিল …


 স্মৃতিচারণ(২৮) অমৃত মাইতি

#বিপ্লবের মাটি চট্টগ্রাম। স্বপ্ন পূরণ#

কিছু স্বপ্ন ছিল মনে। সেলুলার জেল দেখার বাসনা তৈরি হয়েছিল শৈশবে। পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশর মাটি স্পর্শ করার ইচ্ছা ছিল।  সম্পূর্ণ সার্থক হয়েছে।

বরিশাল যাওয়ার ইচ্ছা ছিল প্রবল। সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ইচ্ছা ছিল বিপ্লবের মাটি এবং তীর্থক্ষেত্র চট্টগ্রাম পরিদর্শন করব। চারবার গিয়েছি সেখানে।

পঞ্চম বার চট্টগ্রাম যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ যদি নাও হয়

কোন দুঃখ নেই। কিন্তু যাওয়ার বাসনা রইল ষোল আনা। যখন জানলাম চট্টগ্রাম যাওয়া খুবই সহজ সরাসরি ফ্লাইট আছে ,তখন আমাকে আটকায় কার সাধ্য আছে। কমলেশ দাশগুপ্ত শুনেই খুশি। কতবার সে ডেকেছে আমাকে। এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে নেওয়ার জন্য। দুজনেই আনন্দে জড়িয়ে ধরলাম দুজনকে। এমনিতেই আমরা হরিহর আত্মা। চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে দাঁড়ালাম দুজন। পর্তুগিজরা এখানেই প্রবেশ করেছিল ১৫২৮ সালের দিকে। কমলেশ আমাকে নিয়ে গেল কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থলে যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর।

কর্ণফুলী নদীর কাহিনীটি অদ্ভুত। মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে ৩২০ কিলোমিটার অতিক্রম করে চট্টগ্রাম বন্দর এসেছে। কর্ণফুলী নদীর একটি কাহিনী আছে। আরাকান রাজার মেয়ে প্রেমে পড়ে পাহাড়িয়া রাজপুত্রের সঙ্গে। রাজপুত্র মেয়েটিকে একটি কানের ফুল দিয়েছিল উপহার। চাঁদনী রাতে নৌকা ভ্রমণের সময় অসতর্ক মুহূর্তে কানের ফুলটি পড়ে যায় নদীতে। মেয়েটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ।স্রোতে ভেসে যায়। রাজপুত্রও প্রেমিকাকে উদ্ধার করার আশায় ঝাঁপ দেয়। দুজনেই হারিয়ে যায় সেই নদীতে। সেই থেকে নদীর নাম হয়েছে কর্ণফুলী। এই কর্ণফুলী নিয়ে নজরুল ইসলাম গান লিখেছেন। কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে অপার সৌন্দর্য বিরাজ করে।

 যেদিন গেলাম চট্টগ্রাম , সেদিনই রাতে সম্বর্ধনার ব্যবস্থা ছিল। গভীর রাতে বেরিয়ে পড়লাম চট্টগ্রামের পথে। যেন মনে হলো গভীর রাত আমাকে অনেক কিছুই দিতে পারে। মাস্টারদা সূর্যসেনের চট্টগ্রাম। প্রীতিলতা কল্পনা দত্ত উল্লাস কর দত্ত গনেশ ঘোষ অনন্ত সিংহ এই সমস্ত বিপ্লবীদের শ্বাস-প্রশ্বাস বাতাসে মিশে আছে। আমি যদি একটু সেই বাতাস গ্রহণ করতে পারি। আবেগপ্রবণ মন ঘুরে বেড়ায় চট্টগ্রামের পথে পথে। সঙ্গী প্রাবন্ধিক কমলেশ দাশগুপ্ত। চমকে উঠলাম একটি দেওয়ালে তিনজনের ছবি দেখে। মাস্টারদা সূর্যসেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও ক্ষুদিরাম বসু। কোথায় মেদিনীপুর আর কোথায় চট্টগ্রাম। বিপ্লবীদের মাটি মেদিনীপুর এবং চট্টগ্রাম। আমি মেদিনীপুরের মানুষ । সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি এবং ভাবছি ক্ষুদিরাম বসু কতদূর বিস্তৃত।

পরবর্তী সময়ে সীতাকুণ্ড গিয়েছিলাম দেবব্রত সেনের "সবুজের জয়যাত্রা" পত্রিকার আহ্বানে। সেখানে আবিষ্কার করলাম বিখ্যাত গল্প লেখক দেবাশিস ভট্টাচার্যকে। ভ্রমণ করলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়।

এই চট্টগ্রামেই জীবনানন্দের কবিতায় বিপ্লবী চেতনা বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ উদ্বোধন হয়েছিল। এই

চট্টগ্রাম থেকেই ২৪ জন বিপ্লবীকে কলকাতা বন্দর দিয়ে সেলুলার জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামকে ঘিরে আমার অজস্র স্মৃতি। আমার অভিলাষ পূরণ হল। পেলাম সাহিত্য সংস্কৃতি বিপ্লবের মাটি ও ইতিহাস, পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর চট্টগ্রামকে। চট্টগ্রাম ঢাকা শহরের চাইতেও পুরনো। এবং উন্নত চেতনার মানুষজনের সংখ্যা যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি চট্টগ্রামে।

(চলবে)


স্মৃতিচারণ (২৯ )অমৃত মাইতি

#পার্টি অফিসে ও কমিউনে কি খেয়েছি#

ভুরিভোজ খাওয়া আমার হয়নি কখনো। এবং এই না খাওয়ার অভ্যাসটি হয়ে গিয়েছিল পার্টি অফিসে সার্বক্ষণের কর্মী থাকার সময় থেকে। দেশে কিংবা বিদেশে কখনো কখনো খাওয়ার টেবিলগুলোতে অনেক দামী দামী খাওয়ার সাজানো থাকতো। আমি খেতাম খুবই কম। সবাই বলাবলি করত কিছু খেলেন না তো। আমি বলি এত খাবার আমি পারিনা খেতে। আসলে জীবনটা একটা অভ্যাস। গ্রামীণ জীবনে ডাল ভাত পুকুরের মাছ আর শাক। অফুরন্ত তৃপ্তির খাবার। বাংলাদেশে বা যেকোনো বিদেশে গেস্টদের জন্য যে আয়োজন হয় সেই খাবারগুলো কিন্তু অনেক দামী দামী খাবার। সবাই জানে আমার খাওয়ার খুবই পরিমিত। পার্টি অফিস এবং কমিউন আমার জীবনকে একটা শৃঙ্খলায় ,কি খাওয়ার দাওয়ারে কি আচার-আচরণে বাঁধা ধরা নিয়মের মধ্যে পরিচালনা করেছে। সেই ধাঁচার বাইরে বেরিয়ে আসিনি আমি বা আমরা অনেকেই। একবার অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে তার বাইরে যাওয়া যায় না। কেমন যেন খটমট লাগে। অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে। অবিভক্ত তমলুক মহকুমায় একটি লোকাল কমিটি ছিল। আমি তার মেম্বার এবং সম্পাদক ছিলেন পুলক বেরা। পরে আমার মেম্বারশিপ ট্রান্সফার হয়ে যায় অবিভক্ত কাঁথি মহকুমার লোকাল কমিটিতে। কাঁথি লোকাল কমিটির

সম্পাদক ছিলেন অনুরূপ পন্ডা। ছাত্র রাজনীতির পরে আমি ডি ওয়াই এফের জেলা সম্পাদকমন্ডলী সদস্য হলাম। এবং কাঁথি মহাকুমার যুব সংগঠনের আমি সভাপতি। আমার তখন অবস্থান নন্দীগ্রামে থাকল না। যদিও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ থাকত যাতায়াত ছিল পার্টির সঙ্গে সম্পর্কও ছিল। নন্দীগ্রামের কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছিল। কাঁথি লোকাল কমিটির অফিসের এটি কমিউন ছিল। সেখানে আমরা আলু মাখা আর সমুদ্রের তেলতাবড়ি মাছের টক।

সবচেয়ে সস্তা খাবার। মাঝে মাঝে কমিউন বন্ধ  থাকলে কাঁথি ক্যানেলপাড়ে  সুকুমারের হোটেলে এক টাকা দিলে খাওয়ার পাওয়া যেত। তবে আমি বেশিরভাগ সময় বাজকুল পার্টি অফিসে কাটাতাম। ছোট্ট একটি ঘর। একটি খাট। তিন চার জন শুয়ে যেতে পারতাম ।আর একধারে একটি  কেরোসিন কুকার আর একটি এলুমিনিয়ামের হাঁড়ি। বাজকুল থেকে আমার বাড়ি এক ঘন্টা ১৫ মিনিটের রাস্তা।

সকাল ১১টায় বের হলে কিংবা রাত্রি নটায় বের হলে দিব্যি বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করা যায়। বাড়িতে অভাব ছিল না খাওয়ার। কিন্তু কি এক নেশা পার্টি অফিসে থাকার। আসলে আকর্ষণটা ছিল রাজনীতির চর্চা আড্ডা পার্টি অফিসে অনেকের আনাগোনা। এসব ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে খাওয়াটা তখন সেই সময় বিলাসিতা মনে হতো। সব দিন খাওয়ার জুটতো না। জল খেয়ে শুয়ে যেতাম। বেশিরভাগ সময় গ্রামে চলে যেতাম মিটিং হতো খাওয়াটাও ভালো হতো। আর ফেরার সময় কোন কৃষকদের বাড়ি থেকে চাল আলু, পেঁয়াজ লঙ্কা নিয়ে চলে আসতাম। এক একদিন একটা টাকা সংগ্রহ করে চালিয়ে নিতাম। যেদিন একা থাকতাম। আমরা তিনজন২৪ ঘন্টা একসাথে থাকতাম। বাগম্বার মাইতি নিশিকান্ত প্রধান এরা দুজন দুপুরের আগে বাড়ি চলে যেত ।কারণ তাদের বাড়ি কাছাকাছি। আমার বরাদ্দ ছিল এক টাকা। দুশ গ্রাম চাল, দুশ গ্রাম আলু,দুশত কেরোসিন তেল আর দুটো চারমিনার সিগারেট।মোট দাম এক টাকা। একটা পিয়াজ দু একটা শুকনো লঙ্কা দোকানদার ভাকু দা(পাত্র) আমাদের সমর্থক এমনিই দিত। ভাত ফুটতো আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে কাগজ পড়তাম। বিনা তেলে আলুটা মেখে ভাত খেয়ে নিতাম। আর কিছুই থাকতো না। তারপর পেট ভরিয়ে মহা আনন্দে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘুমিয়ে যেতাম।এক একদিন রাত্রিতে খাওয়ার জুটতো না। খালি পেটে শুয়ে থাকতাম জল খেয়ে। রাত্রিতে পেট খিদায় গুলিয়ে যেত । সকালে যথারীতি উঠে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে চলে যেতাম। কেউ না কেউ চায়ের অফার দিত। একদিন না খেয়ে রাত কাটিয়েছি, সকালে উঠে চলে গেছি মাধাখালি বাসস্ট্যান্ডে নেমে হাঁটতে হাঁটতে   ধাঁইপুকুরিয়া সুধীর দলুইর বাড়িতে। দুপুরে খেলাম তার বাড়িতে ভাত। ২৪ ঘন্টা পরে একটি যুবক ছেলের পেটে খাওয়ার পড়লো। এমন কতদিন কেটে গেছে। একদিন বাজকুল মোড়ে দোকানে বসে বসে ভাবছি বাড়ি চলে যাই। বড্ড খিদে পেয়েছে। কিন্তু যেতে পারলাম না। কারণ বাগাম্বর আছে পার্টি অফিসে একা। আমাদের এক পার্টির কমরেড মাস্টারমশাই আমাকে দেখে নেমে পড়লো বাস থেকে। একটি পাঁউরুটি কিনে দিয়ে চলে গেল। আমি খেতে গিয়ে পারলাম না খেতে। মনে পড়লো বাগাম্বর একা শুয়ে আছে না খেয়ে। ফিরে গেলাম পার্টি অফিসে একটি পাঁউরুটি দুজন ভাগ করে খেয়ে নিলাম। দুপুরটা কাটিয়ে দিলাম। এসব খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমাদের তেমন কিছু মনে প্রতিক্রিয়া দেখা দিত না। আজকাল এসব কথা কাউকে বোঝানো যায় না। একদিন রবিবার দেখে আমি এবং বাগাম্বর চান টান করে দশটার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম অনেকটা দূর পথ মাধবপুরে চিত্ত শীর বাড়ি। উদ্দেশ্য হলো তার সঙ্গে দেখা হবে আর দুপুরের খাবারটাও হয়ে যাবে। তখন দুপুর ১২ টা। মাস্টারমশাই চিত্ত দা সেদিন বাড়ি আসেনি। খুব মন খারাপ হলো দুজনের। আশা ছিল দুপুরের কিছু খাবো। পেটে খিদের জ্বালা প্রখর জ্যৈষ্ঠ মাসের রোদ। পা টলছে। একটি ফাঁকা মাঠে একটি খেজুর গাছ। মেঠো আলের উপর দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে কিছু কাঁচা কূল পাড়লাম। উপরের ছালাটা ছাড়িয়ে নরম শাঁসটা খেলাম ।দু তিনটে খাওয়ার পরে এত চটচট করছে ঠোঁট ,আর পারলাম না।  জল চাই।

জল চাইলেই তো পাওয়া যায় না ।ফাঁকা মাঠ ধুধু প্রান্তর। টিউবয়েলের  দেখা নেই। এক অদ্ভুত রাজনৈতিক জীবনযাপন।

১৯৭৫ সাল ভয়ংকর পেটের যন্ত্রণা। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছি। বুঝেছি না খেয়ে খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে। ডাক্তার কারমিনেটিভ মিক্সচার বেলেডোনা সহযোগে আমাকে খেতে দিলেন। কমে গেল কিন্তু পরপর তিনবার এই অসহ্য যন্ত্রণা সইতে হয়েছে আমাকে। মনে হতো পেটটা কেটে ফেলে দিই। আত্মহত্যা করি। আর সহ্য করা যায় না। অনেক কষ্টে সেরে গেল খাওয়া-দাওয়া আর বিশ্রামের মধ্য দিয়ে হোমিওপ্যাথ ট্রিটমেন্ট করে। কিন্তু লিভারটা খুব কমজোরি হয়ে গেল। মাঝে মাঝে মনে হতো বেশি দিন বাঁচবো না। আজো সেই কমজোরি লিভারটা নিয়ে এতদিন ছুটে দৌড়ে চলেছি। আমাদেরও আগে শুধু লাল ঝাণ্ডাকে বিশ্বাস করে আরো অনেক বেশি কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করে দল করেছেন ।তাদেরকে হাজারো সেলাম। এইসব আমার জীবনের মূল্যবান স্মৃতি।

(চলবে)

(লেখাটি উৎসর্গ করলাম তোমাকে। আমার রোমান্টিক পুরুষ "চে"।



স্মৃতিচারণ (৩০)অমৃত মাইতি

#স্মৃতির সমুদ্র#

স্মৃতির সমুদ্রে ডুব দিই আর রংবেরঙের দামি দামি পাথর তুলে নিয়ে আসি। প্রতিটি রঙিন পাথর তার নিজস্বতায় উজ্জ্বল।

#জরুরী আইন জারি#

#১৯৭৫ সাল ২৬ শে জুন মধ্যরাতে সারাদেশে জারি করা হলো ইমার্জেন্সি অর্থাৎ জরুরী অবস্থা। বামপন্থী নেতাদের ধরপাকড়, কংগ্রেস বিরোধী যারা ছিল সারা দেশে তাদের জেলে ভরে দেওয়া। সমস্ত রকমের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হলো। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলই না। সংবাদপত্রের অফিসে সরকারি লোক বসে গেল। চালু হলো সেন্সরশিপ। কোম্বিং অপারেশন চলল অর্থাৎ এক একটা এলাকা বেছে নিয়ে চিরুনি তল্লাশি। নেতাদের ধরার জন্য এই প্রক্রিয়া। সীমাহীন অত্যাচার শুরু হলো। আমরাও খুবই সাবধানতা অবলম্বন করে অনেকটা সিক্রেট অনেকটা সেমি -সিক্রেট পদ্ধতি অবলম্বন করলাম। বিভিন্ন জায়গার খবরাখবর সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যেত না। আমাদের কাছে গোপনে বুলেটিন আসতো। পড়ে আর এক জায়গায় পৌঁছে দিতাম আমরা । এইভাবে গোপন রিপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার আমরা রিলে পদ্ধতিতে কাজ করতাম। একদিনের ঘটনা খুব মনে আছে। এক গোয়েন্দার চোখে ধুলো দিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার নাম করে গোপন মিটিংয়ে চলে গিয়েছিলাম। ওদেরকে আমরা মামা বলতাম। পরে দেখা হলো সেই গোয়েন্দা ভদ্রলোকের সঙ্গে। কি মামা বেশ চোখে ধুলো দিলেন। ইমার্জেন্সি উঠে গেলে একদিন সেই ভদ্রলোক বললেন তোমার প্রতি আমার কি এক মায়া তৈরি হয়েছিল তাই বিরুদ্ধে গেলাম না।

#দলে ছাত্র ধরার কৌশল#একদিন আমার বিরোধী পক্ষের অর্থাৎ ছাত্র পরিষদের একটি বন্ধুকে বললাম আয় আজ দুপুরে সিনেমা দেখতে যাব। বন্ধুটির আসার প্রক মুহূর্তে আমি পোস্টার লিখতে বসে গেলাম। বন্ধুটি এসে বললে চল দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমার ব্যস্ততা দেখে ও নিজেই বসে গেল দুটো পোস্টার লিখে দিল। আমার প্রতি তার অনুরাগ তৈরি হল। আরেকদিন দেওয়াল লিখছিলাম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। ওই ছাত্র পরিষদের বন্ধু এসে বললে পড়ে যাবি যে? বললাম তুই তো আছিস ধরে দাঁড়া। একসময় ওই বন্ধুটি আমাদের দলে চলে আসে। আমরা এইভাবে জঙ্গলের ছোট হাতি ধরার জন্য বড় ট্রেন্ড হাতির কাজ করতাম। এমন অজস্র ঘটনা আমাদের জীবনে আছে।

#সাহিত্য সংবাদ##

#বৃহস্পতির আড্ডা#বাংলাদেশের মহিলা কবি ও সংগঠক এবং সমাজকর্মী, রোকেয়া ইসলাম। অনেক অনেক বার আমাকে সে ডেকেছে মিরপুরে সাহিত্যের আড্ডায়। আপনি কবে আসবেন এক ঝাঁক অনুরাগী আমরা আপনার অপেক্ষায় আছি। দিন সুযোগ হল। রোকেয়াকে বললাম এবার আমার সঙ্গে বেশ কয়েকজন কবি বন্ধু যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাহলে আসুন বৃহস্পতির আড্ডায় সবাইকে সম্মানিত করবো আর আপনার উপস্থিতিতে আমরা প্রাণবন্ত হব। আড্ডায় অংশ নিতে আমার সঙ্গে ছিল, অংকন মাইতি সুস্নাত জানা তাপস বৈদ্য অশোক বাগ অরিন্দম প্রধান। সবাইকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়।

আমন্ত্রিত কবি সাহিত্যিকরা হলেন, জারিনা আক্তার জাহাঙ্গীর ফিরোজ আবু সাঈদ জুবেরী বিমল গুহ আলম তালুকদার বুলবুল মহলানবিশ গোলাম কিবরিয়া পিনু সরকার মাহবুব নাসরিন নঈম তহমিনা কুরাইশী সৌরভ জাহাঙ্গীর নিলুফা জামান। উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার অর্জনকারী উন্নয়নকর্মী জনাব এ এইচ এম নোমান।

#ময়মনসিংহ #

আমি এখানে চারবার গিয়েছি ফরিদ আহমদ দুলালের আমন্ত্রণে। ২০১১ সালে একুশে অক্টোবর কবিতা বাংলার অনুষ্ঠানে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানটি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাগৃহ হয়েছিল সেই একই কমপ্লেক্স এর মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্বর্ধনা দিয়েছিল ময়মনসিংহের মানুষজন। ময়মনসিংহের মানুষজন বিশ্বভারতীর জন্য দুহাত ভরে অর্থ সাহায্য করেছিলেন। পরে আরেকটি অনুষ্ঠানে আমি আহুত হয়েছিলাম এবং আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সংগ্রহশালায়। সেখানে একটি গেস্ট হাউসে আমি রাত্রি কাটিয়ে নিজের ধন্য মনে করেছি। গিয়েছিলাম কবি প্রণামী অনুষ্ঠানে। সঙ্গে ছিলেন কাজী রোজী আসলাম সানী শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও অন্যান্য বন্ধুরা। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী রুবিনা আজাদ। দুপুরে তার বাড়িতে খেলাম ভুরিভোজ আমি ও কাজী রোজী। রুবিনার বাড়িতে আলাপ হলো সপ্তবর্ণা সোমের সঙ্গে। সে আমাকে দাদু বলে। ময়মনসিংহের আর একজন আমার ঘনিষ্ঠ মানুষ কবি সালমা বেগ।

আমার সঙ্গী কবি বন্ধুরা তার বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়েছিল মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য। 

#বাড়িতে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ#

সৈয়দ আল ফারুক সালেম শুলেরী অসীম সাহা(অঞ্জনা সাহা আমাকে ভাইফোঁটা দিয়েছিল) দাদুভাই আসাদ চৌধুরী আসলাম সানী শাহাদাৎ হোসেন নিপু ফরিদা মনি মাহমুদ কামাল

যুগলপদ সাহা এভাবে কতজনের বাড়িতে গিয়েছি আবার অনেক বন্ধুর বাড়িতে যেতে পারিনি। অজস্রবার ডাকা সত্ত্বেও যেতে পারিনি আতাহার খানের বাড়িতে।

#জীবনানন্দ উৎসব কমিটির উদ্যোগে ঢাকা শহরে পরপর তিনবার "আন্তর্জাতিক রূপসী বাংলা পুরস্কার" অর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছে।

এমন বহু বাংলাদেশের স্মৃতি এই মুহূর্তে বর্ণনা দেওয়া সম্ভব হলো না।

#ত্রিপুরার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্মৃতি।# ত্রিপুরা গেলেই যতদিন প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী অনিল সরকার বেঁচে ছিলেন আমি প্রতিবারে তাঁর বাড়িতে যেতাম। রাজনীতি সাহিত্য এবং ভাষা নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাতাম আমরা। আমার ঘনিষ্ঠ প্রিয় কবি বন্ধু ননী চক্রবর্তী

আমাকে সঙ্গ দিত। ননীর বাড়িতে আমি একাধিকবার গিয়েছি । প্রাক্তন মন্ত্রী গোপাল দাসের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া আড্ডা ,তার লাইব্রেরী পরিদর্শন করার কথা খুব মনে পড়ে। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তাত্ত্বিক মানুষ মুরারি মোহন সাহার বাড়িতে একদিন সান্ধ্যাকালীন আড্ডা দিয়েছি সঙ্গে ছিল গোপাল দাস।

রাতুল দেব বর্মনের বাড়িতে সান্ধ্যকালীন আড্ডা খাওয়া দাওয়া মনে গেঁথে আছে। রাতুলের গাড়ি আমি বিভিন্ন সময় ব্যবহার করি। ত্রিপুরা গেলে অন্তত দুপুরে রামেশ্বর ভট্টাচার্যের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করতেই হয়।

এভাবে চারিদিকে আমার ঘরবাড়ি ছড়িয়ে আছে।বহু পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার। নিজের জেলাতেও পারিবারিক সম্পর্ক আমার কত আছে হিসেব করা সম্ভব নয়।

#অভিনয়#আগে গ্রামগুলোতে থিয়েটার যাত্রা খুব চলত। ইলেকট্রিক ছিল না।হ্যাজাক লাইট জ্বেলে যাত্রা হতো।আমি দুবার যাত্রা অভিনয় করেছি। তমলুকে "বর্গভীমা "মন্দিরকে কেন্দ্র করে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি হয়েছিল। আমি সেই ফিল্ম এ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অভিনয় করেছি। পরিচালক অশোক কুমার বেরা।

#"বাংলা চলচ্চিত্র প্রচার সমিতি" ২০১৮ সালে আমাকে মৌলালী যুব কেন্দ্রের সভা ঘরে "উত্তম কুমার স্মৃতি পুরস্কার" দিয়েছিলেন। যেহেতু বাঙ্গালীদের প্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমার,তাই উল্লেখ করলাম।

#ভ্রমণ মূলক স্মৃতি কথা এখানে উল্লেখ করলাম না।

"লং মার্চের জীবন"যদি কখনো প্রকাশিত হয় সেখানে অনেক বিস্তৃত পাওয়া যাবে।

# নিজ গ্রাম শিবরামপুরে ৫৩ বছর আগে বাজার গড়ে

 তোলার অভিজ্ঞতা#গ্রামের উপর দিয়ে চলে গেছে হিজলি টাইডাল ক্যানেল। এই পথ দিয়ে গান্ধীজি গিয়েছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর "পদ্মা" নামক নৌকোতে গিয়েছেন জলপথে। বঙ্কিমচন্দ্র ডি এল রায় এই জলপথ ব্যবহার করেছেন। কলকাতা থেকে গেঁওখালি হয়ে মহিষাদলের উপর দিয়ে নন্দীগ্রাম খেজুরি হয়ে কাঁথির উপর দিয়ে উড়িষ্যা যাওয়ার এটাই একমাত্র জলপথ ছিল। যাইহোক আমার গ্রাম শিবরামপুর থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও কোন হাটবাজার গঞ্জ ছিল না। বিরাট চওড়া ক্যানেল পাড়। বড় বড় বট শিরীষ লতাগুল্ম জঙ্গলাকীর্ণ দীর্ঘ পথ । পায়ে হাঁটা শুরু এক ফালি রাস্তা।আমরা কয়েকজন ভাবলাম এখানে মানুষের প্রয়োজনে বাজার গড়ে তুললে কেমন হয়। প্রস্তুতি শুরু হলো। গড়ে উঠলো বাজার। আমি একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । ৫০ বছর পূর্তি উৎসবের পরে আমি আমার সভাপতির পদ ত্যাগ করেছি। এখন কোথাও যেতে পারি আর না পারি সকাল সন্ধ্যা ,কখনো কখনো দিন অনেক রাত্রি পর্যন্ত বাজারে আড্ডা দিই। গণসংযোগ করি। এই বাজারটি এখন আমার আশ্রয়।

আমার স্মৃতিকথা শেষ করা যায় না ,তবু শেষ করতে হলো।

(সমাপ্ত)