কলকাতা: সেদিন একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই হাঁটছিলাম।সদ্য ঘটে যাওয়া স্বপ্নদীপের ভয়াবহ মৃত্যুর করুন কাহিনীর কথা ভাবতে ভাবতেই। কেন বারে বারে অকালে ঝরে যাবে এই সব প্রান।খালি হবে মায়ের কোল।রাজ্যের প…
তরুণ চট্টোপাধ্যায় |
জানি সব কেন র উত্তর কেউ দেবেন না।পাঁচ তারা ইউনিভার্সিটির গায়ে কাদা ছেটাবেন না।দাগ লেগে যাবে।এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের একটি ছেলের কথা। ছেলেটি সেখানে জলে ডুবে মারা যায় বেশ কিছু বৎসর আগে। ছেলেটির বাবা ছিল আমার অফিস কলিগ।একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল পিতা পুলিশ কে বলেছিলেন ছেলে কে তো ফিরে পাব না।তবুও বলছি আমার ছেলে খুন হয়েছে।আপনারা সঠিক তদন্ত করে খুনী কে গ্রেফতার করুন।
পুলিশের উত্তর ছিল এটি খাল বিল নয় জাল ফেললেই মাছ উঠে আসবে।এটি সমুদ্র। একথা মৃত ছাত্রের বাবার মুখেই শোনা।পাঁচতারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও কি সেই সমুদ্রের গল্প। নতুবা পুলিশ এলো আর ছাত্ররা তাদের ঢুকতেই দিল না।ফিরে গেল পুলিশ। আর সেই সময়ে খুনীরা সব চিহ্ন মুছতে শুরু করে দিল । প্রমাণ লোপ করে দিতে মাঠে নামলো।স্বপ্নদীপ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার সময়ে হোস্টেলের ঘরের দরজা বন্ধ করে জিবি মিটিং চললো।হায়রে যাদবপুর। এমন সুনাম নিয়ে আর কতদিন। তারা খসতে কি সময় লাগে।
আজ স্বপ্নদীপ নেই। বহু ছাত্র ছাত্রী রা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।তারাও এই কু প্রথার শিকার হয়েছেন। তবুও রক্ষা প্রান চলে যায় নি।কর্তৃপক্ষ সব জেনে বুঝে এটিকে প্রশয় দিয়ে গেছেন।এর পিছনে কিসের খেলা।যা ভাঙতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল না কর্তৃপক্ষ কে।তবে কি রাজনিতীর দাবা খেলা চলে এসেছে এতদিন। আজ স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর কুম্ভকরনের ঘুম ভাঙলো।কাল বাজার ঠান্ডা হলে আবারও কি নিদারুন এই ছবি চোখে ভাসবে।কলেজের প্রাক্তনীরা কি যাদুবলে এখানে দিনের পর দিন থেকে যেতে পারেন।উত্তর কে দেবে।ইউ জি সির নিয়মেই আছে নতুন ছাত্র দের জন্য আলাদা হোস্টেল। কর্তৃপক্ষ সে হোস্টেলের দিকে কড়া নজর রাখবেন।সে সব কাগজেই, বাস্তবায়ন কবে আর হলো।
রাগিং যারা করে আসছেন তারা যে মানসিক বিকার গ্রস্ত এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। যাদের আশু চিকিৎসার দরকার তারাই দাপিয়ে চলেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরে।সংক্রামক রোগের মতো সে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই।
এই ব্যাধির সপক্ষে কিছু মানুষ আজও গলা ফাটিয়ে বলেন এটির ফলে ছাত্র ছাত্রীদের উপকার হয়।স্মার্ট হন তারা।একেবারেই বস্তাপচা এই ধারনা।ইনটোভাট রা বুঝি স্মার্ট নয়।অবশ্যই স্মাট।এরা জীবনে বহু সফলতা অর্জন করেছেন।ঝুড়ি ঝুড়ি হাতে গরম প্রমাণ দিতে পারি।বরং কিছু ছাত্র ছাত্রী যারা এই কু প্রথার পক্ষে তারা জীবনের বহু অংশেই বিফল।তাঁর ফলেই এই কুৎসিত প্রথার পক্ষ নেন।
আজ স্বপ্নদীপ আকাশের তারা।তারকাখচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সাধ তার শেষ হয়ে গেছে অচিরেই। আকাশের তারা হয়ে বিচার চাইছে সে।বিচার কি পাবে স্বপ্নদীপ। চিন্তিত তো আমিও। সমুদ্রের জলে জাল ফেলে রুই কাতলা কি ধরা পড়বে। নাকি কুঁচো কিছু মাছ উঠে আসবে।সে খবর প্রশাসন জানে।
সি সি টিভি বসলে একদল ছাত্র আন্দোলনের নামে তা বন্ধ করে দেয়।ভিতরে মদ গাঁজার আসর বসলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না।আবার কেউ কেউ বলেন এখানে চ্যান্স পেয়ে দেখা কত দম। এটা যাদবপুর। তবে কি যাদবপুরে যারা পড়লেন না তারা জীবনের তারা খুঁজে পান নি।আমি নিজেও যাদবপুরের ছাত্র নয়।কই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লাইনে আটকে পড়িনি একবারও। কে বলেছেন যাদবপুরে না পড়লে মানুষ হওয়া যায় না।বরং স্বপ্নদীপের মৃত্যু আবারও দেখিয়ে দিলো এখানে মানুষ অমানুষ সবই আছে।সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো মন্দ থাকে।তফাত মন্দ কে সঠিক হাতে শায়েস্তা করা।বাকিরা যে কাজটি করেছেন যাদবপুর তা করেনি।একথা স্বীকার করেছেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র দের সিংহ ভাগ ই।
আজ স্বপ্নদীপ নেই। যাদবপুর আছে।তারা জ্বলজ্বল করছে না মিটিমিটি সে কথা আলাদা।
ফিরছি বই প্রকাশের অনুষ্ঠান সেরে।সেই বিল্ডিং এর সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।পিছনে স্বপ্নদীপ। সিনিয়র রা ঠেলে ফেলে দিয়েছে না নিজেই মনের যন্তনার উপশমে ঝাঁপ দিয়েছেন।
সে যে ঘটনাই ঘটুক স্বপ্নদীপ খুন।এক তাল কাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়াল জুড়ে।আমি যাদবপুরের ছাত্র নয়।তবুও আমার রাজ্যের তারা মার্কা দেওয়ালে কালির ছোপ আমার পছন্দ নয়।কর্তৃপক্ষ কে অনুরোধ রাজনিতীর পাঁক থেকে বেরিয়ে এসে শক্ত হাতে চাবুক ধরুন। নচেৎ তারা খসে পড়তে সময় লাগবে না।
কথা দিন ভবিষ্যতে আর কেউ স্বপ্নদীপ হবে না।আর কোন ছাত্র হোস্টেলের ঘরে পৈশাচিক এ ছবি দেখবে না।অকালে মায়ের কোল খালি হবে না।নতুন ছাত্র পড়তে এসে একদল লুঠেরার হাতে মার খাবে না।শিক্ষা অঙ্গনে রাজনিতীর কালো ছায়া দাপিয়ে বেড়াবে না।
ফিরছি যাদবপুর হয়ে।চোখের সামনেই পাঁচ তারা।আমি ছাত্র না হলেও আমার অনেক বন্ধুই এখান থেকে পাস করে আজ দেশে বিদেশে।তাদের কেউ কি স্বপ্নদীপের কথা জেনেছেন।লজ্জায় মুখ লুকিয়েছেন।
আমি ছাত্র নয় তবুও লজ্জার শেষ নেই আমার। আমি মুখ ঢেকেই দ্রুত পায়ে ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম।
রক্তের দাগ আজও লেগে সেখানে।
যা চেষ্টা করেও মোছা যায় নি।
তরুণ চট্টোপাধ্যায়।