গল্প :- কুটুম্ব বিদায় ।কলমে :- লক্ষ্মী কান্ত দাস০৯.১০.২০২৩বেওয়ারিশ মেয়েছেলে দেখলে গুবলু লোভ সামলাতে পারে না , নিজের পেশার খাতিরে রাত বিরেতে অনেকেই তার জুটে যায় ক্ষিদে মেটানোর জন্য , ঘরে তবু তার সতীলক্ষ্মী বউটা কিভাবে সময় কাটায় স…
গল্প :- কুটুম্ব বিদায় ।
কলমে :- লক্ষ্মী কান্ত দাস
০৯.১০.২০২৩
বেওয়ারিশ মেয়েছেলে দেখলে গুবলু লোভ সামলাতে পারে না , নিজের পেশার খাতিরে রাত বিরেতে অনেকেই তার জুটে যায় ক্ষিদে মেটানোর জন্য , ঘরে তবু তার সতীলক্ষ্মী বউটা কিভাবে সময় কাটায় সেদিকে তার হুঁশ বলতে কিছু থাকে না , সন্ধ্যে হলেই বারুদির ঠেকে চোলাই বাংলা মদ খেতে যেতেই হবে তাকে , সেই ঠেক ই তাকে লক্ষীর কৃপা দিয়ে থাকে , বিশ তিরিশটা লোক সব সময়ই তার ঠেকে ভিড় করে থাকে , চাটও থাকে ঝাল ঝাল আলুরদম , কষা মুরগি , অমলেট , পোচ , ডিমসেদ্ধ , ছোলা মটর সেদ্ধ এসব , খানা পিনা বাংলার ঠেকে সচরাচর একসাথে মেলে না এই আধা মফস্বলে । তাই এখানে ভিড়টা ভালোই হয় , মাঝে মধ্যে লোকদেখানো পুলিশি ঝঞ্ঝাট হয় বটে , তবে মাসোয়ারা ব্যবস্থাও আছে , মাগনা মদের যোগান মধ্যেমধ্যে পুলিশ থেকে পঞ্চায়েত বন্ধুদের দিতে হয় বারুদিকে , বর খেদানো বারুদি এভাবে রুজিরোজগার চালায় , একমাত্র মেয়েটাকে বিয়েও দিয়েছে একটা রোজগেরে পাত্র দেখে , তবুও মফস্বলের মেয়েদের চোখে সে একটা বিষ , ঘরের মরদদের উচ্ছন্নে পাঠানোর মেয়েছেলে বলেই তার খ্যাতি , তবে দেহ ব্যবসা করে না , কিন্তু তার একটা জাঁদরেল বাবু আছে ,তার টাকা ও বুদ্ধিতেই এ ব্যবসা, তা সেটা পাপের হোক পুণ্যের হোক , দুবেলা দুমুঠো খাওয়া তো জুটছে ,যারা তাকে খারাপ বলে গালমন্দ করে , তারা তো আর একবেলা খাবার না জুটলে খেতে দেবে না , খদ্দের দের সঙ্গে সে ফস্টিনস্টি করে , গা ঘেঁষাঘেঁষিও করে , এটা তার ব্যবসার ধরণ , তার অন্নদাতা বাবুটাই তাকে এসব শিখিয়েছে , একটু আধটু হিসেব করতে শিখিয়েছে , সে এখন বুঝতেও পারে বাবু শুধু সোহাগেই তাকে পীরিত করে না , বরং লাভের মোটা টাকাটাই তার কাছে শেষ কথা , বাবুটি আবার ডাকসাইটে খুব মান্যিগন্যি লোক , তার ঘরসংসার আছে ছেলে মেয়েরা বড় বড় লেখাপড়া করে ।সে যাইহোক না কেন এ বাবুটাই তাকে বেঁচে থাকতে শিখিয়েছে , তাই তার কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকে , এ বাবুই তার মেয়ের বিয়ের খরচ খরচা দিয়েছে । এই আধবুড়ি মেয়েমানুষটার সঙ্গে নিত্যদিন ওঠাবসা করতে করতে তার সঙ্গে সারারাতটা কাটানোর ভাবনা মাথায় এসে ভিড় করে প্রায় রোজই , কিন্তু সে অবসর তার হয়ে ওঠেনি কোনোদিন , কোনো না কোনো খবর ঠেক থেকে পেলে গুবলু সঙ্গে সঙ্গে ছুট দেয়, ঘরে বউটাকে সময় না দিতে পারলেও গুবলু বউয়ের খরচ জোগানোর প্রানপন চেষ্টা করে , কাজের খবর , দু পয়সা ধান্ধার খবর পেলে সে তক্ষুনি ছুট লাগায় । গুবলু নিশিকুটুম্ব । রাত বিরেতে যখন যেখানে সুযোগ পায় সে চুরি করে , এ বিদ্যেয় সে মস্ত কারিগর , সিঁধ কাটায়, দড়ি বেয়ে দোতলা তিনতলা উঠে চুরির কাজটা তার কাছে জলভাত ,কেউ ঘুণাক্ষরে টের পায়না , যে সে কখন কম্মো সেরে চম্পট দেয় , আজ অব্দি সে একবারও ধরা পড়েনি দশ বারো বছরের এই পেশায়, তবে অনেকে সন্দেহ করলেও, পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি যে সে চোর ।
ছনুর মা আজ ঘরে নেই । আজ বাগচী বুড়ি ঘরে একা , বুড়ির অনেক মালকড়ি , একটা ছেলে বিদেশে থাকে , টাকা পয়সা অঢেল পাঠায় বুড়ি মায়ের দেখাশুনার জন্য , পাশের বাড়ির ছনুর মা তার সর্বক্ষণের কাজের লোক , বুড়ি তার কোনো অভাব রাখেনি ,তাই ছনুর মাও অনেক প্রলোভন সত্ত্বেও কোনোদিন বাগচী বুড়ির সঙ্গে বেইমানি করেনি , সে প্রায় প্রতিরাতে বুড়ির কাছেই থাকে , মাঝে মধ্যে তার বর ও সেখানে আসে রাতে, ছনুর বাবা শরীরের তাড়নায় মাঝে মাঝে রাগও করে , তবু বউয়ের এই আয় টা তার সংসারটা সচ্ছল রেখেছে বলে সে আবার চুপ করে যায় , এখন তার বরের রশি কলে নাইট ডিউটি এক সপ্তা , ঘরে বাচ্চাটার ধুমজ্বর বুড়ি সে খবর শোনামাত্রই তাকে ঘরে চলে যেতে বলেছে , আর এই খবরটা ই গুবলু বারুদির ঠেকে পেয়েছে রাত ন'টার সময় , অনেকদিন থেকে তকে তক্কে ছিল, বাগচী বুড়ির ঘর সাফ করার , কিন্তু ছনুর মা বুড়ির ঘরে অনেক সময় জেগে থাকার কারণে জানলার কাছ থেকে রাতে খালি হাতেই ফিরে গেছে গুবলু , কখনো আড়াল থেকে ছনুর মায়ের নধর গতরটা জানলা দিয়ে দেখে মাথায় বদবুদ্ধি খেলে গেছে , পাখার হাওয়ায় বুকের কাপড় উড়ে যাওয়া ভরা যুবতীর দেহ দেখে বুঝিবা ভগবানেরও মনে মনে কাম জাগে । সে যাই হোক আজ কিন্তু সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না । সদর দরজা , বারান্দার গ্রিল, ও ভেতর থেকে কপাট বন্ধ , সিঁড়ির পাশে ভেতর দিকে বুড়ির একটা নড়বড়ে কাঠের জানলাই একমাত্র সহজ পথ বুড়ির ঘরে ঢোকার , বাকি সব পাকাপোক্ত ব্যবস্থা , গুবলু দড়ি বেয়ে ছাদে উঠে , তার বিদ্যে প্রয়োগ করে ভেতর দিক থেকে বন্ধ সিঁড়ির দরজা খুলে , নড়বড়ে কাঠের জানলার কাছে পৌঁছে গেল , বুড়ির নাক ডাকার আওয়াজ পেলো , ভালোই হলো , বুড়ি বেঘোরে ঘুমোচ্ছে, একটা গরাদ ফাঁকা করলেই সেই ফাক দিয়ে সে ঘরে ঢুকে পড়লো, বেশ কিছু টাকা পয়সা , একটা সোনার হার বেশ ভারীই হবে , বুড়ির কম বয়সের দুটো ভারী চুড়ি ও পেয়ে গেল , কাজ শেষ , এবার পালাতে হবে , এবার কিন্তু বুড়ি পাশ ফিরে চোখ চাইলো, নাইট ল্যাম্পের আলোয় গুবলু দেখলো , বুড়ি তার দিকেই চেয়ে রয়েছে , এবার কি ধরা পড়ে যাবে কিন্তু ও তো বুড়ি ধাক্কা দিলেই হয়তো পড়ে মরে যাবে । নাকি বুড়ি চেঁচাবার আগেই গলা টিপে দেবে , এইটুকু ভাবতে ভাবতে , বুড়ির গলা , গুবলু , আমি জানতুম তুই কোনোদিন না কোনদিন আসবি , ছনুর মা আমাকে সব বলেছে যে তুই তক্কে তক্কে থাকিস । এইরে বুড়ি তাহলে আমার কাজকারবার সবই জানে , কাল বুড়ি বেঁচে থাকলে হয়তো সবাই জানবে তার কাজকারবার , তার চেয়ে বুড়ির গলাটা টিপে দেওয়া ভালো হবে , এই ভেবে বুড়ির দিকে এগোতেই বুড়ি কাঁপা কাঁপা গলায় বললে , গুবলু আমায় একটু জল দেতো, গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে , শরীরটা কেমন কেমন করছে , গুবলুর কি মনে হলো , কাঁচের পাত্র থেকে এক গ্লাস জল বুড়ির দিকে এগিয়ে দিলো , কাঁপা হাতে বুড়ি জলটা খাবে কি বাইরের বারান্দার গ্রিল টানার ঘরর ঘরর শব্দ , ছনুর মা কি ফিরে এলো , হঠাৎ বুড়ির গলা যা যেখান দিয়ে ঢুকেছিস , সেখান দিয়েই পালা , যা নিয়েছিস তা নিয়ে পালা । গুবলু হকচকিয়ে গেল , পালাতে গিয়ে পা যেন আটকে আটকে যাচ্ছে , অনেক চুরি সে করেছে জীবনে , কখনো তো এমন হয়নি , আরও কঠিন জায়গা থেকে সে পলকে উধাও হয়ে যায় , আজ কি সে নির্ঘাত ধরা পড়বে , না কি পালাবে , ভেতরের দরজা কেউ খোলার আগেই সে কিন্তু , ঢোকার রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে পালালো