নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর..... সংস্কৃতি চর্চার শহর মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত হলো দুদিনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।আম্মা জনসেবা পরিষদীয় ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনের এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হলো মেদিনীপুর শহরে…
নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর..... সংস্কৃতি চর্চার শহর মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত হলো দুদিনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।আম্মা জনসেবা পরিষদীয় ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনের এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হলো মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যুৎ স্মৃতি সদনে।দুদিনের এই উৎসব শেষে দ্বিতীয় দিনের বর্ষণ মুখর সন্ধ্যায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারতুলে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা একাধিক ক্যান্সার আক্রান্তদের। উল্লেখ্য বিগত কয়েক বছর ধরেই "অঙ্কুর" পাঠশালার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে শিক্ষার প্রসার,,স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে আয়োজক সংগঠনটি। গণবিবাহ সহ নারী ও শিশু কল্যাণের একধিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে এই সংগঠন। এবার সেই আম্মা জনসেবা পরিষদীয় ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগেই ক্যনসার রোগীদের সাহায্যর্থে অনুষ্ঠিত হলো দুদিনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী।জেলাশাসক ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক বরুন মন্ডল, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য শংকর সারেঙ্গী, মেদিনীপুর কতোয়ালি থানার আইসি আতিবুর রহমান, শালবনী ট্যঁকশালেন এর ডিজিএম বিবেক দত্ত চৌধুরী, ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স এর সম্পাদক চন্দন রায়, রোটারি আই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মদন মোহন মাইতি, মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির ওয়র্কিং প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ সাঁতরা, ডিসিসিইআই এর সভাপতি বিশিষ্ট উদ্যোগপতি আনন্দ গোপাল মাইতি, সমাজসেবী নির্মাল্য চক্রবর্তী, চিকিৎসক ডাঃ দিলীপ পান, রুবি জেনারেল হাসপাতালের এইচওডি সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মার্কেটিং ম্যানেজার অমিত রায়, রুবি হাসপাতালের মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভূমিকা বেরা সামন্তসহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা।
অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের তরফে উপস্থিত ছিলেন শাশ্বতী শাসমল, নবীন কুমার ঘোষ, সুমন জানা, অর্ণব দাস, এ ডি বর্মন সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
শর্ট ফিল্ম, মাইক্রো ফিল্ম এবং ডকুমেন্টারি ফিল্ম এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ছবি জমা নেওয়া হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশেরও বেশ কিছু দেশ থেকেও ছবি জমা পড়ে। ফ্রান্স, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া থেকেও কয়েকটি ছবি জমা পড়ে এই উৎসবের জন্য। সব মিলিয়ে এই চলচ্চিত্র উৎসব তথা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৪১টি ছবি। সবকটি ছবিই দেখানো হয় মূলমঞ্চে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে সমস্ত ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি ও সার্টিফিকেট। তিনটি ক্যাটাগরিতেই সেরার সেরা অর্থাৎ প্রথম পুরস্কার জয়ীদের দেওয়া হয় নগদ আর্থিক পুরস্কার।
মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত এই দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতায় শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে "মৃগয়া" দ্বিতীয় হয়েছে "ঠাম্মা" এবং তৃতীয় হয়েছে "মৈথিলী অসম্ভ্রম"। মাইক্রো ফিল্ম ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে "অন্তরালে", দ্বিতীয় হয়েছে "ক্র্যাকার্স" এবং তৃতীয় হয়েছে "জীবন"। এছাড়াও ডকুমেন্টারি ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে "ইতি" এবং দ্বিতীয় হয়েছে "ইন সার্চ অফ হিমালয়ান টিজারস"। এছাড়াও মাইক্রো ফিল্ম ক্যাটাগরিতে বেস্ট লিরিক্স বা সেরা গীতিকার এর পুরস্কার পেয়েছে অর্ণব দাস পরিচালিত ছবি "কর্মই ধর্ম"। অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুমন মৈত্র,অরিন্দম গোস্বামী এবং তুহিন সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শাশ্বতী শাসমল।এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করা। এই উদ্দেশ্যকেই সফল করতে অনুষ্ঠানে আসেন কলকাতা রুবি হাসপাতালের ডাক্তারেরা। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পাশাপাশি সোসাইটির পক্ষ থেকে একটি ফ্রি চেক আপ ক্যাম্প করা হয়। সেখানেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্যান্সার আক্রান্তদের দেখেন ডাক্তারবাবুরা। দুইদিনের এই ক্যাম্পে প্রায় ৫০ জন ক্যান্সার আক্রান্তদের ফ্রি চেকআপ করা হয়। এদের মধ্যে ৬ জনের চিকিৎসা পুরোপুরি বিনামূল্যে করা হবে এমনটাই জানান ,রুবি হাসপাতালের এইচওডি সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
আম্মা জনসেবা পরিষদীয় ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ফাউন্ডার কমিটির মেম্বার সুমন জানা জানান, "আমাদের এনজিও বিগত কয়েক বছর ধরেই একাধিক জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে নিজের নাম পরিচিতি বাড়িয়েছে ধীরে ধীরে। তবে এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আমাদের প্রথম উদ্যোগ। বেশ কিছু ছোটখাটো ভুল বা খামতি রয়েছে। পরের বারে এগুলো ঠিক করতে পারব এবং পরের বছর এই ফিল্ম ফেস্টিভেল আরো ভালো করে করতে পারব বলেই আমরা আশাবাদী। সেই সাথে আমাদের এনজিওর যেহেতু মূল লক্ষ্য সমাজসেবা, তাই এই ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমেও আমরা নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা চালিয়েছি এবং তাতে সফলও হয়েছি। ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু দুস্থ ক্যান্সার আক্রান্তদের আমরা সাহায্য করতে পেরেছি। আগামী দিনে আরোও অনেক সমাজ সেবামূলক কাজে আমাদের সংগঠন নিয়োজিত থাকবে। "
সংগঠনের সদস্য অর্ণব দাস জানান, "খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এই অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়িত করতে পেরেছি। মেদিনীপুর শহরে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের কিছু ছবি আমরা দেখাতে পেরেছি। যেখানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত যেমন কলকাতা, ঝাড়খন্ড, ঝাড়গ্রাম, আসাম ছাড়াও দেশের বাইরে ফ্রান্স, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া থেকেও ছবি জমা পড়েছিল আমাদের ফেস্টিভ্যালে। মেদিনীপুরের সংস্কৃতি তুলে ধরা বা আন্তর্জাতিক জায়গায় মেদিনীপুরের নাম আরোও উজ্জ্বল হোক এবং দেশে বিদেশে মেদিনীপুরের নাম চর্চিত হোক এটাই ছিল আমাদের এই ফেস্টিভ্যালের অন্যতম লক্ষ্য।" আয়োজকদের পক্ষে শাশ্বতী শাসমল,নবীন কুমার ঘোষেরা জানান বিরূপ আবহাওয়ার মাঝেও সবার সহযোগিতায় উৎসব সফল্য মন্ডিত হওয়ায় তাঁরা খুশি।